কানাডায় ৯০০০ গির্জা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে!
জনসমাগম হ্রাস এবং রক্ষণাবেক্ষণের ব্যয় বৃদ্ধির কারণে বাধ্য হয়ে পুরনো গির্জাগুলো বন্ধ করে দেওয়া, বিক্রি করা অথবা ভিন্ন কাজে ব্যবহার করতে হচ্ছে
মে ৫, ২০১৯
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক, ১০ মার্চ ২০১৯ : পুরনো ভবন রক্ষার কাজে নিয়োজিত একটি জাতীয় দাতব্য প্রতিষ্ঠান হিসাব করে বলেছে যে, আগামী এক দশকের মধ্যে কানাডার ৯০০০ ধর্মালয় হারিয়ে যাবে। এই সংখ্যাটি কানাডায় বিদ্যমান ধর্মালয়ের মোট সংখ্যার এক তৃতীয়াংশ। ন্যাশনাল ট্রাস্ট ফর কানাডা রিজেনারেশন প্রজেক্টের নেতা রবার্ট প্যাজট বলেন, কানাডার প্রতিটি কমিউনিটিই পুরনো গির্জা ভবনগুলো বন্ধ করে দেওয়া, বিক্রি করা অথবা ধ্বংস করে দেওয়ার ঘটনার মুখোমুখি হতে যাচ্ছে। প্রতিবেদনটি তৈরী করেন সিবিসি নিউজের বনি অ্যালেন।
প্যাজট বলেন, “একেকটি মহল্লায় একাধিক গির্জা বন্ধ হতে যাচ্ছে। অনেকে এটিকে একটি সঙ্কটজনক পরিস্থিতি বলছেন এবং আমিও তাতে এক অর্থে সায় দিই। এই ঘটনা প্রত্যেককে আহত করবে।”
এটি কেবল কিছু সুন্দর ও ঐতিহাসিক ভবন হারানো নয় বরং উপাসনালয় যে সামাজিক অনুভূতির জন্ম দেয় সেই অনুভূতিই হারিয়ে ফেলা। গির্জা কেবল রবিবারের প্রার্থনার জন্য নয় বরং এটি গার্লস গাইড ও রাজনৈতিক সমাবেশ, বিয়ে ও অন্তেষ্ট্যিক্রিয়ার স্থান, পিয়ানো বাজাতে শেখার এবং গৃহহীনদের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নেরও জায়গা এটা।
প্যাজট বলেন, “এটি নিছক কিছু ভবনের ব্যাপার নয়। এটা হলো প্রকৃতপক্ষে সমাজের একটি ঐতিহ্যগত ভবন হারানোর ফলে সৃষ্ট প্রভাবের চেয়েও বেশি কিছু। মানুষের বিশ্বাসের জায়গাটা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে ছিলো সামাজিক জীবনের সত্যিকারের কেন্দ্রস্থল। এগুলো কার্যত সামাজিক মিলনকেন্দ্র ও সামাজিক সেবা কার্যক্রমের কেন্দ্র হিসাবে ভূমিকা পালন করেছে।
অনেক ধর্মীয় সমাবেশে এই পরিবর্তনের আগমনবার্তা জানানো হয়েছে এবং পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে পুরনো ভবনগুলোর এমনভাবে ভিন্নতর ব্যবহার করার যাতে তাদের ব্যয় তারা নিজেরাই বহন করতে পারে।”
পল্লী এলাকায় ধর্মীয় সমাবেশে লোক সমাগত সঙ্কুচিত হয়ে আসছে কারণ অনেকে বয়ঃবৃদ্ধ হয়ে পড়েছেন এবং নতুনরা ভিন্ন স্থানে চলে গেছে। শহর অঞ্চলে সমাজের ক্রমবর্ধমান হারে ধর্মনিরপেক্ষ হয়ে পড়া এবং সেইসঙ্গে নতুন নতুন আধ্যাত্মিকতার অনুশীলন পুরনো ঐতিহ্যগত খ্রিস্টীয় গির্জায় লোকসমাগম কমিয়ে দিয়েছে। নতুন যে অভিবাসীরা আসছে তাদের দিয়েও এই প্রবণতা রোধ করা যাচ্ছে না। প্রার্থনার সারিতে লোকের স্বল্পতা এবং তহবিলে অর্থস্বল্পতা আর পুরনো ভবনের রক্ষণাবেক্ষণের ব্যয় বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি অনেক ধর্মসভাম-লিতে গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করা হয়।
