অন্টারিওর উচিৎ জিটিএ’র বাইরের এলাকায় অভিবাসীদের আকৃষ্ট করা

জিটিএ ২০১৮ সালে এক লাখ ছয় হাজার অভিবাসীকে আশ্রয় দিয়েছে যেটি কানাডার অন্য সাতটি প্রদেশের গ্রহণ করা মোট অভিবাসী সংখ্যার সমান

নভেম্বর ৯, ২০১৯

দ্য কানাডিয়ান প্রেস : বৃহত্তর টরন্টো এলাকায় (জিটিএ) একেবারেই অসম অনুপাতে আবাসন গড়ে নেয়া অভিবাসীদের মাধ্যমে অন্টারিওর ছোট ছোট জনপদগুলো উপকৃত হতে পারে। গত আগস্ট মাসে প্রকাশিত নতুন এক রিপোর্টে এই তথ্য দিয়ে সরকারের সর্বস্তরের কর্তৃপক্ষের প্রতি এই ভারসাম্যহীনতার সুরাহা করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

কানাডা কনফারেন্স বোর্ডের ওই সমীক্ষায় বলা হয়, গত বছর নবাগত অভিবাসীদের অন্টারিওতে আবাসন গড়ার সংখ্যার দিকে লক্ষ্য করলেই প্রদেশের অবশিষ্ট এলাকার সঙ্গে জিটিএর চরম বৈষম্যটা স্পষ্ট হয়ে যায়। এতে বলা হয়, বর্তমানে যে হারে অভিবাসীরা আবাসন গড়ছে তাতে প্রাদেশিক রাজধানী টরন্টোর সম্পদে টান পড়ার আশঙ্কা আছে সেইসঙ্গে অন্যান্য অঞ্চলগুলো আর্থিক সমৃদ্ধির সুফল লাভে বঞ্চিত হচ্ছে।

সমীক্ষায় দেখা যায়, ২০১৮ সালে এই প্রদেশে আসা নবাগতদের ৭৭ শতাংশ অর্থাৎ এক লাখ ছয় হাজার অভিবাসী আবাস গেড়েছে টরন্টো ও তার আশেপাশের এলাকায়। আর এই সংখ্যাটি একই বছরে আটলান্টিক অঞ্চলের চারটি প্রদেশ এবং কুইবেক, ম্যানিটোবা ও  সাসকাচুন-এ আসা নবাগতদের সংখ্যাকে ছাড়িয়ে গেছে।

রিপোর্টে বলা হয়, অবশিষ্ট ২৩ শতাংশ নবাগত প্রদেশের অন্যান্য এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আবাসন গড়েছে। স্থানীয় অর্থনীতির উন্নয়নে প্রদেশের অন্য এলাকাগুলোতে নবাগতদের আসার দরকার আছে বলেও রিপোর্টে যুক্তি দেখানো হয়।

বোর্ডের প্রধান অর্থনীতিবিদ পেড্রো এন্টুনেস বলেন, অন্টারিওতে বেকারত্বের হারের স্বল্পতা থেকে এখানকার বিশেষভাবে কঠোর শ্রমবাজারের ধারণা পাওয়া যায় যেটা সারা দেশেও প্রয়োগযোগ্য।

বর্তমানে যে হারে অভিবাসীরা আবাসন গড়ছে তাতে টরন্টোর সম্পদে টান পড়ার আশঙ্কা আছে । ছবি: হাফিংটন পোস্ট

‘অভিবাসন ছাড়া আমাদের উন্নয়ন হবে না’

টেলিফোনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এন্টুনেস বলেন, “আমরা সবাই জানি যে, অভিবাসন ছাড়া এগুতে চাইলে কানাডায় আমাদের শ্রমশক্তির যোগান হবে শূন্য। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে মদদ দেয়ার সক্ষমতার ক্ষেত্রে এটা হবে এক ভয়াবহ চিত্র।”

রিপোর্টে বলা হয়, শ্রমবাজারের এই অবস্থা গুরুতর হয়েছে স্বল্প জন্মহার, শ্রমশক্তিতে বয়োবৃদ্ধদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া এবং কোনও কোনও সম্প্রদায়ের মানুষের বেশি সংখ্যায় দেশের বাইরে চলে যাওয়ার মত ঘটনায়।

