‘ইসলামী জঙ্গীরা’ কানাডার রাজনীতিতে ঢুকে পড়েছে!

সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৯

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : ‘ইসলামী জঙ্গীরা’ কানাডার রাজনীতিতে প্রবেশ করেছে। তারা রাজনৈতিক দলগুলোতে ঢুকে পড়েছে। এমনটাই দাবী গত বছর সেপ্টেম্বরে গঠিত নতুন রাজনৈতিক দল পিপল’স পার্টি অব কানাডা’র প্রধান ও সাম্প্রতিক সময়ের অতি বিতর্কিত এক ব্যক্তি ম্যাক্সিম বার্নিয়ার এর। খবর হাফিংটন পোস্ট এর। রিপোর্ট করেছেন আলথিয়া রাজ।

তবে তিনি তার এই দাবীর পক্ষে কোন প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেন নি। ম্যাক্সিম বার্নিয়ার এর আগে কানাডার কনজার্ভেটিভ পার্টি থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রীর পদেও ছিলেন। কিন্তু গত ফেডারেল নির্বাচনে কনজার্ভেটিভ পার্টির পরাজয়ের পর তিনি দলের প্রধান নির্বাচিত হওয়ার জন্য লড়াইও করেছেন। তবে সুবিধা করতে পারেননি। পরে ঐ দল থেকে বের হয়ে এসে নিজেই একটি দল গঠন করেন যার নাম পিপল’স পার্টি অব কানাডা। চরম রক্ষণশীলতা, ইমিগ্রেন্ট ও মুসলিম বিরোধীতার জন্য ইতিমধ্যেই তিনি বিতর্কের শীর্ষবিন্দুতে উঠে এসেছেন। আর তিনিই বলছেন ‘ইসলামী জঙ্গী’রা কানাডার রাজনীতিতে প্রবেশ করেছে।

ম্যাক্সিম বার্নিয়ার অভিযোগ করে বলেন, কানাডার রাজনৈতিক নেতারা এই জঙ্গীদের দলে টেনে নিয়ে নানাভাবে চেষ্টা করছেন ভোট পাবার জন্য।

সাম্প্রতিক সময়ের অতি বিতর্কিত এক ব্যক্তি ম্যাক্সিম বার্নিয়ার। তিনি নবগঠিত রাজনৈতিক দল পিপল’স পার্টি অব কানাডা’র প্রধান। ইমিগ্রেন্ট ও ইসলাম বিরোধী এই নেতা এবারের নির্বাচনে তার দলসহ অংশ নিচ্ছেন। ছবি : কানাডিয়ান প্রেস

এই ম্যাক্সিম বার্নিয়ারের একজন সমর্থক হলেন বেঞ্জামিন ডিচটার। গত ১৮ অগাস্ট পিপল’স পার্টি অব কানাডার কনভেনশন উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বেঞ্জামিন বলেছিলেন, লিবারেল পার্টি ভর্তি হয়ে আছে জঙ্গী ইসলামিস্টদের দ্বারা। সেদিন বেঞ্জামিনের সাথে সুর মিলিয়ে ম্যাক্সিম বার্নিয়ারও বলেছিলেন, আমরা যদি এই বিষয়টি নিয়ে কথা না বলি, ইমিগ্রেশন নিয়ে কথা না বলি তবে আগামী ২৫ বা ৫০ বছরের মধ্যে কানাডা এমন এক দেশে পরিনত হবে যা আগে কখনো ছিল না। তিনি কনজার্ভেটিভ পার্টির নেতা এন্ড্রু শিয়ারের নাম উল্লেখ করে বলেন, দেখুন তিনিও ইসলামী মোলবাদীদের সঙ্গে হাত মিলাচ্ছেন মুসলমানদের ভোট পাবার জন্য।

ম্যাক্সিম বার্নিয়ার অবশ্য দাবি করেন যে তিনি ও তার দল মুসলিমসহ অন্যান্য ধর্ম বিশ্বাসে বিশ্বাসীদের কানাডায় স্বাগত জানান যদি তারা কানাডিয়ান ভ্যালুজ এর সঙ্গে একীভূত হয়ে এদেশে বাস করতে চান। তিনি আরো বলেন, তার দল পিপল’স পার্টি অব কানাডা স্বল্প সংখ্যক ইমিগ্রেন্ট চান এই দেশে এবং ইরেগুলার রিফিউজি চায় না। আমরা ব্যাপক সংখ্যায় ইমিগ্রেন্ট আনার বিপক্ষে। তবে আমরা ইমিগ্রেশনের পক্ষে। আমরা ইকনমিক ইমিগ্রেন্ট এর সংখ্যা বৃদ্ধির পক্ষে।

এদিকে কানাডার ফেডারেল নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই ইমিগ্রেশন ইস্যুটি উতপ্ত হয়ে উঠছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। নতুন এক জরিপেও বলা হয়েছে, ইমিগ্রেশন এবং কানাডায় উন্নত জীবন গড়ার স্বপ্ন দেখা অশ্বেতাঙ্গ নবাগতদের প্রতি মনোভাব চলতি শরৎকালে নির্বাচনী ইস্যু হয়ে উঠতে পারে।

