মানসিক স্বাস্থ্যজনিত চ্যালেঞ্জ নিয়ে কানাডায় লেখাপড়া

মার্চ 3, 2019

জেনেভিভ বিউপ্রে ও সুসান কাদির : কানাডার মানসিক স্বাস্থ্য সমিতির তথ্যমতে, জনসংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশই জীবনে একবার হলেও মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়। কিছু অসুস্থতা বেশি দেখা দেয় তরুণদের মধ্যে, আর কানাডায় নবাগত হিসাবে বা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী হিসাবে মানসিক স্বাস্থ্যগত সমস্যা নিয়ে কলেজে বা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত থাকলে সেটি শিক্ষাগ্রহণকে অধিকতর চ্যালেঞ্জিং করে তুলতে পারে।

তবে কিছু সমস্যা সামলে নেওয়ার জন্য আপনি কিছু পদক্ষেপ নিতে পারেন।

আপনার মানসিক সমস্যা পরীক্ষা করানোর চিন্তা করতে পারেন

অনেক শিক্ষার্থীই মাঝেমধ্যে উদ্বেগে ভুগতে পারে, মনোযোগ বসানোতে সমস্যা হতে পারে কিংবা মেজাজ খারাপ থাকতে পারে। যাই হোক, যদি এ ধরণের ঘটনা উপর্যুপরি ঘটতে থাকে তা আপনার জীবনকে প্রবলভাবে প্রভাবিত করে তাহলে একজন নিয়মিত শিক্ষার্থী হিসাবে আপনার পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া উচিৎ যে, কী হচ্ছে আসলে। চিকিৎসা নেওয়ার দরকার আছে কিনা সেটা জানার জন্য প্রাথমিকভাবে একজন পরামর্শক বা পারিবারিক চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই ঠিক হবে।

আপনার মেজাজের অবস্থা, ঘুম, মনোযোগ, উদ্বেগ, চিন্তাধারা বা আবেগজনিত বিষয়ে বড় ধরণের সমস্যা হতে থাকলে পরীক্ষা করান। যদি মনে হয় যে, নিজের চিন্তাধারা বা অনুভূতির ওপর আপনার আর কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই তাহলে পরীক্ষা করানোটা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারো সাহায্য পাওয়ার আশায় অপেক্ষা করলে সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। সমস্যা গভীরে শেকড় ছড়ানোর আগেই ব্যবস্থা নেওয়া হলে তার সমাধান সহজ হয়।

আপনার চিকিৎসক যদি আপনার মানসিক স্বাস্থ্যগত সমস্যা আছে বলে চিহ্ণিত করেন তাহলে তিনি আপনাকে চিকিৎসা দেবেন অথবা চিকিৎসা নেওয়ার জন্য রেফার করবেন। আপনি হয়তো আপনার স্বাস্থ্যসেবা দানকারীর সঙ্গে আলোচনা করে তাদের পরামর্শ নিতে চাইবেন যে প্রাথমিক পর্যায়ের পরবর্তী ধাপে আপনাকে পূর্ণকালীন নাকি খন্ডকালীন চিকিৎসা নিতে হবে।

কানাডার মানসিক স্বাস্থ্য সমিতির তথ্যমতে, জনসংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশই জীবনে একবার হলেও মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়। ছবি : অনলাইন

