২০১৭ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী দারিদ্র্য কমেছে
দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করতো এমন শিশুর সংখ্যা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কমেছে
জুন ৬, ২০১৯
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : স্ট্যাটিস্টিক্স কানাডার নতুন পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থানকারী কানাডীয়র সংখ্যা কখনই বর্তমানের চেয়ে বেশি ছিলো না।
সংস্থাটি গত সম্প্রতি তাদের ২০১৭ সালের আয় সম্পর্কিত সমীক্ষা প্রকাশ করেছে। এতে ২০১৭ সালে কানাডার বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর লোকেরা আগের বছরগুলোর তুলনায় কী অবস্থায় আছে তার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। খবর সিবিসি নিউজ এর।
সার্বিকভাবে কানাডীয় পরিবারগুলোর কর পরিশোধের পর প্রকৃত আয়ের পরিমাণ ৩.৩ শতাংশ বেড়ে বার্ষিক ৫৯,৮০০ ডলারে উন্নীত হয়েছে। পর পর দু’বছর সমপরিমাণ প্রবৃদ্ধি হওয়ার পর ২০১৭ সালের এই পরিমাণ আয় বাড়লো।
উত্থানরত ঢেউ সব নৌকাকেই উপরে তুলে দেয় ঠিকই কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে কিছু লোক তলানিতে হাবুডুবু খাচ্ছে না। ২০১৭ সালে ৩৪ লাখ মানুষ অর্থাৎ মোট জনসংখ্যার সাড়ে নয় শতাংশ ছিলো দারিদ্র্যসীমার নিচে। এটি আগের বছরের ১০.৬ শতাংশের চেয়ে সামান্য কম।
দারিদ্যসীমার সংজ্ঞা এক ধরণের পরিবর্তনশীল লক্ষের মতো বিষয়। অটোয়া সরকার গত বছর দারিদ্র্যসীমার এক নতুন সংজ্ঞা নির্ধারণ করেছে যা এখন থেকে হিসাব করা হবে মার্কেট বাস্কেট মেজার বা এমবিএম-এর মাধ্যমে।
এমবিএম পদ্ধতি অনুযায়ী সরকার তখনই কোনও ব্যক্তির অবস্থান দারিদ্র্যসীমার নিচে বলে বিবেচনা করবে যখন লোকটি তার কমিউনিটিতে সুনির্দিষ্ট কিছু সামগ্রী বা সেবা লাভের জন্য অর্থ ব্যয় করতে অসমর্থ হবে। যেমন, স্বাস্থ্যকর খাবার, যথাযোগ্য আবাসন বা গৃহের রক্ষণাবেক্ষণ, পোশাক ও পরিবহন এবং সমাজে বসবাস করার জন্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য সেবা লাভের ব্যয় মেটানো যদি কারও জন্য সম্ভব না হয়।
সরকার যেটাকে দারিদ্র্যসীমার নিচে বলে মনে করছে সার্বিকভাবে খুব কম সংখ্যক মানুষই তেমন অবস্থানে রয়েছে। তবে সব বয়সের মানুষ একই গতিতে উন্নয়নের দিকে এগুতে পারছে না। দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থানকারী শিশুদের সংখ্যা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে থিতিয়ে কমে এসেছে। ২০১৭ সালে দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থান করছিলো ছয় লাখ ২২,০০০ শিশু যা মোট শিশুর নয় শতাংশ।
