কানাডার ২৪টি শহরের মধ্যে ১৭টিতে বাড়ি ভাড়া বেড়েছে দুই অঙ্কে

মর্টগেজ এর স্ট্রেস টেস্ট এবং সুদের হার বেড়ে যাওয়াই মূল কারণ বলে মনে করা হচ্ছে

ফেব্রুয়ারী 5, 2019

ডেনিয়েল টেনসার : ক্রমবর্ধমান ভাড়ার বিষয়টি এখন আর কেবল টরন্টো বা ভ্যাঙ্কুভারের সমস্যা নয়।

বাড়িভাড়া বিষয়ক সাইট পডম্যাপারের সর্বশেষ সমীক্ষায় দেখা গেছে গত এক বছরে কানাডার ২৪টি শহরের মধ্যে ১৭টিতেই বাড়িভাড়া দুই অঙ্কে বেড়েছে। গত ডিসেম্বরে সম্পাদিত সমীক্ষায় দেখা গেছে, আগে যে-সব শহরের বাড়ির বাজার সবচেয়ে সুলভ ছিলো সে-গুলোরও কয়েকটিতে বাড়িভাড়া সবচেয়ে বেশি বেড়েছে।

দেশের সবচেয়ে ব্যয়বহুর বাড়িভাড়ার বাজার হিসাবে টরন্টো এখনও তার অবস্থান ধরে রেখেছে। সেখানে এক বেডরুমের বাড়ির ভাড়া এক বছরে ১১.৯ শতাংশ বেড়ে প্রতিমাসে মোটামুটি ২.২৬০ ডলারে দাঁড়িয়েছে। দুই বেডরুমের বাড়ির ভাড়া বেড়েছে ১৩.১ শতাংশ হারে এবং ভাড়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে মাসিক ২,৮৫০ ডলার।

টরন্টোর তুলনায় ভ্যাঙ্কুভারে বছরটা ছিলো কিছুটা ধীরগতির। সেখানে এক বেডরুমের বাড়ির ভাড়া ৬.৫ ভাগ বেড়ে ২,১৩০ ডলার এবং দুই বেডরুমের বাড়ির ভাড়া ০.৯ ভাগ বেড়ে ৩,২৩০ ডলারে দাঁড়িয়েছে।

এদিকে বেশ কয়েকটি ছোট ও মাঝারি শহরে বাড়িভাড়া বেশ দ্রুত লাফিয়ে বেড়েছে। যেমন হ্যালিফ্যাক্স, কিংস্টন, কেলোনা, লন্ডন ও ভিক্টোরিয়ায় বেড়েছে ১৫ ভাগের মতো। কুইবেকের দুটি বৃহৎ শহর মন্ট্রিল ও কুইবেক সিটিতে একই হারে ভাড়া বেড়েছে।

এখন প্রশ্ন হলো, যেখানে বাড়ির দামে কোনওরকম উলল্ম্ফন ঘটেনি সেইসব শহরে কী কারণে বাড়িভাড়া বাড়ছে? যেমন, সাসকাটুনে ১০.৭ শতাংশ হারে বাড়িভাড়া বেড়ে যাওয়ার ব্যাখ্যা কী?

সম্ভাব্য মূল কারণ হতে পারে গত বছরের শুরুতে বন্ধকির “চাপ পরীক্ষার” বিষয়টি সামনে নিয়ে আসা এবং সেই সঙ্গে সুদের হার বাড়ানো। এর ফলে বন্ধকির জন্য প্রতিমাসে পরিশোধযোগ্য অর্থের পরিমাণ আরও বেড়ে গেছে।

কানাডায় বাড়ির ক্রেতাদের বন্ধকির ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা থেকে নিবৃত্ত করার লক্ষ্যে ব্যাংক অব কানাডা বন্ধকির চাপ পরীক্ষা এবং সুদের হার বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়। এক্ষেত্রে তথ্য-প্রমাণাদি থেকে বিষয়টি কার্যকর হয়েছে বলেই প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু এর একটি অনিচ্ছাকৃত পরিণতিও রয়েছে। সেটা হলো, বাড়ির সম্ভাব্য ক্রেতারা অপেক্ষাকৃত বেশি সময় ধরে ভাড়া বাড়িতে থাকতে বাধ্য হচ্ছে। কারণ অপেক্ষাকৃত বড় ডাউন পেমেন্ট দেওয়ার জন্য তাদেরকে আরও বেশি অর্থ সঞ্চয় করতে হচ্ছে।

রয়াল ব্যাংক অব কানাডার ব্যাংকারদের সাম্প্রতিক প্রাক্কলন অনুযায়ী, বন্ধকির চাপ কানাডার অনেক শহরে বাড়িভাড়া সাধ্যের মধ্যে রাখার ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে। এমনকি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যেসব শহরে বাড়ির দাম তেমন বাড়েনি সেই সব শহরেও এমন প্রভাব দেখা গেছে।

উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় হ্যালিফ্যক্সর কথা। সেখানে একটি গড় মানের বাড়ি কেনার যোগ্য হতে একজন ক্রেতার যে পরিমাণ আয় থাকতে হবে তার পরিমাণ গত তিন বছরে ৫২ হাজার থেকে বেড়ে ৭০ হাজার ডলারে উন্নীত হয়েছে। এর অন্যতম কারণ হিসাবে বন্ধকির চাপ এবং বর্ধিত সুদের হারকে চিহ্নিত করা হচ্ছে।

বাড়িভাড়া বাড়ার আরেকটি কারণ সাধারণভাবে বলা হয়ে থাকে। সেটা হলো, কানাডার জনসংখ্যার হার বেড়ে যাওয়া। কেন্দ্রীয় সরকার নবাগত অভিবাসী গ্রহণের কোটা তিন লাখের বেশিতে উন্নীত করার কারণে জনসংখ্যা বাড়ছে। অনেক বাজার বিশেষজ্ঞ বলছেন যে, রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ীরা এখনও নতুন বাস্তবতা অনুযায়ী তাদের দরের সমন্বয় করেনি।

তবে অনেক বিশেষজ্ঞ বলেন, টরন্টো এবং অন্য শহরগুলোতে বাড়িভাড়ার এই ঊর্ধ্বমুখি চাপ পুরো ২০১৯ সালজুড়েই বজায় থাকবে। কারণ পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটতে পারে এমন কোন আভাস কোনওভাবেই মিলছে না।

ভাড়া ও বিক্রয় বিষয়ক সাইট কন্ডোস.সিএ শিল্প খাতের ১৬ জন পেশাজীবীর সঙ্গে কথা বলেছে এবং তারা পূর্বাভাস দিয়েছেন যে, ২০১৯ সালে টরন্টোতে বাড়িভাড়ার হার ১১ শতাংশ, অটোয়াতে ৯ শতাংশ এবং ভ্যাঙ্কুভারে ৭ শতাংশ বাড়বে। দাম বাড়ার এই পূর্বাভাস দেওয়ার ক্ষেত্রে তারা ওই শহরগুলোতে কর্মখালির হার রেকর্ড পরিমাণে কম থাকার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। -হাফিংটন পোস্ট