কানাডার মুসলিম কমিউনিটিতে বহুবিবাহ প্রথা চলছেই
৫ বছরের জেল হতে পারে জেনেও অনেকেই প্রথম স্ত্রীর অমতে দ্বিতীয় বিয়ে করছেন : কেউ কেউ দ্বিতীয় বিয়ে করছেন গোপনে প্রথম স্ত্রীকে না জানিয়েই
ফেব্রুয়ারী 5, 2019
প্রবাসী কণ্ঠ : কানাডীয় আইনে এক স্ত্রী বর্তমান থাকা অবস্থায় কোন পুরুষ দ্বিতীয় বিয়ে করতে পারেন না। কিন্তু ইসলামী আইনে একজন পুরুষ তা পারেন কতিপয় শর্ত মেনে। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কানাডার মুসলিম কমিউনিটিতে কেউ কেউ দ্বিতীয় বিয়ে করছেন প্রথম স্ত্রী বর্তমান থাকা অবস্থায়ই। কিন্তু তা করছেন ইসলামী শর্ত না মেনে। এবং একই সঙ্গে কানাডার আইন ভঙ্গ করে।
যারা এক স্ত্রী বর্তমান থাকা অবস্থায় দ্বিতীয় বা তৃতীয় বিয়ে করছেন তারা মনে করছেন এটি তাদের অধিকার। তারা কানাডার আইন এবং একই সঙ্গে ইসলামী আইনও ভঙ্গ করছেন এ কথা স্বীকার করতে নারাজ। এদের মধ্যে কয়েকজন ইমাম-ও আছেন। তারা নিজেরাও দ্বিতীয় বিয়ে করেই ক্ষান্ত নন, সাধারণ কোন মুসলিম দ্বিতীয় বিয়ে করতে চাইলে তাকে নানানভাবে সহায়তা করছেন। কেউ কেউ এমন পরামর্শও দিচ্ছেন যে, ‘পারিবারিক শান্তি’ বজায় রাখার প্রয়োজনে প্রথম স্ত্রীর কাছে দ্বিতীয় বিয়ের ঘটনা গোপন রাখা অন্যায় নয়!
আর এই পরামর্শ শুনে কেউ কেউ দ্বিতীয় বিয়ে গোপন রাখছেন! দ্বিতীয় স্ত্রীকে রাখছেন ভিন্ন ঠিকানায় যাতে প্রথম স্ত্রী তা জানতে না পারেন। এমনকি এদের কেউ কেউ সরকারী ভাতা তথা ওয়েলফেয়ার-ও নিচ্ছেন একাধিক স্ত্রীর ভরণ-পোষণের জন্য!
টরন্টো সান পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, কানাডায় বহুবিবাহ বেআইনী হলেও অন্টারিওতে কেউ কেউ একাধিক স্ত্রীর জন্য সরকারী ভাতা নিচ্ছেন। কোন কোন ব্যক্তি চার স্ত্রীর জন্য ওয়েলফেয়ার মানি পাচ্ছেন।
কানাডিয়ান সোসাইটি অব মুসলিমস এর প্রেসিডেন্ট মমতাজ আলী টরন্টো সান-কে বলেন, শত শত মুসলিম একাধিক স্ত্রীর জন্য ওয়েলফেয়ার মানি সংগ্রহ করছেন অন্টারিওতে।
পত্রিকাটির প্রতিবেদনে বলা হয়, অন্টারিও ফ্যামিলি ল এ্যাক্ট কোন পুরুষের একাধিক স্ত্রী গ্রহণকে স্বীকৃতি দেয় যদি তা অন্য কোন দেশে সে দেশের আইন মোতাবেক করা হয়ে থাকে।
উল্ল্লেখ্য যে, ইসলামিক বিবাহের আইনমতে, সুন্নি এবং শিয়া পুরুষরা বহুবিবাহ করতে পারেন। এর ফলে পুরুষরা একইসাথে সর্বোচ্চ চারটা সহ একাধিক স্ত্রী রাখতে পারবেন। তবে বিপরীত ক্রমে একই নারী একাধিক স্বামী রাখতে পারবেন না।
মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে এই বহুবিবাহের চর্চায় ভিন্নতা আছে। কিছু মুসলিম দেশে এটা খুব সাধারণ বিষয়, আবার কিছু দেশ যেমনঃ আজারবাইজান, তিউনিশিয়া এবং তুর্কিতে বিবাহের ক্ষেত্রে ইসলামিক আইনকে গ্রহণ করা হয়নি। ফলে সেখানে বহুবিবাহ বৈধ নয়।
বহুবিবাহ প্রসঙ্গে কুরানের ৪ নং সুরার ৩ নং আয়াতে বলা হয়েছে-
