‘বেস্ট বিফোর’ ডেট এর সতর্কীকরণ তথ্য সংশয়ের সৃষ্টি করছে, খাবার ফেলে দিচ্ছে কানাডীয়রা

বিশ্বে যারা সবচেয়ে বেশি খাবার ফেলে দেয় কানাডীয়রা তাদের মধ্যে অন্যতম : বেস্ট বিফোর ডেট ও এক্সপায়ারী ডেট এক বিষয় নয়

জুলাই 6, 2018

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : জাতীয় পর্যায়ের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, খাবারের প্যাকেটে ‘বিশেষ কোনও তারিখের আগে ব্যবহার করা সর্বোত্তম’ এধরণের সংশয় সৃষ্টিকারী ও অপ্রয়োজনীয় লেবেল সেটে দেওয়াই কানাডায় খাবার ফেলে দেওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ। খবর কানাডিয়ান প্রেস এর।

কানাডায় বিপুল পরিমাণ খাদ্যবর্জ্য কমিয়ে আনার বিষয়ে জাতীয় এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, লেবেলে উল্লেখিত তারিখ থেকে কয়েকদিন পেরিয়ে গেলেও দৈয়ের কাপ ফেলে দেবেন না।

খাদ্যবর্জ্য শুন্যে নামিয়ে আনা সংক্রান্ত জাতীয় কাউন্সিল (The National Zero Waste Council) বলেছে, ‘বিশেষ কোনও তারিখের আগে ব্যবহার করা সর্বোত্তম’ (best-by labels) এধরণের সংশয় সৃষ্টিকারী ও অপ্রয়োজনীয় লেবেল সেটে দেওয়াই কানাডায় খাবার ফেলে দেওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ।

সমীক্ষা রিপোর্ট প্রণয়নে সহায়তাকারী ডেনিসি ফিলিপ বলেন, ওইসব লেবেলে “কী বোঝাতে চাওয়া হয়েছে সাধারণ মানুষ তা জানে না।” তার ভাষায়, “মানুষ যখন দেখে, অমুক তারিখের আগে ব্যবহার করা উত্তম, তখন তারা মনে করে, ওই তারিখের পরে খেলে স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা দেবে। কিন্তু সেটা সত্যি নয়।”

সমীক্ষায় দেখা গেছে, খবারের প্যাকেটের গায়ে ‘বিশেষ কোনও তারিখের আগে ব্যবহার করা সর্বোত্তম’ এধরণের সংশয় সৃষ্টিকারী লেবেল সেটে দেওয়াই কানাডায় খাবার ফেলে দেওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ। ছবি : অনলাইন

গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বে সবচেয়ে বেশি খাদ্যবর্জ্য সৃষ্টিকারীদের অন্যতম কানাডীয়রা। সাম্প্রতিক সমীক্ষার তথ্য বলছে, কানাডার প্রতিটি মানুষ বছরে প্রায় ৪০০ কেজি করে খাবার নষ্ট করে বা ফেলে দেয়। আর এই বিপুল খাদ্য সামগ্রীর বড় অংশ অর্থাৎ ৪৭ শতাংশ নষ্ট করা বা ফেলে দেওয়া হয় বাসাবাড়িতে।

বিপুল পরিমাণ খাদ্যবর্জ্য কীভাবে কমিয়ে আনা যায় তা নিয়ে ২০১৬ সাল থেকে কাজ করছে জিরো ওয়েস্ট কাউন্সিল। তাদের কাজের অংশ হিসাবে বিভিন্ন শিল্প গ্রুপ, সরকার, সংস্থা ও ব্যক্তিবিশেষের কাছ থেকে ৯০০ প্রস্তাবনা সংগ্রহ করা হয়েছে।

ফিলিপ বলেন, ‘বেস্ট-বিফোর’ লেবেলটাই আসল খলনায়ক। মানুষ ধরে নেয় যে, প্যাকেটে উল্লেখিত নির্দিষ্ট তারিখ পেরিয়ে গেলে খাবার নষ্ট হয়ে যায়। ভোক্তাদের কোনও ধারণা নেই যে, তারা যেটা দেখছে সেটা আসলে কী। ব্যতিক্রমী কিছু পণ্য ক্ষেত্রে যেমন ডিমের ক্ষেত্রে বেস্ট-বিফোর ডেট লেবেল দিয়ে এর খাদ্যমান বোঝানো হয়, নিরাপত্তা নয়। এমন অনেক পণ্যের প্যাকেটে ওই লেবেল থাকে যেখানে এটার আদৌ প্রয়োজন নেই।

ফিলিপ বলছেন, “একটা চিপস নির্দিষ্ট তারিখের আগে খেলে হয়তো সামান্য বেশি মুচমুচে লাগবে, তারিখের পরে খেলে সামান্য কম মুচমুচে। আর দৈ যে কত বেশি দিন ভালো থাকে জানলে আপনি বিস্মিত হবেন।”

বেস্ট বিফোর ডেট বলতে মূলত বোঝায় ঐ নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে খাবারের গুণ ভাল থাকবে। এর সাথে খাদ্য নিরাপত্তার বিষয় জড়িত নয়। কিন্তু এক্সপায়ারী ডেট’ হলো ভিন্ন বিষয়। যেমন ঔষধের প্যাকেটের গায়ে এক্সপায়ারী ডেট লেখা থাকে। ঐ এক্সপায়ারী ডেট এর পরে ঔষধ সেবন করা নিরাপদ নয়। আবার কিছু কিছু ঔষধ আছে যেগুলো এক্সপায়ারী ডেট পার হবার পরও  কয়েক মাস পর্যন্ত নিরাপদ থাকে। তবে এ বিষয়ে ফার্মাস্টিদের সঙ্গে আলাপ করে নিতে হবে।

পণ্যের উপস্থাপনা এবং এর লেবেলের ভাষা উভয়ই অস্পষ্ট ও দ্ব্যর্থবোধক। মানুষ কী দেখছে সে সম্পর্কে তাদের কোনও ধারণা নেই। একটি পণ্যের গায়ে হয়তো লেখা আছে ১/৩-এর আগে ব্যবহার করা উত্তম। এখানে এটি কি জানুয়ারির ৩ তারিখ না কি মার্চের ১ তারিখ সেটা স্পষ্ট নয়।

ফিলিপ-এর পরামর্শ, কানাডাকে তারিখ ও পরিভাষার মানদ- ঠিক করতে হবে। তিনি বলেন, “যেসব পরিভাষা ব্যবহার করা হচ্ছে, তারিখ লেখার যে বিন্যাস, যে পণ্যের গায়ে এগুলো লেখা হচ্ছে এবং এগুলোর কী অর্থ তার সবটাতেই স্পষ্টতার অভাব রয়েছে। এর ফলে ভাল খাবারও ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়া হচ্ছে।

hummus (এক ধরণের ঘন পেস্ট) এর মত খাবারগুলো পুরোপুরি ভালো থাকতেই বেস্ট-বিফোর তারিখের আগে আগে ফেলে দেওয়া হচ্ছে।

ফিলিপ বলেন, “কানাডায় তারিখ ও পরিভাষার মানদ- ঠিক করতে হবে যেমনটা এরই মধ্যে করা হচ্ছে ইউরোপে এবং যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে খাবারের নিরাপত্তা ও মান বোঝাতে লেবেলে লেখা হচ্ছে, ওমুক তারিখের মধ্যে ‘ব্যবহার করুন’, ‘ওমুক তারিখের পর ফ্রিজে রাখুন’ অথবা ‘‘পুরো স্বাদ পেতে হলে ওমুক তারিখের মধ্যে ব্যবহার করুন’।