কানাডার হাইস্কুলগুলোতে বর্ণবাদী সহিংসতা কীভাবে শিক্ষার্থীদের মানসিক যন্ত্রণার কারণ হয়ে উঠছে

ডিসেম্বর ৭, ২০১৯

স্কুলগুলোতে সহিংসতা ও বর্ণবাদী হামলা দুটোই খুব বেশি, সিবিসি নিউজ-এর জরীপ

জয়িতা সেনগুপ্তা : নিজের বাড়ি থেকে কয়েক কদম দূরে ব্যস্ত বাস্কেটবল কোর্টে বাচ্চাদের ভিড়ের মধ্যে অবস্থান করলেও ই.এইচ আসলে একা। সে এই সময়ের শিকার। ১৫ বছরের বালকটি একের পর এক বাস্কেটে বল ছুড়ে দিচ্ছে, চেষ্টা করছে একবার বল নেটে ঢুকাতেÑ এটি হলো মানসিক আঘাতজনিত চিত্তবিক্ষেপ।

সে বলেছে, “মাঝে মাঝে আমি হতাশ হয়ে পড়ি, আমি ঠিক জানি না। বারবার বল ছুড়তে থাকাটা বেশ ভালই মনে হয়। এটি আমাকে শান্ত হয়ে আসতে সহায়তা করে।

টিভি দেখা বা সামাজিক মাধ্যম থেকে দূরে সরে এসে এই বাস্কেটবল কোর্টে সময় কাটানো স্কুলে বর্ণবাদী কায়দায় নাম ধরে ডাকার অপমান এবং শারীরিকভাবে আক্রমণের শিকার হওয়ার স্মৃতি রোমন্থন থেকে বেরিয়ে আসতে তাকে সাহায্য করে। কিন্তু রাতের বেলা ওইসব স্মৃতি তার মনে জেগে ওঠে।

তার ভাষায়, “আমি দুঃস্বপ্ন দেখি। দুঃস্বপ্ন দেখে আমি খুব ভোরে ঘুম থেকে জেগে উঠি, আমি আর ঘুমাতে পারি না।”

সিবিসি নিউজের উদ্যোগে পরিচালিত এধরণের প্রথম জরিপে ১৪ থেকে ২১ বছর বয়সী চার হাজার তরুণকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এর মধ্যে অশ্বেতাঙ্গ তরুণদের অর্ধেকেরও বেশি বলেছে, তারা বর্ণবাদী নাম ধরে ডাকা এবং বর্ণবাদী মন্তব্যের শিকার হয়েছে। প্রতি আটজনে একজন বলেছে, তার ক্ষেত্রে এধরণের ঘটনা ঘটেছে পাঁচ বারেরও বেশি।

সমীক্ষায় প্রকাশ পেয়েছে যে, ৪১ শতাংশ বালক হাইস্কুলে শারীরিকভাবে হামলার শিকার হয়েছে এবং ২১ শতাংশ বলেছে, তাদেরকে অস্ত্র উঁচিয়ে ভয় দেখানো হয়েছে। এই পরিসংখ্যান মেয়েদের ক্ষেত্রে সংঘটিত ঘটনার চেয়ে শতকরা হিসাবে অনেক বেশি।

এগুলো মর্মান্তিক পরিসংখ্যান। আর সেটা খুব ভালো করে জানে ই.এইচ। (তার নাম বদলে দেয়া হয়েছে যাতে তার পরিচয় গোপন থাকে)। তার মা এ.এইচ বলেন, এসব ঘটনার কারণে তারও নির্ঘুম রাত কাটে।

“ই.এইচ ঠিক আছে কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত হবার জন্য আমাকে জেগে থাকতে হয়। কারণ সে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে বসে থাকে। লোকেরা তাকে হুমকি দিয়েছে, সেজন্যে তার ভয়, ওই লোকগুলো তার পেছনে লেগে আছে। সে বলেছে, আমরা কোথায় থাকি তারা সেটা জানে।”

উইনস্টন কারাম বর্ণনা করছে, কীভাবে তার আশেপাশের প্রাপ্তবয়স্ক লোকেরা তার ওপর মারাত্মক নিগ্রহের বিষয়টি উপেক্ষা করে গেছে। ছবি : সিবিসি

তাকে একা করে ফেলা হয়

গত বছর ই.এইচ যখন টরন্টোর উত্তরে ইয়র্ক অঞ্চলের ড. জে এম ডেনিসন সেকেন্ডারি স্কুলে নবম গ্রেডে ভর্তি হয় তখন স্কুলের নতুন জীবনের কথা ভেবে তার মনে ছিলো উত্তেজনা। এরপরই শুরু হয় তাকে ঘিরে বর্ণবাদী উপহাস বিদ্রæপ।

