ওইসিডির রিপোর্টে কানাডার অভিবাসন ব্যবস্থাকে বিশ্বের অন্যতম সফল ব্যবস্থা বলে প্রশংসা করা হয়েছে

সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৯

ক্যাথলিন হ্যারিস  –  ১৩ আগস্ট ২০১৯  : অভিবাসন মন্ত্রী আহমেদ হুসেন বলেছেন, কানাডাকে অবশ্যই দক্ষ শ্রমিকদের আকৃষ্ট করার ক্ষেত্রে বিশ্বের শীর্ষ অবস্থান ধরে রাখার উপায় উদ্ভাবন ও দ্রুত তা কার্যকর করতে হবে।

হুসেন অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থার (ওইসিডি) একটি রিপোর্টকে স্বাগত জানাতে গিয়ে ওই মন্তব্য করেন। রিপোর্টে অর্থনৈতিক অভিবাসন ব্যবস্থাকে বিশ্বের অন্যতম সফল ব্যবস্থা হিসাবে প্রশংসা করা হয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়, কানাডাকে ব্যাপকতরভাবে বিশ্বের অন্যান্য দেশের জন্য “পরম মানদ-” হিসাবে গণ্য করা হয়।

হুসেন বলেন, এমন অনেক ক্ষেত্র আছে যেখানে কানাডা সঠিক অবস্থানে আছে, তবে বর্তমান ও ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আরও অনেক কিছু করার আছে। তিনি সিবিসির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “যখন অভিবাসনে প্রসঙ্গ আসে তখন এখানে কোনও আরোপিত বাধ্যবাধকতা নেই। একটি চৌকস অভিবাসন নীতি থাকার অর্থ হলো, আপনাকে সব সময়ই অন্যদের কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ এবং বিদ্যমান ব্যবস্থার অব্যাহত উন্নয়নে উদার থাকতে হবে।”

কিছু জরিপে দেখা যায়, কানাডার বেশিরভাগ মানুষ বার্ষিক অভিবাসী গ্রহণের হার কমিয়ে আনার পক্ষে। এই প্রেক্ষাপটে হুসেন বলেন, শ্রমিক ঘাটতি পূরণ এবং অর্থনীতি চাঙ্গা করার জন্য দক্ষ শ্রমিক আনার বিষয়টি বেশিরভাগ কানাডীয়ই সমর্থন করেন।

অভিবাসন ব্যবস্থায় কানাডাকে ব্যাপকতরভাবে বিশ্বের অন্যান্য দেশের জন্য “পরম মানদ-” হিসাবে গণ্য করা হয়। ছবি : সিবিসি নিউজ

সিবিসির একটি জরিপের ফল উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এব্যাপারে ভুল ধারণা পোষণ করবেন না। আমার মনে হয়, কানাডার বাইরে থেকে আমাদেরকে ধ্বংস করে ফেলা হচ্ছে বলে যে ভীতি ছড়ানো হচ্ছে এবং যেসব অসত্য তথ্য প্রচার করা হচ্ছে তার মোকাবিলায় আমাদের আরও কিছু করা দরকার।” ওই জরিপে দেখা গেছে, বিদেশ থেকে টুইটারের ট্রল অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে অভিবাসন বিষয়ে বিভক্তি তুলে ধরার জন্য কানাডীয়দের টার্গেট করা হচ্ছে।

কানাডায় যখন এমন একটি জাতীয় নির্বাচন হতে যাচ্ছে যেখানে সীমান্ত পেরিয়ে আসা রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীসহ পুরো অভিবাসনই বিতর্কের বিষয় হবে বলে মনে করা হচ্ছে তার ঠিক আগে প্রকাশিত ওইসিডির রিপোর্টে উঠে এসেছে যে, দক্ষ শ্রমিক বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কানাডা সঠিক পথেই আছে। এতে অভিবাসীদের সুষ্ঠুভাবে সমাজে অঙ্গীভূতকরণ এবং সাফল্যের নমুনা হিসাবে অভিবাসনের পক্ষে বিপুল জনসমর্থন আছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

রিপোর্টে আরও বলা হয় যে, বিশ্বজুড়ে সম্ভাব্য দক্ষ শ্রমিকদের প্রতি কানাডার জোরালো আহবান রয়েছে। “এই সাফল্যের পেছনে মূল কারণ কেবল বিস্তারিত বাছাই প্রক্রিয়াই নয়, বরং এর ভিত্তি যে গোটা অবকাঠামো সেটাই। এই অবকাঠামোর অধিগত বিষয়গুলো অব্যাহতভাবে পর্যবেক্ষণ ও অভিযোজন করা হয়।

সম্প্রতি টরন্টোতে রিপোর্টটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়। সেই অনুষ্ঠানে মন্ত্রী হুসেন এবং কানাডার অভিবাসন নীতির রচয়িতা ওইসিডির সিনিয়র অভিবাসন বিশেষজ্ঞ টমাস লিবিগকে সম্মান প্রদর্শন করা হয়।

লিবিগ বলেন, রিপোর্টের মূল্যায়ন কানাডার জন্য “খুবই অনুকূল”। ওইসিডি তার সদস্য দেশগুলোর শ্রম অভিবাসন ব্যবস্থা নিয়ে যে ধারাবাহিক রিপোর্ট প্রকাশ করছে তাতে কানাডা ছিলো দশম দেশ।