আপনার বিদ্যালয় বা কাউন্সেলরের সহায়তা নিন

মানসিক স্বাস্থ্যগত জটিলতায় আক্রান্ত শিক্ষার্থী হিসাবে আপনি প্রতিবন্ধিতার জন্য নানা ধরণের প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা দানকারী দপ্তরে নাম লেখাতে পারেন। এই দপ্তরের নাম কখনও প্রতিবন্ধিতা দপ্তর অথবা অভিগমন (Accessibility Office) দপ্তর। এই দপ্তরের মাধ্যমে যেসব প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা পাওয়া যেতে পারে তার মধ্যে রয়েছে অ্যাসাইনমেন্ট জমাদানের সময় বাড়ানো, পরীক্ষার খাতায় লেখার জন্য সময় বাড়িয়ে দেওয়া, ক্লাশ নোট নেওয়ায় সহায়তার জন্য একজন অনুলেখক সঙ্গে দেওয়া অথবা সারা বছরের কোর্সের চাপ কমিয়ে দেওয়া ইত্যাদি। এইসব সুবিধা দেওয়া হতে পারে প্রতিটি কেস আলাদাভাবে বিবেচনায় নিয়ে এবং এর ভিত্তি হবে শিক্ষাগ্রহণে আপনার প্রতিবন্ধিতার প্রভাব কতটা তার ওপর। এসব সুবিধা দিলে আপনার শিক্ষাগত সাফল্য অর্জনে বড় ধরণের পার্থক্য ঘটবে কিনা তা নিশ্চিত করেই দেওয়া হবে।

এটা উল্লেখ করা জরুরী যে, ওই দপ্তরে আপনার নাম লেখানোর পরেই কেবল তারা সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসবে। নাম লেখানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে থাকলে হয়তো আর তা করাই হবে না। সুতরাং যত দ্রুত পারেন নাম লিখিয়ে ফেলুন।

আরও জেনে রাখুন যে, বেশিরভাগ স্কুলে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক কাউন্সেলর আছেন যিনি আপনার মানসিক স্বাস্থ্য ও শিক্ষাজীবনে তার প্রভাব নিয়ে আপনার সঙ্গে আলোচনা করবেন। স্কুলে যাতে আপনার প্রতি যতœ নেওয়া হয় তারা এমন ব্যবস্থাও নেবেন এবং আপনার সার্বিক কল্যাণের জন্য কাজ করবেন। মানসিক সমস্যা নিয়েও যাতে আপনি লেখাপড়া অব্যাহত রাখতে পারেন সে বিষয়েও কাউন্সেলররা আপনাকে সাহায্য করতে পারেন।

মানসিক স্বাস্থ্যগত জটিলতায় সহায়ক হতে পারে এমন আরও কিছু প্রাতিষ্ঠানিক পদক্ষেপ

এতে কোনও সন্দেহ নেই যে, মানসিক সমস্যার কিছু লক্ষণ লেখাপড়া করার ব্যাপারটিকে কঠিন করে তোলে। তাই কোনও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কর্মসূচিতে ভর্তির আগে এটা নিশ্চিত করুন যে আপনি ভালোভাবে প্রস্তুত আছেন।

এর একটি উপায় হলো, শুরু করার আগে আপনার শিক্ষাগত ঘাটতিগুলো পূরণ করে নেওয়া। যেমন, আপনার যদি অঙ্কের দক্ষতায় দুর্বলতা থেকে থাকে আর আপনি যদি এমন কোনও বিষয় বেছে নিতে চান যাতে অঙ্কে ভালো দক্ষতার প্রয়োজন হবে তাহলে সেই কর্মসূচি শুরুর আগে বুনিয়াদি অঙ্কের কোন কর্মসূচিতে অব্যাহত শিক্ষা কোর্স করে নেওয়া আপনার প্রস্তুতির জন্য সহায়ক হবে। আপনি যখন অধিকতর উচ্চতর বিষয়ে শিক্ষাগ্রহণের চেষ্টা করছেন তখন ওই বুনিয়াদি কোর্স আপনার মৌলিক দক্ষতা অর্জনের কর্মসূচিতে পড়ালেখার চাপ অনেকটাই কমিয়ে দেবে।

শিক্ষাগ্রহণের ক্ষেত্রে চাপে থাকলে সেটা আপনার বিদ্যমান মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। আপনি কতটা কাজ সামাল দিত পারবেন সেটা সতর্কতার সঙ্গে ঠিক করে নেওয়া সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

তাছাড়া খন্ডকালীন কোর্স অথবা স্বল্পপরিমাণ কোর্স নিয়ে শিক্ষাজীবন সম্পন্ন করতে সামান্য কিছু বেশি সময় ব্যয় করাও সফল কৌশল হতে পারে।