তাকে উপর্যুপরি ‘হ-ড়িৎফ’ বলে ডাকা হতো এবং বলা হতো, “যাও, নিজেকে হত্যা করো।”

এ থেকে পরে শারীরিক হামলার ঘটনা ঘটে। হামলার প্রতিটি ঘটনাই ছিলো আগেরটির চেয়ে মারাত্মক এবং প্রতিবারই আরও বেশি সংখ্যক শিশু হামলায় অংশ নেয়।

তাকে একা করে ফেলা হয় এবং পেটানো হয়। অনেক সময় প্রকাশ্যে ক্যামেরা চালু থাকতেই পেটানো হয়। একটি ভিডিওতে দেখা যায়, তাকে স্কুলের করিডোরে ঘিরে ধরে আক্রমণ করছে শিশুরা এবং তার মাথায় ঘুষি মারছে। আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, তার মাথা পানির ঝর্ণার সাথে ঠুকে দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে জখম হয়ে সে মূর্চ্ছা যায়।

দুটি ঘটনাই স্কুলের ভেতরে ক্যামেরা চালু থাকতেই ঘটেছে। দুটি ঘটনারই ভিডিও চিত্র সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপকভাবে শেয়ার করা হয়। ঘটনার সঙ্গে জড়িত কিছু ছেলেকে বহিষ্কার করা হয়, একই সঙ্গে ই.এইচকেও।

ইএইচ জানায়, “আমি শিক্ষকদের সব বলতে চেয়েছি, কিন্তু তারা শোনেননি। তারা স্কুলে আমার ওপর নজর রাখার জন্য পাঁচজন শিক্ষককে দায়িত্ব দেন এবং তারা তাদের ওয়াকিটকির মাধ্যমে আমাকে যেন বাজে শিশু হিসাবে উপস্থাপন করেন।”

তার মা জে.এইচ বলেন, সে স্কুলে যাওয়ার বিষয়ে উদাসীন এটা তিনি খেয়াল করেছেন কিন্তু স্কুলে তার ওপর হামলার ভিডিও দেখা এবং তার ছেলেকে যেসব কথা বলা হয়েছে সেগুলো শোনার আগপর্যন্ত তিনি পরিস্থিতির ভয়াবহতা অনুধাবন করতে পারেননি। তিনি স্কুলের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন এই আশায় যে, এসব সহিংসতা বন্ধ হবে।

জে.এইচ বলেন, “তারা শুধু আমাকে আশ্বাস দিতে থাকেন যে, আমার ছেলে ঠিক হয়ে যাবে। তারা বলেছেন যেন আমার ছেলে স্কুলে থেকে যায়। ওকে নিয়ে যাবেন না। ওকে এখানেই রাখুন। এসব আর ঘটবে না।”

বর্ণবাদী চাপ

চলতি বছরের এপ্রিলের মধ্যে জে.এইচ ওই স্কুল থেকে তার ছেলেকে বের করে নিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নেন। ই.এইচ-এর ঘটনা সম্পর্কে স্কুল বোর্ড কোনও মন্তব্য করতে রাজি হয়নি গোপনীয়তার দোহাই দিয়ে। তবে ইয়র্ক অঞ্চলের জেলা স্কুল বোর্ডের আদিবাসী শিক্ষা ও সমতা বিষয়ক সুপার সিসিল রোচ দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ই.এইচ-এর পরিবারকে এধরণের অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়েছে শুনে তিনি দুঃখিত। যে বাবা-মা বর্ণবাদী নিগ্রহের কারণে সন্তানকে স্কুল থেকে সরিয়ে নিয়ে যান তাদেরকে আপনি কী বলবেন, একথা জিজ্ঞাসা করা হলে রোচ বলেন, “আমরা দুঃখিত যে আমরা যেধরণের অভিজ্ঞতা আপনাদের দিতে চাই সেরকম অভিজ্ঞতা আপনারা এখান থেকে পাননি। আমরা এটাও স্বীকার করি , উদাহরণ হিসাবে যে, আপনার সন্তান বর্ণবাদের শিকার হয়েছে। আপনার শিশু কৃষ্ণাঙ্গবিরোধী বর্ণবাদের শিকার হয়েছে। আমরা তাদেরকে এটাও বলতে চাই যে, এটা মোটেই সেই বিষয় নয় আমরা বোর্ড হিসাবে যেমনটা দিতে চাই।”

