গ্রেটার টরন্টোর মুসলিম পরিবারের সদস্যদেরকে পালক পিতা-মাতা হওয়ার জন্য উৎসাহ প্রদান

মার্চ ৩, ২০১৯

প্রয়োজনীয় সংখ্যক পালক পিতা-মাতা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না গ্রেটার টরন্টোর মুসলিম কমিউনিটিতে। ছবি : CINEWS

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : গ্রেটার টরন্টো এলাকায় যখন মুসলিম পরিবারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তখন একই সঙ্গে বৃদ্ধি পাচ্ছে মুসলিম পরিবারে শিশুদের সংখ্যাও। আর ক্ষেত্রবিশেষ কিছু প্রতিকূল পরিবেশ পরিস্থিতির কারণে এই শিশুদের মধ্যে কাউকে কাউকে পালক পিতা-মাতার আশ্রয়ে যাওয়ার প্রয়োজন দেখা দিচ্ছে। এবং এই প্রয়োজন দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে গ্রেটার টরন্টোতে। কিন্তু সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে, প্রয়োজনীয় সংখ্যক পালক পিতা-মাতা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না গ্রেটার টরন্টোর মুসলিম কমিউনিটিতে। এই পরিস্থিতিকে মোকাবেলা করার জন্য সম্প্রতি মাঠে নেমেছে একটি সংস্থা। এই সংস্থার লোকজন মুসলিম পরিবারের সদস্যদেরকে প্রয়োজনীয় শিক্ষাদান করেছেন কিভাবে পালক পিতা-মাতার দায়িত্ব পালন করা যায় এবং এর প্রয়োজনীয়তা কতটুকু সে সম্পর্কেও জ্ঞানদান করছেন। খবর সিআইনিউজ।

চিল্ড্রেন’স এইড সোসাইটি কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছে পিতৃমাতৃহীন বা পারিবারিক সহিংসতার শিকার হওয়া পরিবারের শিশুদেরকে এমন সব পালক পিতা-মাতার কাছে স্থানান্তর করতে, যেখানে উভয় পক্ষ একই সংস্কৃতি ও একই ধর্মীয় বিশ্বাসে বিশ্বাসী। এতে করে পালিত শিশু ও পালক বাবা-মা কম চাপের মধ্যে থাকেন।

তবে গ্রেটার টরন্টোতে শুধু যে মুসলিম কমিউনিটিতেই এই সমস্যা তীব্র হয়ে দাড়িয়েছে তা নয়। অন্যান্য অনেক এথনিক কমিউনিটিতেও এই সমস্যা তীব্র হয়ে দাড়িয়েছে দিন দিন তাদের সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে তাল মিলিয়ে।

প্রয়োজনীয় সংখ্যক পালক পিতা-মাতা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না গ্রেটার টরন্টোর মুসলিম কমিউনিটিতে। ছবি : CINEWS

মুসলিম কমিউনিটিতে এই বিষয়ে সচেনতা বৃদ্ধির জন্য FosterLink নামের একটি সংস্থা Mercy Mission Canada নামের একটি মুসলিম কমিউনিটি ডেভলাপমেন্ট গ্র“প এর সহায়তায় গত মার্চ মাস থেকে কাজ করে যাচ্ছে। ফস্টারলিং এখানকার বিভিন্ন মসজিদে গিয়ে স্থানীয় মুসল্লিদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। এবং সম্ভাব্য পালক পিতা-মাতার সন্ধান করছে।

অন্টারিও এসোসিয়েশন অব চিল্ড্রেন’স এইড সোসাটিস এর হিসাব মতে ২০১৬ ও ২০১৭ সালে প্রতি মাসে গড়ে ১৩ হাজার শিশু ফস্টার কেয়ারে ছিল।

ফস্টারিং চিল্ড্রেন বা শিশুদের  প্রতিপালন করার বিষয়টি হলো, কোন শিশুকে যখন অস্থায়ীভাবে অন্য কোন পরিবার দেখাশুনা করার দায়িত্ব নেয়। শিশুটির মূল অভিভাবক যতক্ষণ পর্যন্ত শারীরিক বা মানসিকভাবে উপযুক্ত না হন তাকে ফিরিয়ে নিতে ততক্ষণ ঐ শিশু ফস্টারিং কেয়ারে থাকে। কখনো কখনো ঐ শিশুকে অন্যের কাছে দত্তকও দেওয়া হয় যদি তার মূল অভিভাবক তাকে প্রতিপালনে অক্ষম হন। এই অক্ষমতা নানান কারণে হতে পারে। শিশু নির্যাতন থেকে শুরু করে আরো কিছু বিষয় রয়েছে এর পিছনে।

ফস্টার প্যারেন্ট হতে হলে কিছু নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হয়। যারা অস্থায়ীভাবে শিশুর দেখাশুনা করবেন তাদের পরিবারে সেফটি স্ট্যন্ডার্ড কতটুকু বিদ্যমান সেটি মূল্যায়ন করা হয় আগে। পাশাপাশি ফস্টার প্যারেন্ট যারা হবেন তাদেরকে কোনটি শিশু নির্যাতন, কোনটি শিশু অবহেলা এই সব বিষয়ে ট্রেনিংও নিতে হয় যাতে শিশুরা তাদের হেফাজতে থাকার সময় নিরাপদে থাকে।

যে সকল ইমিগ্রেন্ট শিশু নির্যাতনসহ নানান কারণে তাদের বাবা-মা’র কাছ থেকে আলাদা হতে বাধ্য হয় তারা এমনিতেই মানসিকভাবে বিপর্যস্থ অবস্থায় থাকে। এই অবস্থায় তাদেরকে এমন সব পরিবারের  আশ্রয়ে পাঠানো উচিত যেখানে তারা নিজেকে কোন না কোনভাবে সম্পর্কিত ভাবতে পারে। সেটা হতে পারে সাংস্কৃতিক মিলের পরিবার বা একই ধর্মীয় বিশ্বাসের পরিবার। অবশ্য কানাডিয়ান ফস্টার পরিবারগুলো অন্য সাংস্কৃতিক বা ধর্মীয় বিশ্বাসে বিশ্বাসী পরিবারের শিশুদেরকে সঠিকভাবে দেখভাল করতে পারে না একথাও বলা যাবে না। তবে মূল বিষয়টি হলো, একই সাংস্কৃতিক বা ধর্মীয় পরিবেশ পেলে শিশুরা নিজেদেরকে খাপ খাইয়ে নিতে পারে খুব সহজে।