অন্টারিওবাসীদের কেউ এখন দেশের বাইরে ভ্রমণ করতে গিয়ে অসুস্থ হলে তার ব্যয়ভার OHIP বহন করবে না
দেশের বাইরে যেতে হলে অন্টারিও’র অধিবাসীদেরকে ট্র্রাভেল ইন্সুরেন্স ক্রয় করার পরামর্শ
জানুয়ারী ১০, ২০২০
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : নতুন বছর শুরু। সেই সাথে শুরু হলো অন্টারিও হেলথ ইন্সুরেন্স প্লান (OHIP) এর নতুন নিয়ম। OHIP এর নতুন নিয়ম অনুযায়ী দেশের বাইরে গিয়ে কেউ অসুস্থ হলে তার চিকিৎসা ব্যয় OHIP আর বহন করবে না। ১লা জানুয়ারী ২০২০ থেকে এই নিয়ম কার্যকরী হয়েছে। খবর সিবিসি নিউজের।
মিনিস্ট্রি অব হেলথ এ্যান্ড লং টার্ম কেয়ার এর মুখপাত্র David Jensen সিবিসি-কে বলেন, সরকার সবসময়ই বিদেশ গমনেচ্ছুদেরকে জোরালোভাবে উৎসাহিত করে আসছে এক্সট্রা ট্রাভেল ইন্সুরেন্স ক্রয় করার জন্য। এতে করে তারা যখনই বিদেশে যান তখন পর্যাপ্তভাবে ইন্সুরেন্স এর নিরাপদ আশ্রয়ে থাকেন।
গত বছর মে মাসে সরকার সপ্তাহব্যাপী পাবলিক কনসালটেশন এর পর সিদ্ধান্ত নেয় নতুন বছর থেকে দেশের বাইরের কোন চিকিৎসা ব্যয় OHIP বহন করবে না। কারণ এটি সরকারের জন্য অত্যন্ত ব্যয়বহুল।
দেশের বাইরে গিয়ে কেউ অসুস্থ হলে OHIP ইতিপূর্বে রোগীর কিছু আর্থিক ব্যয়ভার বহন করতো। এর মধ্যে ছিল- ইনটেনসিভ কেয়ারে ভর্তি হয়ে থাকলে তার জন্য দিনে সর্বোচ্চ ৪০০ ডলার পর্যন্ত ব্যয়ভার বহন করা এবং আউটডোর বা এমার্জেন্সীতে ভিজিট করার জন্য দিনে সর্বোচ্চ ৫০ ডলার পর্যন্ত ব্যয়ভার বহন করা।
প্রাইভেট ইন্সুরেন্স কোম্পানীগুলোর এখন পোয়াবারো
নতুন এই আইনের ফলে অন্টারিওর প্রাইভেট ইন্সুরেন্স কোম্পানীগুলোর এখন পোয়াবারো। বিদেশে ভ্রমণকারীদের জন্য সরকার OHIP কভারেজ বন্ধ করে দেওয়াতে কোম্পানীগুলো ট্রাভেল ইন্সুরেন্স এর প্রিমিয়াম বাড়িয়ে দিবে। এ কথা বলেছেন কানাডিয়ান এসোসিয়েশন অফ রিটায়ার্ড পারসনস এর চীফ পলিসি অফিসার Marissa Lennox. তিনি বলেন, আমরা আমাদের এসোসিয়েশনের সদস্যদের কাছ থেকে ইতিমধ্যেই অভিযোগ পেয়েছি যে, তারা সরকারের এই সিদ্ধান্তের কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। তাদের ট্রাভেল ইন্সুরেন্স এর প্রিমিয়াম বেড়ে গেছে যার ফলে এই আইন তাদের ভ্রমণের ক্ষেত্রে একটি প্রতিবন্ধকতা হয়ে দেখা দিয়েছে। বর্ধিত প্রিমিয়াম তাদের সামর্থ্যরে বাইরে চলে যাচ্ছে।
Lennox বলেন, অন্টারিওতে অবসরপ্রাপ্ত লোকেরা প্রচুর ভ্রমণ করে থাকেন। গত বছর প্রায় ৪০% অবসরপ্রাপ্ত অন্টারিওবাসী যাদের বয়স ৬৫+ বিদেশ ভ্রমণে গিয়েছেন। সরকার এই অবসরপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠির কথা বিবেচনায় না এনেই নতুন একটা আইন করেছে।
কানাডিয়ান স্নোবার্ড এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে সরকারের এই সিদ্ধান্ত শুধু সিনিয়র সিটিজেনদের প্রভাবিত করবে তা নয়, যারা সীমান্ত পেরিয়ে শপিং এ যান বা ফ্যামিলি মেম্বারদের সঙ্গে দেখা করার জন্য বর্ডার ক্রস করেন তারাও নানাভাবে প্রভাবান্বিত হবেন।
হেলথ মিনিস্টার Christine Elliott ইতিপূর্বে জানিয়েছিলেন যে, অন্টারিও প্রভিন্স এই খাতে প্রতিবছর গড়ে ২.৮ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করে শুধু প্রশাসনিক কর্যক্রম চালানোর জন্য। আর এই চিকিৎসা খাতে (বিদেশে গিয়ে যারা অসুস্থ হন) সরকারকে ব্যয় করতে হয় প্রতি বছর প্রায় ৯ মিলিয়ন ডলার। ২০১৮ সালের অডিট রিপোর্টে দেখা গেছে অন্টারিও’র হেলথ মিনিস্ট্রি প্রতি বছর ৮৮ হাজার ক্লেইম প্রসেস করে আসছে গত ৫ বছর ধরে। আর প্রতিটি ক্লেইমে গড়ে ১২৭ ডলার করে পেমেন্ট দিয়ে আসছে।
এদিকে ট্রাভেল কলেজ অব কানাডার পরিচালক Louise Blazik বলেন, অন্টারিও সরকার বিদেশে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়া যাত্রীদের যে ক্ষতিপূরণ দিয়ে আসছিল তা মোটেও পর্যাপ্ত ছিল না। কারণ অন্যদেশে বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হাসপাতালে একদিন থাকতে গেলে কয়েক হাজার ডলার বিল দিতে হয় রোগীকে। সুতরাং অন্টারিও থেকে যারা ভ্রমণে বের হন তদেরকে অবশ্যই ট্রাভেল ইন্সুরেন্স ক্রয় করা জরুরী। সেটা না থাকলে হাসপাতালের বিল পে করা এক ভয়াবহ খরচের বিষয় হয়ে দাড়াবে।