টরন্টো, ভ্যাংকুভার ও মন্ট্রিলে আবাসন ব্যয় অত্যধিক
তারই প্রেক্ষাপটে কানাডার উপশহরগুলোর বিকাশ ঘটাচ্ছে অভিবাসীরা
মার্চ ১৩, ২০২০
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ : আদমশুমারির তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে কানাডা আরও বেশি নাগরিক হয়ে উঠেছে। দেশের অন্য জায়গাগুলোর চেয়ে নগরগুলোতে মানুষ বেড়েছে প্রায় তিনগুণ। ওই বছর দেশের বৃহত্তর নগরগুলোতে যে চার লাখ ৬৩ হাজার মানুষ যুক্ত হয়েছে তাদের প্রায় সবাই স্থায়ী ও অস্থায়ী অভিবাসী।
২০১৯ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত আগের ১২ মাসে নগর জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিলো ১.৭ শতাংশ যেখানে পৌরসভা নয় এমন জায়গার জনসংখ্যা বাড়ার হার ছিলো ০.৬ শতাংশ। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত স্ট্যাটিস্টিকস কানাডার তথ্যে আরও জানা যায়, নগর জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারের দিক থেকে প্রথম স্থানে আছে টরন্টো। এর পরেই রয়েছে কিচেনার, ক্যামব্রিজ ও ওয়াটালু (২.৮ শতাংশ), লন্ডন (২.৩ শতাংশ), এবং অটোয়া-গাতিনাউয়ের অন্টারিও অংশ (২.৩ শতাংশ)। খবর গ্লোব এন্ড মেইল এর। রিপোর্ট করেছেন ম্যাট লান্ডি।
জনসংখ্যায় পরিবর্তন আসার ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে বেশ কিছু উপকরণ। এর মধ্যে রয়েছে প্রাকৃতিক কারণে পরিবর্তন (মৃত্যুর বিপরীতে জন্ম), অস্থায়ী ও স্থায়ী অভিবাসন, এক প্রদেশ থেকে অন্য প্রদেশে মানুষের স্থানান্তর (আন্তঃপ্রদেশ) এবং একই প্রদেশের মধ্যে (অভ্যন্তরীণ) স্থানান্তর।
জনসংখ্যা বৃদ্ধির উপায় হিসাবে কানাডা দীর্ঘদিন ধরে অভিবাসনের ওপর গুরুত্ব দিয়ে আসছে। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে। এর ফলে দেশের জনসংখ্যা রেকর্ড পরিমাণে বাড়ছে। অতি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মন্ট্রিল, টরন্টো ও ভ্যাঙ্কুভার এলাকায় শুধু আন্তর্জাতিক অভিবাসীরাই জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে মুখ্য ভূমিকা রাখছে। অভিবাসন বন্ধ করে দিলে উল্লেখিত প্রতিটি এলাকার জনসংখ্যার প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক হয়ে পড়বে।
স্ট্যাটসক্যান-এর তথ্য অনুযায়ী, বৃহৎ নগরগুলোতে “নাগরিকদের বিস্তৃতি” ঘটছে নগর উপকণ্ঠের দিকে। এতে বলা হয়, টরন্টো এলাকায় জনসংখ্যার সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি ঘটেছে উইলিয়ামবুরি (৯.৫ শতাংশ) এবং মিল্টন এলাকায় (৫ শতাংশ)। আর মন্ট্রিল নগরীতে সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ক্যারিগনান (৪.৫ শতাংশ) এবং মিরাবেল-এ (৪.১ শতাংশ) হারে।
কিন্তু অনেকেই কানাডার বৃহত্তর নগরীগুলি ছেড়ে যাচ্ছে পাকাপাকিভাবে। অতি সাম্প্রতিক বছরে যত লোক টরন্টোতে এসেছে তার চেয়ে প্রায় ৪৮ হাজারেরও বেশি মানুষ টরন্টো ছেড়ে অন্টারিওর অন্যত্র চলে গেছে। ভ্যাঙ্কুভার এবং মন্ট্রিল উভয় নগরীতেই প্রায় ১৪ হাজার করে মানুষ প্রদেশের ভেতরেই অন্য জায়গায় স্থানান্তরিত হয়েছে। এই সব এলাকার মানুষের বহির্গমনের ধারা চূড়ান্তে পৌঁছেছে সাম্প্রতিক সময়ে।