লিবিগ বলেন, ওইসিডিভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে কানাডার আছে একটি বৃহত্তম, দীর্ঘকালীন এবং সবচেয়ে সমন্বিত দক্ষ শ্রম অভিবাসন ব্যবস্থা। আর অন্যান্য দেশের চেয়ে কানাডায় অভিবাসনের প্রতি মানুষের উদারতাও বেশি বলে তিনি উল্লেখ করেন।

এক ই-মেল বার্তায় সিবিসি নিউজকে তিনি বলেন, “অভিবাসনের যথেষ্ট গ্রহণযোগ্যতার সঙ্গে অবশ্যই জনগণের এমন ধারণার সম্পর্ক আছে যে, অভিবাসন ব্যবস্থাটি খুবই ভালো ব্যবস্থাপনায় সম্পন্ন করা হচ্ছে এবং তা কানাডার জন্য উপকারী। কেবল শ্রমিক বাছাইয়ের পদ্ধতিই সবিস্তার নয় বরং আরও অনেক কারণ রয়েছে যেগুলি এটিকে একটি সুব্যবস্থাধীন পদ্ধতিতে পরিণত করতে সহায়ক হয়েছে। আর এই বিষয়টি থেকে অন্যান্য দেশ অনেককিছু শিখতে পারে।”

কানাডা একটি ‘দৃষ্টান্ত’

টরন্টোর অনুষ্ঠানে লিবিগ বলেন, কানাডা অন্যান্য দেশের জন্য একটি দৃষ্টান্ত হিসাবে কাজ করে।

হুসেন কিছু সমন্বিত কর্মসূচি ও উদ্যোগের কথা বলেন যেগুলি ২০১৫ সালে ক্ষমতায় আসার পর লেবার দলের সরকার গ্রহণ করে। তার মধ্যে রয়েছে ২০১৭ সালের জুন মাসে চালু করা বৈশ্বিক দক্ষতা কৌশল, যার অধীনে ৪০ হাজারেরও বেশি বিশ্বের সবচেয়ে দক্ষ শ্রমিক কানাডায় এসেছে।

হুসেন জানান, কানাডার জনসংখ্যার প্রবৃদ্ধির ৮০ শতাংশই অভিবাসীদের অবদান। ১৯৭১ সালে যেখানে একজন কর্মী অবসরে গেলে সাতজন করে কর্মী নিয়োগ করা যেতো সেখানে এখনকার পক্ষেপনে পূর্বাভাস দেওয়া হচ্ছে যে, ২০৩৫ সালের মধ্যে প্রত্যেক অবসরগ্রহণকারীর বিপরীতে মাত্র দুজন করে কর্মী নিয়োগ দেওয়া যাবে।

তিনি বলেন, “আমাদের বয়স্ক জনসংখ্যার কারণে আমাদেরকে অভিবাসন পদ্ধতির ব্যাপারে উচ্চাভিলাষী থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করতেই হবে।”

রিপোর্টে যেসব কর্মসূচির প্রশংসা করা হয়েছে তার মধ্যে কিছু গ্রহণ করেছিলো সাবেক কনজারভেটিভ দলের সরকার। যেমন, এক্সপ্রেস এন্ট্রি ইনিশিয়েটিভ। এই কর্মসূচির আওতায় উচ্চতর দক্ষতাসম্পন্ন  শ্রমিকদেরকে সরাসরি পারমানেন্ট রেসিডেন্সির সুযোগ দেওয়া হয়।

আরও উন্নততর করার সুপারিশ

তবে রিপোর্টে কিছু কিছু দিকে আরও উন্নত করার সুযোগ রয়েছে বলে দেখানো হয়েছে। তাদের সুপারিশগুলি হলো:

–   দক্ষ শ্রমিকদের আসার ভিন্ন ভিন্ন উপায় রাখার পরিবর্তে বিদ্যমান র‌্যাংকিং সিস্টেম সহজ-সরল করা, কেন্দ্রের স্কিলড ট্রেড প্রোগ্রাম বাতিল করা।

–   পেশাজীবীদের লাইসেন্স প্রদানের অনুকূল পরিবেশ তৈরির জন্য যোগ্যতা অর্জনের লক্ষ্যে স্বল্পমেয়াদি ভিসাদানের ব্যবস্থা রাখা; তাদের ক্রেডেন্সিয়ালের স্বীকৃতির ক্ষেত্রে তথ্যপ্রবাহ বাড়ানো এবং সমন্বিতকরণ।

–   প্রধান নগর এলাকার বাইরে আঞ্চলিক আবাসন সুবিধা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে উৎসাহদান; আটলান্টিক ও গ্রামীণ অভিবাসী প্রকল্পের সাফল্যের ধারায় এগুলো গড়ে তোলা।

–  যেসব কোম্পানি অস্থায়ী বিদেশি কর্মীদের জন্য বিদ্যমান অভিবাসন কর্মসূচির সর্বোচ্চ ব্যবহার করবে তাদের জন্য একটি আস্থাশীল নিয়োগদাতা প্রকল্প চালু করার বিষয়টি বিবেচনা করা।

রিপোর্টে অভিবাসীদের আগমনের আগেই কানাডার জীবনযাত্রা, স্বাস্থ্য ও আবাসন এবং কর্মসংস্থান বিষয়ে যেসব সেবা দেয়া সেজন্যে দেশটির প্রশংসা করা হয়েছে। তবে এতে এটাও উল্লেখ করা হয় যে, এসব সেবা লাভের যোগ্য অর্থনৈতিক শ্রেণির অভিবাসীদের মাত্র ৮.৫ ভাগ বাস্তবে ওই সেবা লাভ করেছে।