অপারেশনে ব্যবহৃত জিনিসপত্র রোগীর শরীরের ভিতর রেখেই সেলাই সম্পন্ন করার ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে কানাডায়
জানুয়ারী ১০, ২০২০
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : ট্রেসি-এ্যান ওয়ালেস নামের এক মহিলা জানান, তিনি কখনোই ভুলতে পারবেন না যে টরন্টোর সেন্ট মাইকেল হাসপাতালে এক অপারেশনের পর পেটে তীব্র ব্যথা অনুভ‚ত হচ্ছিল এবং ক্রমাগত দুর্গন্ধ বের হচ্ছিল। পেটের ব্যথাটি ছিল নিয়মিত। বাথরূমে যাওয়াটাও ছিল এক সমস্যা। তার অপারেশনটি হয়েছিল ২০১৪ সালে যখন তিনি ovarian fibrosis রোগে আক্রান্ত হন।
৪৭ বছর বয়সী ট্রেসি বলেন, ডাক্তারকে বিষয়টি জানিয়েও কোন কাজ হয়নি প্রথমে। ডাক্তার তখন তাকে জনিয়েছিলেন, অপারেশনের পর হিলিং পর্যায়ে এমন ব্যথা হতে পারে। কিন্তু দিন যত যেতে থাকে ব্যথা ও দুর্গন্ধ ততই বৃদ্ধি পেতে থাকে।
পরে এক বন্ধুর পরামর্শে ট্রেসি অন্য এক সার্জন এর সঙ্গে দেখা করেন। তিনি পরীক্ষা করে সমস্যার যে কারণ খুঁজে পান তা ছিল ভয়াবহ। সার্জন তার পেট থেকে একটি গ্লাভস ও দু টুকরো স্পঞ্জ বের করে আনেন। ট্রেসি’র এই ভোগান্তির কাহিনী সম্প্রতি প্রকাশিত হয় সিবিসি নিউজে।
সিবিসি নিউজের খবরে আরো বলা হয়, গত পাঁচ বছরে কানাডায় এই ধরণের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে ১৪%।
তবে এগুলো কেবল ভুলের কারণে হচ্ছে তা নয়, এটি একটি পদ্ধতিগত সমস্যা যার পিছনে রয়েছে দ্রুততম সময়ে কাজ শেষ করার জন্য চাপ। এ কথা বলেন দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞ সার্জিক্যাল নার্স বেভ ম্যাকলিন।
বেভ ম্যাকলিন তার ৩৩ বছরের কর্মজীবনের প্রায় অর্ধেকটা সময়ই কাটিয়েছেন অপারেশন রূমে। তিনি বলেন, ট্রেসির ঘটনাটি তাকে আরেকটি অপারেশন এর কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে যেখানে সার্জন তার কাজ শেষে একটি স্পঞ্জ রোগীর শরীরের ভিতর রেখেই কাজ সমাধান করেছিলেন। সার্জন চাচ্ছিলেন দ্রুততম সময়ে অপারেশন এর কাজটি শেষ করতে।
ঘটনাটি ঘটেছিল নিয়ম অনুযায়ী নার্স যখন অপারেশনে ব্যবহৃত ইন্ট্রুমেন্টগুলোর গননা শেষ করেছিলেন। গননার কাজটি করা হয় এটি নিশ্চিত করার জন্য যে, রোগীর শরীরের ভিতর অপারেশন এর কোন বস্তু রয়ে যায়নি। কিন্তু সার্জন গননা শেষ হয়ে যাওয়ার পর আবার ইন্ট্রুমেন্ট টেবিল থেকে একটুকরো স্পঞ্জ নিয়েছিলেন এবং সেই স্পঞ্জটি রোগীর শরীরের ভিতর রেখেই অপারেশন এর স্থানটি সেলাই করে দেয়া হয়। তাড়াহুড়ার কারণেই এমনটি ঘটেছিল। বিষয়টি ধরা পড়েছিল যখন রোগী বেদনাদায়ক সংক্রমণের এর শিকার হয়েছিলেন। পরে আরেক দফা অপারেশন করতে হয়েছিল ঐ স্পঞ্জটি বের করার জন্য।
হাসপাতালে অপেক্ষার সময় কমাতে এবং ব্যয় হ্রাস করার মানসে অনেক প্রভিন্স ফান্ডিং কমিয়ে দিয়েছে বিশেষ কিছু সার্জারীর ক্ষেত্রে। অপারেশনটা যত জটিলই হোক বা এতে করে কি কি সমস্যা হতে পারে সেগুলো বিবেচনায় আনা হয়নি। একই সাথে হাসপাতালগুলোকে তাদের বাজেট ব্যালেন্স করার জন্য বলা হচ্ছে যার ফলে কাজের চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে ডাক্তার ও অন্যান্য স্টাফদের উপর। এবং অপারেশন এর কাজগুলোও দ্রুততম সময় শেষ করার চাপ সৃষ্টি হয়েছে।
নার্স বেভ ম্যাকলিন বলেন, আজকাল হাসপাতালগুলোতে দ্রুততম সময়ে কাজ শেষ করার একটা তাগিদ দেওয়া হচ্ছে। আর এটি একটি অন্যতম সমস্যা। কোন কাজ দ্রুত শেষ করতে চাইলে সমস্যা তৈরী হবেই তা একজন ব্যক্তি যত দক্ষই হোক।
কানাডিয়ান নার্সেস এসোসিয়েশন এবং অপারেটিং রুম নার্সেস এসোসিশেন অব কানাডা-ও মনে করে এই সমস্যা তৈরী হচ্ছে দ্রুততম সময়ে কাজ শেষ করার প্রবণতা থেকে।
সরকারী অর্থায়নে পরিচালিত হাসপাতালগুলোর মান নিয়ন্ত্রণে কাজ করে এমন একটি স্বশাসিত প্রতিষ্ঠান ‘এক্রিডিটেশন কানাডা’ ২০১১ সালে একটি বাধ্যতামূলক আইন করে। ঐ আইনে বলা হয়েছে, প্রতিটি অপারেশনের পর সার্জিক্যাল স্টাফ কর্তৃক অপারেশনে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি গুনে দেখতে হবে। এগুলোর মধ্যে আছে স্পঞ্জ, ছুরি, সুই, কাঁচি, বন্ধন ইত্যাদি। এই আইনটি করা হয়েছে যাতে করে রোগীর দেহের অভ্যন্তরে কোন কিছু ফেলে রেখেই সেলাই সম্পন্ন করা না হয়। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এর পরেও এরকম ঘটনা ঘটছে। আলবার্টা এবং কুইবেক প্রভিন্সে এ ধরণের ঘটনা সবচেয়ে বেশী ঘটছে। এ তথ্য জানায় অর্গানাইজেশন ফর ইকনমিক কো-অপারেশন এ্যান্ড ডেভলাপমেন্ট। এই দুই প্রভিন্সে দুর্ঘটনার মাত্রা কানাডার জাতীয় গড় মাত্রা ৯.৮ (প্রতি এক লক্ষের মধ্যে) এর চেয়ে বেশী। আলবার্টায় দুর্ঘটনার মাত্রা ১২ এবং কুইবেকে ১৫ (প্রতি এক লক্ষের মধ্যে)। অন্টারিওতে এই মাত্রা ৮.৭। সবচেয়ে কম ঘটে ব্রিটিশ কলম্বিয়ায়। সেখানকার মাত্রা ৫.৭।