“আর যদি তোমাদের এ আশঙ্কা থাকে, যে তোমরা এতিম (মহিলা)-দের সাথে ন্যায় বিচার করতে পারবে না, তাহলে সাধারণ নারীদের মাঝ থেকে তোমাদের যাঁদের ভাল লাগে, তাঁদের দুইজন, তিনজন কিংবা চারজনকে বিয়ে করে নাও। কিন্তু যদি তোমাদের এই ভয় হয় যে, তোমরা ন্যায় বিচার করতে পারবে না, তাহলে তোমাদের জন্য একজনই যথেষ্ট। কিংবা যে তোমাদের ডান হাতের অধিকারভূক্ত; তাঁকেই যথেষ্ট মনে করে নাও। সীমালঙ্ঘন থেকে বেঁচে থাকার জন্য এটাই হচ্ছে সহজতর পন্থা।”
– কুরান, সুরা ৪ (আন নিসা), ৩য় আয়াত [১]
এখানে (‘ডান হাতের অধিকারভুক্ত’ মানে দাসী) একে নিজের ইচ্ছানুসারে নানাভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। যাইহোক, এটা জানা প্রয়োজন, কুরানের এই উক্ত আয়াত কবে উচ্চারিত হয়েছিল। অর্থাৎ, আয়াত নাজিল বা সাধারণ মানুষ যখন জেনেছে, সেই ঐতিহাসিক সময়ের দিক থেকে কুরানের এই আয়াতকে বর্ণনা করা উচিত। এই আয়াত প্রথম প্রকাশিত হয় উহুদের যুদ্ধের পর, সেসময় অনেক পুরুষ মারা যান। ফলে অনেক নারী বিধবা এবং এতিম হয়ে যান। অনেকে [কে?] বলেন, এই আয়াত নাজিল হওয়ার অন্যতম কারণ, নবী ও ইসলামের জন্য মৃত্যুবরণ করা স্বামী হারানো বিধবা নারী ও পিতা হারানো অনাথ সন্তানের জন্য আল্লাহ উদ্বিগ্ন হওয়ায় এই আয়াত নাজিল করেছেন। যাতে করে অনাথ সন্তান বা বিধবা নারীরা একটা আশ্রয় পায়। এখানে যৌনতা বা পুরুষ শাসিত সমাজ সংক্রান্ত কিছু নেই। – সূত্র উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ।
প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, পৃথিবীর অনেক মুসলিম দেশেই পুরুষদের বহুবিবাহ নিষিদ্ধ। এর মধ্যে আছে মিশর, সুদান, আলজিরিয়া, জর্ডান, সিরিয়া, মরোক্ক, ইরাক, ইরান, কুয়েত ও লেবানন।
অবশ্য বাংলাদেশে বহুবিবাহ সম্পুর্ণভাবে নিষিদ্ধ নয়। এখানে পুরুষকে বহুবিবাহ করতে হলে কিছু প্রধান শর্ত (বর্তমান স্ত্রীর বন্ধ্যাত্ব, দৈহিক দূর্বলতা, দাম্পত্য সম্পর্কের জন্য দৈহিক অনুপযুক্ততা, দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধারের জন্য প্রদত্ত আদালতের কোন ডিক্রিকে ইচ্ছাকৃতভাবে এড়ানো, বর্তমান স্ত্রীর মানসিক অসুস্থতা এবং এসব সমস্যা সাপেক্ষে স্ত্রীর সজ্ঞানে সম্মতি) পুরণ এবং সেগুলো প্রমাণ করে, বহুবিবাহ করতে পারেন।
তবে ইসলামী অনেক দেশে বহুবিবাহ নিষিদ্ধ হলেও অবৈধভাবে চর্চা হয়। বহুবিবাহ বিরোধী আইন এবং বাধা গ্রামাঞ্চল গুলোতে প্রয়োগ করা কঠিন হয়ে যায়। স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে নারী পুরুষের উপর নির্ভরশীল থাকে। ফলে পুরুষের কথাই তার কাছে আইন। এজন্য নারী পুরুষের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তার মতামত প্রকাশ করতে পারেন না।
ইরানে বহুবিবাহের চর্চা আরেকটি উপায়ে প্রচলিত আছে। এ পদ্ধতিকে বলা হয়, মুতাহ বিবাহ। একটি একজন নারী ও পুরুষের মধ্যে স্বল্প সময়ের জন্য চুক্তিমুলক সম্পর্ক। যদিও ধর্মীয় দিক থেকে এই মুতা বিবাহ আইনত সঠিক, তবে একে চরম মাত্রায় নিরুৎসাহিত করা হয়।
অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, আধুনিক যুগে বহুবিবাহকে অনেক ইসলামী দেশেই নিষিদ্ধ করা হয়েছে অথচ কানাডায় একশ্রেণীর মুসলিম ধর্মে অনুমোদন আছে সেই দোহাই দিয়ে দ্বিতীয় বা তৃতীয় বিয়ে করছেন। এবং এটি এ দেশে অপরাধ তা জেনেও করছেন। অথবা কানাডায় বহুবিবাহ যে অপরাধ তা না জেনেই এ কাজটি করছেন।
এরকমই একজন ব্যক্তি ইসা। তিনি একজন ধর্মান্তরিত মুসলিম। পেশায় একজন শেফ এই ইসা সিবিসি-কে বলেন, বহুবিবাহের বিষয়ে আমি খোলামেলা। কোন রাখঢাক নেই আমার মধ্যে। বহুবিবাহ আমার ধর্মে স্বীকৃত। আমি জানি কানাডায় এটি বৈধ নয় এবং এ জন্য পাঁচ বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে। কিন্তু এটি আমার ধর্মেরই অংশ। এ জন্য আমি এ ব্যাপারে খোলামেলা। আমি এই প্রথাকে গ্রহণ করেছি।
তার প্রথম স্ত্রীর অভিমত কি এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, মহিলাগণ অধিকাংশ সময়ই সতীন পছন্দ করেন না। তবে আমার স্ত্রী এই বিষয়টি মেনে নিয়েছেন। তিনি বুঝতে শিখেছেন যে এটি আমাদের ধর্মীয় রীতি। আল্ল্লাহ আমাদেরকে বহুবিবাহের অনুমতি দিয়েছেন। এ কারণে আমার স্ত্রী এই রীতিকে মেনে নিয়েছেন। ইসা’র স্ত্রীর কি বক্তব্য বা প্রতিক্রিয়া তা অবশ্য জানা যায়নি।
আর এ কাজে সহায়তা করছেন টরন্টোর জনা কয়েক ইমাম। সিবিসি নিউজ এর এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়। এই ইমামরা দ্বিতীয় বিয়েতে ইচ্ছুক মুসলিম পুরুষদেরকে বিয়ের কাগজপত্র তৈরী করে দেন। তবে এসকল বিয়ের কোনটাই কানাডার আইনে রেজিস্ট্রি করা হয় না। ফলে কেউ যদি এদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন তখন কানাডার আইন কিছুই করতে পারে না। কারণ, বিয়ের কোন কাগুজে প্রমাণ নেই।
এই ইমামদের বিরুদ্ধে অভিযোগ কতটা সত্য তা জানার জন্য সিবিসি কয়েকজন পুরুষকে গুপ্তচর হিসাবে তাদের কাছে পাঠায়। ঐ ইমামদের কাছে গিয়ে তারা দ্বিতীয় বিয়ের ইচ্ছা প্রকাশ করলে দুইজন তা করতে অস্বীকৃতি জানান, তবে অন্য দুইজন রাজী হন এবং ছদ্দবেশী ঐ পুরুষদেরকে অভিনন্দন জানান দ্বিতীয় বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য। এই দুইজন ইমাম জানান, টরন্টোতে আরো কয়েকজন আছেন যারা এ কাজে সহায়তা প্রদান করে থাকেন। দ্বিতীয় বিয়ের কাগজপত্র তৈরীর জন্য তারা ফি নিয়ে থাকেন বিবাহপ্রতি ৪৫০ ডলার করে। তবে আলী হিন্ডি নামের একজন ইমাম আছেন যিনি মাত্র ২০০ ডলারেই তা করে দেন। ইনি টরন্টোর সালাহউদ্দিন মসজিদের ইমাম। প্রথম, দ্বিতীয় বা তৃতীয় বিবাহ যাই হোক না কেন, তার ফি ২০০ ডলার। এমনকি সাক্ষীও তিনি যোগার করে দেন। ইসলামী আইনে বিবাহ পড়ানোর জন্য দুইজন সাক্ষীর প্রয়োজন হয়। আলী হিন্ডি ছদ্দবেশী রিপোর্টারকে আরো জানান, কানাডার আইনে দ্বিতীয় বা তৃতীয় বিয়ে নিষিদ্ধ হলেও কোন সমস্যা নেই। কারণ এই বিয়ে সরকারী কোন অফিসে রেজিস্ট্রি করা হবে না। সরকারী অফিসে রেজিস্ট্রি করতে গেলেই ঝামেলা হবে।
