দারিদ্র জনগোষ্ঠির কারণে টরন্টোতে প্রতি বছর খেসারত দিতে হচ্ছে ৫.৫ বিলিয়ন ডলার
দারিদ্রতার কারণে মানুষের স্বাস্থ্যহানি ঘটে বেশী : হ্রাস পায় কর্মস্থলের উৎপাদনশীলতা
ডিসেম্বর ১০, ২০১৬
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : টরন্টোতে কিছু মানুষের আর্থিক দুরাবস্থার কারণে ক্ষতি হচ্ছে প্রতি বছর ৪.৪ থেকে ৫.৫ বিলিয়ন ডলার। ইউনাইটেড ওয়ের আর্থিক সহায়তায় পরিচালিত এক যুগান্তকারী গবেষণায় সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে এই তথ্য। দারিদ্রতার কারণে মানুষের স্বাস্থ্যহানি ঘটে বেশী। দরিদ্র মানুষ মানসিকভাবে বিষন্ন থাকে যার প্রভাব পড়ে কর্মস্থলের উৎপাদনশীলতায়। দরিদ্র অঞ্চলে মানুষের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা বেশী থাকে যার কারণে পুলিশ ও আইন বিভাগকে অতিরিক্ত জনবল নিয়োগ করতে হয় তা মোকাবেলা করার জন্য। আর এসব সমস্যা মোকাবেলা করার জন্য অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে হয় স্থানীয় সরাকারকে। টরন্টোতে বর্তমানে দরিদ্র পরিবারের সংখ্যা দুই লাখ ৬৫ হাজার।
টরন্টোতে এই জাতীয় গবেষণা এই প্রথম চালানো হয়। আর এই গবেষণা রিপোর্টটি এমন এক সময় প্রকাশিত হলো যখন দেখা গেছে টরন্টো ইতিমধ্যেই ‘শিশু দারিদ্রের রাজধানী’ হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে। খবর টরন্টো স্টারের।
এই পরিসংখ্যান আমাদেরকে এই তথ্যই দিচ্ছে যে, দারিদ্র বিমোচনে নিষ্ক্রিয়তার কারণে আমাদেরকে খেসারত দিতে হচ্ছে। আর যদি দারিদ্র বিমোচনে পরিকল্পনামাফিক অর্থ বিনিয়োগ করা হয় তবে তা হবে দীর্ঘমেয়াদে ভাল বিনিয়োগ। গবেষণা পত্রে এই অভিমতই ব্যক্ত করা হয়। গবেষণা পত্রে আরো বলা হয়, যখন সিটি কর্তৃপক্ষ দারিদ্রতা দূরীকরনের জন্য কোন পরিকল্পনা গ্রহণ করে এবং সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী বিনিয়োগ করে তখন সেটা থেকে লাভবান হয় সবাই।
এটি একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। যখন দরিদ্র মানুষের জন্য ট্রানজিট টিকিটে সাবসিডি দেয়া হয়, পাবলিক ট্রানজিট ব্যবহারে জনগণকে উৎসাহ দেয়া হয় তখন সিটির ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় কিছু আনুষাঙ্গিক লাভ হয়। পরিবেশ দুষণ কম হয়, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় খরচ কমে আসে। কিন্তু এগুলোর জন্য যদি কোন কিছুই করা না হয় তবে তার জন্য আর্থিক গচ্ছা আরো বেশী দিতে হয়। গবেষণা পত্রে একথাই বলা হয়।
অতীতের অন্যান্য গবেষণা থেকে দেখা গেছে যারা উচ্চ এবং মধ্যম আয়ের নাগরিক তাদের চেয়ে অনেক কম টেক্স প্রদান করেন নিম্ম আয়ের যারা তারা। তাদের মধ্যে বেকারত্বের হার বেশী থাকে অথবা আয় কম হয় তাদের। তারা বেশী মাত্রায় সোস্যাল সার্ভিস এর সেবা গ্রহণ করেন এবং তাদের চিকিৎসা ব্যয় তুলনামূলকভাবে বেশী। তাদের জন্য জাস্টিস সিস্টেমের ব্যয়ও বৃদ্ধি পায়।
মানুষের দারিদ্রতা সম্পর্কে যদিও সম্পূর্ণ তথ্য পাওয়া কঠিন তবে এই গবেষণা পত্রের লেখক জন স্টেপলেটন এবং তার সহকারীগণ একটা পরিমান নির্ধারণ করতে সক্ষম হয়েছেন যে দারিদ্রতার সঙ্গে সম্পর্কিত অপরাধ দমনে সিটি কর্তৃপক্ষকে বছরে ৪৩৬ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করতে হয়। অপরদিকে স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় করতে হয় ৭৫৩.৭ মিলিয়ন ডলার।
অপর দিকে বেকারত্ব, আংশিক বেকারত্ব এবং কম বেতনের চাকরীর কারণে মানুষজন যে আয় থেকে বঞ্চিত হয় তার পরিমাণ প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলার। সে কারণে সরকারও টেক্স থেকে বঞ্চিত হয় যার পরিমাণ প্রায় ৩৪৫ মিলিয়ন ডলার।
দ্রারিদ্রতার কারণে সমাজের উপর তার বিরূপ প্রভাবটা কতটুকু পড়ে গবেষণা পত্রে সেটি দেখানো হয়েছে। তবে মূল প্রভাবটা কিন্তু বাস্তবিক অর্থে ঐ দরিদ্র জনগোষ্ঠির উপরই পড়ে।
গবেষণা পত্রের উপসংহার খুবই স্পষ্ট – দারিদ্র দূরীকরণে পরিকল্পনামাফিক অর্থ বিনিয়োগ করা হলে দীর্ঘমেয়াদে তা ভাল ফল বয়ে আনবে।
উল্লেখ্য যে, গত বছর সিটি কর্তৃক ২০ বছর মেয়াদী দারিদ্র লঘুকরণ কৌশল গৃহীত হয়। গত বাজেটে সিটি ৬.৮ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দেয় এন্টি পভার্টি বা দারিদ্র দূরীকরণ প্রকল্পে। কিন্তু এন্টি পভার্টি এক্টিভিস্টরা বলছেন চাইল্ড কেয়ার, এফর্ডএ্যাবল হাউজিং, এক্সেস টু ট্রানজিট ইত্যাদির জন্য প্রয়োজন ছিল অন্তত ৭৫ মিলিয়ন ডলার।
এক্টিভিস্টগণ আশা করছেন টরন্টোতে দারিদ্র দূরীকরণে জন স্টেপলেটন এর গবেষণা পত্রের রিপোর্ট সিটি কাউন্সিলকে এবার অনুপ্রানিত করবে নতুন করে এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য।