তিনি সমস্যার মূল কারণ হিসাবে কানাডায় জাতিগত বিদ্বেষমূলক অপরাধের অস্তিত্বের বিষয়টিও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “আমাদের স্কুলে ওই ধরণের ঘটনা ঘটেছে এতে আমি অবাক হইনি। আমাদের স্কুল ওই ধরণের বিষয় থেকে মুক্ত নয়। কারণ আমরা সমাজেরই অংশ।”

রোচ বলেন, তাদের বোর্ড অধীনস্থ স্কুলগুলোতে বর্ণবাদী সমস্যার সমাধানে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়েছে। উদাহরণ হিসাবে, সম্প্রতি পেশাগত উন্নয়ন দিবসে প্রতিটি স্কুলের ১২০০ শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী বর্ণবাদবিরোধী প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছে।

এদিকে, ই.এইচ-এর মা এই ঘটনার জন্য ১০ লাখ ডলারের ক্ষতিপূরণ মামলা দায়ের করেছেন। স্কুলের শিক্ষক এবং বোর্ডের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সমর্থন না পাওয়ার অভিযোগে তিনি এই মামলা করেন।

এই পরিবারের আইনজীবী ডায়মন্ড অ্যান্ড ডায়মন্ড এলএলপির ডেরিল সিঙ্গার বলেন, ই.এইচ-এর মতো ঘটনার শিকার শিশুদের সহায়তার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও স্কুল বোর্ড আগে থেকেই যে নীতিমালা গ্রহণ করেছে ওই স্কুল সেই নীতিমালা অনুসরণে ব্যর্থ হয়েছে। “তারা তাদের নিজেদের নীতিমালা ও মিয়মবিধি লংঘন করেছে যার অনুসরণই তাদের করণীয় ছিলো। এটা হলো এক নম্বর বিষয়। দ্বিতীয়ত, তারা নিরাপদ স্কুল সম্পর্কিত নীতি বাস্তবায়ন করেনি।” সিঙ্গার বলেন, স্কুলটি ই.এইচ-এর জন্য একটি নিরাপত্তার পরিকল্পনা করতেও ব্যর্থ হয়েছে যার নির্দেশনা নিরাপদ স্কুল সম্পর্কিত নীতিতে দেওয়া আছে।

ই.এইচ-এর ঘটনা নিয়ে কিছু বলতে না চাইলেও রোচ বলেন, তাদের কোনও স্কুলে এধরণের সহিংস ঘটনা ঘটার পর ঘটনার শিকার ব্যক্তিকে সহায়তার জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদ তাদের আছে। আছেন সমাজ-কর্মী এবং মনস্তত্ত¡বিদও।

রোচ বলেন, “এ বিষয়ে তদন্ত করা হয়। পরিস্থিতি বুঝে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়, অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ঘটনার শিকার শিক্ষার্থীকে সহায়তা দেওয়া হয়। এরপর হয়তো সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থী স্কুল ছেড়ে অন্য কোনও স্কুলে যেতে পারে। তবে সেটা হামলার শিকার শিক্ষার্থী নয় বরং অপরাধী।”

ই.এইচ-এর নিপীড়কদের যখন স্কুল থেকে বহিষ্কার করা হয় তখন তাকেও বহিষ্কার করা হয়। স্কুলের যেসব নিয়মের কথা রোচ উল্লেখ করেন সে অনুযায়ী ই.এইচ কোনওরকম সহায়তা পায়নি বলে জানায়। শেষ পর্যন্ত সে নিজেই স্কুল পাল্টানোর সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়।

আইনী ব্যবস্থা

জে.এইচ বলেন তিনি মামলা দায়ের করেছেন এজন্যে যে, তার ছেলের মত পীড়নের

শিকার শিক্ষার্থীদের সহায়তা দিতে স্কুল বোর্ড যেন বাধ্য হয় সেটা নিশ্চিত করার জন্য। তিনি বলেন, “আমি চাই ইয়র্ক অঞ্চলের জবাবদিহিতা। এখানে পুলিশ আছে, কিন্তু তাদের কিছু জানানো হয়নি। মামলায় শিক্ষক ও প্রিন্সিপালকেও পক্ষ করা হয়েছে। তাদেরকে তাদের রচিত নীতি অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে।”

