প্রতারণামূলক ফোন কলের জোয়ারে হতাশ কানাডীয়রা

ডিসেম্বর ৭, ২০১৯

টরন্টো : সারা কানাডায় প্রতারণামূলক ও রোবোটিক ফোন কলের ব্যাপক বিস্তারে হতাশা ব্যক্ত করেছেন কানাডীয়রা। এসব ফোন কলে সাধারণত কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যেমন কানাডার রেভিনিউ এজেন্সি এবং আরসিএমপির (রয়েল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশ) নাম উল্লেখ করা হয়। খবর সিটিভি নিউজ এর।

অনেক কানাডীয়র কাছে এধরণের কল এসেছে রোবোটিক কণ্ঠস্বরে। তাতে কল রিসিভকারীকে জানানো হয় যে, তিনি বা তারা খুব শিগগিরই গ্রেফতার বা মামলার মত বিপদে পড়তে যাচ্ছেন। এরপর তারা ব্যক্তিগত তথ্য জানার দিকে এগোয়। অনেক কানাডীয় জানান, তারা দিনে একাধিকবার এধরণের কল পেয়েছেন।

একজন টুইটার ব্যবহারকারী সম্প্রতি লিখেছেন, “আমি চারটি ভিন্ন নম্বর থেকে প্রায় ছয়টি কল পেয়েছি যাতে একই বার্তা ছিলো। এরপর সবগুলো নম্বর বøক করে দিই। তারপর আর আসেনি।”

টরন্টো এলাকার বাসিন্দা ফারিহা রাশিদী চলতি মাসের শুরুর দিকে এরকম এক প্রতারণাকারীর খপ্পরে পড়েন। তাকে বলা হয় যে তার স্বামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। একথা বিশ্বাস করে তিনি প্রায় ৫,০০০ ডলার খুইয়েছেন। ছবি : সিটিভি নিউজ

আরেকজন টুইটারে বলেছেন, “গত ছয় সপ্তাহ ধরে” তারা প্রতিদিন বেশ কয়েকটি করে এধরণের কল পেয়েছেন।

কানাডার এন্টি-ফ্রড সেন্টারের (ঈঅঋঈ) একজন মুখপাত্র এক ইমেলে সিটিভিনিউজ.সিএ-কে নিশ্চিত করেন যে, এসব ফোনকল হলো এসময়ের “সবচেয়ে বেশি অভিযোগ করা” প্রতারণাগুলোর অংশ এবং তারা এ নিয়ে কাজ করছেন।

এন্টি-ফ্রড সেন্টার বলছে, “এসব কল চরিত্রে আন্তর্জাতিক”, তার মানে হলো এবিষয়ে “তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে আইনগত আওতা ও ক্ষমতার” বিষয়টি ইস্যু হয়ে উঠবে। কারণ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার তদন্তকারীদেরকে অন্য দেশের আইন মেনে চলতে হবে।

ওই মুখপাত্র উল্লেখ করেন যে, এধরণের কলের ক্ষেত্রে কলার আইডিতে নানা কারসাজি করার ফলে কোন্ দেশ থেকে কল করা হয়েছে তা খুঁজে পাওয়া এবং চিহ্নিত করা কঠিন হয়ে যায়। সেই সঙ্গে যারা এধরণের কল করে তারা এই প্রতারণার সঙ্গে একজন দক্ষ আইনজীবীকে নিয়োগ দিয়ে তার মাধ্যমে কলের রিসিট সংগ্রহ ও ভিকটিমের অর্থ পাচার করতে প্রি-পেইড কার্ড এবং ভার্চুয়াল মুদ্রা ব্যবহার করে। ফলে আইন প্রয়োগকারীদের জন্য তদন্ত করা আরও দুরূহ হয়ে পড়ে।

কানাডার রেভিনিউ এজেন্সির নামে কানাডীয়দেরকে প্রতারণার শিকারে পরিণত করার চেষ্টাকারী অন্তত ৬০ জন প্রতারককে গত মার্চে ভারতে আটক করা হয়। এই প্রতারণা বাণিজ্যের সঙ্গে ৪০টির বেশি অবৈধ কলসেন্টার রয়েছে ভারতে।

ওই সময় আরসিএমপি বলেছিলো যে তারা “আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য এসব অবৈধ কল সেন্টারের অবস্থান সম্পর্কে তথ্য জানার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে যাতে এই সব প্রতারণাচক্র ভেঙ্গে দেওয়া এবং তাদের গণপ্রতারণার কার্যক্রম ব্যাহত করা যায়।”

কানাডার রেডিও-টেলিভিশন ও টেলিকমিউনিকেশন্স কমিশনের (ঈজঞঈ) মহিলা মুখপাত্র প্যাট্রিসিয়া ভ্যালেদাও সিটিভিনিউজ.সিএ-কে বলেন যে, ভয়েসওভার ইন্টারনেট প্রটোকলের (ঠঙওচ) মত প্রযুক্তির আগমনের ফলে প্রতারণামূলক ফোন কলের হার বেড়ে গেছে। তবে সম্প্রতি এর যে ব্যাপকতা তার কারণ সংস্থাটি জানে না।

ভ্যালেদাও বলেন, “এটা কেন বেড়ে গেছে তা আমরা জানি না, সম্ভবত বছরের এই বিশেষ সময়ের কারণে। তারা সময়ের ট্রেন্ড অনুসরণ করে।”

রুখে দাঁড়াবার কিছু টিপস

সিআরটিসি ২০০৮ সালে “ডু নট কল” নামে একটি তালিকা তৈরি করে যেখানে জনগণ তাদের ফোন নম্বরটিকে টেলিফোনে বাণিজ্যিক যোগাযোগ থেকে রেহাই দেওয়ার জন্য বলতে পারেন। এক্ষেত্রে দাতব্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে ছাড় দেওয়া হয় এবং তাদের যে কোনও কল সরাসরি সংযোগ দেওয়া হয়।

টেলিফোন ব্যবহারকারীরা িি.িষহহঃব-ফহপষ.মপ.পধ এই সাইটে বা ১-৮৬৬-৫৮০-উঘঈখ (৩৬২৫) নম্বরে কল করে কিংবা শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের ক্ষেত্রে ১-৮৮৮-উঘঈখ-ঞঞণ (৩৬২-৫৮৮৯) নম্বরে কল করে অভিযোগ জানাতে পারেন। ভালেদাও জানান, এই সেবার অধীনে কানাডার এক কোটি ৩০ লাখ নম্বর নিবন্ধিত রয়েছে এবং যারা এই নিয়ম মানেনি এমন ৯০ লাখ কলারকে জরিমানা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, “এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে, ওই ধরণের কল এলে লোকেদের কোনভাবেই ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস করা উচিৎ নয় এবং সংযোগ কেটে দেওয়া উচিৎ।”

তিনি বলেন, “সিআরটিসি এসব প্রতারকদের চিহ্নিত করতে খুবই কঠোর মনোভাব গ্রহণ করেছে।”

তিনি যে কোনও টেলিফোন কল বৈধ কিনা তা খতিয়ে দেখার জন্য একটি অনলাইন গবেষণা শুরুর সুপারিশ করেছেন।

সিআরটিসি বলেছে, অযাচিত কল চিহ্নিত করার বিষয় নিয়ে তারা এই শিল্পের লোকেদের সঙ্গে কাজ করছে। এর মধ্যে যাকে কল করা হয়েছে তাকে সংযোগ দেওয়ার আগে নেওয়ার্ক পর্যায়ে তিন-স্তরের সনাক্তকরণ ব্যবস্থার বিষয়টি চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।

ভ্যালেদাও বলেন, “আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি এবং সমাধানের জন্য কানাডীয় ও আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করছি।”

একটি পদক্ষেপ হলো “বৈশ্বিক কল” (ঁহরাবৎংধষ পধষষ নষড়পশরহম) বøক করে দেওয়া। এটি প্রয়োগ করা হবে কলার আইডিতে কারসাজি করা কোনও নম্বর, যেমন, ০০০-০০-০০০০ থেকে কল করা হলে।

অবাঞ্ছিত কল বøক করা বা ফিল্টারিং করার জন্য সিআরটিসি তাদের ওয়েবসাইটে কিছু টিপস দিয়েছে।

টেলিফোন ব্যবহারকারীরা নির্দিষ্ট নম্বর থেকে আসা কল ফিল্টারিং করা বা একেবারেই বন্ধ করে দেওয়ার জন্য এই সার্ভিস নিতে পারেন।

যারা সর্বশেষ মডেলের আই-ফোন ব্যবহার করেন তাদের সেটে “অজ্ঞাত কলারকে নিশ্চুপ” করে দেওয়ার একটি অপশন রয়েছে। সিএনবিসি জানায়, এই অপশন দিয়ে অজ্ঞাত কলারের কলটি সরাসরি ভয়েসমেলে চলে যাবে।

অযাচিত রবোটিক কল বা প্রতারণামূলক কল কীভাবে বন্ধ করতে হবে সে বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল কমিউনিকেশন্স কমিশনেরও একটি গাইডলাইন আছে। এতে ব্যবহারকারীদের স্থানীয় নম্বর থেকে আসা কলের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে কারণ স্থানীয় নম্বর দেখালেই যে সেটি স্থানীয় নম্বর থেকেই করা হয়েছে সবসময় তেমন না-ও হতে পারে। অন্যান্য পরামর্শের মধ্যে আছে, ফোন সার্ভিস প্রদানকারীদের সঙ্গে আলোচনা করা এবং অযাচিত কল প্রতিরোধ করে এমন অ্যাপ সম্পর্কে গবেষণা করা।