আলী হিন্ডির এই বক্তব্যগুলো গোপন ক্যামেরায় ধারণ করা হয়েছিল। পরবর্তীতে সিবিসির সাংবাদিক হাবীবা নওশীন যখন তাকে ঐ ভিডিওটি দেখান এবং তার প্রতিক্রিয়া জানতে চান তখন তিনি বলেন, ‘‘সো? আমার বিরুদ্ধে মামলা করুন। সরকারী লোকদের বলুন মামলা করতে। আমরা আইন মেনেই এগুলো করি। আমরা সরকারী দফতরে এই সকল বিয়ে রেজিস্ট্রি করি না। ”
কানাডার আইনে বহুবিবাহ নিষিদ্ধ। তারপরও তিনি এগুলো কেন করাচ্ছেন তার ব্যাখ্যা জানতে চাওয়া হলে হিন্ডি জোর দিয়ে বলেন, “এই আইন পরিবর্তন করা উচিৎ। এটি একটি গার্বেজ আইন। আমাদেরকে পরিশেষে একটা কথা স্বীকার করতে হবে যে প্রতিটি মহিলার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক পুুরুষ নেই। কারণ যুদ্ধ ক্ষেত্রে অনেক পুরুষ মারা যান। আবার অনেক পুরুষ সমকামীতায় লিপ্ত। ”
তবে কানাডিয়ান কাউন্সিল অব ইমামস এর প্রতিনিধি ইমাম Hamid Slimi সিবিসি-কে জানায়, বহুবিবাহ ইসলামে নিষিদ্ধ না হলেও কানাডায় তা বৈধ নয়। কারণ, এ দেশের আইন তা মেনে নেয় না। কিন্তু তারপরও এই বহুবিবাহের প্রথা এখানে চলে আসছে। তিনি আরো বলেন, আজকের বাস্তবতায় বহুবিবাহ যে ভাবে প্র্যাকটিস করা হচ্ছে তাতে করে মহিলাদের প্রতি অবিচার করা হচ্ছে।
ইমাম Hamid Slimi মসজিদে তার সাম্প্রতিক এক ধর্মোপদেশ বক্তৃতায়ও বলেছেন, বহুবিবাহ ইতিপূর্বে এক বিশেষ সময়ে এবং বিশেষ পরিস্থিতিতে অনুমোদন করা হয়েছিল। সেটা শত শত বছর পূর্বের ঘটনা। কিন্তু কানাডায় এই বহুবিবাহ অনুমোদিত নয় এবং এখানে বসবাসকারী ৯৫ – ৯৯% মুসলিম মহিলা এই প্রথার সাথে একমত নন।
স্ট্যাটিসটিকস কানাডার হিসাব মতে কানাডায় দশ লক্ষেরও বেশী মুসলিম বাস করেন। কিন্তু এদের মধ্যে কত জন পুরুষের একাধিক স্ত্রী রয়েছে তার হিসাব বের করা কঠিন। কারণ, আগেই উল্ল্লেখ করা হয়েছে যে, দ্বিতীয় বা তৃতীয় বিয়ের ঘটনা কোন সরকারী প্রতিষ্ঠানে রেজিস্ট্রি করা হয় না।
যে সকল মুসলিম পুুরুষ দ্বিতীয় বা তৃতীয় বিয়ে করেন তারা অনেক সময় তাদের প্রথম স্ত্রীকে শারীরিকভাবে নির্যাতনও করেন। এই নির্যাতনের খড়গ নেমে আসে যখন প্রথম স্ত্রী কৈফিয়ত চান বা প্রতিবাদমূখর হয়ে উঠেন। নিজেদের নিরাপত্তা ও সন্তানদের নিরাপত্তা নিয়েও তারা উদ্বিগ্ন থাকেন। সিবিসি’র প্রতিবেদনে বলা হয়, টরন্টোতে বসবাসরত এক ইমামের গোপন বিয়ের খবর তার প্রথম স্ত্রী জানার পর তিনি স্বামীর সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে মুখমুখি হলে ইমাম সাহেব ভীষণ ক্ষেপে যান এবং এক পর্যায়ে প্রথম স্ত্রীকে এমন মারধর করেন যে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়েছিল। দুই সন্তানের ঐ মা ইমাম সাহেবের সঙ্গে আর ঘর করছেন না। সম্প্রতি তাদের ডিভোর্স হয়েছে।
কানাডায় বহুবিবাহের ঘটনা অতীতেও ঘটেছে, এখনো ঘটছে। কিন্তু এটি অবৈধ হলেও বহুবিবাহের জন্য কাউকে সাজা ভোগ করতে হয়েছে এমন ঘটনা কানাডায় অত্যন্ত বিরল।
