বার্থ ট্যুরিজম : কানাডার ভূখন্ডে জন্মগ্রহণ করলেই নাগরিকত্ব দিতে হবে এমন বাধ্যবাধকতা থাকার প্রয়োজন নেই

11 অক্টোবর, 2018

৮ই সেপ্টেম্বর ২০১৮ : কানাডার ভূখন্ডে জন্মগ্রহণ করলেই কাউকে নাগরিকত্ব দিতে হবে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী তার কোনও প্রয়োজন নেই। কেন্দ্রীয় সরকার সুপ্রিম কোর্টে এই যুক্তি উপস্থাপন করেছে। সম্প্রতি রক্ষণশীল দল তথাকথিত বার্থ ট্যুরিজম (বাচ্চা জন্ম দেওয়ার জন্য বেড়াতে আসা) ঠেকানোর লক্ষ্যে যে প্রস্তাবনা গ্রহণ করেছে কেন্দ্রীয় সরকারের ওই যুক্তির কারণে অনিবার্যভাবে সেটিকেই মদদ দেওয়া হবে। খবর কানাডিয়ান প্রেস এর।

বিশ্বের যে তিন ডজনেরও কম সংখ্যক দেশ জন্মস্থানের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব দেওয়ার নীতি অনুসরণ করে কানাডা তার মধ্যে অন্যতম। অস্ট্রেলিয়া ও ব্রিটেনসহ কিছু দেশ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সেসব দেশে জন্ম নেওয়া শিশুদের আপনাআপনি নাগরিকত্ব লাভের নীতি সংশোধন বা বর্জন করেছে। কানাডার কেন্দ্রীয় সরকার একটি মামলায় এসব বক্তব্য তুলে ধরেছে। ওই মামলায় নিষ্পত্তি করা হবে যে, একজন রুশ গুপ্তচরের টরন্টোতে জন্ম নেওয়া ছেলেরা কানাডীয় নাগরিক কিনা।

আদালতে প্রদত্ত কেন্দ্রীয় সরকারের বক্তব্যে উদাহরণ দিয়ে বলা হয়, “বস্তুত কোনও ইউরোপীয় দেশই যোগ্যতাহীন কাউকে আপনাআপনি জন্মগত নাগরিকত্ব দেয় না এবং সেটা দেওয়ার কোনও বাধ্যবাধকতাও তাদের নেই। মাত্র ৩৪টি দেশ বাবা-মার জাতীয়তা বা মর্যাদা বিবেচনায় না নিয়েই স্বয়ংক্রিয়ভাবে জন্মগত নাগরিকত্ব দিয়ে থাকে। এই অনুশীলন একটি রীতিমাফিক আন্তর্জাতিক আইনের বিধি হবার মত যথেষ্ট সঙ্গতিপূর্ণ ও অভিন্ন নয়।”

রুশ গুপ্তচরের সন্তান আলেক্সান্ডার ও টিমোথি ভ্যাভিলভ অন্টারিওতে জন্মগ্রহণ করলেও তাদেরকে কানাডার নাগরিক হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া যাবে না মর্মে যুক্তি দেখাতে গিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের আইনজীবীরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে নাগরিকত্ব পাবার ধারণাকে কম গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে তুলে ধরছেন।

রক্ষণশীল দল এক প্রস্তাবে সরকারের প্রতি এমন আইন করার আহবান জানিয়েছে যে, “বাবা-মার মধ্যে অন্তত একজন কানাডার নাগরিক বা স্থায়ী বাসিন্দা হিসাবে এদেশে জন্মগ্রহণ না করে থাকলে তাদের সন্তানকে জন্মগত নাগরিকত্বের অধিকার দানের অবসান ঘটানো হোক।” এর পরই লিবারেল দলের কেন্দ্রীয় সরকার বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্তমূলক ভিন্ন সুরে কথা বলতে শুরু করেছে।

রক্ষণশীল দলের নেতা এন্ড্রু শিয়ার বলেন, স্বয়ংক্রিয়ভাবে এদেশের নাগরিকত্ব লাভের জন্য নারীদের কানাডায় এসে বাচ্চার জন্ম দেওয়ার ঘটনা বন্ধ করাই তাদের প্রস্তাবের অন্যতম লক্ষ্য।

