অভিবাসীদের বেতন বাড়ছে, কিন্তু কানাডায় জন্মানোদের সঙ্গে আয়ের ব্যবধান রয়েই গেছে
অভিবাসীরা যত বেশিদিন কানাডায় বসবাস করেন ততই তাদের আয় বাড়ে, কিন্তু সব দেশের অভিবাসীদের বেলায় এটা সত্য নয়, স্ট্যাটসক্যান-এর তথ্য
অক্টোবর ৯, ২০১৯
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : স্ট্যাটিস্টিকস কানাডার তথ্য অনুযায়ী, কানাডায় সম্প্রতি আসা অভিবাসীরা যে কোনও সময়ের চেয়ে বেশি অর্থ উপার্জন করছেন।
২০১৪ সালে যারা কানাডায় এসেছেন এক বছর পর তাদের মাঝারি পর্যায়ের আয় ছিলো বছরে ২৪,০০০ ডলার। ১৯৮১ সালের পর এটাই ছিলো তাদের সর্বোচ্চ আয়। খবর সিবিসি নিউজের।
অংশত এর কারণ হলো তথাকথিত কানাডিয়ান এক্সপিরিয়েন্স ক্লাসের অভিবাসীরা- এটা ছিলো সাবেক কনজারভেটিভ দলের সরকারের অর্থনৈতিক অভিবাসন সংস্কারের একটি মূল বিষয় যার আওতায় কানাডায় কাজের অভিজ্ঞতাসম্পন্নদের পারমানেন্ট রেসিডেন্সি দেয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বাছাই করা হতো।
স্ট্যাটিস্টিকস কানাডার জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক স্কট ম্যাকলিশ বলেন, “এই শ্রেণিতে আরও বেশি অভিবাসী আসছে। তাদের ইতিমধ্যেই উচ্চতর দক্ষতার পেশায় কানাডায় কাজের অভিজ্ঞতা আছে। সুতরাং তারা অন্য অভিবাসীদের চেয়ে ভিন্নতর প্রেক্ষিতে কর্মজীবন শুরু করতে পারে।”
স্ট্যাটিস্টিকস কানাডা এই উপাত্ত দিয়েছে ২০১৫ সালে অভিবাসীদের দেওয়া ট্যাক্স রিটার্ন পর্যালোচনা করে।
অভিবাসীদের মাঝারি পর্যায়ের আয় বৃদ্ধির বিষয়টি একটি সুখবর। তবে তারা এখনও কানাডায় জন্মগ্রহণকারী কর্মীদের চেয়ে অনেক কম অর্থ আয় করছেন। ২০১৬ সালের আদমশুমারির হিসাব থেকে দেখা যাচ্ছে, স্থানীয়রা যেখানে বছরে গড়ে ৩৬,৩০০ ডলার আয় করছে সেখানে অভিবাসীরা আয় করছে ২৯,৭৭০ ডলার।
বিভিন্ন প্রদেশে অভিবাসীদের আয়ের ব্যবধান ভিন্ন ভিন্ন। সবচেয়ে বেশি ব্যবধান আলবার্টায় এবং সবচেয়ে কম নোভা স্কশিয়ায়।
নর্থওয়েস্ট টেরিটোরি এবং নিউফাউন্ডল্যান্ড ও ল্যাব্রাডরে অভিবাসীরা স্থানীয়দের চেয়ে গড়ে বেশি আয় করে।
অভিবাসীরা যত বেশিদিন কানাডায় বসবাস করে তত বেশি আয় করে
অভিবাসীরা যত বেশিদিন কানাডায় অবস্থান করে তাদের আয়ের পরিমাণ ততোই বাড়ে। সাত বছর ধরে কানাডায় বসবাস করছেন এমন একজন অভিবাসী ২০০৮ সালে মাত্র এক বছর আগে আসা অন্য অভিবাসীর চেয়ে গড়ে ১১,০০০ ডলার বেশি আয় করে।
অবস্থানের মেয়াদের ভিত্তিতে আয়ের ব্যবধানের দিকটি সবচেয়ে গুরুতর আফ্রিকান ও মধ্যপ্রাচ্যের অভিবাসীদের ক্ষেত্রে। ওই অঞ্চল থেকে সাম্প্রতিককালে আসা অভিবাসীরা এশিয়া, লাতিন আমেরিকা ও ইউরোপ থেকে আসা সাম্প্রতিককালের অভিবাসীদের চেয়ে অনেক কম অর্থ আয় করে।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা অভিবাসীদের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। যুক্তরাষ্ট্র থেকে সদ্য আসা একজন অভিবাসীর আয় এখানে দীর্ঘ সময় ধরে বসবাসকারী অভিবাসীদের চেয়েও বেশি।