২০১৬ সালে এই সংখ্যাটি ছিলো সাত লাখ ৫৫ হাজার বা মোট শিশুদের ১১ শতাংশ। আর ২০১৫ সালে দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থান করছিলো নয় লাখ শিশু। সবচেয়ে বেশি সংখ্যক শিশু দারিদ্র্যসীমার নিচে ছিলো ২০১২ সালে যখন মোট শিশুর ১৫ শতাংশ বা ১০ লাখের বেশি ছিলো দারিদ্র্যসীমার নিচে।
স্ট্যাটিস্টিক্স কানাডা উল্লেখ করেছে যে, ২০১৭ সাল হচ্ছে সেই বছর যখন অটোয়া সরকার সারা বছর ধরেই কানাডা চাইল্ড বেনিফিট নামে বিশেষ সহায়তা বিতরণ করেছে। এই কর্মসূচির আওতায় সরকার শিশু রয়েছে এমন পরিবারগুলোকে ছয় বছর বয়সী প্রত্যেক শিশুর জন্য ৬,৪০০ ডলার এবং ছয় থেকে ১৭ বছর বয়সী প্রত্যেক শিশুর জন্য ৫,৪০০ ডলার করে অর্থ দিয়েছে। আগে শিশুদের জন্য কানাডা চাইল্ড ট্যাক্স বেনিফিট এবং সর্বজনীন শিশু প্রযতœ বেনিফিট নামে যে সরকারি কর্মসূচি ছিলো তার পরিবর্তে কানাডা চাইল্ড বেনিফিট কর্মসুচি চালু করা হয়েছে।
ফ্র্যাসার ইনস্টিটিউট নামের একটি থিঙ্কট্যাঙ্ক এই কর্মসূচির সমালোচনা করে বলেছে, এটি সরকারের ওপর জনগণের নির্ভরশীলতা লালন করবে এবং এটি কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে কানাডীয়দের আয় বাড়ানোর বিষয়টিকে পুরষ্কৃত করার মতো নীতি নয়।
সামান্য সংখ্যক বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে রয়েছেন
জনসংখ্যার অন্যান্য গ্রুপের লোকেরাও সার্বিকভাবে দারিদ্র্যসীমার ওপরে উঠে আসছে, তবে তারা শিশুদের মতো একই গতিতে উঠে আসতে পারছে না।
২০১৭ সালে মাত্র দুই লাখ ৩৮ হাজার জ্যেষ্ঠ কানাডীয় নাগরিক দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থান করছিলো যা মোট বয়োজ্যেষ্ঠ জনসংখ্যার ৩.৯ ভাগ মাত্র। আর এই সংখ্যাটি আবার ২০১৬ সালের চেয়ে ১৬ শতাংশ কম।
তবে ২০১৭ সালের সংখ্যাটি আসলে ২০১৩ সালের সংখ্যার চেয়ে বেশি। তখন দারিদ্র্যসীমার নিচে ছিলো দুই লাখ ১৯ হাজার বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষ বা মোট সংখ্যার ৪.২ ভাগ।
বয়োজ্যেষ্ঠদের আয়ও অতি সামান্য পরিমাণে বেড়েছে। কর পরিশোধের পর একটি পরিবারের, যে পরিবারে উপার্জনক্ষম ব্যক্তির গড় বয়স ৬৫ বছর, প্রকৃত আয় ২০১৭ সালে দাঁড়িয়েছে ৬১,২০০ ডলার যা ২০১৬ সালের চেয়ে ২,৫০০ ডলার বেশি।
সব বয়স গ্রুপ মিলিয়ে সারাদেশে মানুষের আয় বেড়েছে বিভিন্ন পরিমাণে। কর পরিশোধের পর প্রকৃত আয় সবচেয়ে বেশি বেড়েছে আলবার্টার মানুষের এবং তাদের আয় দাঁড়িয়েছে ৭০,৩০০ ডলারে, তবে এটি ২০১৬ সালের তুলনায় ১০০০ ডলার কম। সবচেয়ে কম আয় বেড়েছে নোভা স্কশিয়ার মানুষের। তাদের আয়ের পরিমাণ ৫০,২০০ ডলার। ব্রিটিশ কলম্বিয়া, কুইবেক এবং অন্টারিওতে মানুষের আয় বেড়েছে যথাক্রমে ৭.৬, ৪.২ এবং চার শতাংশ হারে।
সংস্থাটি জানায়, অন্যান্য প্রদেশে মানুষের আয়ে খুব সামান্যই পরিবর্তন এসেছে।