রেভেনিউ কানাডার নাম ভাঙ্গিয়ে কানাডীয়দের সঙ্গে প্রতারণা ভারতের দিল্লিতে ধরা পড়লো প্রতারক চক্রের ৩২ জন
ডিসেম্বর ৭, ২০১৯
ভারতের রাজধানী নয়া দিল্লির পুলিশ সেখানকার একটি কল সেন্টারে অভিযান চালিয়ে প্রতারক চক্রের ৩২ জন কর্মীকে গ্রেফতার করেছে। ছবি : West Delhi DCP/Twitter
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক, নভেম্বর ১৮, ২০১৯ : ভারতের রাজধানী নয়া দিল্লির পুলিশ সেখানকার একটি কল সেন্টারে অভিযান চালিয়ে প্রতারক চক্রের ৩২ জন কর্মীকে গ্রেফতার করেছে। প্রতারক চক্রের এই সদস্যরা দিল্লিতে বসে রেভিনিউ কানাডার কর্মকর্তা বা কানাডীয় পুলিশ কর্মকর্তার ভ‚য়া পরিচয় দিয়ে কানাডিয়ানদের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ বাগিয়ে নিচ্ছিল। খবর সিবিসি নিউজের।
উল্লেখ্য যে, রেভেনিউ কানাডার নাম করে কানাডিয়ানদের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ বাগিয়ে নেওয়ার এই চেষ্টা দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে। এদের টার্গেট প্রধানত বয়স্ক ব্যক্তি ও ইমিগ্রেন্টরা। টরন্টোতে এই প্রতারক চক্রের ফোন পাননি এমন বাঙ্গালী খুব কমই খুঁজে পাওয়া যাবে। এই প্রতারক চক্রের ক্রমাগত ফোনের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ সবাই।
প্রতারক এই টেলিফানকারীরা নিজেদেরকে কানাডার রাজস্ব বিভাগের এজেন্ট হিসাবে পরিচয় দেয় এবং টাকা পাঠানোর জন্য চাপ দেয়। একই ধরণের হুমকি পাঠায় তারা টেক্সট মেসেজ, চিঠি বা ই-মেইলের মাধ্যমেও।
‘কানাডিয়ান এন্টি ফ্রড সেন্টার’ সূত্র থেকে জানা যায় ২০১৭ সালে তারা ৭১,৭৯৩ টি বিভিন্ন জালিয়াতির অভিযোগ পেয়েছে। আর এই জালিয়াতির মাধ্যমে প্রতারকরা মোট ১ শত ১০ মিলিয়ন ডলার হাতিয়ে নিয়েছে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে। রেভিনিউ কানাডার নাম ভাঙ্গিয়ে প্রতারণা খুবই কমন বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে।
প্রতারকরা তাদের টার্গেটকে নানারকম ভয়-ভীতি দেখিয়ে অর্থ আদায় করেন। নানানভাবে এই কৌশল প্রয়োগ করা হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে কমন হলো কানাডা রেভিনিউ এজেন্সির নাম করে ফোন দেয়া এবং ভয় ভীতি দেখিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করা। প্রধানত ইমিগ্রেন্ট পরিবারের সদস্যরা এই ধরনের ফোন কলের টার্গেট হয়ে থাকেন। টেলিফোনের মাধ্যমে প্রতারকরা সম্ভাব্য শিকারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “আমরা আপনার টেক্স রিটার্নের ফাইল চেক করে দেখেছি। ফাইল চেক করে আমরা দেখতে পেয়েছি আপনি আপনার আসল ইনকাম গোপন করেছেন টেক্স ফাঁকি দেওয়ার জন্য। এ জন্য আপনাকে কম করে হলেও ৫০ হাজার ডলার জরিমানা গুনতে হতে পারে। এমনকি জেলও হতে পারে। ভয় দেখানোর জন্য তারা আরো হুমকী দেন এই বলে যে, “কিছুক্ষণের মধ্যেই আরসিএমপি এসে আপনার দরজায় কড়া নাড়বে। তাদের কাছে আপনাকে গ্রেফতার করার জন্য ওয়ারেন্ট রয়েছে।”
কানাডার বিভিন্ন আইনশৃংখলা বাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত কানাডিয়ান এন্টি ফ্রড সেন্টার এর কর্মকর্তা ডেনিয়েল উইলিয়াম ইতিপূর্বে বলেছেন, কানাডা রেভিনিউ এজেন্সির নাম করে প্রতারকদের এই ফোন কলের প্রায় সবগুলোই আসে ভারত থেকে। আগে এই প্রতারক চক্রের সদস্যরা দেশের বাইরে অবস্থিত ভারতীয়দের টার্গেট করে ফোন দিতেন। কিন্তুু এখন তারা প্রতারণায় আরো অভিজ্ঞ হয়ে উঠেছেন এবং তাদের কলের সীমানা বাড়িয়ে খোদ কানাডিয়ানদেরকেও জ্বালাতন করছেন।
নয়া দিল্লির ডেপুটি পুলিশ কমিশনার সামির শর্মা গত ১৮ নভেম্বর এক বিবৃতিতে বলেন, সাইবারসেল নামের এই কলসেন্টার কানাডিয়ান নাগরিকদের টার্গেট করে প্রতারণার কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল যা আমাদের নজরে এসেছে। পুলিশ তাদের কার্যালয়ে যখন অভিযান চালায় তখন তারা ব্যস্ত ছিলেন টেলিফোনে। কলসেন্টারে এই সময় তিনজন সুপারভাইজারও উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু জিজ্ঞাসাবাদে তারা তাদের কার্যক্রমের কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। এই প্রতিষ্ঠানের চারজন মালিক অভিযান পরিচালনাকালে উপস্থিত ছিলেন না। পুলিশ তাদের খুঁজছে। সামির শর্মা আরো জানান, এই কলসেন্টারটি রাতের বেলায় তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতো। কারণ ঐ সময় কানাডায় দিন। পুলিশী অভিযানে আকটকৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেন তারা কানাডিয়ানদের টার্গেট করে কল করতেন এবং নিজেদেরকে কানাডিয়ান পুলিশ বা সার্ভিস কানাডার কর্মকর্তা বলে পরিচয় দিতেন।