কোনও শিক্ষার্থীর অভিভাবক মামলা করেছেন এমনটা এই প্রথম নয়।

সাত বছর আগে অটোয়ার কার্লেটন ডিস্ট্রিক্ট স্কুল বোর্ডের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থী উইনস্টন কারাম-এর মা যে দৃষ্টান্তমূলক মামলা করেছিলেন তা কারেমের বেদনা উপসমে জোরালো ভূমিকা রাখে।

কারেম বলেন, “স্কুলের কেউ আমাকে বলেনি যে, হ্যাঁ, তুমি নিগ্রহের শিকার হয়েছো। কিন্তু এমনটা কেউ বলুক তা আমার জন্য খুবই দরকার ছিলো। তবে আমার সৌভাগ্য যে, আদালতে মামলা করে সেই কথাটা আমি পেয়েছি।”

বোর্ডভিউ স্কুলে অষ্টম গ্রেডে পড়ার সময় কারাম দুই বছর ধরে দুজন সহপাঠীর মৌখিক গাল-মন্দের শিকার হয়েছে। শেষপর্যন্ত তা মৌখিক থাকেনি। তারা তাকে হ-ড়িৎফ বলে ডাকতে শুরু করে এবং ক্রমশ শারীরিক সহিংস আক্রমণের দিকে এগিয়ে যায়। একটি ঘটনায় একজন ছেলে পেছন দিক থেকে কারামের ওপর চড়াও হয় এবং তার শ্বাসরোধের চেষ্টা করে। আরেকদিন তার মাথা পানির ঝর্ণার সঙ্গে ঠুকে দেয়া হয়, অনেকটা এ.এইচ-এর মতো। এরপর ক্লাসরুমে আতঙ্কজনক আক্রমণের শিকার হলে তার মা ভানিয়া কারাম তাকে স্কুল থেকে সরিয়ে নেন। জে.এইচ-এর মতই ভানিয়া জানান, তিনি স্কুলের শিক্ষক ও প্রিন্সিপালের সঙ্গে দফায় দফায় দেখা করে অভিযোগ জানিয়েছেন, কিন্তু স্কুল তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেনি।

উইনস্টনকে তার উদ্বেগ থেকে বেরিয়ে আসতে এবং ভেঙ্গে পড়া আত্মবিশ্বাস ফেরাতে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক চিকিৎসা নিতে হয়েছে। তার ওপর নির্যাতনকারীরা মজা করার জন্য যেসব কাÐ করেছে তার বিরূপ ফল থেকে বেরিয়ে আসতে এবং আবারও স্বাভাবিকভাবে হাসতে কারামের বেশ কয়েক বছর লেগেছে। তাকে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দানকারী থেরাপিস্টই কারাম ও তার মাকে স্কুলের বিরুদ্ধে মামলা করার পরামর্শ দেন।

আইনগত প্রক্রিয়ায় সময় লাগে পাঁচ বছর এবং এজন্য ভানিয়া কারামের ব্যয় হয় ৫০ হাজার ডলার। একজন সিঙ্গেল মাদারের জন্য এটা এক বিশাল ব্যয়। তারা যখন মামলা জিতে যান তখন তাদেরকে দেয়া হয় মাত্র ৩,৮০০ ডলার। এতকিছুর পরও ভানিয়া বলেন, এটা ঠিক আছে।

তিনি বলেন, “সে ভিন্ন জগৎ থেকে ফিরে এসেছে। সে আত্মহত্যা করেনি। সে ভেঙ্গে পড়া মানুষ নয়। তার বিক্ষিপ্ত অঙ্গগুলো আবার সে যথাযথভাবে ফিরে পেয়েছে… আমার মনে হয়, মামলার বিচারও ছিলো ওইসব বিক্ষিপ্ত অঙ্গের একটি।”

উইনস্টন কারাম এখন পুলিশের একটি বুনিয়াদি কোর্স নিয়ে কলেজে পড়ছে। মামলা জেতার পর থেকে সে ও তার মা স্কুলে নিগ্রহের শিকার শিক্ষার্থীদের পক্ষে কৌসুলি হয়ে উঠেছে। সে স্কুলের অ্যাসেম্বলিতে এবং স্কুল বোর্ডের মিটিংয়ে তার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছে। কারাম বলেছে, “এধরণের পরিস্থিতি আমি ঘৃণা করি। আমি ঘৃণা করি এটা ভাবতে যে, এসব আমার সঙ্গে ঘটেছে। তবে শেষ পর্যন্ত আমি এসব থেকে বেরিয়ে এসেছি এবং এখন আমি অনেক বেশি ইতিবাচক মনোভাবের একজন মানুষ।”

-সিবিসি নিউজ