নেকাব বিরোধী রিলিজিয়াস নিউট্রালিটি আইন এর বিরুদ্ধে সাংবিধানিক চ্যালেঞ্জ

বিষয়টি সতর্কতার সঙ্গে পর্যালোচনা করছে অটোয়া

ডিসেম্বর ১, ২০১৭

বিল ৬২ এর বিরুদ্ধে মন্ট্রিয়লে বিক্ষোভ মিছিল। ছবি : কানাডিয়ান প্রেস

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : অটোয়ার ফেডারেল সরকার সতর্কতার সঙ্গে পর্যালোচনা করছে কুইবেকের নেকাব বিরোধী আইন রিলিজিয়াস নিউট্রালিটি এর বিরুদ্ধে দায়ের করা সাংবিধানিক চ্যালেঞ্জকে। স্থানীয় মুসলিম এ্যান্ড সিভিল লিবার্টি গ্র“প কুইবেকের সুপরিয়র কোর্টে গত ৭ নভেম্বর এই আইনের এর বিরুদ্ধে এই সাংবিধানিক চ্যালেঞ্জ দায়ের করে। রিলিজিয়াস নিউট্রালিটি আইন এর (যা বিল ৬২ নামেও পরিচিত) অংশবিশেষ এর বিরুদ্ধে কুইবেক চার্টার অব হিউম্যান রাইটস এবং কানাডিয়ান চার্টার অব রাইটস এ্যান্ড ফ্রিডমস এর কথা উল্লেখ করে এই চ্যালেঞ্জ দায়ের করা হয়। খবর সিবিসি নিউজের।

গত ১৮ অক্টোবর কুইবেক প্রভিন্সের পার্লামেন্টে রিলিজিয়াস নিউট্রালিটি বিল পাশ হয়। বিলের কোথাও অবশ্য নেকাব বা বোরখার কাথা বলা হয়নি স্পষ্ট করে। বলা হয়নি যে মুসলিম মহিলাগণ রাস্তায় বোরখা পরে এবং নেকাব দিয়ে মুখ ঢেকে বেড় হতে পারবেন না। যে কথা বলা হয় সেটি হলো, বাসে বা ট্রেনে উঠতে হলে কিংবা কোন সরকারী অফিসে গিয়ে সেবা পেতে হলে কিংবা সরকারী অফিসে কাজ করতে হলে মুখ ঢেকে রাখা যাবে না। অর্থাৎ নিজের পরিচয় প্রকাশ করতে হবে। পর্দার আড়ালে থেকে সেবা নেওয়া যাবে না এবং সেবা দেওয়া যাবে না।

বিল ৬২ এর বিরুদ্ধে মন্ট্রিয়লে বিক্ষোভ মিছিল। ছবি : কানাডিয়ান প্রেস

রিলিজিয়াস নিউট্রালিটি বিল এ আরো যা বলা হয় তা হলো:

– মুখ ঢাকা অবস্থায় যে কেউ সরকারী লাইব্রেরীতে প্রবেশ করতে পারবেন। কিন্তু লাইব্রেরী থেকে কোন বই ধার করতে পারবেন না।

– মুখ ঢাকা আবস্থায় যে কেউ হাসপাতালের ওয়েটিং রূমে বসতে পারবেন বা অপেক্ষা করতে পারবেন। কিন্তু হাসপাতালের কোন ডাক্তার বা স্টাফের সঙ্গে যোগাযোগ বা বাক্য বিনিময় করতে পারবেন না।

– মুখ ঢাকা অবস্থায় যে কেউ ডে কেয়ার সেন্টারে বাচ্চা রেখে যেতে পারবেন। কিন্তু সেই বাচ্চাকে যখন নিতে আসবেন তখন মুখ ঢাকা থাকলে তার কাছে বাচ্চাকে দেয়া হবে না।

বিল পাশের পর চারদিক থেকে নিন্দা যখন তুঙ্গে উঠে তখন কুইবেকের আইন মন্ত্রী স্টিফেনী ভ্যালি কিছুটা নমনীয় হন এবং রিলিজিয়াস নিউট্রালিটি আইনে কিছুটা ছাড় দেয়ার ইঙ্গিত দেন। তিনি বলেন, নেকাব পরা মহিলাদেরকে বাসে বা সাবওয়েতে উঠার সময় তাদের মুখ প্রদর্শন করতে হবে না। তবে তাদের হ্রাসকৃত ভাড়া বা মেট্রো পাস সংক্রান্ত কারণে ফটো আইডি’র প্রয়োজন পড়লে তা যাচাই বা প্রমাণ করার জন্য মুখ প্রদর্শন করতে হবে। মুখ প্রদর্শন করার পর ড্রাইভার তার পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হলে উক্ত মহিলা যাত্রী পুনরায় মুখ ঢেকে বাসে বা সাবওয়েতে যাত্রা করতে পারবেন।

