নাগরিক অধিকার আদায়ের পথিকৃৎ কৃষ্ণাঙ্গ নারী ভাইয়লা ডেসমন্ড এর প্রতিকৃতি ছাপা হবে কানাডিয়ান মুদ্রায়

রানী ব্যতিত তিনিই প্রথম কানাডিয়ান নারী যার প্রতিকৃতি ছাপা হবে মুদ্রায়

জানুয়ারী ৬, ২০১৭

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : কানাডায় নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠা আন্দোলনের একজন পথিকৃৎ, কৃষ্ণাঙ্গ নারী ভাইয়লা ডেসমন্ড এর প্রতিকৃতি ছাপা হবে কানাডিয়ান মুদ্রায়। দশ ডলার মূল্যমানের মুদ্রায় তার প্রতিকৃতি দেখা যাবে ২০১৮ সালে। বর্তমানে দশ ডলার মূল্যমানের মুদ্রায় যার প্রতিকৃতি রয়েছে তিনি হলেন স্যার জন এ. ম্যাকডোনাল্ড। তিনি ছিলেন কানাডার প্রথম প্রধানমন্ত্রী। খবর টরন্টো স্টারের।

ভাইয়লা ডেসমন্ড নভাস্কোশিয়ার নিউ গ্লাসগোতে রসল্যান্ড থিয়েটারে একদিন মুভি দেখতে গিয়েছিলেন। সময়টা ছিল ৮ নভেম্বর, ১৯৪৬ সাল। ঐ সময় তাঁকে বলা হয় তিনি যেহেতু কৃষ্ণাঙ্গ তাই তিনি মেইন ফ্লোরের কোন আসনে বসে মুভি দেখতে পারবেন না। তাঁকে বসতে হবে বেলকনির কোন আসনে।

কানাডায় বর্ণবাদ তখনো প্রকাশ্যভাবেই বিদ্যমান। কিন্তু তবু ৩২ বছর বয়সী ভাইয়লা ডেসমন্ড বিষয়টিকে সহজভাবে মেনে নিতে পারেননি। তিনি প্রতিবাদী হয়ে উঠেন এবং বেলকনির আসনে না গিয়ে মেইন ফ্লোরের আসনেই গিয়ে বসেন যে স্থানটি শ্বেতাঙ্গদের জন্য সংরক্ষিত ছিল। থিয়েটার কর্তৃপক্ষ ডেসমন্ডকে ঐ স্থান থেকে সরে যেতে বললেও তিনি সরে যান নি। এরপর পুলিশ এসে তাঁকে গ্রেফতার করে এবং ঐ রাতটি তাঁকে জেলে কাটাতে হয়। পরের দিন তাঁকে আদালতে নেয়া হলে বিচারক ডেসমন্ডকে ২০ ডলার জরিমানা করেন এবং আদালতের খরচ বাবদ আরো ৬ ডলার জরিমানা করেন।

ভাইয়লা ডেসমন্ড। ছবি : কানাডিয়ান এনসাইক্লোপেডিয়া

ভাইয়লা ডেসমন্ড দমার পাত্রী ছিলেন না। তিনি তাঁর বিরুদ্ধে প্রদত্ত রায়কে চ্যালেঞ্জ করেন এবং বিষয়টি সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়ায়। কিন্তু সেখানেও রায় তাঁর পক্ষে যায় নি। সুপ্রিম কোর্টে তাঁর করা আপীল বাদ হয়ে যায়।

ভাইয়লা ডেসমন্ড মৃত্যুবরণ করেন ১৯৬৫ সালে। তখন তাঁর বয়স ছিল ৫০।

তবে ভাইয়লা ডেসমন্ড সেদিন বর্ণবাদ আর আদালতের বিচারে কাছে পরাজিত হলেও শেষ পর্যন্ত তিনি জিতেছেন। তাঁর মৃত্যুর প্রায় ৪৫ বছর পর তাঁকে মরণোত্তর ক্ষমা প্রদান করা হয়। ২০১০ সালে নভাস্কোশিয়ার তৎকালীন লেফটেনেন্ট গভর্নর মেয়ান ফ্রান্সিস এই ঘোষণা দেন এবং ঐ একই সময় নভাস্কোশিয়ার তখনকার প্রিমিয়ার ডেরেল ডেক্সটার সরকারীভাবে ভাইয়লা ডেসমন্ড এর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করেন।

ভাইয়লা ডেসমন্ডকে বলা হয়ে থাকে কানাডার রসা পার্কস। রসা পার্কস ছিলেন আমেরিকায় নাগরিক অধিকার রক্ষায় অগ্রদূত। তাঁর জন্ম ১৯১৩ সালের ৪ ফেব্রুয়ারী। তিনি থাকতেন আলাবামায়। ১৯৫৫ সালে তিনি একদিন যাত্রীবাহী এক বাসে উঠে গন্তব্যস্থানে যাচ্ছিলেন। ঐ সময় এক শ্বেতাঙ্গ যাত্রী সিটে বসার জন্য রসা পার্কসকে সিট ছেড়ে দিতে বলেন। কিন্তু রসা পার্কস সিট ছেড়ে দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন।

ঐ সময় আমেরিকায়ও বর্ণবাদ বেশ তীব্র আকারেই ছিল। কিন্তু রসা পার্কস এর সাহসী ভূমিকায় সেদিন জেগে উঠেছিল বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলন। শহর জুরে কৃষ্ণাঙ্গরা বয়কট করেছিল বাস সার্ভিস। বছর খানেকেরও বেশী সময় ধরে চলে এই বয়কট আন্দোলন। পরে সুপ্রিম কোর্ট যখন রায় দেন যে বাসে শ্বেতাঙ্গ যাত্রীদের জন্য পৃথক ব্যবস্থা অসাংবিধানিক তখন এই বয়কটের আন্দোলন থামে। এর পর রসা পার্ক আমেরিকায় নাগরিক অধিকার রক্ষা আন্দোলনের প্রতীক হয়ে উঠেন।

গত ৮ ডিসেম্বর ফিনান্স মিনিস্টার বিল মরনো, স্ট্যাটাস অব ওমেন মিনিস্টার প্যাটি হাইডু এবং ব্যাংক অব কানাডার গভর্নর স্টিফেন পলোজ সম্মিলিতভাবে ঘোষণা দেন যে, চূড়ান্তভাবে বাছাই করা পাঁচজন প্রতিযোগির মধ্যে ভাইয়লা ডেসমন্ড সর্বাধিক ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। ফলে তাঁর প্রতিকৃতিই ১০ ডলার মুদ্রায় ছাপানো হবে।

অনুষ্ঠানে ভাইয়লা ডেসমন্ড এর বোন ওয়ান্ডা রবসন বলেন, এটি আজকে মহিলাদের জন্য একটি বড় দিন। আর এটি আমার কাছে সত্যিকার অর্থেই একটি বড় দিন আমার বড় বোন নির্বাচিত হওয়ায়। ডেসমন্ড বেঁচে থাকলে আজ খুবই গর্বিত হতেন।