তবে উদ্বাস্তু ও মানবাধিকারের প্রবক্তারা রক্ষণশীল দলের ওই প্রস্তাবের বিরোধিতা করছেন। তাদের বক্তব্য, বাচ্চা জন্ম দেওয়ার জন্য এদেশে বেড়াতে আসার মত কোনও সমস্যা আসলেই নেই যার সমাধান করতে হবে। বরং রক্ষণশীলদের ওই নীতির কারণে কানাডায় জন্মগ্রহণকারী অনেক শিশুর রাষ্ট্রহীন হয়ে

পড়ার দ্বার খুলে যাবে।

জন্মগত অধিকার কোন পাথরে খোদাই করা নীতি নয়

রক্ষণশীল দলের প্রস্তাব পাশ হবার পর অভিবাসন বিষয়ক মন্ত্রী আহমদ হুসেনের মুখপাত্র ম্যাথিউ জেনেস্ট বলেন, “রক্ষণশীলরা সেই হারপার সরকারের প্রতিষ্ঠিত পথেই ফিরে যাচ্ছে এটা সত্যিই লজ্জার। হারপার সরকারের নীতিতে সেইসব লোকেদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার কথা ছিলো যারা কেবল কানাডাকেই নিজের দেশ বলে মনে করে।”

প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর মুখ্য সচিব জেরার্ড বাটস রক্ষণশীল দলের নীতিকে “একটি গুরুতর ভুল এবং যন্ত্রণাদায়ক ধারণা” বলে অভিহিত করেন।

অবশ্য সুপ্রিম কোর্টে কেন্দ্র যে বক্তব্য উপস্থাপন করেছে তাতে জোরালোভাবেই বলা হয়েছে যে, স্বয়ংক্রিয়ভাবে জন্মগত অধিকার লাভের আইনী  ধারণা পাথরে খোদাই করা কোনও নীতি নয়।

এতে উল্লেখ করা হয় যে, যেসব দেশের মাটিতে জন্মগ্রহণকারী শিশুকে নাগরিকত্ব দেওয়া হয় সেসব দেশেও ব্যতিক্রমী ব্যবস্থা গ্রহণ নিষিদ্ধ নয়। ভাষ্যটা হলো, “বিভিন্ন দেশের নাগরিকত্ব প্রদানের নীতি পর্যালোচনায় দেখা যায়, জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রেও অনেক ভিন্নতা ও বিধিনিষেধ রয়েছে।”

ভ্যাভিলভ ভ্রাতৃদ্বয়ের মামলায় সুপ্রিম কোর্টে আগামী ডিসেম্বরে মৌখিক শুনানী অনুষ্ঠিত হবে।

কেন্দ্রীয় সরকারের লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, “সংক্ষেপে বলা যায়, এদেশে জন্মালেই তাকে নাগরিকত্ব দিতে হবে আন্তর্জাতিক আইনে এমন কিছুই নেই, আর বিদেশী কোনও সরকারের অধীনে চাকরিরত বাবা-মার সন্তানকে নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রসঙ্গে খুব সামান্যই আছে।”

দু’বছর আগে রক্ষণশীল দলের এমপি এলিস ওয়ং জন্মগত অধিকার হিসাবে নাগরিকত্ব দেওয়ার বিরুদ্ধে যে আবেদন জানান সে সম্পর্কে আনুষ্ঠানিক জবাব দিতে গিয়ে সরকার ওই ধারণা সম্পর্কে অপেক্ষাকৃত মনোহর দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করে।

ওই সময়ের অভিবাসন বিষয়ক মন্ত্রী জন ম্যাককালাম নির্দিষ্ট করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকো এবং একইসঙ্গে আমেরিকার আরও কিছু দেশ যেমন ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা জন্মস্থানের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব দিয়ে থাকে।

ম্যাককালাম আরও বলেন, “আসন্নপ্রসবা বিদেশী নারীরা বাচ্চার জন্ম দিতে কানাডায় আসছে এমন দৃষ্টান্ত থাকলেও কানাডায় জন্ম নেওয়া বাচ্চার নাগরিকত্ব পাবার জন্য বাবা-মার এদেশের নাগরিক বা স্থায়ী বাসিন্দা হবার প্রয়োজনীয়তা আরোপ করা হলে সেটা কানাডীয় নাগরিকত্ব পাওয়ার ক্ষেত্রে একটি বড় ধরণের পরিবর্র্তনের  প্রতিনিধিত্ব করবে।”