আইন মন্ত্রী স্টিফেনী ভ্যালি আরো বলেন, হাসপাতালে সেবা পেতে হলে মুখের পর্দা বা আচ্ছাদন অবশ্যই সরাতে হবে যখন কোন ব্যক্তি হাসপাতালের কোন কর্মীর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করেন। এর পরবর্তী পর্যায়ে অর্থাৎ পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর সেই ব্যক্তি যখন ওয়েটিং রূমে ফিরে যাবেন তখন তিনি আবার মুখের পর্দা বা আচ্ছাদন ব্যবহার করতে পারবেন। তবে অবশ্যই এমার্জেন্সী বা জরুরী চিকিৎসা প্রত্যাখান করা যাবে না।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও ছাত্র-ছাত্রীদেরকে তাদের মুখের পর্দা বা আচ্ছাদন সরাতে হবে যখন তারা শ্রেণী কক্ষে অবস্থান করে। এই আইন সকল সরকারী স্কুল কলেজ ও ইউনিভার্সিটিতে কার্যকর হবে। একই আইন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তিদের বেলায়ও প্রযোজ্য হবে।

ফেডারেল সরকারের আইন মন্ত্রী জডি উইলসন এক বিবৃতিতে বলেন, আমরা বিল ৬২ এর অগ্রগতির উপর নজর রাখছি। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ইতিমধ্যেই বলেছেন, আমারা বিশ্বাস করি না জনগণ কি পোষাক পরবেন বা পরবেন না সেটা নিয়ে সরকারের কিছু বলার আছে।

জডি উইলসন আরো বলেন, আমরা সাংবিধানিক চ্যালেঞ্জ এর বিষয়টি সম্পর্কে সতর্ক আছি এবং তা পর্যালোচনা করছি। আইন মন্ত্রী হিসাবে আমি কানাডার চার্টার অব রাইটস এ্যান্ড ফ্রিডমস অধিনে সকল কানাডিয়ান এর অধিকার রক্ষায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

কুইবেকের আইন মন্ত্রী স্টিফেনী ভ্যালি বলেন, রিলিজিয়াস নিউট্রালিটি আইনটি তখনই প্রযোজ্য হবে যখন কারো পরিচয় নিশ্চিত এর প্রয়োজন দেখা দিবে। এবং একই সাথে নিরাপত্তার বিষয়টিও এর সঙ্গে জড়িত। এই আইন কাউকে উৎপীড়ন করার জন্য করা হয়নি। তিনি আরো বলেন, আমি নিশ্চিত যে রিলিজিয়াস নিউট্রালিটি আইনের বিরুদ্ধে দায়ের করা সাংবিধানিক এই চ্যালেঞ্জ আদালতে টিকবে না।

বিল ৬২ কুইবেকের পার্লামেন্টে পাশ হওয়ার পর যারা বোরখা এবং সেই সাথে নেকাব পরেন তারা এখন অনিশ্চয়তা ও আতংকের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। এমনকি যারা হিজাব পরেন তারাও। তাৎক্ষনিক সিদ্ধান্তে এখন তারা আর রাস্তায় বের হচ্ছেন না। বের হওয়ার আগে একাধিকবার চিন্তা করছেন বের হবেন কি হবেন না। অনেকে ইতিমধ্যে বাইরে বের হওয়ার মাত্রা কমিয়ে দিয়েছেন।

উল্লেখ্য যে, অনেক ইসলামী চিন্তাবিদই বলে আসছেন, “কোরআনের বক্তব্যের সঙ্গে নেকাবের কোন মিল খুঁজে পাওয়া যায় না। বরং বৈপরীত্য লক্ষ্য করা যায়। কোরআনে মুসলিম নারীদেরকে শালীন পোষাক পরার জন্য বলা হয়েছে এবং মাথার চুল ঢেকে রাখার কথাও বলা হয়েছে। কোরআনে বলা হয়নি মুসলিম নারীদেরকে মুখ ঢেকে  রাখতে হবে।”