আগের যে কোনও সময়ের চেয়ে বেশি সংখ্যক কানাডীয় এখন কাজ করছে, কিন্তু চাকরির মান ক্রমশ নিম্নগামী

চাকরির সবচেয়ে উপযুক্ত বয়সে কাজ করছেন এমন কানাডীয়র সংখ্যা বেড়েছে। এজন্যে কৃতীত্ব মূলত নারীদের

সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৯

কানাডায় প্রচুর চাকরির সুযোগ আছে- শুধু তলিয়ে দেখতে যাবেন না এগুলো কেমন চাকরি।

শুরুতে সুসংবাদ দিই: চাকরির সবচেয়ে উপযুক্ত সময়ে কর্মরত আছেন এমন কানাডীয়র সংখ্যা সর্বকালের সর্বোচ্চে পৌঁছেছে। চাকরির সাইট ইনডিডে প্রকাশিত স্ট্যাটিস্টিকস কানাডার এক বিশ্লেষণে এই তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। খবর হাফিংটন পোস্ট এর। রিপোর্টটি তৈরী করেছেন ডেনিয়েল টেনসার।

২৫ থেকে ৫৪ বছর বয়সের সব কানাডীয়র মধ্যে ৮৩.৫ শতাংশ চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে কর্মরত ছিলো। ১৯৭৬ সালের পর এটাই কানাডীয়দের কর্মরত থাকার সর্বোচ্চ সংখ্যা।

বিশ্লেষকরা এই বয়স গ্রুপের লোকেদের ওপর ক্রমশ বেশি করে মনোযোগ দিচ্ছেন কারণ শ্রমশক্তির সার্বিক সংখ্যাটি বিকৃত হয়ে গেছে অবসর গ্রহণের বয়সে পৌঁছা বয়স গ্রুপের লোকেরা অবসর গ্রহণের ফলে। সেজন্যে প্রকৃত শ্রমশক্তির ক্ষেত্রে কি পরিস্থিতি বিরাজ করছে সেটা ভালোভাবে বোঝার জন্য ২৫ থেকে ৫৪ বছরের বয়স-গ্রুপের দিকে মনোযোগ দেওয়া দরকার।

অধিক সংখ্যক লোক এখন চাকরী করলেও চাকরির মান কমছে। ছবি : www.viu.ca

কর্মরত কানাডীয়র সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কারণ নারীদের চাকরিতে যোগদান। কর্মরত নারীর সংখ্যা সর্বকালের সর্বোচ্চ অর্থাৎ ৮০.৩ শতাংশে পৌঁছেছে। ইনডিডের প্রধান অর্থনীতিবিদ ব্রেনডন বার্নার্ড বলেন, “এতে অর্থনীতির কিছুটা উত্তরণ এবং যে দীর্ঘমেয়াদী প্রবণতা চলছে তার প্রতিফলন ঘটেছে।”

তিনি বলেন, পরিবারের দুজনেই আয় করেন এমন পরিবারের সংখ্যা বাড়ছে এবং আরও বেশি সংখ্যক নারী পূর্ণকালীন কেরিয়ার গড়ে তোলার ব্যাপারে আগ্রহী হচ্ছে।

কর্মরত পুরুষের সংখ্যা চূড়ান্তভাবে ৮৭ শতাংশে পৌঁছেছে। এই পরিমাণ লোক কর্মরত থাকার পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে সর্বশেষ এক দশক আগের অর্থনৈতিক মন্দা পরিস্থিতির আগে। কিন্তু এই সংখ্যাটিও সর্বকালের সর্বোচ্চ সংখ্যার চেয়ে কম। কারণ ১৯৭০-এর দশকে কর্মরত পুরুষের সংখ্যা ছিলো ৯০ শতাংশ।

আর আলবার্টা ও টরন্টোতে পুরুষদের কর্মরত থাকার হার ২০০৮ সালের সর্বশেষ মন্দার আগের হারের চেয়ে এখনও কম। বার্নার্ড বলছেন, পুরুষ-কর্মীনির্ভর টরন্টোর ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্পের অধোগতি এবং আলবার্টার তেলশিল্পে ধসের কারণে পুরুষদের চাকরির ওপর যে আঘাত এসেছে তারই ফলে এই দুই প্রদেশে পুরুষদের কর্মসংস্থানের হার এখনও নিচে।

সিআইবিসি ওয়ার্ক মার্কেটের ডেপুটি চিফ ইকোনোমিস্ট বেঞ্জামিন তাল বলেন, “অর্থনীতি ও শ্রমবাজারে ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের হিস্যা বেশ ক্ষুদ্র। কিন্তু এতে যে উচ্চ মানের কাজের সুযোগ ছিলো সেটা পরিবর্তিত হয়ে তার জায়গা নিয়েছে বিভিন্ন ধরনের পরিষেবা কার্যক্রম যেখানে চাকরির মান নিচুস্তরের।”

মি. তাল চলতি সপ্তাহেই একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছেন যেখানে তিনি দেখিয়েছেন যে, কানাডায় চাকরির মান কমছে। বেতনের নিরিখে তিনি এই মান হিসাব করেছেন। গত বছর ধরে স্বল্প বেতনের যেসব শিল্প সেগুলোতে চাকরির পরিমাণ দ্রুত বেড়েছে। অথচ বেশি বেতন দেওয়া হয় এমন শিল্পে চাকরির সংখ্যাগত কোনও প্রবৃদ্ধি ঘটেনি।

তাল লিখেছেন, “এটি হলো অপেক্ষাকৃত স্বল্প মজুরির খাত যেমন খাদ্য সম্পর্কিত পরিষেবা, আবাসন, ব্যক্তিগত সার্ভিস, প্রশাসনিক ও ব্যক্তিসেবা এবং একইসঙ্গে স্টোরের বাইরে খুচরা বিক্রয়ের মতো চাকরিতে প্রবৃদ্ধির প্রতিফলন।”

মি. তাল কানাডায় চলমান শ্রমিক স্বল্পতার দিকেও নজর ফেরান। গত কয়েক বছর ধরে শ্রমিক স্বল্পতার হার সর্বোচ্চে পৌঁছেছে। তিনি হাফপোস্ট কানাডাকে বলেন, “উচ্চমানের চাকরিতে যোগান দেওয়ার মতো শ্রমশক্তি আমাদের আসলেই নেই। এ ধরণের চাকরির জন্য লোকের চাহিদা আছে, কিন্তু আমাদের তেমন লোক নেই।”

অভিবাসন এই সমস্যার স্বল্পমেয়াদী সমাধান বলে মনে করেন মি. তাল। তবে তার মতে, “দীর্ঘমেয়াদী সমাধান আসলে শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কারের সঙ্গে সম্পর্কিত।”

উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে কানাডার হয়তো উচ্চমাধ্যমিক পাশ করা লোকের হার সর্বোচ্চ, কিন্তু, তাল বলেন, “দেশের যে চাহিদা তার সঙ্গে শিক্ষা ব্যবস্থা সঙ্গতিপূর্ণ নয়।” তিনি উল্লেখ করেন যে, লোকেরা যেমনটা ভাবে আসলে লোকবলের চাহিদা তেমন জায়গায় নয়। সবাই যখন সচেতন যে প্রযুক্তি খাতের কর্মী প্রয়োজন তখন খুব অল্প মানুষই জানেন, কানাডার আসলে দক্ষ বাণিজ্যিক কর্মশক্তির প্রয়োজন।

তাল মজা করে বলেন, “যান, পারলে একজন ইলেক্ট্রিশিয়ান খুঁজে আনুন।”