কানাডার কনফারেন্স বোর্ডের এক রিপোর্ট অনুযায়ী, বেতনের ক্ষেত্রে বিদ্যমান ব্যবধানের মূল কারণ ভাষাগত দক্ষতা, বিদেশে অর্জিত যোগ্যতা ও দক্ষতার স্বীকৃতি এবং বৈষম্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।
অভিবাসীদের ধরে রাখার ব্যাপারে কিছু প্রদেশ খুব ভালো
স্ট্যাটিস্টিকস কানাডার তথ্য অনুযায়ী , অন্টারিও, কুইবেক, আলবার্টা ও ব্রিটিশ কলাম্বিয়ায় আসা অভিবাসীদের মধ্যে বিপুল সংখ্যক ওইসব অঞ্চলেই থেকে যান। কিন্তু আটলান্টিক সন্নিহিত প্রদেশগুলোর ক্ষেত্রে এটা সত্য নয়, বিশেষ করে অর্থনৈতিক শ্রেণির অভিবাসী ও শরণার্থীদের ক্ষেত্রে। (অর্থনৈতিক শ্রেণি বলতে বোঝায় যারা কাজের সন্ধানে কানাডায় আসেন। পারিবারিক শ্রেণি বলতে বোঝায় যারা তাদের আগে থেকে অভিবাসী হিসাবে আসা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মিলিত হবার জন্য আসেন।)
প্রিস এডওয়ার্ড দ্বীপে আসা অর্থনৈতিক শ্রেণির অভিবাসীদের মধ্যে মাত্র ১৪ শতাংশ পাঁচ বছর পরও সেখানে বসবাস করছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনও অনেক কাজ করার আছে
কুইবেকে অভিবাসন বিষয়ক সম্পদ সংগ্রহকারী গ্রæপগুলোর মূল সংগঠনের প্রধান স্টিফেন রিচহোল্ড-এর মতে, কানাডায় আসা অভিবাসীদের অর্থনৈতিক অবস্থা সাধারণভাবে উন্নীত হলেও এখনও কিছু কাজ করার বাকি আছে। তিনি বলেন, প্রায়শ এটা হলো কানাডার বাইরের দেশে অর্জিত শিক্ষা বা কাজের অভিজ্ঞতার স্বীকৃতি দেওয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।
রিচহোল্ড বলেন, “প্রায়শ তাদেরকে নতুন করে শুরু করতে হয়। তারা এরই মধ্যে নিজের দেশে কাজ করেছে, কিন্তু এখানে তাদেরকে আবারও একেবারে সর্বনি¤œ স্তর থেকে নতুন করে শুরু করতে হয়।”
রিচহোল্ডের মতে, অর্থনৈতিক শ্রেণির বেশিরভাগ অভিবাসীই নি¤œস্তরের কাজে নিয়োজিত। এর অর্থ হলো কানাডায় জন্মগ্রহণকারীদের তুলনায় তাদের যে শিক্ষা ও অভিজ্ঞতার স্তর তার সঙ্গে তাদের চাকরি সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
তিনি ওই সংগঠনে কাজ করছেন ১৯৯০ সাল থেকে এবং তিনি অর্থনৈতিক শ্রেণির অভিবাসীদের আর্থিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি লক্ষ্য করেছেন। কিন্তু, তিনি বলেন, ইউরোপ বা উত্তর আমেরিকার দেশগুলি থেকে আসা অভিবাসীদের চেয়ে উত্তর আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে আসা অভিবাসীদের মধ্যে বেকারত্বের হার অনেক বেশি এবং তাদের জন্য সামাজিক পরিষেবা ও দারিদ্র্য তহবিলের ব্যবহারও বেশি। তার ভাষায়, “এর জন্য অংশত দায়ী সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত উপাদান।”
রিচহোল্ড আরও বলেন, কুইবেকে উচ্চতর বেতনে চাকরি করতে চাইলে একজন অভিবাসীকে অনেক সময় ইংরেজি ও ফরাসী উভয় ভাষা জানার প্রয়োজন হয়। কিন্তু এখানে আসা বেশিরভাগ অভিবাসী উভয় সরকারি ভাষায় দক্ষ নয়।
তিনি বলেন, “তাদের বেশিরভাগই খুব সামান্য ইংরেজি বলতে পারেন অথবা একেবারেই পারেন না। কারণ তাদেরকে বলা হয়েছিলো যে, যদি আপনি ফরাসী ভাষাভাষীদের মধ্যে থাকতে চান তাহলে কুইবেকে আসুন।”