পিকারিং পারমাণবিক স্থাপনায় ফলস এলার্ম : জরুরী অবস্থার মোকাবিলায় অন্টারিও’র প্রস্তুতি কতটুকু?
মার্চ১৪, ২০২০
গত ১২ জানুয়ারী রোববার ভোরে অন্টারিওজুড়ে একটি বার্তা পাঠানো হয়। এতে টরন্টোর পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত পিকারিং এর একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে সংঘটিত ঘটনার বিষয়ে জনগণকে সতর্ক করা হয়।
সতর্কবার্তাটি ভুল ছিলো বলে পরে জানা গেলেও এটি একটি প্রশ্নের উদ্রেক করেছে যে, যদি পারমাণবিক দুর্ঘটনা ঘটে তবে সে ক্ষেত্রে এই প্রদেশের প্রস্তুতি কতটা।
পারমাণবিক জরুরী অবস্থা মোকাবিলায় অন্টারিওর কোনও পরিকল্পনা আছে কি?
হ্যাঁ, আছে। সেটি হলো পারমাণবিক জরুরী অবস্থায় সাড়াদান সম্পর্কিত প্রাদেশিক পরিকল্পনা। এটি ২০০ পৃষ্ঠার একটি দলিল যাতে পারমাণু স্থাপনা আছে এমন প্রতিটি পৌরসভার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এটি ২০১৭ সালে সর্বশেষ পর্যালোচনা করা হয়। তবে অন্টারিওর ভেতরে এবং আশেপাশে অবস্থিত পাঁচটি পারমাণু স্থাপনার প্রতিটিরই এধরণের নিজস্ব পরিকল্পনা আছে। খবর সিবিসি নিউজের।
কোনও হুমকি দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে কী ঘটবে?
কোনও পরমাণু স্থাপনায় যদি দুর্ঘটনা ঘটে তাহলে অন্টারিওর বিদ্যুৎ উৎপাদন কর্তৃপক্ষ ১৫ মিনিটের মধ্যে স্থানীয় ও প্রাদেশিক সরকারকে বিষয়টি জানিয়ে দেবে। এটি আইন মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি সংস্থা।
প্রাদেশিক সরকারের অন্টারিও জরুরী ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ সে ক্ষেত্রে পারমাণবিক জরুরী অবস্থার জন্য জননিরাপত্তার দায়িত্ব নেবে এবং যথাযথ সরকারি পদক্ষেপ কী হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
এই কর্তৃপক্ষ পরমাণু জরুরী অবস্থায় সাড়াদান সম্পর্কিত প্রাদেশিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে। কারণ তারাই পরমাণু জরুরী পরিস্থিতিতে যে কোনও ধরণের প্রতিক্রিয়া দেখানোর দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান।
স্থানীয় জরুরী ব্যবস্থাপনা: পুলিশ, দমকল ও অ্যাম্বুলেন্স চালকরা জরুরী পরিকল্পনা গ্রহণ ও যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করবে।
কী ধরণের সতর্কীকরণ জারি করা হবে?
ডারহাম ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট-এর পরিচালক জেমস কিলগোর বলেন, প্রতিটি
পরমাণু চুল্লির চারপাশে তিন মাইল পর্যন্ত দূরত্বের মধ্যে জনগণকে সতর্ক করার পরিকল্পনা রয়েছে।
তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ব্রুস পাওয়ার, পিকারিং ও ডারলিংটনের স্থাপনায় সাইরেন বাজিয়ে সতর্কবার্তা দেয়ার ব্যবস্থা আছে।
১০ কিলোমিটারের মধ্যে বসবাসকারী নাগরিকদের বাড়িতে টেলিফোন কল করে জানানো হবে। কিলগোর জানান, তার অঞ্চলে (ডারহাম স্থাপনায়) টেলিফোনের অটো ডায়ালিং ব্যবস্থা আছে যেটি কেন্দ্রের চারদিকে ১০ কিলোমিটারের মধ্যে বসবাসকারী প্রত্যেক নাগরিকের বাড়িতে ল্যান্ডলাইনে কল দিতে পারে।
প্রদেশটিতে এমন সতর্কীকরণ ব্যবস্থা প্রস্তুত আছে যা মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের কাছে সতর্কবার্তা পৌঁছাতে সক্ষম।
এছাড়াও টরন্টো একটি ইনডোর সতর্কীকরণ ব্যবস্থা ব্যবহার করবে – এর ফলে নগরীতে সাইরেন বাজানোর দরকার পড়বে না। কারণ এই নগর নিকটস্থ পরমাণু স্থাপনার তিন কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত নয়।
এছাড়া রেডিও, টেলিভিশন ও সামাজিক মাধ্যমে জরুরী বুলেটিন উপর্যুপরি প্রচার করা হবে।
পরমাণু চুল্লির চারপাশে তিন মাইল পর্যন্ত দূরত্বের মধ্যে জনগণকে সতর্ক করার পরিকল্পনা রয়েছে। ছবি: nowtoronto
অপসারণের কি ব্যবস্থা?
