উদ্বাস্তু থেকে অভিবাসন মন্ত্রী
যুদ্ধবিধ্বস্ত সোমালিয়া থেকে আসা সেদিনের বালক আহমেদ হোসেন আজ কানাডার অভিবাসন মন্ত্রী
ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৭
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : গত ১০ জানুয়ারী কানাডার নতুন অভিবাসন মন্ত্রী হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয় আহমেদ হোসেনকে। তিনি এই দায়িত্ব নেয়ার আগে অত্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলেন জন ম্যাককালাম। জন ম্যাককালাম চিনে কানাডার রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পেয়েছেন।
কানাডার অভিবাসন তথা ইমিগ্রেশন, রিফিউজি এন্ড সিটিজেনশীপ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসাবে আহমেদ হোসেন শপথ নেয়ার পর টরন্টোর ইমিগ্রেন্ট কমিউনিটিতে ব্যাপক আনন্দ উল্লাস লক্ষ্য করা যায়। আহমেদ হোসেন গত পার্লামেন্ট নির্বাচনে টরন্টোর ইয়র্ক সাউথ-ওয়েস্টন রাইডিং থেকে লিবারেল পার্টির এমপি নির্বাচিত হন। খবর টরন্টো স্টার ও সিবিসি নিউজের।
অভিবাসন মন্ত্রী হিসাবে শপথ নেয়ার পর আহমেদ হোসেন তার প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বলেন, কানাডার ইতিহাস ইমিগ্রেশনের ইতিহাস। প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো আমার উপর এই গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রনালয়ের গুরু দায়িত্ব অর্পণ করায় আমি গভীরভাবে গর্বিত এবং অনুপ্রাণিত।
১৯৯৩ সালে যুদ্ধবিধ্বস্ত আফ্রিকার একটি দেশ সোমালিয়া থেকে একাই কানাডা চলে এসেছিলেন আহমেদ হোসেন নামের এই বালক। তখন তার বয়স ছিল মাত্র ১৬। চোখে রঙ্গিন স্বপ্ন নিয়ে নয়, বাচার তাগিদে মাতৃভূমির মায়া ত্যাগ করে পালিয়ে এসেছিলেন তিনি কানাডায়। কানাডায় আসার পর তিনি প্রথমে পরিচিতি পান একজন উদ্বাস্তু হিসাবে। এর পর গিয়ে উঠেন হ্যামিলটনে। সেখানে স্কুলে ভর্তি হন। কিছুদিনের মধ্যেই স্কুলে তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে একজন দক্ষ ক্রীড়াবিদ হিসাবে।
স্কুল পর্ব শেষে তিনি চলে আসেন টরন্টোতে। এখানে এসে উঠেন এক ভাই এর বাসায়। ভাই থাকতেন টরন্টোর ডাউনটাউনের রিজেন্ট পার্ক এলাকায় মেট্রো হাউজিং এর বাসায়। আহমেদ হোসনে টরন্টো এসে ভর্তি হন ইয়র্ক ইউনিভার্সিটিতে। ইউনিভার্সিটির টিউশন ফি ও অন্যান্য খরচ যোগার করা জন্য তিনি মিসিসাগায় একটি গ্যাস স্টেশনে কাজ নিলেন। বাসা থেকে যাওয়া আসায় প্রায় দুই ঘন্টার পথ।
আহমেদ হোসেন টরন্টো আসার পর ধীরে ধীরে জড়িয়ে পরেন বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডের সঙ্গে। রিজেন্ট পার্ক এলাকায় মেট্রো হাউজিং বাস করে এলাকার লোকজনের দারিদ্রতা ও অন্যান্য সমস্যা বিষয়ে তার যে অভিজ্ঞতা হয় সেটিই তাকে অনুপ্রারিত করে রাজনীতিতে আসার। তিনি রিজেন্ট পার্ক নেইবারহুড এসোসিয়েশনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। পরবর্তীতে তিনি কানাডিয়ান সোমালী কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
সমাজ সেবায় আহমেদ হোসেনের অবদান ও রাজনীতিতে তার উৎসাহ দেখে তখনকার (১৯৯৯) এমপিপি জর্জ স্মিথারম্যান তাকে সুযোগ করে দেন তৎকালিন প্রিমিয়ার ডল্টন ম্যাগগুন্টির অফিসে ভলন্টিয়ার হিসাবে কাজ করার। স্মিথারম্যান বলেন, এত অল্প সময়ে আহমেদ হোসেনের সাফল্য দেখে আমি খুবই শিহরিত। রাজনীতিতে এটাই সৌন্দর্য। যদি তোমার নেতা তোমার প্রতিভা ও বুদ্ধিমত্তার পরিচয় পান তবে তিনি তোমাকে উপরে উঠার সুযোগ করে দেন। স্মিথারম্যান আরো বলেন, আহমেদ হোসেনের রয়েছে চিত্তাকর্ষক কর্মশক্তি এবং অদম্য প্রাণ শক্তি যা তাকে আগামী দিনে আরো সাফল্য এনে দিবে এবং কানাডার রাজনীতিতে সে আরো অবদান রাখার সুযোগ পাবে।
আহমেদ হোসেন অন্টারিও পার্লামেন্টে প্রিমিয়ারের অফিসে ভলন্টিয়ার হিসাবে কর্মরত থাকা অবস্থায় রিজেন্ট পার্ক এলাকার জরাজীর্ণ হাউজিং এর বাড়িগুলোকে নবজীবন দানের জন্য ফান্ড যোগার করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট অবদান রেখেছেন লবিং করে।
গত পার্লামেন্ট নির্বাচনে জয়ী হবার পর আহমেদ হোসেন তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেছিলেন, আমি নিজেকে একজন টোকেন এমপি হিসাবে দেখতে চাই না। আমি সবসময় নিজেকে একজন কানাডিয়ান হিসাবে দেখতে পছন্দ করি। কানাডার জন্য আমার অনেক কিছু করার আছে। আমি মূলধারার লোক। আমি আমার এথনিক কমিউনির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাককে চাই না। আমি জানি সকলেরই একটি হ্যারিটেজ বা উত্তরাধিকার রয়েছে। আমিও আমার হ্যারিটেজ নিয়ে গর্বিত। কিন্তু সেই সাথে আমাদের অংশিদারিত্বের নাগরিকত্বও রয়েছে। আমি আমার কমিউনির বাইরেও অনেক কাজ করেছি। উদাহরণ হিসাবে তিনি রিজেন্ট পার্ক এলাকায় তার সামাজিক কর্মকান্ডের কথা উল্লেখ করেন যেখানে প্রায় ৬৫টি এথনিক গ্রুপের সদস্যদের উপস্থিতি রয়েছে।
বর্তমানে তিন সন্তানের জনক আহমেদ হোসেনের বয়স ৩৯ বছর। তিনি ২০০২ সালে ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি থেকে ইতিহাসে বিএ ডিগ্রি নেন। পরে তিনি অটোয়া ইউনিভার্সিটিতে আইনের উপর লেখাপড়া করেন। ২০১২ সালে তিনি কৃতিত্বের সঙ্গে বার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
২০১৩ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত তিনি টরন্টোতে ক্রিমিনাল ল, ইমিগ্রেশন এন্ড রিফিউজি ল এবং হিউম্যান রাইটস ল প্র্যাকটিস করেন। বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে অবদান রাখার জন্য তিনি বেশ কয়েকটি পুরস্কারও পান।