জঙ্গী হামলার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হলো কানাডিয়ান টায়ারের অভ্যন্তরে হামলাকারী সেই মহিলা রিহাব দামেশ

ফেব্রুয়ারী 5, 2019

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : স্কারবরোর লরেন্স ও মার্কহাম ইন্টারসেকশনে অবস্থিত কানাডিয়ান টায়ারের এক কর্মচারী ও ক্রেতাদের ওপর ২০১৭ সালের জুলাই মাসে গলফ স্টিক ও ছুরি নিয়ে হামলার দায়ে রিহাব দামেশ নামে এক নারীকে দোষী সাব্যস্ত করলো কানাডার আদালত। হামলার সময় ঐ নারী দায়েশ বা আইএসের প্রতি অনুগত্যের অঙ্গীকার করেছিলেন। খবর কানাডিয়ান প্রেস এর।

দামেশ এর বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার চারটি, অস্ত্র নিয়ে হামলার চারটি, বিপজ্জনক অস্ত্র বহনের তিনটি এবং কোনও গোপন অস্ত্র বহনের দুটি পুরনো অভিযোগ ছিল। তার বিরুদ্ধে পরবর্তীতে যে অভিযোগ দেয়া হয়েছিল সেটা হলো সন্ত্রাসবাদী সংগঠনে যোগদানের জন্য কানাডা ছেড়ে যাওয়া।

কেন্দ্রীয় সরকারের ক্রাউন প্রসিকিউটর হাওয়ার্ড পিয়াফস্কির তথ্য অনুযায়ী, রিহাব দামেশ ২০১৬ সালের ২৪ এপ্রিল সিরিয়ায় যাবার জন্য কানাডা ত্যাগ করেন, কিন্তু তুরস্কে তাকে বাধা দেয়া হয় এবং সেখান থেকে ফেরত পাঠানো হয়।

কোর্ট স্কেচে জঙ্গী হামলার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত রিহাব দামেশ (বাঁয়ে)। ছবি : কানাডিয়ান প্রেস

রিহাব দামেশকে যখন ২০১৭ সালে প্রথম গ্রেফতার করা হয় তখন জঙ্গী আইএস গ্র“পের সঙ্গে যোগ দেওয়ার জন্য তিনি সিরিয়া যাবার চেষ্টা করেছিল এই অভিযোগ অস্বীকার করেন।

তুরস্ক থেকে ফিরে আসার বছর খানেক পর দামেশ টরন্টোতে জঙ্গী হামলার পরিকল্পনা করতে থাকেন। এই উদ্দেশ্যে তিনি বিভিন্ন অস্ত্র যোগার করতে থাকেন। আক্রমণ পরিচালনার সময় ব্যবহার করার জন্য আইএস এর প্রতীক চিহ্ন সম্বলিত একটি ব্যানারও তৈরী করেন তিনি।

২০১৭ সালের ৩ জুন তার সংগৃহীত অস্ত্রসমূহ একটি ব্যাগে ভরে জঙ্গী অভিযান পরিচালনার উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হওয়ার প্রস্তুতি নেন তিনি। তার অস্ত্রসমূহের মধ্যে ছিল হাতুরী, বারবিকিউ করার জন্য স্টিল নির্মিত কাঠি, কাঁচি, শিশুদের ব্যবহার্য শাবল ইত্যাদি। পরনের কাপরের নিচে লুকিয়ে তিনি একটি তীর ও প্রায় ৮ ইঞ্চি লম্বা একটি  মাংস কাটার ছুরিও নেন।

এই সময় পারিবারিকভাবে বিচ্ছিন্ন তার স্বামী বিষয়টি টের পেয়ে তার অস্ত্রবহনকারী ব্যাগটি কেড়ে নেন। কিন্তু কাপরের নিচে লুকানো অস্ত্র দুটি দেখতে পাননি।

