স্বল্প আয়ের কানাডিয়ানদের জন্য ‘গ্যারান্টিড বেসিক ইনকাম’ প্রকল্প চালুর চিন্তা-ভাবনা করছে ফেডারেল সরকার
জানুয়ারী ৭, ২০১৯
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : স্বল্প আয়ের কানাডিয়ানদের জন্য ‘গ্যারান্টিড বেসিক ইনকাম’ প্রকল্প চালুর বিষয় নিয়ে চিন্তা ভাবনা করছে ফেডারেল সরকার।
প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এবং সামাজিক উন্নয়ন মন্ত্রী জিন-ইয়েভস ডুকল্স যুক্ত দেখান এই বলে যে, লিবারেল সরকার কর্তৃক প্রবর্তিত কানাডা চাইল্ড বেনিফিট এবং অন্যান্য কিছু পদক্ষেপ ইতিমধ্যেই প্রাথমিকভাবে গ্যারান্টিড বেসিক ইনকাম এর পক্ষ হয়ে কাজ করছে।
কানাডিয়ান প্রেস-কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে সামাজিক উন্নয়ন মন্ত্রী জিন-ইয়েভস ডুকল্স বলেন, জনগণের সেবায় বর্তমানে ফেডারেল সরকারের যে সকল কর্মসূচী রয়েছে সেগুলো একসময় আরো বর্ধিত আকার ধারণ করে হয়তো একধরণের গ্যারান্টিড মিনিমাম ইনকাম হিসাবেই ভূমিকা রাখবে। বিশেষ করে যে সকল পরিবারে কোন শিশু নেই এবং সিনিয়র সিটিজেন ও স্বল্প আয়ের কর্মজীবীগণ এ থেকে উপকৃত হবেন। একটা পর্যায়ে গিয়ে স্বল্প আয়ের সব কানাডিয়ানই ইউনিভার্সাল গ্যারান্টিড মিনিমাম ইনকাম এর আওয়তায় আসবেন।
সেই দিনটি কবে আসবে এই প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী ডুকল্স অবশ্য নিশ্চিত করে কিছু বলেননি। তিনি যা বলেন তা হলো, একদিন আমরা সেই অবস্থানে পৌঁছাব।
ফেডারেল কর্মকর্তারাও বিষয়টিকে সামাজিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বি¯তৃত সম্ভাবনা হিসাবেই দেখছেন, বিশেষ করে যখন শ্রমবাজারে অধুনিক অটোমেশন সিস্টেম চালু হওয়ার কারণে অনেক কর্মজীবী মানুষ তাদের চাকরী হারাচ্ছেন। এর সাথে আরো রয়েছে চাকরীর বাজারে অনিশ্চিত পরিস্থিতি এবং অস্থায়ী ও স্বল্প বেতনের চাকরী।
গ্যারান্টিড মিনিমাম ইনকাম এর বিষয়টি চিন্তাভাবনায় আসছে এই কারনে যে, জনগনের সেবায় সরকারের বর্তমান যে সকল কর্মসূচী রয়েছে সেগুলো সেকেলে হয়ে গেছে।
প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো কানাডিয়ান প্রেস এর সঙ্গে অন্য এক সাক্ষাৎকারে তার সরকারের কিছু পদক্ষেপের কথা উল্ল্লেখ করেছিলেন যা সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক জীবনে স্থিতি আনার ক্ষেত্রে সাহায্য করবে এবং যা অনেকটা গ্যারান্টিড মিনিমাম ইনকামের মতই।
তিনি বসঢ়ষড়ুসবহঃ রহংঁৎধহপব এ পরিবর্তন আনার কথাও বলেন যাতে করে লোকজনের বেনিফিট্স পাওয়া সহজতর হয়। জাস্টিন ট্রুডো কানাডা ওয়ার্কাস বেনিফিট এর প্রসঙ্গেও কথা বলেন যেটি সাবেক সরকারের আমলের ওয়েজ সাবসিডি প্রোগ্রমাকে আরো বর্ধিত করবে স্বল্প আয়ের মানুষের আয় বৃদ্ধি করার জন্য।
প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো বলেন, এ সমস্ত জনকল্যানমূলক কার্যক্রম থাকার পরও আমরা গ্যারান্টিড মিনিমাম ইনকাম বিষটি নিয়ে ভাবছি যাতে করে কানাডার স্বল্প আয়ের মানুষদের জীবনমানের উন্নতি ঘটে।
উল্ল্লেখ্য যে, পার্লামেন্টারী বাজেট অফিস হিসাব করে দেখেছে এ জাতীয় পদক্ষেপ নিতে গেলে বাৎসরিক ব্যয় দাড়াবে ৪৩.১ বিলিয়ন ডলার। এই ব্যয় বৃদ্ধি ঘটবে স্বল্প আয়ের পরিবার প্রতি বছরে ৯,১২১ ডলার প্রদান করা হলে। বর্তমানে স্বল্প আয়ের লোকদের জন্য বিভিন্ন প্রকল্পে সরকারকে ব্যয় করতে হচ্ছে বছরে ৩২.৯ বিলিয়ন ডলার।
