অভিবাসী নারীরা এখন দুটি ক্ষেত্রে নিজেদেরকে সামনের সারিতে দেখতে পাচ্ছেন

সামনের সারিতে এগিয়ে যাওয়া এবং কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হবার ঝুঁকি তাৎক্ষণিক উদ্বেগের বিষয়। আবার এর চেয়েও বড় পদ্ধতিগত বিষয় রয়েছে যা অভিবাসী নারীদের কাঁধে বাড়তি বোঝা হিসাবে চেপেছে।

মে ১৮, ২০২০

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : কোভিড-১৯ মহামারীতে কানাডার শহর ও নগরগুলো যখন তছনছ হয়ে যাচ্ছে ঠিক সেই সময়েই অভিবাসী নারীরা যুগপৎ দুটি সঙ্কটের মোকাবেলা করতে বাধ্য হচ্ছেন। একদিকে তাদের শ্রমবাজারের অবস্থা গুরুতর হয়ে উঠছে অন্যদিকে সার্বক্ষণিক শিশু প্রযত্নের অভাব তাদের ঘাড়ে বিপুল কাজের বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে। টরন্টোর একটি টায়ারের দোকানে বিক্রয় প্রতিনিধি হিসাবে কর্মরত আরতি শর্মা বলেন, “আমার দুটি বাচ্চা আছে এবং প্রতিদিন কাজে যাবার কারণে যে ঝুঁকি সৃষ্টি হয় সেটাও জানি। কিন্তু আমি কাজ ছাড়তে পারি না, কারণ আমার দোকানের তরুণ বিক্রয় কর্মীটি ঘরে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।” তিনি বলেন, “আমি শঙ্কিত, সংশয়ে আক্রান্ত কিন্তু অসহায়।”

টরন্টোতে ওয়ালমার্টের শোরুমের খন্ডকালীন হিসাব রক্ষক ডেইজি রানারও একই সমস্যা। প্রায় ছয় বছর আগে ভারত থেকে কানাডায় এলেও ডেইজি ও তার স্বামী এখনও ভালো কোনও চাকরি খুঁজে পাননি। সেজন্যে দুজনেরই ঘরে বসে কাজ করা বা কাজ ছেড়ে দেয়ার কোনও সুযোগ তাদের নেই।

যেসব নারীর প্রসঙ্গ উল্লেখ করা হলো কেবল তারাই যে এধরণের সমস্যায় পড়েছেন তা নয়। খবর নিউকানাডিয়ান মিডিয়া.কম এর। রিপোর্ট করেছন অস্মিতা ভুটানি ভিজ।

গবেষণায় দেখা গেছে, কানাডায় আসার পর খুব কম সংখ্যক নারীই চাকরি খুঁজে পান। তাদের চাকরি পাবার ক্ষেত্রে সাধারণ বাধা হলো “কানাডীয় অভিজ্ঞতা” এবং “কানাডীয় শিক্ষার” অভাব। এর সঙ্গে দক্ষতার অবনমনের সঙ্গে সঙ্গে তারা বাধ্য হন কম দক্ষতা ও স্বল্প মজুরির চাকরিতে যোগ দিতে যদিও নিজের দেশে তারা ছিলেন প্রকৌশলী, অর্থনৈতিক বিশ্লেষক, প্রফেসর অথবা উদ্যোক্তা।

গবেষণায় দেখা গেছে, অভিবাসী নারীরা যখন কানাডায় আসে তখন তাদের মধ্যে খুব কম সংখ্যকই চাকরি খুঁজে পান। তাদের কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে সাধারণ বাধা হলো “কানাডীয় অভিজ্ঞতার” এবং “কানাডীয় শিক্ষার” অভাব। [ফটো: আনস্পø্যাশ-এ জেরেমি স্টেনুইর ছবি]

দৃষ্টান্ত স্বরূপ দেখা যেতে পারে ২০১৮ সালের স্ট্যাটিস্টিকস কানাডার রিপোর্ট। এতে প্রকাশ পায় যে, অভিবাসী নারীদের ৫৬ শতাংশই নিয়োজিত পাঁচটি ‘সি’ সম্বলিত কাজে, যেমন, সেবিকা, করণিক, রান্না, হিসাব-রক্ষণ ও পরিচ্ছন্নতা (caring, clerical, catering, cashiering and cleaning)। সামনের সারির এইসব কাজে, নির্দিষ্ট করে অভিবাসী নারীরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। এর ফলে কোভিড-১৯ রোগের সংস্পর্শে আসার আশঙ্কাও তাদের ক্ষেত্রে বেশি।

