কানাডিয়ান নাগরিকদের স্পন্সর করা স্বামী বা স্ত্রীকে আর দুই বছর অপেক্ষা করতে হবে না পার্মান্টে রেসিডেন্ট স্ট্যাটাস পেতে
মার্চ ১৩, ২০১৬
প্রবাসী কন্ঠ ডেস্ক : বর্তমান লিবারেল সরকার খুব শীঘ্রই সাবেক কনজারভেটিভ সরকার কর্তৃক প্রণীত স্পউজ স্পন্সশীপ আইন পরিবর্তন করতে যাচ্ছে। পরিবর্তীত আইনে কানাডিয়ান নাগরিকদের স্পন্সর করা স্বামী বা স্ত্রীকে আর দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হবে না পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট স্ট্যাটাস পেতে। তারা কানাডায় আসার পর দ্রুতই পেয়ে যাবেন পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট স্ট্যাটাস। অতি সম্প্রতি দ্যা হিল টাইমস পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইমিগ্রেশন মন্ত্রী জন ম্যাক্কালম এ কথা বলেন।
উল্লেখ্য যে, বর্তমান আইনে দুই বছর অপেক্ষা করতে হয় স্পন্সরকৃত স্বামী বা স্ত্রীকে পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট স্ট্যাটাস পেতে। কানাডায় আসার পর তারা প্রথমে তারা যে স্ট্যাটাস পান সেটি হলো কন্ডিশনাল পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট স্ট্যাটাস। এটি প্রায় পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট স্ট্যাটাসের মতই। তবে শর্ত থাকে যে, বিয়ের চুক্তি ভঙ্গ করলে অর্থাৎ বিয়ে ভেঙ্গে গেলে ঐ কন্ডিশলান পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট স্ট্যাটাসও বাতিল হয়ে যাবে।
বর্তমানে স্পাউজাল স্পন্সরশীপ এর আবেদনপত্র প্রসেস হতে প্রায় দুই বছর পর্যন্ত সময় লেগে যায়। এর আবার শুরু হয় কন্ডিশলান পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট স্ট্যাটাস এর আরো দুই বছর সময় পার করার পালা। ইমিগ্রেশন মন্ত্রী জন ম্যাক্কালম বিষয়টিকে অত্যন্ত ন্যক্কারজনক বলে অভিহিত করেন।
স্পউজ স্পন্সশীপের এই আইন ২০১২ সালে প্রণয়ন করা হয়েছিল কানাডা বর্ডার সার্ভিস এজেন্সির এক রিপোর্টের ভিত্তিতে। বর্ডার সার্ভিসের ঐ রিপোর্টে উল্লেখ ছিল যে, স্পাউজাল স্পন্সরশীপ প্রোগ্রামে অনেক জালিয়াতী হচ্ছে। অর্থাৎ স্বামী বা স্ত্রী পরিচয় দিয়ে এমন সব লোককে আনা হচ্ছে যারা আসলে স্বামী বা স্ত্রী নন। আর এই ধরণের লোকের প্রধান উৎস হচ্ছে চীন ও ভারত।
উল্লেখিত দুই বছরের অপেক্ষার সময় স্পাউজাল স্পন্সরশী জালিয়াতী বন্ধে আকাঙ্খিত ফল রাখতে শুরু করেছে। এ কথা বলেছেন এন্ড্রু ওদাইকা যিনি একসময় এসিস্টেন্ট ডেপুটি চেয়ারম্যান ছিলেন ইমিগ্রেশন এন্ড রিফিউজি বোর্ডের। তিনি আরো বলেন, বর্তমান সরকার এই আইন রদ করে দিলে আমি খুব একটা আশ্চর্য হবো না যদি দেখি স্পাউজাল স্পন্সরশীপ প্রগামে আবার জালিয়াতী শুরু হয়েছে আগের মত। এই আইন রদ করা হলে তার পরিনতি যা হবে তার ফলাফল বর্তমান সরকারকেই ভোগ করতে হবে।
ভ্যাংকুভারের বাসিন্দা গীতা ঘরদোয়াজ নামের একজন সেটেলমেন্ট ওয়ার্কার বলেন, সাবেক সরকার কর্তৃক গৃহীত আইনের কারণে স্পাউজাল স্পন্সরশীপ প্রগামে যে জালিয়াতী হচ্ছিল তা উল্লেখযোগ্যহারে হ্রাস পেয়েছে। গীতা সেটেলমেন্ট এর কাজ করেন পাঞ্জাব কমিউনিটিতে।
কিন্তু এর পাল্টা মতও রয়েছে। অন্যান্য ইমিগ্রেশন বিশেষজ্ঞরা বর্তমান সরকার কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপের প্রশংসা করে বলছেন, এটির প্রয়োজন রয়েছে। কারণ, দেখা গেছে এই দুই বছর অপেক্ষার সময়ে স্পন্সরকৃত স্বামী বা স্ত্রী নানারকম হয়রানীর শিকার হন। বিশেষ করে মহিলারা এর শিকার হন বেশী। একটা অরক্ষিত অবস্থায় থাকতে হয় তাদেরকে। নির্যাতনের শিকার হলেও তা মেনে নিতে হয় পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার জন্য। ভেঙ্গুভারবাসী ইমিগ্রেন্ট লইয়ার এবং কানাডিয়ান বার এসোসিয়েশন এর ইমিগ্রেশন সেকশনের সাবেক চেয়ারম্যান অ্যালেক্স স্টজিসিভ বলেন, স্পাউজাল স্পন্সরশীপ প্রগ্রামে যে জালিয়াতী হচ্ছিল সেটি একটি সমস্যা তাতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু বিগত সরকার এই জালিয়াতী রোধে যে পলিসি নিয়েছিল তা সমস্যা সমাধানের চেয়ে সমস্যা সৃষ্টি করছিল বেশী। কারণ দেখা গেছে স্পন্সরকৃত স্বামী বা স্ত্রী এবিউজ বা নির্যাতনের শিকার হলেও নতমুখে বা বিনা বাক্যব্যয়ে তা মেনে নিচ্ছিল স্ট্যাটস পাবার আশায়।
লিবারেল সরকার অবশ্য বিগত কনজারভেটিভ সরকারের করে যাওয়া এই আইনের দ্বিতীয় অংশ বা ধারাটুকু বাতিল করছে না যাতে বলা আছে, একবার স্বামী বা স্ত্রীকে স্পন্সর করার পর স্পন্সরকারী বা স্পন্সর্ড পারসন পরবর্তী পাঁচ বছরে দ্বিতীয়বার বিয়ের মাধ্যমে কাউকে স্পন্সর করার সুযোগ পাবে না।