বন্ধের সুপারিশ
২০০৯ সাল পর্যন্ত কানাডা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকানায় উপাসনা, প্রশিক্ষণ ও উন্নয়নের জন্য ২৭,৬০১টি ভবন ছিলো। ন্যাচারেল রিসোর্সেস কানাডা এনার্জির অডিটে এই পরিসংখ্যান চাপা পড়ে ছিলো।
বন্ধ হয়ে যাবে এমন গির্জার সংখ্যা দেশজুড়ে বাড়তে থাকার প্রেক্ষাপটে ন্যাশনাল ট্রাস্ট ফর কানাডা পূর্বাভাস দেয় যে, এক দশকের মধ্যে পুরনো ভবনগুলোর এক-তৃতীয়াংশ বিক্রি হয়ে যাবে বা ভেঙ্গে ফেলা হবেÑ২০০৯ সাল থেকে এপর্যন্ত অনেক ভবনই পরিত্যক্ত হয়েছে, বিক্রি হয়ে গেছে বা ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। বিভিন্ন্ সমীক্ষা প্রতিবেদন এবং গণমাধ্যমের রিপোর্টের ভিত্তিতে এই হিসাব করা হয়েছে।
উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, পূর্বাঞ্চলীয় নিউ ব্রান্সউইকে রোমান ক্যাথলিক আর্চ বিশপের দপ্তর পূর্বাভাস দেয় যে তাদের ধর্মসভা বা কর্তৃপক্ষ বাড়তি অর্থের সংস্থান করতে না পারলে তাদের ৫৩টি বিভাগীয় ধর্মসভার মধ্যে ২০টিই বন্ধ করে দিতে হবে।
একইভাবে, মন্ট্রিয়লের কাছে ৫৪টি ক্যাথলিক গির্জার মধ্যে ৩০টির বেশি বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ২০১৮ সালে ডিওসিজ অব সেন্ট-জেরোম-এর (Diocese of St-Jérôme) এক রিপোর্টে এই তথ্য জানানো হয়। স্থানীয় গির্জা কর্তৃপক্ষ এখন ওই গির্জাগুলোর ভাগ্য নির্ধারণের জন্য কাজ করছে।
প্রেইরি অঞ্চলজুড়ে ছোট ছোট শহরগুলোতে গির্জা কর্তৃপক্ষ ক্রেতার সন্ধান করছে। সাসকাটচাওনের গোভান শহরে সাতটির মত গির্জা সক্রিয় ছিলো। এর মধ্যে পাঁচটিই এখন বন্ধ হয়ে গেছে আর লুথারান ও ক্যাথলিক গির্জায় খ-কালীন উপাসনা চালু আছে এবং অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পাদন করা হয়। শহরটির মোট জনসংখ্যা মাত্র ১৯৭ জন।
কানাডার ন্যাশনাল ট্রাস্ট টরন্টোর একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ফেইথ অ্যান্ড দ্য কমন গড-এর সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছে যাতে ধর্মসভার জন্য প্রশিক্ষণ অনুশীলনের ব্যবস্থা করা যায়। গির্জাগুলোকে প্রার্থনা ও সামাজিক কর্মকা-ের জন্য সংরক্ষণ করার জন্য কীভাবে জমিজমা সংক্রান্ত ব্যবস্থাপনা করা যায় সেই বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। তারা আশা করছে যে গির্জাগুলোর অবলুপ্তি রোধ করা সম্ভব হবে।
প্যাজট বলেন, এই জায়গাগুরি নিছক প্রার্থনার জায়গার চেয়েও বেশি কিছু। এগুলি হলো একেকটি সমাজের নিজস্ব বৈশিষ্ট্যম-িত স্থান।