পিল অঞ্চলে মুসলিম-বিরোধী বিদ্বেষপ্রসূত হামলা ৯১ ভাগ বেড়েছে

আগস্ট ৪, ২০১৮

পিল অঞ্চলে বিদ্বেষপ্রসূত হামলার ঘটনা ব্যাপকভাবে বেড়েছে এবং ২০১৭ সালে আগের বছরের চেয়ে ৬৩ শতাংশ বেশি হামলার ঘটনা লিপিবদ্ধ করেছে পুলিশ। এসব হামলার ৯০ শতাংশেরও বেশি ঘটেছে মুসলমানদের বিরুদ্ধে। পিল-এর পুলিশ সার্ভিস বোর্ডের এক রিপোর্টে এসব তথ্য প্রকাশ পেয়েছে।

সম্প্রতি প্রকাশিত নতুন উপাত্তে দেখা যায়, ২০১৭ সালে পুলিশের কাছে রিপোর্ট হওয়া হামলার ঘটনা ছিলো ১৫৮টি- যা আগের বছরের চেয়ে ৫৯টি বেশি। খবর সিবিসি নিউজের।

হামলার ঘটনার মধ্যে বেশিরভাগই হলো সম্পত্তি নিয়ে দুষ্কর্ম ও দেওয়াল লিখনের মত ঘটনা যার সংখ্যা হলো ১০৬টি। পিল পুলিশের ধারণা, সন্দেহভাজন দুজন লোক হামলার ঘটনাগুলোর ৬০ শতাংশের জন্য দায়ী।

পিল পুলিশের বৈচিত্র্য, সাম্য ও অন্তর্ভুক্তি ব্যুরোর ফেরাস ইসমাইল বলেন, “কিছু দিক থেকে এগুলো মোটেই কোনও বড় বিস্ময়ের বিষয় নয়। আমরা যা দেখছি হামলার সংখ্যা তারই প্রতিফলন।”

তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে চরম ডানপন্থী আন্দোলনের উত্থানও এ ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখে থাকতে পারে।

বিদ্বেষপ্রসূত হামলার সংখ্যা উদ্বেগজনক মনে হলেও ইসমাইল উল্লেখ করেন যে, ওই অঞ্চলে সংঘটিত সব অপরাধের মধ্যে এর হার হলো ০.৪ শতাংশমাত্র।

টরন্টোতেও ২০১৭ সালে এধরণের হামলার ঘটনা বেড়ে যায়।

পিল বোর্ডের একটি স্কুলে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের প্রতিবাদে একটি কোরআন শরীফ ছিড়ে ফেলেন জনৈক মহিলা। গত বছর স্কুলে একটি মিটিং চলাকালে এই ঘটনা ঘটে। ছবি : ইমাম শেখ ওমর সুবেদার এর ফেসবুক থেকে নেয়া

মুসলিম-বিরোধী ঘটনা বেড়েছে ৯১ শতাংশ

পিল অঞ্চলে সংঘটিত বিদ্বেষপ্রসূত হামলার ঘটনাবলীর বেশিরভাগই ধর্মীয় চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ঘটানো হচ্ছে।

পুলিশের রিপোর্টে সবচেয়ে নাটকীয় যে পরিবর্তন ঘটেছে সেটি হলো মুসলিমবিরোধী হামলার ঘটনা ৯১ শতাংশ বেড়ে যাওয়া। অথচ আগের বছর এধরণের মাত্র পাঁচটি ঘটনা পুলিশে রেকর্ড করা হয়।

ইসমাইল বলেন, “এটা অনুধাবন করা কঠিন। এসব হামলার অনেকগুলোই চরম ডানপন্থী আন্দোলনের কারণে ঘটেছে। তারা যেসব তথ্য সম্প্রচার করে এবং যেসব বক্তৃতাবাজী করে সে কারণে।”

ব্রাম্পটন মাল্টিকালচারাল কমিউনিটি সেন্টারের পারিবারিক সহায়তা বিষয়ক উপদেষ্টা দিল নওয়াজ কামার বলেন, পিল অঞ্চলে চরম-ডানপন্থী গ্র“পের উত্থানের বিষয়ে তিনি অবগত। সিবিসি টরন্টোকে তিনি বলেন, “মানুষ তার নীতিগত বিশ্বাসের ব্যাপারে খুবই আক্রমণাত্মক এবং তারা তাদের বিশ্বাসের কারণে অন্যদের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে চায়।”

২০১৭ সালের মার্চে পিল-এর ডিস্ট্রিক্ট স্কুল বোর্ডের (পিডিএসবি) এক সভায় কতিপয় লোক প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে পবিত্র কুরআনের অনেক পাতা ছিঁড়ে ফেলে। তারা মুসলিম শিক্ষার্থীদেরকে শুক্রবারে জুম্মার নামাজ পড়ার জন্য স্কুলে জায়গা করে দেওয়ার ২০ বছরের পুরনো নিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছিলো।

এরপর এপ্রিলে পিডিএসবির সঙ্গে ধর্মীয় বিষয়ে কিছু সুবিধা আদায়ের জন্য আলোচনা করার কারণে মিসিসগার এক ইমামকে অনলাইনে হুমকি দেওয়া হয়।

পিল-এর পুলিশ প্রধান ওই সময় এসব বিদ্বেষপ্রসূত ঘটনাকে “যন্ত্রণাদায়ক” এবং এগুলো মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য “ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের” বিষয় বলে উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, “সবারই এটা জানা থাকা উচিৎ যে, বিদ্বেষপ্রসূত এসব ঘটনা আমাদের নিরাপত্তাজনিত অনুভূতির লংঘন এবং এটা বরদাশত করা হবে না।” তিনি বলেন, “বিভিন্ন ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্পর্ক জোরদার করা অত্যন্ত জরুরী।”