পরমাণু কেন্দ্রের আশেপাশের জায়গাগুলো থেকে তাৎক্ষণিকভাবে জনগণকে সরিয়ে নেয়া হবে। তবে অবস্থার পরিবর্তন হলে সম্প্রসারিত এলাকা থেকেও মানুষকে সরিয়ে নেয়া হবে। এটা করা হবে বিশেষ করে যদি বাতাসের গতি পাল্টে যায় সে ক্ষেত্রে।
কিলগোর বলেন, “লোকজনকে সরিয়ে নেয়ার দরকার হলে সরকার সেই সিদ্ধান্ত নেবে এবং অনেকগুলো সংস্থা একসঙ্গে যানচলাচল অবাধ করার মাধ্যমে অপসারণের কর্মকান্ড বাস্তবায়নে অংশ নেবে।”
তবে গুরুতর ধরণের বিরূপ আবহাওয়ার মত কোনও কারণে অপসারণের কাজ খুব বেশি বিপজ্জনক মনে হলে কিছু লোককে স্বল্প সময়ের জন্য নিজেদের ঘরে অবস্থান করার নির্দেশনা দেয়া হবে।
খাবারে তেজস্ক্রিয়তার সংক্রমণ ঘটলে পরিস্থিতি মোকাবিলার কোনও প্রস্তুতি আছে কি?
খাবার, পানি, দুধ বা অন্য পণ্যসামগ্রী তেজস্ক্রিয়তায় সংক্রমিত হলে সরকারের পক্ষ থেকে জনগণকে কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে, সরাসরি বৃষ্টির পানি ব্যবহার করেন এমন লোকেদের খাবার পানি সরবরাহ ব্যবস্থার সুরক্ষা এবং অত্যাবশ্যকীয় নয় এমন স্থানীয় পণ্যদ্রব্য যেমন খামারের পশুর দুধ, বৃষ্টির পানি এবং পশুখাদ্য ইত্যাদি গ্রহণ ও তার সরবরাহের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হতে পারে।
বিকিরণজনিত বিষক্রিয়া রোধে কোনও কিছু ব্যবহার করা যাবে কি?
কানাডার পরমাণু নিরাপত্তা কমিশনের মতে, বিকিরণজনিত জরুরী পরিস্থিতিতে বাতাসে ছড়িয়ে পড়তে পারে রেডিওঅ্যাক্টিভ আয়োডিন। সেক্ষেত্রে থাইরয়েড গ্ল্যান্ডের সুরক্ষায় পটাশিয়াম আয়োডাইড ব্যবহার করা যেতে পারে।
কানাডার পরমাণু নিরাপত্তা কমিশন ও অন্টারিও সরকার ২০১৫ সালে একমত হয় যে, সবগুলো পরমাণু স্থাপনার চারদিকে ১০ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত প্রতিটি বাড়ি ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে মজুদ রাখার জন্য বিনামূল্যে পটাশিয়াম আয়োডাইড দেওয়া হবে। ক্যালগোর জানান, প্রতিটি বাড়ি ও প্রতিষ্ঠানে ছয় মাস পর পর পটাশিয়াম আয়োডাইডের নতুন প্যাকেট ডাকযোগে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
রেডিওঅ্যাক্টিভ আয়োডাইড থেকে থাইরয়েড গ্ল্যান্ড রক্ষার জন্য পটাশিয়াম আয়োডাইড ব্যবহার করা যেতে পারে। কানাডার পরমাণু নিরাপত্তা কমিশনের মতে, বিকিরণজনিত জরুরী পরিস্থিতিতে বাতাসে রেডিওঅ্যাক্টিভ আয়োডিন ছড়িয়ে পড়তে পারে। (আইরিন থমাইডিস/সিবিসি)
কোনও পরমাণু কেন্দ্রের ১০ থেকে ৫০ কিলোমিটারের মধ্যে বসবাসকারী নাগরিকরা পটাশিয়াম আয়োডাইড চাইলে অনলাইনে অর্ডার দিতে পারেন।
বাসিন্দাদেরকে তাদের পোস্টাল কোড টাইপ করতে হবে। তাহলে তাদের জানিয়ে দেওয়া হবে যে, তারা এমন এলাকায় বসবাস করেন কিনা যাতে তারা বিনামূল্যে আয়োডাইড পাবার যোগ্য। যদি যোগ্য হন তাহলে ডাকযোগে প্যাকেট পাঠানো হবে।
কারও পটাশিয়াম আয়োডাইড খাওয়া দরকার কিনা সেটি কে নির্ধারণ করবে?
অন্টারিও প্রদেশের চিফ মেডিক্যাল অফিসার অন্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে ঠিক করবেন লোকেদের পটাশিয়াম আয়োডাইড গ্রহণ করা দরকার কিনা। প্রাদেশিক পরিকল্পনার তথ্য অনুযায়ী, বিকিরণ শুরু হওয়ার পর প্রতি দুই থেকে ছয় ঘণ্টা পর পর পটাশিয়াম আয়োডাইডের পিল খাওয়া উচিৎ। এক ডোজের মেয়াদ থাকে আনুমানিক ২৪ ঘণ্টা।
কোনও মহড়ার আয়োজন হয় কি?
কিলগোর জানান, হ্যাঁ, যেমন ডারহামে বছরে দু’বার করে মহড়ার আয়োজন করা হয়। একটি বসন্তে, আরেকটি হেমন্তে।
তিনি বলেন, “মহড়ার পাশাপাশি ব্যাপকভিত্তিক জনশিক্ষা ও জনসচেতনতার অনুশীলন করা হয়। মিডিয়া ও সরাসরি মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় যাতে তারা জানতে পারে আমরা তাদের জন্য এই মহড়ার আয়োজন করেছি।”