এমনকি স্কুলের চাপ ভালোভাবে সামলে নেওয়ার মত ভালো অবস্থায় পৌঁছার জন্য একটি সেমিস্টার বা একটি বছরের বিরতি দেওয়াও ভালো পরিকল্পনা হতে পারে। পরে আপনি যখন ভালোভাবে সামলে নিতে পারবেন বলে মনে করবেন তখন যে কোনও সময় কোর্সের সংখ্যা বাড়িয়ে নিতে পারবেন।

শিক্ষাগত ও ক্যারিয়ারের লক্ষ্য বাড়িয়ে নেওয়ার পাশাপাশি শিক্ষাগ্রহণের বিষয়টি অন্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ এবং সামাজিকীকরণেরও একটি ভালো সুযোগ। স্কুলে অনেক ধরণের সহায়ক সেবা কার্যক্রম থাকে যার মধ্যে রয়েছে অভিগমন দপ্তরের কনসালট্যান্ট, কাউন্সেলর, সহপাঠীদের সহায়ক কর্মসূচি, গৃহশিক্ষা ও লিখন কেন্দ্র, শিক্ষা পরামর্শক সেবা এবং স্কুলের শিক্ষক যিনি আপনার শিক্ষাগত ও কর্মজীবনের পছন্দ সম্পর্কে সুপরামর্শ দিতে পারবেন।

স্কুলে অনেকসময় শিক্ষার্থীদের জন্য কাজের সুযোগও থাকে আর এটা হচ্ছে বিভিন্ন ধরণের কাজে আপনার দক্ষতা পরীক্ষা করার এবং শিখে নেওয়ার একটি উপায়।

অবস্থার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে আর কোন বিষয়গুলি আপনার জন্য সহায়ক হতে পারে?

সব শিক্ষার্থীর জন্য যেসব পরামর্শ দেওয়া হয় সেগুলো মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত একজন শিক্ষার্থীর জন্যও বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। স্কুলে যাওয়া হয়তো কারও জন্যে কঠিন এবং সময়সাপেক্ষ হতে পারে কিন্তু তারপরও আপনার ঘুম, পুষ্টিচাহিদা, সামাজিকভাবে সবার সঙ্গে যুক্ত থাকা, ব্যায়ামের সময় বের করে নেওয়া এবং এ ধরণের অনেক কিছুর জন্যই স্কুলে যাওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ।

কতটা চাপ গ্রহণ করতে পারছেন সেই সম্পর্কিত ব্যবস্থাপনা সব শিক্ষার্থীর জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। আর আপনার শিক্ষা সম্পর্কিত পরিকল্পনা এবং আপনার লেখাপড়ায় প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে এমন কোনও ওষুধপত্র সেবনের বিষয় থাকলে সে বিষয়ে আপনার চিকিৎসককে সচেতন থাকতে হবে।

এছাড়া আপনি যদি কোনও ক্লাস মিস করে থাকেন তাহলে আপনি সহপাঠীদের সঙ্গে শিক্ষা সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে যোগাযোগ করতে চাইতে পারেন। সুতরাং মানসিক স্বাস্থ্যগত সমস্যা বেড়ে গেলে আপনার ক্ষেত্রে যে কিছুটা নমনীয়তা প্রদর্শনের প্রয়োজন দেখা দিতে পারে সেই বিষয়টি শিক্ষকদের জানিয়ে রাখাটা আপনার জন্য সহায়ক হতে পারে।

কিছু মানসিক সমস্যা হলো অস্থায়ী; কিছু দীর্ঘস্থায়ী। স্কুল হতে পারে একটি জীবন পরিকল্পনার অংশ যা বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ, কর্মজীবন, বন্ধু-বান্ধব এবং জীবন পাল্টে দেওয়ার মত অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রে কিছু সংযোজন ঘটায়। মানসিক স্বাস্থ্যগত সমস্যা স্কুলে যাওয়া অধিকতর কঠিন করে তুলতে পারে বটে তবে এটা অনতিক্রম্য নয়। সাহায্য করার জন্য স্কুলগুলো প্রস্তুত রয়েছে। -সৌজন্যে : কানাডিয়ানইমিগ্রেন্ট.সিএ