এন্টুনেস বলেন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হলো সেটাই যেখানে প্রদেশগুলো রাজস্ব আয় সৃষ্টি করবে এবং যার বিনিময়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবা যেমন স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষায় অর্থের যোগান দেওয়া সম্ভব হবে। তিনি বলেন, এই রাজস্ব আয় ধরে রাখতে বা বৃদ্ধি করতে ব্যর্থ হলে সব মানুষের মধ্যে মারাত্মক উদ্বেগের সৃষ্টি হবে।

রিপোর্টে আরও বলা হয়, প্রদেশের নির্ভরশীলতার অনুপাত বা শ্রমবাজারের বাইরে থাকা মানুষের অনুপাতের দিকে লক্ষ্য করলে শ্রমবাজারের ওপর চাপ সহজতর করার প্রয়োজনীয়তার দিকটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।

জিটিএ সুবিধার দিকটি বোধ করলেও ধকলও পোহাচ্ছে

প্রতি ১০০ জন শ্রমিকের পেছনে ৬২ জন পোষ্য থাকার যে হার বর্তমানে অন্টারিওতে রয়েছে সেটি ২০৪০ সালের মধ্যে প্রতি ১০০ জনের বিপরীতে ৭৯ জনে পৌঁছবে বলে পূর্বাভাস আছে।

এন্টুনেস বলেন, এই পুর্বাভাস থেকে এই প্রদেশের অর্থনৈতিক ইঞ্জিনটিকে জ্বালানি সরবরাহের জন্য যথেষ্ট সংখ্যক শ্রমিক নিয়োগের গুরুত্ব আরও বেড়েছে। তিনি বলেন, অভিবাসীরা কেন জিটিএতে বসবাসের জন্য আসে তা বুঝতে পারা সহজ। চাকরির সুযোগ, সহায়ক পরিষেবা এবং নবাগতদের কমিউনিটির উপস্থিতি ইত্যাদি মিলেই এই প্রদেশের একটি গ্রহণযোগ্য আবেদন সৃষ্টি হয়েছে।

তিনি বলেন, জিটিএ যেমন অভিবাসীদের ঢলের সুবিধা অনুভব করছে তেমনই এই প্রবণতার ঝুঁকিও আছে।

রিপোর্টে বলা হয়েছে, এই অঞ্চলের সরকারি পরিবহন থেকে শুরু করে যথাযথ আবাসন পর্যন্ত সবকিছুসহ সামাজিক সহায়তা ও বিদ্যমান অবকাঠামোতে অর্থ যোগানোর জন্য অভিবাসীদের নিয়মিত হারে আগমনের বড় সম্ভাবনাময় দিক আছে।

বোর্ড যুক্তি দেখিয়েছে যে, অন্টারিওতে আসা অভিবাসীদের গোটা অঞ্চলে সমানুপাতিক হারে ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের সর্বস্তরের ভূমিকা রাখার প্রয়োজন আছে। তবে বোর্ড এটাও বলেছে যে, সম্ভাবনার দিক থেকে সবচেয়ে শক্তিশালী একটি হাতিয়ার এই প্রদেশটি কার্যকরভাবে ব্যবহার করে যাচ্ছে।

রিপোর্টে অন্টারিওর প্রতি তার অভিবাসী নমিনি কর্মসূচি সংস্কারের সুপারিশ করা হয়েছে। এই কর্মসূচিটি হলো একটি সরকারি মাধ্যম যার আওতায় অভিবাসী ও আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা পারমানেন্ট রেসিডেন্সির জন্য আবেদন করতে পারে। কর্মসূচিতে যেসব সংস্কারের কথা বলা হয়েছে তার মধ্যে একটি হলো জিটিএর বাইরে বসবাস করতে ইচ্ছুক এমন নবাগতদের একটি নির্দিষ্ট সংখ্যা নির্ধারণ করা।