আরতি শর্মা বলেন, সামনে থেকে কাজ করার ফলে কোভিড-১৯ সংক্রমণের ঝুঁকি নেয়া তাৎক্ষণিক উদ্বেগের বিষয়। কিন্তু এটি ছাড়াও আরও বৃহত্তর পদ্ধতিগত বিষয় আছে যেটা অভিবাসী নারীদের কাঁধে বাড়তি বোঝা হিসাবে চেপে থাকে। তিনি বলেন, “ঘরের কাজও বোধগম্য কারণেই অনেক বেড়েছে। এখন আমাকে সবকিছুর জন্য একটি সময়সূচি অনুসরণ করতে হয়। আমাকে খুব ভোরে উঠে বাসনপত্র মাজা, ঘরদোর পরিস্কার করা এবং রান্না ঘরের অন্যান্য কাজ সেরে নিতে হয়।”

তিনি আরও বলেন, আমার নিজ দেশে সমাজের সবাই মিলেই বাচ্চাদের দেখাশোনা করতো। আমি কাজে যেতে পারতাম আর বাচ্চাদের দাদা-দাদী ও বর্ধিত পরিবারের সদস্যরা তাদের দেখাশোনা করতো এবং তাদের সঙ্গে চমৎকার সময় কাটাতো। আর এখানে আছি কেবল আমি আর আমার স্বামী।”

শর্মা এটিকে বলেন, “দ্বিতীয় পালার” কাজ হিসাবে।

এটি একটি কঠিন পরিস্থিতি। কারণ কানাডায় আসা অনেক অভিবাসী নারী অর্থনৈতিক সঙ্কটের মুখোমুখি হন এবং সেজন্যে তাদেরকে সার্বক্ষণিক কাজের মধ্যে থাকতে হয়। অনেক অভিবাসী নারী এমন সব ঘরের কাজে আটকা পড়ে যান যেখানে হয়তো প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত উপকরণের অভাব আছে। যেমন বাসনকোশন মাজা বা কাপড় ইস্ত্রি করার মত সহজ কাজ।

শর্মা বলেন, অনেক অভিবাসী নারীর জন্য ঘরে বাড়তি সহায়তা পাওয়া রীতিমত বিলাসিতা। তাদের সে সামর্থ নেই। সেবাদানকারী, ন্যানি বা শিশু পালনকারী ভাড়া করার সুযোগ তাদের থাকে না। আর বাবা-মা অথবা দাদা-দাদীকে নিয়ে আসার জন্য স্পন্সরশিপ প্রক্রিয়ায় দীর্ঘ সময় লেগে যায়।

তার ভাষায়, “সবকিছুর ব্যবস্থাপনা করতে সারাক্ষণই খুব চাপের মুখে থাকতে হয়। এমন কি পুরুষ সঙ্গী বাসায় ফিরলেও তাদের কাছ থেকে রান্না, বাচ্চার দেখাশোনা বা পরিচ্ছন্নতার মত কাজে সহায়তা পাওয়া সম্ভব হয় না। কিন্তু নারীদের এই সব

কিছুই করতে হয়। এইসব চাপ প্রতিদিনই আমার শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে।”

এই পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে কেন্দ্রীয় সরকারের উচিৎ অনিশ্চিত কাজে নিয়োজিত অভিবাসী নারীদের সহায়তায় পদক্ষেপ নেওয়া। শর্মা বলেন, সরকারের কোভিড-১৯ জনিত পরিস্থিতি সামলাতে যেসব কর্মসূচি সরকার নিচ্ছে তার অংশ হিসাবেই অভিবাসী নারীদের জন্য সহায়তা দেওয়া যেতে পারে।

ডেইজি রানা এ বিষয়ে একমত পোষণ করেন।

শর্মা বলেন, “লে-অফের শিকার, কিংবা স্বকর্মসংস্থানে নিয়োজিত মানুষের জন্য সরকার নানা রকম সুবিধা দিচ্ছে। কিন্তু আমি খন্ডকালীন চাকরি করি যেখানে কোনও বেনিফিট নেই। আর আমার মজুরিও ন্যূনতম মজুরির মতই। (আমার মত) মানুষের আর্থিক উপকারের জন্য আরও অনেক কিছু করার দরকার আছে।”