অশ্বেতাঙ্গরা কোভিড-১৯-এর অর্থনৈতিক প্রভাবে সবচেয়ে অরক্ষিত

ফিলিপিনো কানাডীয়দের মধ্যে ৪২ শতাংশ এবং পশ্চিম-এশীয় কানাডীয়দের ৪৭ শতাংশ মহামারির সময় স্থায়ীভাবে বা সাময়িকভাবে চাকরি হারিয়েছেন

আগস্ট 7, 2020

কোভিড-১৯ মহামারি শুরুর আগে দৃশ্যমান সংখ্যালঘু বা অশ্বেতাঙ্গ জনগোষ্ঠীর  বেশিরভাগ লোকের মধ্যে বেশ উঁচু হারে দারিদ্র্য বিদ্যমান ছিলো এবং মহামারির কারণে চাকরি ব্যাহত হওয়ার মত অর্থনৈতিক বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় তারা আরও বেশি নাজুক পরিস্থিতির শিকার হয়েছে। স্ট্যাটক্যান-এর নতুন এক সমীক্ষার ফলাফলে এই তথ্য জানা গেছে। খবর সিটিভি নিউজের। রিপোর্ট করেছেন ব্রুকলিন নিউস্টেটার।

০৬ জুলাই  প্রকাশিত সমীক্ষায় দেখা যায়, ফিলিপিনো কানাডীয়দের মধ্যে ৪২ শতাংশ এবং পশ্চিম-এশীয় কানাডীয়দের ৪৭ শতাংশ মহামারির সময় স্থায়ীভাবে বা সাময়িকভাবে চাকরি হারিয়েছেন অথবা কাজের সময় কমিয়ে দেয়া হয়েছে। শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে এ ধরণের পরিস্থিতিতে পড়েছেন ৩৪ শতাংশ মানুষ।

মহামারির আগে আরব ও পশ্চিম এশীয়দের মধ্যে দারিদ্র্যের হার ছিল সর্বোচ্চ। অন্যদিকে পশ্চিম এশীয় ও ফিলিপিনোদের মধ্যে চাকরি হারানোর হার ছিল সর্বোচ্চ। এটি হলো ২০১৬ সালের আদমশুমারির তথ্য।

ফিলিপিনো কানাডীয়দের মধ্যে ৪২ শতাংশ এবং পশ্চিম-এশীয় কানাডীয়দের ৪৭ শতাংশ মহামারির সময় স্থায়ীভাবে বা সাময়িকভাবে চাকরি হারিয়েছেন। ছবি: অনলাইন

দক্ষিণপূর্ব এশীয় এবং কোরীয়দের মধ্যে কোভিড-১৯ মহামারিকালে চাকরি হারানোর হার ৪০ শতাংশ বলে জানা গেছে। এর পরই রয়েছে কৃষ্ণাঙ্গ (৩৮ শতাংশ), দক্ষিণ-এশীয় (৩৭%), লাতিন আমেরিকান (৩৪%), আরব (৩৩%) এবং চীনারা (৩১%)। সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদেরকে তাদের অর্থনৈতিক দায়-দায়িত্ব যেমন, বাড়িভাড়া, বাড়ির বন্ধকীর কিস্তি পরিশোধ করা, ইউটিলিটি চার্জ ও সংসারের ব্যয় নির্বাহের সক্ষমতা সম্পর্কেও জিজ্ঞাসা করা হয়।

সমীক্ষায় অংশ নেয়া বেশিরভাগ অশ্বেতাঙ্গ জনগোষ্ঠীর মানুষ তাদের ওপর কোভিড-১৯ মহামারির “জোরালো” অথবা “মাঝারি” ধরণের প্রভাব পড়েছে বলে জানান।

সবচেয়ে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে আরব, পশ্চিম এশীয় ও ফিলিপিনোদের ওপর।

গত ২৬ মে থেকে ৮ জুন পর্যন্ত সময়ে সরাসরি জনগণের মতামত গ্রহণের উদ্দেশ্যে অনলাইনে প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে ৩৬ হাজারের বেশি কানাডীয়র কাছ থেকে এই তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়। উপাত্ত অনুযায়ী, যেহেতু দৃশ্যমান সংখ্যালঘুদের অনেকেই স্বল্প আয় করেন এবং শ্বেতাঙ্গদের চেয়ে  বেশি সংখ্যায় অনিশ্চিত কাজে নিয়োজিত তাই চাকরিজীবন ব্যাহত হবার কারণে আয়ের যে ক্ষতি হয়েছে তা কাটিয়ে ওঠার মত সম্পদ তাদের সামান্যই আছে।

সমীক্ষায় দেখা যায়, বেশিরভাগ দৃশ্যমান সংখ্যালঘু গ্রুপ এবং শ্বেতাঙ্গ অংশগ্রহণকারীদের চাকরি, অভিবাসী মর্যাদা, কোভিড-পূর্ব চাকরির অবস্থা এবং জনসংখ্যাগত চারিত্র্যের পার্থক্য বিবেচনা করা হলে উভয়ের ওপর অর্থনৈতিক প্রভাবের পার্থক্য আরও বড় হয়ে ওঠে।

সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ১৯ শতাংশ কানাডার জরুরী সহায়তা সুবিধা এবং কর্মসংস্থান বীমাসহ কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আর্থিক সহায়তার আবেদন করেছেন। বেশিরভাগ আবেদনকারী সাহায্য পেয়েছেন।

সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারী যারা কোভিড-১০-এর “জোরালো” অথবা “মাঝারি” ধরণের অর্থনৈতিক প্রভাবের কথা বলেছেন তাদের মধ্যে দক্ষিণ এশীয়, চীনা ও জাপানিরা শ্বেতাঙ্গ অংশগ্রহণকারীদের মত একইরকম হারে আবেদন করা ও সাহায্য পাওয়ার কথা জানিয়েছেন। তবে বিশেষ করে আবেদনকারী ফিলিপিনো ও কোরীয়দের সংখ্যা অনেক বেশি, যথাক্রমে ৬৫ এবং ৬৮ শতাংশ।

এদিকে স্ট্যাটক্যান উল্লেখ করেছে যে, কেন্দ্রীয় সরকারের সহায়তা পাবার সঙ্গে কর্মক্ষেত্রগুলো কখন এবং কিভাবে খুলে দেওয়া হবে সে বিষয়ে সরকার ও স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ যথাযথ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন এ নিয়ে প্রাপকদের গভীর আস্থার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ছিলো। সমীক্ষায় দেখা যায়, শ্বেতাঙ্গ সুবিধাভোগীদের মতই দৃশ্যমান সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর বেশিরভাগ মানুষই সরকারের ওপর একই ধরণের আস্থাশীল বলে জানিয়েছে।

স্ট্যাটিস্টিকস কানাডা উল্লেখ করেছে যে, এই সমীক্ষাটি দৈবচয়নের ভিত্তিকে পরিচালিত নয় তাই এর ফলাফল সার্বিকভাবে সব কানাডীয়র প্রতিনিধিত্ব করে এমনটা ধরে নেয়া যাবে না।