যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার মধ্যে টরন্টো হচ্ছে সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল নগরী, তবে সেটা সুখবর নয়

জুলাই ১৭, ২০১৯

টরন্টো হলো যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার মধ্যে সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল নগরী তবে তা ইতিবাচক নয়।। ছবি : scostepevents.ca

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক , ০৬/০১/২০১৯ : টরন্টোবাসীকে আগামী বছরগুলিতে বন্ধু বা আত্মীয়দের সঙ্গে রুম বা অ্যাপার্টমেন্ট শেয়ার করে বসবাস করতে হবে। কারণ নগরীতে নতুন আবাসন সুবিধা যে হারে বাড়ছে জনসংখ্যা তার চেয়ে দ্রুত বাড়ছে। একজন নগর পরিকল্পনাবিদ এই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। রিপোর্ট করেছেন হাফিংটন পোস্ট এর ড্যানিয়েল টেনসার।

চলতি সপ্তাহে অনলাইনে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রের বিশ্লেষণে রায়ারসন ইউনিভার্সিটির নগর গবেষণা ও ভূমি উন্নয়ন কেন্দ্রের গবেষক ফ্রাঙ্ক ক্লেটন ও ইভা শি উল্লেখ করেন যে, টরন্টো হলো যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার মধ্যে সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল নগরী তবে তা ইতিবাচক নয়। ২০১৮ সালের জুলাই মাসে সমাপ্ত এক বছরে টরন্টোতে নতুন যোগ হয়েছে ৭৭ হাজার বাসিন্দা যা দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা আরিজোনার ফিনিক্স শহরের চেয়ে তিন গুণ বেশি।

গবেষকরা বলছেন, জনসংখ্যা বৃদ্ধির এই হার “বিস্ময়কর”।

টরন্টো হলো যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার মধ্যে সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল নগরী তবে তা ইতিবাচক নয়।। ছবি : scostepevents.ca

কিন্তু এটি কিছু বিবেচনায় সাফল্য বলে মনে হলেও এর অর্থ হলো এই শহরটি গুরুতর আবাসন সঙ্কটের ঝুঁকির দিকে এগুচ্ছে, বলেন সমীক্ষার সহ-লেখক ফ্রাঙ্ক ক্লেটন।

এই অঞ্চলটি ১৯৯০-এর দশকের শুরুর দিককার পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি দেখতে যাচ্ছে। ওই সময় বাড়ির দাম পড়ে যাওয়ায় নির্মাতারা বাড়ি তৈরি বন্ধ রাখে কিন্তু জনসংখ্যা বাড়তেই থাকে।

ক্লেটন বলেন, সে সময় লোকেরা একটি কক্ষে দু’জন বা তিন জন করে এমনকি একই বাড়িতে একাধিক প্রজন্মের পরিবার একসঙ্গে বসবাস করেছে।

আজকের দিনে প্রভাবটা আরও বিশেষভাবে তীব্র হতে পারে কারণ এরই মধ্যে তরুণতর কানাডীয়রা  তাদের বাবা-মা’র সঙ্গে বসবাস করছে।

রিয়েল এস্টেট ও নগর অর্থনীতিবিদ ক্লেটন টেলিফোনে হাফিংটন পোস্টকে বলেন, ’৯০-এর দশকে অভিবাসন বেশ জোরালোই ছিলো কিন্তু তখন সেটা আবাসনের চাহিদাকে ছাপিয়ে যায়নি।

এখনকার যে পরিস্থিতি তাতে আবাসন খাতে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা গত কয়েক বছরের মধ্যে সর্বনিন্ম। তবে ’৯০-এর দশকে অর্থনীতির অবস্থা এখনকার মত ছিলো না। তখন অর্থনীতি সঙ্কুচিত হয়ে আসছিলো। উত্তর আমেরিকাজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে এই অঞ্চলে দুই লাখ লোক চাকরি হারিয়েছিলো। সুদের হার ছিলো চড়া যার ফলে বন্ধকী কার্যক্রম অনেকটা ব্যাহত হওয়ার মত ব্যয়বহুল হয়ে পড়ে। এর ফল দাঁড়ায় এই যে, অধিবাসীরা বাধ্য হয়ে শেয়ার করে থাকলেও ডেভেলপাররা খালি কন্ডোর ভার বহন করতে পারে না।

বাড়ি বিক্রিতে বর্তমানের মন্দাবস্থাও একইরকম ফল বয়ে আনতে পারে। কানাডার বন্ধকী ও গৃহায়ন করপোরেশনের উপাত্ত থেকে জানা যাচ্ছে যে, বাড়ি বিক্রির পরিমাণ কমে আসার সঙ্গে সঙ্গে ডেভেলপাররা নতুন বাড়ি নির্মাণ কমিয়ে দিচ্ছে।

কানাডার বন্ধকী ও গৃহায়ন করপোরেশনের উপাত্ত অনুযায়ী, অন্টারিওতে চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে বাড়ি বিক্রিতে ধস নেমেছে আগের বছরের তুলনায় শতকরা ১৫ শতাংশ। আর খোদ টরন্টোতে কমেছে ২৪ শতাংশ। এদিকে নতুন বাড়ির নির্মাণকাজে মন্থরতা এসেছে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২২ শতাংশ।

ক্লেটন বলেন, “এর অর্থ হলো আমাদের আরও আবাসনের সরবরাহ দরকার। বিশেষ করে কম দামের আবাসনের ক্ষেত্রে।

ক্লেটন বলেন, এই অঞ্চল এখন একমাত্র যে ভালো কাজটি করতে পারে, কিন্তু তারা করছে না, সেটা হলো, একক পরিবারের থাকার মতো বহু অ্যাপার্টমেন্টের তিন/চারতলা বিশিষ্ট ভবনের একেকটি মহল্লা গড়ে তোলা।

তিনি বলেন, “জনসংখ্যার যে বৃদ্ধি ঘটছে এবং জমির দাম যে হারে বাড়ছে তাতে আপনাকে বিচিত্র ধরণের আবাসন সুবিধা সৃষ্টির অনুমোদন দিতে হবে।”