টরন্টোতে কেবল নগরী থেকেই নয় এর কিছু কিছু উপকণ্ঠ থেকেও মানুষের সরে যাওয়া ত্বরান্বিত হয়েছে, যেমন পিল এলাকা। এখানে রয়েছে মিসিসগা ও ব্রাম্পটন শহর। টরন্টোতে একটি চাকরি আছে এমন মানুষদের জন্য এই শহরগুলিতে একসময় সাধ্যের মধ্যে বাড়ি ছিল সহজলভ্য। কিন্তু তারা এখন দেখছে, বাড়ির দাম আকাশ ছুঁয়েছে। একটি পৃথক বাড়ির দাম সাত অঙ্কের ঘরে পৌঁছেছে এমনটা এখন আর অস্বাভাবিক কিছু নয়।
এর ফলে, প্রদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ এসে দক্ষিণ অন্টারিওর কিচেনার-ওয়াটারলু, লন্ডন এবং নায়াগ্রা এলাকায় বসবাস করতে শুরু করেছে।
অন্টারিওর সেন্ট ক্যাথারাইনের একজন রিয়েল এস্টেট এজেন্ট সিন্ডি উইলিয়ামসন বলেন, ২০১৯ সালে তার ব্যবসার ২০ শতাংশই এসেছে নায়াগ্রা অঞ্চলের বাইরে থেকে। তিনি বলেন, “আপনি এখানে এখনও আপনার অর্থের ভালো দাম পাবেন।”
আইভির প্রফেসর মোফফাত সতর্ক করেন যে, টরন্টো ক্রমশই ব্রেক্সিটের আগ-মুহূর্তে ব্রিটেনের লন্ডন শহরের মত হয়ে যাচ্ছে, যেটি “অত্যন্ত মেধাবি সব আন্তর্জাতিক অভিবাসীদের চুম্বকের মত আকৃষ্ট করতো। সেটি অনলাইনে যুক্ত ছিলো এবং সম্ভবত তা নগরীর জন্য একটি ভালো ব্যাপার। কিন্তু অতিরিক্ত দামের কারণে অনেক পরিবার এই শহর ছেড়ে যেতে বাধ্য হলেও স্থানান্তরের কারণে তারা সন্তুষ্ট নয়।”
এখনও অনেকে গাড়ি চালিয়ে এসে টরন্টোতে অফিস করেন। গত এক দশকে অন্টারিওর সব শহরে সৃষ্ট কর্মসংস্থানের মধ্যে ৬৬ শতাংশের সৃষ্টি হয়েছে টরন্টো এলাকায়। এই হার নগরীর জনসংখ্যার তুলনায় বেশি। অন্টারিওর অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের ওপর নজরদারি প্রতিষ্ঠানের রিপোর্টে এই তথ্য জানানো হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির বক্তব্য অনুযায়ী, অসমানুপাতিক হারে চাকরিদান টরন্টোর শ্রমবাজারের চলমান চ্যালেঞ্জগুলোর অন্যতম। রিপোর্টে শ্রমশক্তির ওপর সম্পাদিত সমীক্ষার তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করা হয়েছে যাতে শ্রমিকদের কর্মস্থল নয় বরং তাদের আবাসনের ওপর ভিত্তি করে কর্মসংস্থানের দিকটি বিবেচনা করা হয়েছে। ব্যাংক অব মন্ট্রিলের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ রবার্ট কাভসিক বলেন, এ কারণে, চাকরির প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে অন্টারিওর কিছু শীর্ষ শ্রমবাজার, যেমন- ব্যারি, হ্যামিলটন ও ওশাওয়াতে এমন লোকেরাও অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকতে পারেন যারা কাজের জন্য নিয়মিত টরন্টোতে আসেন।
কাভসিক গত মাসে গ্লোব অ্যান্ড মেল পত্রিকাকে বলেন, “আপনি টরন্টোর আশেপাশের শহরগুলোতে যথেষ্ট জোরালো অবস্থা দেখতে পাবেন।”
টরন্টোতে নিয়মিত যাতায়াতকারী ক্রমবর্ধমান শ্রেণিটির বিষয়েও প্রফেসর মোফফাত বাড়তি উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “লন্ডন, উডস্টক এবং কিচেনার-এ বসবাসকারীদের অনেক মানুষ প্রতিদিন টরন্টোতে আসা-যাওয়া করছেন। এর একটা পরিবেশগত প্রভাব থাকবেই।”