কানাডার স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় ধনী ও গরিবের বৈষম্য প্রকাশ পেল নতুন সমীক্ষায়

সমীক্ষায় দেখা যায়, যে যত বেশি অর্থ আয় করতে পারবে তার অকাল মৃত্যুর আশঙ্কা ততই কম

নভেম্বর ৩, ২০২০

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : গরীব কানাডীয়দের অকাল মৃত্যুর আশঙ্কা ধনীদের চেয়ে অনেক বেশি এবং গত কয়েক দশক ধরেই তা বেড়ে চলেছে। নতুন এক বিস্তারিত বিশ্লেষণে এ তথ্য উঠে এসেছে। খবর দ্য কানাডিয়ান প্রেস এর।

কানাডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন জার্নালে গত সোমবার প্রকাশিত সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৭৫ বছর বয়স হবার আগেই মারা যাওয়ার যেসব কারণ এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব সেগুলো প্রায় প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই কমে আসছে। তবে এই হ্রাসের গতি গরীবদের চেয়ে ধনীদের ক্ষেত্রে অনেক বেশি দ্রুততর এবং একটি প্রজন্মের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটে চলেছে।

সমীক্ষার ফলাফলে প্রকাশ, নারী ও পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই ব্যবধান বাড়ছে। আর এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব এমন কারণে স্বল্পশিক্ষিত নারীদের অকাল মৃত্যুর আশঙ্কা বাড়ছে।

টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের ডালা লানা জনস্বাস্থ্য স্কুলের ফারাজ শাহিদী বলেন, “জণগণের মধ্যে স্বাস্থ্যগত যে সার্বিক বৈষম্য বিদ্যমান তা কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে আমরা কোনও অগ্রগতি অর্জন করতে পারিনি। মৃত্যুর হারের দিক থেকে এই বৈষম্য আমরা আগে যতটা ভাবতাম এখন তার চেয়েও বড়।”

উত্তর মন্ট্রিয়লের একটি করোনা টেস্ট সেন্টারে লোকজনের ভীড়। কানাডার একটি দরিদ্রপীড়িত অঞ্চল এটি এবং করোনায় আক্রান্তের সংখ্যাও বেশী এই অঞ্চলে। ছবি: কানাডিয়ান প্রেস

শাহিদী এবং সমীক্ষার সহ-রচয়িতা আবতিন পারনিয়া বিভিন্ন আদমশুমারির এক কোটি ৬০ লাখেরও বেশি রেকর্ড বিশ্লেষণ করেন এবং তারা আয়ের ভিত্তিতে লোকেদের পাঁচটি ভাগে বিভক্ত করেন। প্রতিটি গ্রুপের আয়ের পরিমাণ বিভিন্ন আদমশুমারিতে ভিন্ন। যেমন, ২০১৬ সালের আদমশুমারিতে একটি পরিবারের সদস্যদের গড় আয় ৭০,৩০০ ডলার হলে সেটিকে মধ্যবিত্ত গ্রুপে ফেলা হয়।

সমীক্ষায় দেখা যায়, আয়ভিত্তিক গ্রুপের শীর্ষে অবস্থানকারী উচ্চ আয়ের মানুষের ক্ষেত্রে ৭৫ বছরের আগে মৃত্যুর সম্ভাবনা ১৯৯১ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে কমেছে প্রায় ৫০ শতাংশ। আর সবচেয়ে নিচে অবস্থানকারী গ্রুপের ক্ষেত্রে এই সম্ভাবনা কমেছে ৩৪ শতাংশ।

শিক্ষাগত বিবেচনা থেকেও একই প্রবণতা দেখা গেছে।

মাধ্যমিক-উত্তর শিক্ষা লাভকারী পুরুষের ক্ষেত্রে অকাল মৃত্যুর হার কমেছে ৪৭ শতাংশ কিন্তু হাইস্কুলের শিক্ষা নেই এমন পুরুষদের ক্ষেত্রে কমেছে ২১ শতাংশ।

নারীদের ক্ষেত্রে এই প্রবণতা রীতিমত বিস্ময়কর।

উচ্চ আয়ের নারীদের ক্ষেত্রে অকাল মৃত্যুর আশঙ্কা কমেছে ৪০ শতাংশের বেশি। অথচ অপেক্ষাকৃত কম সম্পদশালী নারীদের ক্ষেত্রে এই হার কমেছে ১৯ শতাংশ। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা লাভকারী নারীদের ক্ষেত্রে অকাল মৃত্যুর হার কমেছে প্রায় এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি। আবার হাইস্কুলের শিক্ষা নেই এমন নারীদের ক্ষেত্রে কমেছে মাত্র দুই শতাংশের কম।

আচরণগত কারণে বা চিকিৎসায় আরোগ্য হবার মত কারণে মৃত্যুর ঘটনা বিশ্লেষণকালেও শাহিদী একইরকম ফলাফল পেয়েছেন। স্বল্পশিক্ষিত নারীদের মৃত্যুর হার হাইস্কুলের শিক্ষা সমাপ্ত না করা নারীদের চেয়ে ১২ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।

শাহিদী বলেন, আয়, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের মধ্যে সম্পর্ক আগের অনেক সমীক্ষার ভিত্তিতে এখন সুপ্রতিষ্ঠিত বিষয়।

তিনি বলেন, “এটি হলো একটি অনুমিতি। তবে আমরা এই অনুমান করছি বিজ্ঞানের একটি বৃহৎ পরিপ্রেক্ষিত সামনে রেখে যা আমাদেরকে বলে যে, জনগণের প্রাত্যহিক সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা স্বাস্থ্যগত অসাম্যের দিকে ঠেলে দেয়ার মৌলিক উপাদান।”

শাহিদী বলেন, আয় ও শিক্ষাগত বৈষম্য কমাতে না পারলে অকাল মৃত্যুর ক্ষেত্রে যে ব্যবধান তা নির্মূল করা “কার্যত অসম্ভব”। কারণ আয় ও শিক্ষার বৈষম্যই অকাল মৃত্যুর হারের পার্থক্য তৈরি করে।

তার ভাষায়, “এ বিষয়ে কোনওরকম নীতিগত কর্মসূচির অভাবে এই ব্যবধান বাড়তে থাকবে বলেই মনে হয়। এই সমস্যার সমাধান ও এটিকে ইতিবাচক দিকে পাল্টে দেয়ার মত নীতিগত কর্মকৌশল রয়েছে যা সরকারগুলো গ্রহণ করতে পারে।”

এসব ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে, বেতন বাড়ানো, অধিকতর প্রগতিশীল কর ব্যবস্থাপনা, উদার সামাজিক সহায়তা, চাকরির বিপরীতে বীমা সহজলভ্য করা এবং চাকরির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

শাহিদী বলেন, “নীতিগত কর্মসূচি ছাড়াই আমরা একটি সমাজ হিসাবে যে ব্যবস্থা চালু রেখেছি তার মাধ্যমে বৃহদংশজুড়েই রয়েছে বৈষম্য যা সময়ের সঙ্গে বাড়তে থাকবে। স্বাস্থ্যগত এই অসাম্যের শেকড় হলো মূলত প্রাত্যহিক অবস্থার ভেতরে। দৈনন্দিন জীবনের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থাই হলো জনগণের প্রকৃত অবস্থা যা নীতি-নির্ধারকদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের কারণে বলবৎ থাকে।”