‘মসজিদ’ পরিদর্শন ও যে কোন বিষয়ে প্রশ্ন করতে কানাডীয়দের প্রতি আমন্ত্রণ জানালেন মুসলমানরা

ডিসেম্বর ৫, ২০১৮

লিজ হক : সমগ্র কানাডার মুসলমানরা তাদের সবচেয়ে পবিত্র স্থান মসজিদে আসার জন্য কানাডীয়দের প্রতি আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। সহমর্মিতা প্রদর্শনের অংশ হিসাবে ইহুদি উপাসকদের প্রতি সমর্থন জানানোর এক সপ্তাহের মাথায় মুসলমানরা কানাডীয়দের প্রতি এই আমন্ত্রণ জানান।

‘ভিজিট মাই মস্ক’ দিবসের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি উপলক্ষে নিউ ব্রান্সউইকের হ্যালিফ্যাক্স, সাসেক্স ও মন্টন, কুইবেকের শেরব্রুক, মন্ট্রিল, অটোয়া, টরন্টো, এডমন্ট ও ক্যালগেরির মসজিদগুলো শনিবার কানাডীয়দের জন্য তাদের দুয়ার উন্মুক্ত করে দেয়। এই দিবসের লক্ষ্য হলো মুসলিমদের সম্পর্কে ভুল ধারণা দূর করা, কানাডায় মুসলিমদের ধর্মীয় বিশ্বাস সম্পর্কে যথাযথ উপলব্ধি সৃষ্টি করা এবং বছরজুড়ে কানাডীয়-মুসলিম কমিউনিটির জনহিতৈষী কর্মকান্ড পরিচালনা।

কানাডিয়ান মুসলিম ভোট নামের একটি দল-নিরপেক্ষ সংগঠন এই দিবস পালনের উদ্যোগ নিয়েছে। এটি মুসলমানদেরকে রাজনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িত হতে উৎসাহিত করে। প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে হাফিংটন পোস্ট।

ভন সিটিতে অবস্থিত জাফারী কমিউনিটি সেন্টারে কয়েকজন ভিজিটর। ছবি: সারা সাব

অন্টারিওর থর্নহিলে শিয়া মুসলিম কমিউনিটির সংগঠন জাফারি ইসলামিক সেন্টারের ভাইস-প্রেসিডেন্ট শফিক ইব্রাহিম টেলিফোনে হাফিংটন পোস্ট কানাডাকে বলেন, “আমাদের লুকোবার কিছু নেই। আমরা কোনওভাবেই একটি গোপন সংগঠন বা রহস্যজনক সম্প্রদায় নই। আমরা আইন মান্যকারী নাগরিক, আমরা ট্যাক্স দিই এবং আমাদের প্রতিবেশিদের ভালবাসি, তাদের সঙ্গে সত্যিকারের সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে চাই।”

একজন ভিজিটর শিখছেন কিভাবে হিজাব পরতে হয়। ছবি: সারা সাবএকজন ভিজিটর শিখছেন কিভাবে হিজাব পরতে হয়। ছবি: সারা সাব

সংগঠনটি মসজিদের ভেতরে ঘুরে দেখানোর ব্যবস্থা করে, শিক্ষা বিষয়ক বক্তৃতার আয়োজন করে, প্রচারণামূলক কর্মকা- চালায় এবং ধর্মতত্ত্ব বিষয়ে যে কোনও প্রশ্নের জবাব দেওয়ার জন্য পন্ডিতদের প্রস্তুত রাখে। নারীদের হাতে মেহেদী লাগানোর ব্যবস্থা এবং কীভাবে হিজাব বাঁধতে হয় সে সম্পর্কে আগ্রহীদের শিক্ষা দেওয়ারও ব্যবস্থা করে সংগঠনটি।

ইব্রাহিম বলেন, “আলোচনার জন্য উপস্থিত থাকতে পারাটাই হলো মূল চাবিকাঠি। আমি সব সময়ই বিস্মিত হই যে, লোকেরা কত দারুণ দারুণ প্রশ্নই না করে। আর আমরা সেগুলোর যথাযথ জবাব দেওয়ার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”

নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রদেশিক পরিষদের এমপি জোয়েল হার্ডেন অটোয়ার মসজিদ পরদর্শন করেছেন। তিনি মসজিদের দাতব্য কার্যক্রম সম্পর্কে খুব ভালো জানেন। হার্ডেন স্মরণ করেন, সেপ্টেম্বরে প্রচন্ড টর্নেডোতে অটোয়া অঞ্চলে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়লে মসজিদের সদস্যরা হাজার হাজার মানুষকে খাবার দিয়েছিলেন।

হাফিংটন পোস্ট কানাডাকে টেলিফোনে হার্ডেন বলেন, “মসজিদের সদস্যরা কখনই তাদের কাজ নিয়ে বড়াই করেন না। কিন্তু তারা প্রতিবেশিদের সাহায্য করার ক্ষেত্রে সব সময়ই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন।”

নিজেকে ‘প্রেসবিটারিয়ান-সমাজতন্ত্রী’ হিসাবে পরিচয় দেন হার্ডেন। গতকাল তিনি তার ১০ বছর বয়সী মেয়ে এডেলেকে নিয়ে মসজিদ পরিদর্শনে যান। আর বাচ্চারা সব সময় যেমনটা করে, এডেলে কঠিন কঠিন সব প্রশ্ন করেছে।

হার্ডেন বলেন, “এডেলে জানতে চেয়েছে নারীরা কেন আলাদাভাবে প্রার্থনা করে? আমাকে কি মাথায় হিজাব পরতে হবে?” এডেলের নির্ভীকচিত্ততা সেখানে উপস্থিত প্রাপ্তবয়স্কদের মনেও জোর এনে দেয় এবং তারা নিছক ভ্রান্ত পূর্ব-ধারণার ওপর আস্থা না রেখে বরং মুসলিমদের সঙ্গে সংলাপ শুরু করতে উৎসাহী হন।

কানাডিয়ান মুসলিম ভোট-এর নির্বাহী পরিচালক আলী মানেক জানান, অনলাইনে খুনের হুমকি পাওয়ার পর শেরব্রুক ও স্কারবরোর মসজিদের কর্মসূচি শেষ মুহূর্তে বাতিল করা হয়। এদিকে শেরব্রুক মসজিদের বিরুদ্ধে হত্যার হুমকিদাতা লোকটি ক্ষমা চেয়ে তার পোস্ট প্রত্যাহার করে নিয়েছে। মানেক জানান, স্কারবরোতে হুমকিদাতাকে গ্রেফতার করা হতে পারে।

সহিংসতা থেকে আত্মরক্ষার চেষ্টা হিসাবে জেফারি নিজেদের পক্ষ থেকে স্থানীয় অন্যান্য ধর্মীয় সংগঠনের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলেছেন। ইব্রাহিম স্বীকার করেন, “আমাদের মনে সব সময়ই একধরণের ভীতি কাজ করে যে, কোনও ধর্ম-ভিত্তিক গ্রুপের সঙ্গে কোনওরকম নোংরা ঘটনা ঘটে যেতে পারে। তবে আমরা বিষয়টি সামনে না আনাই ভালো মনে করি।”

গতকাল অটোয়া মসজিদ পরিদর্শনকারীদের আরেকজন হলেন অটোয়ার কিচিসিপি ওয়ার্ডের সিটি কাউন্সিলর জেফ লিপার। তিনি বলেন, “শুধু হুজ্জোৎ হাঙ্গামার সময়ে নয়, বরং কর্মকর্তাদেরকে অবশ্যই নিয়মিতভাবে স্থানীয় মুসলিমদের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতে হবে।

হাফপোস্ট কানাডাকে তিনি বলেন, “এ ধরণের সুযোগ সৃষ্টি করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্থানীয় মুসলিমদের বলার অপেক্ষা না করেই এটা করতে হবে। সত্যিকারের সম্পর্ক গড়ে তুলতে হলে আপনাকে সব সময় এ নিয়ে কাজ করতে হবে, শুধু কোনও ঘটনা ঘটার পরে নয়।”