দীর্ঘ কর্মহীনতা কানাডার অর্থনীতির সর্বশেষ সমস্যা

শ্রমশক্তির যে অংশটি ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে কর্মহীন রয়েছে তাদের সংখ্যা ২০০৮-০৯ সালের অর্থনৈতিক সঙ্কটের পর সর্বোচ্চে পৌঁছেছে

জানুয়ারী ৬, ২০২১

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক, গত বসন্তে মহামারির কারণে লকডাউন হলে চাকরি হারানোদের কাজের সংস্থান অব্যাহতভাবেই করে চলেছে কানাডা, কিন্তু তার গতি এতটা দ্রুততর নয় যা একটি নতুন উদ্বেগজনক প্রবণতাÑ দীর্ঘকালীন কর্মহীনতা- বন্ধ করতে সক্ষম।

“দীর্ঘমেয়াদে কর্মহীন” হিসাবে বিবেচিত অর্থাৎ ২৭ সপ্তাহ বা তার চেয়ে বেশি সময় ধরে কর্মহীন রয়েছে এবং কাজের সন্ধান করছে এমন কানাডীয়র সংখ্যা এখন এমন পর্যায়ে বেড়েছে যা ১৯৯০ এর দশকের শুরুর দিকের দীর্ঘ মন্দার পর আর দেখা যায়নি। খবর -হাফিংটনপোস্ট এর। রিপোর্ট করেছেন ডেনিয়েল টেনসার।

সিআইবিসির অর্থনীতিবিদ রয়েস মেন্ডেস গত শুক্রবার এক ক্লায়েন্ট নোটে লিখেছেন, “উল্লেখ্য, বর্তমান সঙ্কটকালে দীর্ঘমেয়াদী বেকারের সংখ্যা আগের মন্দার চেয়েও অনেক দ্রুত বাড়ছে।”

দীর্ঘমেয়াদী বেকারের সংখ্যা আগের মন্দার চেয়েও অনেক দ্রুত বাড়ছে। ছবি: ‘গেটিইমেজ’

গত শুক্রবার স্ট্যাটিস্টিকস কানাডা এক রিপোর্টে বলেছে, গত মাসে দীর্ঘকালীন বেকার কানাডীয়র সংখ্যা সব মিলিয়ে ছিল চার লাখ ৪৮ হাজার। শ্রম ও সমাজ বিষয়ক অনেক বিশেষজ্ঞ দীর্ঘকালীন বেকারত্বকে মারাত্মক সমস্যা বলে মনে করেন। তারা এটিকে কেবল অর্থনৈতিক কারণে মারাত্মক সমস্যা মনে করেন তা নয়, বরং বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গেছে, এটি সংশ্লিষ্টদের শারীরীক ও মানসিক এমনকি ক্ষতিগ্রস্ত বাবা-মার সন্তানদের শিক্ষাজীবনের ফলাফলের ওপরও বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।

দেখা গেছে, যারা দীর্ঘ সময় ধরে বেকার থাকেন তারা এগিয়ে যাওয়া চাকরির বাজারে কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়েনÑ তাদের চাকরি খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা কমে যায় এবং তাদের আয়ও হয় যারা বেকারত্বের দীর্ঘ আঘাতের মুখে পড়েনি তাদের চেয়ে কম।

এটি কেন ঘটে তার বেশ কিছু কারণ বলা হয়; এর মধ্যে রয়েছে নিয়োগদাতাদের এমন ধারণা যে, যারা দীর্ঘ সময় ধরে কর্মহীন থাকে তারা নিশ্চয়ই ‘অকাজের লোক’। আর বাস্তব সত্য হলো কাজের মধ্যে না থাকলে মানুষের দক্ষতাও হ্রাস পায়।

যুক্তরাষ্ট্রেও অক্টোবরে দীর্ঘমেয়াদী বেকারের সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৬ লাখ যা তার আগের মাসে ছিল ২৪ লাখ। এই পরিসংখ্যান যুক্তরাষ্ট্রের ব্যুরো অব লেবার স্ট্যাটিস্টিকস-এর।

সে দেশে এ সমস্যা শিগগিরই আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে এ করণে যে, জরুরী আয় সহায়তার অনেক তহবিল গত গ্রীষ্মে শেষ হয়ে গেছে। আর তিক্ত নির্বাচন চক্রের মধ্যে ট্রাম্পের হোয়াইট হাউজ বা কংগ্রেস কেউই সেই ব্যবস্থা নবায়ন করেনি।

রুটগার্স ইউনিভার্সিটির নিউ স্টার্ট ক্যারিয়ার নেটওয়ার্কের পরিচালক মারিয়া হেইডক্রাম্প এনবিসি নিউজকে বলেন, “আমার মনে হয়, আমরা দীর্ঘমেয়াদী বেকারত্বজনিত বিপর্যয়ের চূড়ায় রয়েছি।” তিনি বলেন, “প্রকৃতপক্ষে অনেক প্রতিষ্ঠানের বন্ধ হয়ে যাওয়াটা আমরা ভেবেছিলাম সাময়িক কালের জন্য হবে কিন্তু সেগুলি স্থায়ী হতে যাচ্ছেÑ যার জন্য এই মুহূর্তে আমরা মোটেও প্রস্তুত নই।”

স্বাভাবিকতায় ফেরা?

কানাডার দীর্ঘকালীন বেকারদের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি অপেক্ষাকৃত ভালো এজন্যে যে, কেন্দ্রীয় সরকার বেশ কিছু জরুরী আয় সহায়তা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে এবং কানাডা ইমারজেন্সি রেসপন্স বেনিফিট (CERB) এর পরিবর্তে কানাডা রিকোভারি বেনিফিট (CRB) নামে নতুন কর্মসূচি গ্রহণ এবং চাকরি বীমার অর্থ প্রদানের আরও উদার কর্মসূচি চালু করেছে।

কেবল একটি প্রশ্নের জবাব এই মুহূর্তে কেউ দিতে পারছেন না, সেটি হলো, চাকরির বাজার কবে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে পারে বলে মানুষ আশা করতে পারে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেটি নির্ভর করে কোভিড-১৯ এর ওপর।

রয়েল ব্যাংক অব কানাডার জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ নাথান জানজেন গত শুক্রবার এক ক্লায়েন্ট নোটে লিখেছেন, “শ্রমবাজার এখনও অপ্রত্যাশিত রকমের দুর্বল। চাকরির প্রবৃদ্ধিতে এরইমধ্যে যে ধীরগতি দেখা যাচ্ছে মহামারির নতুন অভিঘাতে সেটাই বা কতটা টেকসই হবে সেটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।”