উল্ল্লেখ্য যে, বহুবিবাহের বিরুদ্ধে কাগজে কলমে আইন আছে কানাডায় গত ১২৭ বছর ধরেই। কিন্তু এর প্রয়োগ নেই বললেই চলে। তবে ২০১৭ সালে কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়ায় জনবিচ্ছিন্ন বহুগামী সম্প্রদায়ের দু’জন সাবেক ধর্মীয় নেতাকে একাধিক স্ত্রী রাখার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করেছে একটি আদালত।
ব্রিটিশ কলম্বিয়ার সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতি শেরি অ্যান ডোনেগান ৬০ বছর বয়সী Winston Blackmore এবং ৫৩ বছর বয়সী ames Oler কে দোষী সাব্যস্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, সাক্ষ্যপ্রমাণে এটা স্পষ্ট যে Blackmore একই সময়ে ২৫ নারীকে বিয়ে করেছেন আর তার ১৪০ সন্তান রয়েছে। আর Oler করেছেন ৫ নারীকে। তারা দু’জনই বাউন্টিফুলের একটি ক্ষুদ্র সম্প্রদায়ের নেতা ছিলেন।
Blackmore বলেছেন, ধর্মীয় দায়িত্ব হিসেবে তিনি এতগুলো স্ত্রী রেখেছেন। তার আইনজীবী বলেছেন, তার মক্কেলকে দণ্ড দেয়া হলে তিনি কানাডার বহুগামী আইনের সাংবিধানিক দিক নিয়ে চ্যালেঞ্জ জানাবেন। রায়ের পর Blackmore বলেন, আমার অপরাধ এই যে আমি ধর্মীয় দায়িত্ব পালন করেছি। আমি কখনোই আমার ধর্মকে অস্বীকার করিনি।
কানাডার আইন অনুসারে তাদের সর্বোচ্চ ৫ বছর কারাদণ্ড হওয়ার কথা। কিন্তু সাজা হয়েছে শুধুমাত্র গৃহবন্দীত্বের!
কানাডায় বহুবিবাহ বন্ধের বিরুদ্ধে অন্তত কাগজে কলমে একটি আইন আছে। সেই আইনে বলা আছে দোষী সাব্যস্থ হলে পাঁচ বছরের জেল হতে পারে। পাঁচ বছর কম সময় নয়। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, বাস্তবে বহুবিবাহের বিরুদ্ধে এই আইনটির প্রয়োগ একেবারেই নেই বলতে গেলে। তাই একে নখ দন্তহীন আইন বলে আখ্যায়িত করে থাকেন অনেকে। এবং আরো অশ্চর্যের বিষয় হলো, নারীদের মধ্যেও কেউ কেউ আছেন যারা জেনেশুনেই সতীনের সঙ্গে সংসার শেয়ার করতে আগ্রহী। ইমামদের খোঁজেও এই ধরণের নারী আছে বলে প্রতিবেদনে উল্ল্লেখ করা হয়। তাছাড়া কানাডায় একটি ওয়েবসাইটও আছে যেখানে বিবাহিত পুরুষের দ্বিতীয় বা তৃতীয় স্ত্রী হিসাবে আসতে আগ্রহী অনেকের বায়োডাটা আছে ছবি সহ! ঐ ওয়েবসাইটে সুস্পষ্টভাবেই ঐ নারীরা ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন এই বলে যে সম্ভাব্য স্বামীর বহুবিবাহে তাদের আপত্তি নেই। তাদের ভাষায় – Accept polygamy.
বহুবিবাহে আগ্রহী স্বামীদের জন্য পাত্রীর এই সহজলভ্যতা সমস্যাকে আরো জটিল করে তুলছে সন্দেহ নেই। কিন্তু এই বহুবিবাহের প্রথা যে একটি পরিবারে প্রথম স্ত্রী ও সন্তানদের উপর কতটা বিরুপ ও ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে তা অনেকে তাৎক্ষনিকভাবে উপলব্দি করতে পারেন না।
২০১১ সালে ব্রিটিশ কলম্বিয়ার সুপ্রিম কোর্ট একটি রায় দেন যাতে বলা হয়, বহুবিবাহ প্রথা অসাংবিধানিক। এবং এই প্রথা নারী ও শিশুদের উপর যে ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলে সেটিকে প্রাধান্য দেওয়া ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা বজায় রাখার চেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ।