অভিবাসন বন্ধ করে দিলে কানাডার অর্থনীতিকে ধকল সইতে হবে

অভিবাসন বিভিন্ন উপায়ে অর্থনীতিতে অবদান রাখে। তারা আমাদের শ্রমশক্তিতে ভূমিকা রাখে, অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের দিক থেকেও তারা অবদান রাখে

এপ্রিল ৮, ২০১৯

জনসংখ্যার স্বল্পতা এবং শ্রমশক্তির বার্ধক্যজনিত কারণে কানাডার কনফারেন্স বোর্ডের এক রিপোর্টে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে যে, অভিবাসন বন্ধ করে দেওয়া হলে ২০৪০ সালের মধ্যে কানাডার অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে।

কনফারেন্স বোর্ডের জ্যেষ্ঠ গবেষণা সহযোগী করীম আল-অ্যাসাল ব্যাখ্যা করে বলেন, “অভিবাসন বিভিন্ন উপায়ে অর্থনীতিতে অবদান রাখে। তারা আমাদের শ্রমশক্তিতে ভূমিকা রাখে, অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের দিক থেকেও তারা অবদান রাখে।” খবর গ্লোবাল নিউজ  এর।

২০১৬ সালের স্ট্যাটস কানাডার তথ্য অনুযায়ী, অভিবাসীরা কানাডার মোট জনসংখ্যার মোটামুটি ২২ শতাংশের মতো। কনফারেন্স বোর্ডের রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে যে, আগামী ২০৪০ সালের মধ্যে কানাডার জনসংখ্যার প্রবৃদ্ধি হবে পুরোপুরি অভিবাসীদের দিয়ে। যেখানে বর্তমানে কানাডার জনসংখ্যার প্রবৃদ্ধির ৭১ ভাগ হচ্ছে অভিবাসীদের দিয়ে।

রিপোর্টে দুটি দৃশ্যপটের ওপর আলোকপাত করা হয়েছে; প্রথমত অভিবাসন পুরোপুরি বন্ধ করে দিলে বা নাটকীয়ভাবে কমিয়ে আনা হলে কানাডার অর্থনীতির ওপর সম্ভাব্য যে প্রভাব পড়তে পারে তা খতিয়ে দেখা; দ্বিতীয়ত অভিবাসীদের সংখ্যা ২০১৭ সালের ০.৮ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে এক শতাংশ করা হলে তার ফলাফল কী হতে পারে সেটা দেখানো।

অভিবাসন বন্ধ করে দেওয়া হলে ২০৪০ সালের মধ্যে কানাডার অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে। ছবি : গ্লোবাল নিউজ

তরুণ, কর্মক্ষম অভিবাসীদের নিয়ে আসা দেশজুড়ে অর্থনৈতিক তৎপরতার জন্য যেমন, তেমনই কানাডার বয়োজ্যেষ্ঠ জনসংখ্যার বিষয়টির সুরাহা করতেও সহায়ক। রিপোর্টে বলা হয়েছে, যদি অভিবাসন পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয় তাহলে ২০৪০ সাল নাগাদ কানাডার জনসংখ্যার ২৬.৯ শতাংশ মানুষ হবেন ৬৫ বছর বা তার চেয়ে বেশি বয়সের। সেই সঙ্গে অভিবাসন ছাড়া দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বছরে গড়ে ১.৩ শতাংশ থেকে ক্রমান্বয়ে ১.৯ শতাংশ হারে মন্থর হয়ে পড়বে।