নর্থ বে নবাগতদের স্বাগত জানাবে, বললেন মেয়র

অন্টারিওর অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রণালয় জানায়, তারা উল্লেখিত কর্মসূচির মানোন্নয়নে পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, উপযুক্ত পেশার তালিকা সম্প্রসারণ এবং স্থানীয় কমিউনিটিগুলোতে একটি পাইলট প্রকল্প গ্রহণ।

মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, “পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে সরকার স্থানীয় পক্ষলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবে যাতে তারা তাদের কমিউনিটিতে দক্ষ শ্রমিকদের আকৃষ্ট করে আনা এবং আবাসন সৃষ্টির সরকারি প্রয়াসে সমর্থন দেন।

বিবৃতিতে বলা হয়, “পাইলট প্রকল্প থেকে যে শিক্ষা পাওয়া যাবে তা ভবিষ্যতে অভিবাসন কর্মসূচিতে পরিবর্তন আনতে এবং অন্টারিওতে অঞ্চলভিত্তিক অভিবাসন চালু করতে সহায়ক হবে।”

এন্টুনেস বলেন, নমিনি কর্মসূচিতে যে কোনও পরিবর্তন একটি ব্যাপকভিত্তিক অভিবাসন কৌশলের অংশ হওয়া উচিৎ। রিপোর্টে যে পাঁচটি সুপারিশ করা হয়েছে এটি হলো তার মধ্যে আরেকটি।

আরেক সুপারিশে নবাগতদের জন্য আকর্ষণীয় গন্তব্য হিসাবে নিজেদেরকে তুলে ধরার ক্ষেত্রে ছোট ছোট কমিউনিটিগুলোকে সক্রিয় হওয়ার কথা বলা হয়েছে। এটা হচ্ছে এমন একটি সুপারিশ যেটা এন্টুনেসের মতে কিছু কিছু পৌরসভা এরই মধ্যে চেষ্টা করেছে এবং সীমিত সফলতা পেয়েছে।

অন্টারিওর অন্ততপক্ষে একটি ছোট শহরে অতি সাম্প্রতিক পৌর নির্বাচনে অভিবাসীদের অন্তর্ভুক্তি দৃশ্যমান ফ্যাক্টর হয়ে উঠতে দেখা গেছে।

অন্টারিওর নর্থ বে শহরের মেয়র আল ম্যাকডোনাল্ড বলেন, ২০১৮ সালের তার এক উদ্যোগের মাধ্যমে আগামী এক দশক কালের মধ্যে এই শহরে ১০ হাজার নবাগতকে আকর্ষণ করে আনা হবে।

রিপোর্টে স্বীকার করা হয়েছে যে, অভিবাসনবিরোধী মনোভাব বেড়েছে

ম্যাকডোনাল্ড বলেন, তার শহরে প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ৪০০ জন শ্রমিকের ঘাটতি থেকে যায়। যেসব নবাগত জিটিএতে বসবাস করতে আসে তাদের অতি ক্ষুদ্র অংশ এলেও নর্থ বে সন্তুষ্ট হবে।

তিনি বলেন, “চিন্তুা করে দেখুন, জিটিএতে আসা লোকেদের মধ্যে মাত্র এক শতাংশকেও যদি আমরা আনতে পারি তাহলেই নর্থ বে সফল।”

এন্টুনেস বলেন, বোর্ডের সুপারিশে অভিবাসনবিরোধী মনোভাব বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে নিয়ে বলা হয় যে, অর্থনৈতিক কারণে দেশান্তরের সুফল সম্পর্কে সরকারিভাবে মানুষকে জানানোর  উদ্যোগ বাড়ানো দরকার।

তিনি বলেন, “এগুলি হলো রাজনৈতিক প্রশ্ন। আর আমার মনে হয় যে, আমাদের, নাগরিকদের নিজেদের মন প্রস্তুত করার দরকার আছে, তাদেরকে বাস্তব পরিস্থিতি এবং অভিবাসীর সংখ্যা সম্পর্কে জানাতে হবে।”

তিনি বলেন, “সাধারণভাবে কানাডীয়রা অবশ্যই অর্থনৈতিক অভিবাসীদের স্বাগত জানানোর পক্ষে। তারা আমাদের শ্রমবাজারের বাস্তবতা এবং প্রবৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা বোঝেন।”