দামেশ ঐ অবস্থায়ই ঘর থেকে বের হয়ে যান এবং কানাডিয়ান টায়ার এর এসে হাজির হন। তখন তিনি তার সঙ্গে আনা তীর এর জন্য ধনুক সংগ্রহ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু ধনুকগুলো যে সেলফের ভিতর ছিল সেটি ছিল তালাবদ্ধ। তাছাড়া তার কাছে ধনুক কেনার মত পর্যাপ্ত অর্থও ছিল না। পরে ঐ পরিকল্পনা বাদ দিয়ে তিনি একটি শপিং বাস্কেট নিয়ে তাতে বিভিন্ন টুলস সংগ্রহ করতে থাকেন যা দিয়ে আক্রমণ পরিচালনা করা যেতে পারে। এক পর্যায়ে তিনি গল্ফ স্টিক সংগ্রহের জন্য স্পোর্টস সেকশনে যান। সেখান থেকে একটি গল্ফ স্টিক সংগ্রহ করেন। এর পর তিনি মাথায় আইএস এর প্রতীক চিহ্ন সম্বলিত একটি মস্তকাবরণী পরেন। মস্তকাবরণী পরে তিনি পেইন্ট সেকশনে যান যেখানে তিনজন কর্মচারী ক্রেতাদেরকে সেবা দিচ্ছিলেন। ঐ স্থানে পৌঁছেই দামেশ গল্ফ স্টিক দিয়ে কর্মচারী ও ক্রেতাদের উপর হামলা শুরু করেন এবং বলতে থাকেন এই হামলা চালানো হচ্ছে জঙ্গী গোষ্ঠি আইএস এর পক্ষে। তবে কানাডিয়ান টায়ার এর কর্মচারীগণ তার হাত থেকে গল্ফ স্টিকটি ছিনিয়ে নিতে সক্ষম হন। কিন্তু এর পরই দামেশ তার কাছে লুকানো ছুরিটি বের করে পুনরায় হামলা চালানোর চেষ্টা করেন। তবে এই পর্যায়েও কানাডিয়ান টায়ারের কর্মচারীগণ তাকে পরাস্ত করতে সক্ষম হন।

ঐ ঘটনায় কেউ অবশ্য মারাত্মকভাবে আহত হননি। তবে একজন কর্মচারী সামান্য আহত হন।

দামেশ পরে পুলিশের কাছে স্বীকার করেন তিনি জঙ্গী উদ্দেশ্যে হামলা পরিচালনা করেন। তবে কাউকে হত্যা করার পরিকল্পনা তার ছিল না। শুধুমাত্র ত্রাস সৃষ্টির চেষ্টা করছিলেন। তিনি আরো চাচ্ছিলেন এই হামলার ঘটনা যাতে মিডিয়াতে আসে। এতে করে আইএস এর জঙ্গীরা বিষয়টি অবগত হবে এবং তারা খুশী হবে। তবে কাউকে তেমন ভাবে আহত করতে না তিনি খুব হতাশ হয়েছিলেন। কিন্তু তিনি চেষ্টা করেছিলেন এটিই তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল বলে পুলিশকে জানান।

ইতিপূর্বে দামেশ তার প্রায় সাত বছরের বিবাহিত জীবনের ইতি টেনে স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটান। আদালতের নথি অনুযায়ী, দামেশ ২০০৮ সালের নভেম্বরে আনাস হানাফিকে বিয়ে করেন এবং ২০১০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে তার সঙ্গে কানাডায় বসবাস করতে থাকেন। এর একমাস পর তাদের প্রথম সন্তানের জন্ম হয়। ২০১৭ সালের মে মাসে হানাফি তালাকের জন্য আবেদন করেন।

উল্ল্লেখ্য যে, দামেশ এমনও দাবি করেন যে, কানাডার বিচার ব্যবস্থার ওপর তার কোনও আস্থা নেই। তিনি ইতিপূর্বে আদালতে হাজিরার সময় একজন অনুবাদকের সাহায্য নিয়ে বলেন, “আমি মানুষের তৈরি যে কোনও আইনের নিন্দা জানাই। আমি শুধু আল্ল্লাহর সৃষ্ট ঐশ্বরিক আইনে আস্থা রাখি। আমি চাই আল্ল্লাহর বাণীই হবে সর্বোচ্চ আইন।”

দামেশ আরো বলেন, “আমি এদেশের সব আইনজীবীর সহায়তা প্রত্যাখ্যান করছি। আমি কানাডার নাগরিকত্বও বর্জন করতে চাই। আমি আপনাদের প্রতি কোনওরকম  আনুগত্য রাখতে চাই না।

“আপনারা যদি আমাকে মুক্তি দেন তাহলে আমি আবারও এবং বারবার একই কাজ করবো।”