কানজার্ভেটিভ পার্টির সদস্য কেরেন ভেকিও বলেন, গ্যারান্টিড মিনিমাম ইনকাম বিষয়টি নিয়ে এগুতে গেলে ফেডারেল সরকারকে প্রভিন্সিয়াল, টেরিটরিয়াল এবং মিউনিসিপাল সরকাগুলোর সমর্থন আদায় করতে হবে।
স্ট্যাটিসটিসক কানাডার হিসাবে দেখা যায় ২০১৭ সালে ঐ প্রভিন্সিয়াল, টেরিটরিয়াল এবং মিউনিসিপাল সরকাগুলো সিনিয়র সিটিজেন, শিশুসহ স্বল্প আয়ের পরিবার, ডিসএ্যাবল ও বেকারদের পিছনে ৬৯ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে।
কানজার্ভেটিভ পার্টির সদস্য কেরেন ভেকিও বলেন, গ্যারান্টিড মিনিমাম ইনকাম প্রকল্প বাস্তবায়িত করতে হলে সমগ্র সিস্টেমকে নতুন করে ঢেলে সাজাতে হবে। এই প্রকল্প একটি খারাপ ধারণা তা বলা যাবে না কোন ভাবেই। কিন্তু আমাদেরকে খরচের দিকটা বিবেচনা করে দেখতে হবে এবং দীর্ঘ মেয়াদে এটি কানাডিয়াদের জন্য উপকারী বা কল্যানকর হবে কি না সেটিও ভেবে দেখতে হবে। উল্ল্লেখ্য যে, গত শতকের ৭০ দশকে মেনিটোবায় তিন বছর মেয়াদী একটি বেসিক ইনকাম প্রকল্প চালু করা হয়েছিল। তিন বছর পর দেখা গিয়েছিল মেডিক্যাল খাতে সরকারর ব্যয়ভার ৮% কমে যায়। সেই হিসাবের সঙ্গে কানাডার ২০১৭ মেডিক্যাল খাতের ব্যয়ভার (২৪২ বিলিয়ন) তুলনা করলে দেখা যায় বেসিক ইনকাম চালু করলে শুধু মেডিকেল খাতেই ফেডারেল সরকারের সেভিংস হতে পারে বছরে ১৯ বিলিয়ন ডলার। এই সেভিংস এর সঙ্গে আরো যোগ হতে পারে পুলিশী খরচ, আদালতের খরচ। জেলখানার খরচ। দেখা গেছে দারিদ্র পীড়িত অঞ্চলে অপরাধের মাত্রা তুলনামূলকভাবে বেশী। এক হিসাবে আমরা দেখতে পাই জেলখানায় বন্দি ৮০% আসামী আসে ঐ সকল পরিবার থেকে যারা দারিদ্রপীড়িত। কানাডার মোট জনসংখ্যার ১৫% দারিদ্রপীড়িত।
স্মরণ করা যেতে পারে যে, সাবেক অন্টারিও সরকার ‘বেসিক ইনকাম’ নামের একটি পাইলট প্রজেক্ট শুরু করেছিল। যাদের আয় কম বা যারা বেকার কিংবা যারা শারীরিক বা মানসিক সমস্যার কারণে কাজ করতে অপরাগ, তাদেরকে এই প্রকল্পের মাধ্যমে বছরে সর্বোচ্চ ১৭ হাজার ডলার প্রদান করা হচ্ছিল মাথা পিছু। এই পাইলট প্রকল্পটি তিন বছর মেয়াদী ছিল। তিন বছর পর পর্যালোচনা করে দেখার কথা ছিল এর সুূফল কি হয়েছে। কিংবা আদৌ কোন উপকার হয়েছে কি না তাদের যারা এই প্রকল্পের সুবিধা গ্রহণ করেছেন। কিন্তু ড্যাগ ফোর্ডের প্রগ্রেসিভ কনজার্ভেটিভ সরকার ক্ষমতায় এসেই এই প্রকল্পটি বাতিল করে দেয়। কিন্তু নির্বাচনী প্রচারের সময় তারা বলেছিল এই প্রকল্পটি বাতিল করা হবে না।
কানাডার দুইজন ফ্যামিলি ফিজিশিয়ান ড্যানিয়েল মারটিন এবং রায়ান মেইলি ইতিপূর্বে যৌথভাবে একটি প্রবন্ধ লিখেন টরন্টো স্টার পত্রিকায় যেখানে তাঁরা উল্লেখ করেন, “মানুষকে অসুস্থ করে তোলার পিছনে ব্যাক্টেরিয়া, ভাইরাস ইত্যাদির যেমন ভূমিকা থাকে তেমনি থাকে তাদের ব্যক্তিগত অভ্যাস যেমন ধূমপান, খাবার ঠিকমত না খাওয়া বা অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া অথবা অলস জীবন যাপন করা ইত্যাদি। তবে এগুলোর চেয়েও অনেক বেশী ভূমিকা রাখে মানুষের দারিদ্রতা। দরিদ্র এই মানুষদের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটানোর জন্য শুধু ঔষধ প্রেস্ক্রাইব করলেই হবে না বা তাদের ব্যক্তিগত অভ্যাস বদল করতে বললেও কোন লাভ হবে না। প্রয়োজন তাদের আয় বৃদ্ধি করা যেটাকে বলা যেতে পারে সুস্থ আয় বা হেলদি ইনকাম।”