সম্প্রতি প্রকাশিত গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইকেওএস-এর জরিপের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রায় ৪০ শতাংশ কানাডীয় মনে করে, অনেক বেশি সংখ্যক ইমিগ্রেন্ট এদেশে আসছে।

এদেশে খুব বেশি, খুব কম, নাকি যথাযথ সংখ্যক দৃশ্যমান সংখ্যালঘু অভিবাসী আসছে এমন প্রশ্ন করা হলে কনজারভেটিভ দলের সমর্থকদের ৬৯ শতাংশই বেছে নিয়েছেন “খুব বেশি”। অন্যদিকে লিবারের দলের সমর্থকদের মধ্যে “খুব বেশি” বেছে নেন ১৫ শতাংশ মাত্র।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইকেওএস এর কর্মকর্তা গ্রেভস বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে, দৃশ্যমান সংখ্যালঘুদের স্বাগত জানাতে অপেক্ষাকৃত কুণ্ঠিত কনজারভেটিভ কানাডীয়দের কাছে ভোট হারাচ্ছে লিবারেলরা।

গ্রেভস মনে করেন, এই পরিবর্তনের সঙ্গে বিশ্বজুড়ে একানায়কতন্ত্রী লোকরঞ্জনবাদের উত্থানের সম্পর্ক আছে, যারা বহিরাগতদের প্রতি অধিকতর বৈরিতা এবং মুক্ত বাজার বা ক্ষুদ্রতর সরকার ব্যবস্থার তথা গ্লোবালাইজেশনের ধারণায় অনাস্থার ওপর জোর দেয়।

এদিকে ইমিগ্রেশন বিষয়ক মন্ত্রী আহমেদ হোসেন এক বিবৃতিতে হাফিংটন পোস্টকে বলেন, কানাডায় অভিবাসী গ্রহণের ক্ষেত্রে জাতিগত পরিচয়ের ভিত্তিতে বৈষম্য করা হয় না এবং সারা বিশ্ব থেকে সবচেয়ে সেরা ও মেধাবীদের নিয়ে আসা হয়।

হোসেন বলেন, জরিপের “এই পরিসংখ্যান হলো একটি সতর্কবার্তা। এতে উদ্বেগজনক এমন প্রবণতা উঠে এসেছে যেখানে কতিপয় রাজনীতিক এবং ক্রমবর্ধমান দক্ষিণপন্থী গ্রুপের প্রচারণার কারণে কিছু লোক ভুল তথ্যের ও ভীতি সৃষ্টিকারীদের শিকারে পরিণত হচ্ছে।” হোসেন বলেন, “ইমিগ্রেশন বিষয়ে কানাডীয়রা স্বাভাবিক বিতর্ক করতে সক্ষম হবে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তবে রক্ষণশীল দলের রাজনীতিকরা যেসব কথাবার্তা বলছেন তার প্রভাব সম্পর্কে তাদের অবশ্যই সচেতন থাকতে হবে।”

এদিকে নির্বাচন প্রাক্কালে চরম রক্ষণশীল দল পিপল’স পার্টি অব কানাডার প্রধান ম্যাক্সিম বার্নিয়ারের ছবি সম্বলিত এক বিলবোর্ড এর বক্তব্য নিয়ে চরম বিতর্ক শুরু হয়। সুদৃশ্য ঐ বিলবোর্ডে লেখা ছিল ‘ংধু ঘঙ ঃড় সধংং রসসরমৎধঃরড়হ ’ ভেঙ্গুভার, ক্যালগারী, হ্যলিফেক্স, টরন্টো এবং রিজাইনাতে এই বিলবোর্ড সকলেরই দৃষ্টি আকর্ষণ করে। নভাস্কোশিয়ার রাজধানী হ্যালিফেক্স এর হাইওয়ের পাশে স্থাপিত এরকম একটি বিলবোর্ড দেখে প্রভিন্সটির প্রিমিয়ার স্টিফেন ম্যাকনিল বলেন, আমি নভাস্কোশিয়াতে সবাইকে স্বাগত জানাই। তবে আমি এই ধরনের নেতিবাচক ও বিভেদ সৃষ্টিকারী সুর পছন্দ করি না। তিনি বলেন, আমাদের জনসংখ্যা এখন অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে বেশী, আমাদের বেকারত্বের হার এখন রেকর্ড পরিমাণে কম এবং আমাদের অর্থনীতির সমৃদ্ধি ঘটছে। আর এর জন্য প্রধানত আমরা ইমিগ্রেন্টদের ধন্যবাদ জানাই।

পিপল’স পার্টি অবশ্য দাবী করেছে এই বিলবোর্ড লাগানোর সঙ্গে তারা জড়িত নয়। অন্য কেউ এটি লাগিয়েছে। তবে লক্ষ্যনীয় যে, বিলবোর্ডের নিচে পিপল’স পার্টির নাম সুষ্পষ্টভাবেই লেখা রয়েছে। পরে অবশ্য বিলবোর্ডগুলো নামিয়ে ফেলা হয়েছে প্রচন্ড বিতর্ক সৃষ্টি হওয়ার কারণে।