অবশ্য একজন বিশেষজ্ঞ অভিবাসী গ্রহণের মাত্রা অতি দ্রুত বাড়ানোর ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। কার্লেটন ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ক্রিস্টোফার ওয়ারসউইক ব্যাখ্যা করে বলেন, কানাডায় অভিবাসী গ্রহণের মাত্রা বাড়ানোর অনুকূলে বেশ কিছু যৌক্তিক কারণ থাকলেও তিনি দ্রুত ব্যাপকভাবে তা বাড়ানোর বিরুদ্ধে অতি উদ্বেগ জানিয়ে রাখছেন। তিনি বলেন, “লোকেরা যখন বলে আমাদের অভিবাসীর সংখ্যা এক শতাংশ বাড়ানো দরকার তখন আমি কিছুটা হলেও শঙ্কা বোধ করি। এই সংখ্যাটা আসেলেই খুব বেশি।”

তিনি স্পষ্ট করেন যে, “অভিবাসনের বিরাট সুবিধা” আছে বলে তিনি বিশ্বাস করলেও, জনসংখ্যার কত শতাংশ অভিবাসী নিয়ে আসা উচিৎ সেটা ঠিক করার বিষয়ে আলোচনার সময় এর যে অনেক ভিন্ন দিক আছে সেটাও বিবেচনায় নেওয়া দরকার। এই ভিন্ন দিকগুলোর মধ্যে কয়েকটি হলো, গত কয়েক দশক ধরে কানাডায় অভিবাসীদের প্রাক্কলিত বেতনের যে মাইলফলকে পৌঁছার কথা ছিলো তা তারা এখনও অর্জন করতে পারেনি এবং স্বয়ংক্রিয় উৎপাদন ব্যবস্থা যা দেশটির গোটা শ্রমশক্তির জন্য হুমকি।

উদাহরণ হিসাবে তিনি বলেন, “যদি স্বচালিত গাড়ি আগামী ১৫ বছরের মধ্যে বাস্তব রূপ লাভ করে তাহলে হঠাৎ করেই ট্যক্সি ও উবার চালকদের আর কাজ থাকবে না।” অটোমেশনের কারণে যদি কানাডার সব শ্রমশক্তি কাজ হারায় তাহলে নতুন বেকার হয়ে পড়া লোকেদের সঙ্গে সঙ্গে কাজের সন্ধানে এদেশে আসা অভিবাসীরাও একই পরিস্থিতির শিকার হবে।

এছাড়াও, ওয়ারসউইক উল্লেখ করেন যে, অভিবাসী গ্রহণের মাত্রা এক শতাংশে বাড়ানো হলে কানাডায় আসা অভিবাসীদের অবস্থানগত গঠনকাঠামো পাল্টে যেতে পারে। আর কানাডার অর্থনীতির উচ্চ-দক্ষতাসম্পন্ন শ্রম খাতে অভিবাসীদের জায়গা করে নেওয়ার সম্ভাবনা এখনও অপূর্ণ রয়ে গেছে।

তিনি বলেন, “আমরা এরইমধ্যে অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী আবেদনকারীদের বেছে নিচ্ছি, আর যদি তেমন জোরালো প্রার্থীর অভাব দেখা দেয় তাহলে ধারণা করা যায় যে, পুরো ব্যাপারটাই বন্ধ করে দিতে হবে।”

তিনি বলেন, “আমি চাই দীর্ঘ সময়ের প্রেক্ষাপটে আমরা খোলা সীমান্ত নীতির দিকে যাবো, কিন্তু অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য আমাদের একটু সচেতন হওয়ার দরকার আছে।”

ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির আন্তগ্র“প সম্পর্ক বিষয়ক শিক্ষা নিয়ে কর্মরত অ্যাসেস ল্যাব-এর প্রধান ভিক্টোরিয়া অ্যাসেস অবশ্য রিপোর্টের তথ্যের ব্যাপারে একমত।

অ্যাসেস বলেন, “অভিবাসন না হলে আমাদের শ্রমশক্তি সংকুচিত হয়ে আসবে। অভিবাসীরা শ্রমশক্তিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে কারণ তারা একদম তরুণ বয়সে এদেশে আসে এবং পরবর্তী বহু বছর ধরে কর্মক্ষম থাকে।”