টরন্টো উত্তর আমেরিকার সবচেয়ে নিরাপদ শহর
বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ শহরের তালিকায় টরন্টোর স্থান ষষ্ঠ
অক্টোবর ৯, ২০১৯
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : টরন্টো উত্তর আমেরিকার সবচেয়ে নিরাপদ শহর। সারা বিশ্বের শহরগুলোর ওপর এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, অন্টারিওর রাজধানী টরন্টো বিশ্বের সব শহরের মধ্যে ষষ্ঠ নিরাপদতম শহর। ইকোনোমিস্ট ইনটেলিজেন্ট ইউনিটের তৈরি করা চলতি বছরের সেফ সিটি ইনডেক্সে ৫টি মহাদেশের ৬০টি শহরের ওপর নজর দেওয়া হয়েছে। শহরগুলোকে নম্বর দেওয়ার ক্ষেত্রে চারটি বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ করা হয়। এগুলি হলো, ডিজিটাল নিরাপত্তা, অবকাঠামো, স্বাস্থ্য ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তা। খবর সিটিভি নিউজের।
রিপোর্টের তথ্য অনুযায়ী বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ শহর হলো টোকিও। এর পরে সেরা পাঁচে রয়েছে সিঙ্গাপুর, ওসাকা, আমস্টারডাম এবং সিডনি।
টরন্টো ষষ্ঠ অবস্থান দখল করেছে ওয়াশিংটন ডিসিকে টপকে। ওয়াশিংটন হলো উত্তর আমেরিকার দ্বিতীয় শহর যেটি তালিকার শীর্ষ দশে জায়গা করে নিয়েছে।
শীর্ষ দশ-এ মূলত এশিয়ার শহরগুলোরই প্রাধান্য রয়েছে। তবে সমীক্ষার রিপোর্টে এটাও বলা হয়েছে যে, সুনির্দিষ্টভাবে কোনও বিশেষ ভৌগোলিক অঞ্চল অধিকতর নিরাপদ এমন নয় বরং বিশেষ বিশেষ নগরগুলোই নিরাপদ।
সমীক্ষায় বলা হয়, তারা যখন বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কের বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করেন তখন তারা দেখতে পান যে, “টোকিও, সিঙ্গাপুর এবং ওসাকা তাদের নিজস্ব জোরের কারণেই এগিয়ে আছে, এশিয়ায় অবস্থিত বলে নয়।”
বিস্ময়ের কিছু নেই যে, সম্পদ এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। সাধারণভাবে যেসব শহরের অধিবাসীদের গড় আয় বেশি সেইসব শহর অপেক্ষাকৃত ভালো অবকাঠামো এবং স্বাস্থ্যসেবা দিতে পারে।
কিন্তু, সমীক্ষায় এটাও দেখা গেছে যে, দুর্নীতিমুক্ত স্বচ্ছতা ও সুশাসন আসলে সম্পদের মতই গুরুত্বপূর্ণ।
সমীক্ষায় নিরাপত্তা সম্পর্কিত চারটি ক্যাটাগরিতে ৫৭টি বিভিন্ন উপাদান খতিয়ে দেখা হয় যেগুলির ভিত্তিতে শহরগুলোকে নম্বর দেওয়া হয়। এসব উপকরণের কোনওটিতে হয়তো এমন বিষয়ও ছিলো যেমন সাইবার সিকিউরিটি টিমের সংখ্যা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনা, পরিবেশগত নীতি, প্রতি ১ হাজার মানুষের জন্য চিকিৎসকের সংখ্যা, বায়ুর মান, বন্দুক সম্পর্কিত নিয়ম-বিধি, সহিংস অপরাধ, জেন্ডার সম্পর্কিত অপরাধ এবং নিরাপত্তা সম্পর্কে অধিবাসীদের ধারণা।
সাধারণভাবে সমীক্ষায় উঠে এসেছে যে, চারটি ভিন্ন ক্যাটাগরিতে সমরূপ ফলাফল করলেও তারা হয়তো একটিতে খুব ভালো করেছে আবার অন্য একটিতে মারাত্মক খারাপ করেছে। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয় যে, প্রত্যেক ক্যাটাগরিরই অন্য ক্যাটাগরির উপর প্রভাব রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, অবকাঠামোর ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত অগ্রগতির সুফল থাকতে পারে স্বাস্থ্য সেবার ক্ষেত্রে, অন্যদিকে বিকশিত সাইবার নিরাপত্তা সব ক্যাটাগরির উন্নয়নেই সহায়ক হতে পারে।
আলাদা করে ক্যাটাগরির ক্ষেত্রে টরন্টো ব্যক্তিগত নিরাপত্তার দিক থেকে সেরা স্কোর করেছে, যেখানে এই শহরটির অবস্থান ছিলো অষ্টম। আর সবচেয়ে খারাপ অবস্থা স্বাস্থ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে, ১৭ তম। ডিজিটাল নিরাপত্তার দিক থেকে টরন্টো নবম এবং অবকাঠামোগত নিরাপত্তার ক্ষেত্রে নিউইয়র্কের সমান ১২’শ অবস্থান পেয়েছে।
বিশ্ব যখন ক্রমবর্ধমান জলবায়ু সঙ্কট এবং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক চাপের মোকাবিলা করছে তখন এই বিষয়গুলো মাথায় রেখে এবারের সমীক্ষায় নাগরিক নিরাপত্তার অধিকতর “স্থিতিস্থাপক” সূচক ব্যবহার করা হয় যাতে অগ্রসরমান শহরগুলি নেহায়েত প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটে যাবার পর ব্যবস্থা নেওয়ার পরিবর্তে কীভাবে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা গ্রহণ করছে সেটিও পর্যবেক্ষণ করা যায়।
সমীক্ষা রিপোর্টে বলা হয়েছে, “ডিজিটাল, স্বাস্থ্য, অবকাঠামো এবং ব্যক্তিগত নিরাপত্তা এই প্রতিটি ক্যাটাগরিতে শীর্ষ পাঁচটি শহরের অবস্থান একটি অভিন্ন বার্তা বয়ে আনে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই শীর্ষস্থানীয় শহরগুলো মূল জায়গাগুলোতে যথাযথ ছিলো, সেটা উচ্চমানের স্বাস্থ্যসেবা, নিবেদিত সাইবার সিকিউরিটি টিম, কমিউনিটি-ভিত্তিক পুলিশের পাহারা বা দুর্যোগ সম্পর্কিত ধারাবাহিক পরিকল্পনার প্রাপ্যতা যেটাই হোক।”
শহরগুলোর অবস্থানের দিক থেকে ২০১৭ সালের পর টরন্টোর সামান্য অবনতি ঘটেছে।
এনইসি করপোরেশনের পৃষ্ঠপোষকতায় সম্পাদিত রিপোর্টটি দ্বি-বার্ষিক। এতে শীর্ষ তিনটি শহরের অবস্থান ২০১৭ সালের মত একই আছে। কিন্তু আগেরবার সার্বিক বিবেচনায় টরন্টো ছিলো চতুর্থ অবস্থানে।
এই সমীক্ষার ফলাফলের অর্থ এই নয় যে টরন্টো কানাডার সবচেয়ে নিরাপদ শহর। কারণ দ্য ইকোনোমিস্টের ইনটেলিজেন্ট ইউনিট তাদের পর্যবেক্ষণের জন্য সারা বিশ্বের মাত্র ৬০টি প্রধান শহর বেছে নেয় এবং সেই তালিকায় টরন্টো ছিলো কানাডার একমাত্র শহর।
সমীক্ষা অনুযায়ী বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ শহরগুলোর সেরা দশটির তালিকা এখানে দেওয়া হলো:
১. টোকিও, ২. সিঙ্গাপুর, ৩.ওসাকা, ৪. আমস্টারডাম, ৫. সিডনি, ৬. টরন্টো, ৭.ওয়াশিংটন ডিসি, ৮. কোপেনহেগেন, ৯.সিউল, ১০. মেলবোর্ন।