টরন্টোতে বাড়ির দাম পড়ে যাওয়ার অপেক্ষায়?
নভেম্বর ৪, ২০১৮
ডেনিয়েল টেনসার : সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, টরন্টোর অর্ধেক বাসিন্দা বাড়ির দাম কমার অপেক্ষায় রয়েছেন, কিন্তু রয়েল ব্যাংক অব কানাডার নতুন এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, “দম বন্ধ করে থাকবেন না।”
আরবিসির সিনিয়র ইকোনোমিস্ট রবার্ট হগ ক্লায়েন্টদের জন্য লেখা এক নথিতে লিখেছেন, আগস্ট মাসে টরন্টো ও ভ্যাঙ্কুভারে বাড়ির দরে যে সামান্য বৃদ্ধি ঘটেছিলো সেটা হলো “ওই বিষয়টা আসার ইঙ্গিত।”
আগের বছরের মতো ২০১৮ সালেরও অনেকটা জুড়ে দাম কমার প্রবণতার পর চলতি গ্রীষ্মে টরন্টোতে বাড়ির দর আবার বাড়তে শুরু করেছে। আগস্টে সেটা বেড়েছে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৮.৫ শতাংশ পর্যন্ত। গত সপ্তাহে টরন্টো রিয়েল এস্টেট বোর্ড যে পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে তাতেই এই তথ্য রয়েছে।
কিছুটা নি¤œমুখি চাপের পর বাড়ির দর দৃশ্যত স্থিতিশীল হয়। আগস্ট মাসে বৃহত্তর টরন্টোতে সব ধরণের বাড়ির গড় বিক্রয় মূল্য দাঁড়ায় ৭৬৫,২৭০ ডলার যা এক বছর আগের চেয়ে ৪.৭ শতাংশ বেশি। হগ লিখেছেন, “গত বছরের সুষ্ঠু হাউজিং পরিকল্পনা ও চলতি বছরের চাপ পরীক্ষার কারণে বাড়ির দামে বড় ধরণের পতন ঘটবে বলে যে ক্রেতারা আশা করছেন তাদেরকে হতাশ হতে হবে।”
“প্রকৃতপক্ষে, (বসন্তকালের প্রতি মাসে স্থিরভাবে দাম বাড়ার ঘটনার আলোকে) ক্রেতাদের কিছু সংখ্যক চলতি গ্রীষ্মের শুরুর দিকে ওই উপলব্ধিতে পৌঁছান এবং বাড়ির বাজারে ঝাঁপিয়ে পড়েন।”
এটা বাড়ির মালিকদের কাছে স্বাগত জানানোর মতো একটি খবর কারণ তারা বাড়ির দামের প্রবৃদ্ধি এক জায়গায় আটকে থাকার কারণে উদ্বিগ্ন ছিলেন। আর টরন্টোর অর্ধেক মানুষের কাছে এটা হতাশার যারা এঙ্গুস রেইড-এর সাম্প্রতিক জরিপে অংশ নিয়ে বলেছিলেন যে, বাড়ির দর পড়বে বলে তারা আশাবাদী। টরন্টোবাসীদের এক-চতুর্থাংশেরও বেশি বলেছিলেন, তারা বাড়ির দরে বড় ধরণের অর্থাৎ ৩০ শতাংশ বা তারও বেশি পতন দেখতে চান। ভাড়া বাড়িতে থাকেন এমন বেশিরভাগ মানুষ বলেছেন, আবাসন ব্যয় বেশি হওয়ায় তারা শহর ছেড়ে যাবার কথা ভাবছেন। এটা হচ্ছে বাড়ির সম্ভাব্য ক্রেতাদের হতাশার চিত্র যেটা তারা অনুভব করছেন এমন একটি বাজারে যেখানে বহুদিন ধরে মানুষের আয়ের চেয়ে বাড়ির দাম দ্রুততর হারে বাড়ছে।
যদিও তারা বাজার সংশোধনের আশা করছেন, তবু জরিপে অংশগ্রহণকারী মুষ্ঠিমেয় লোক আশা জাগিয়ে রেখেছেন যে, দাম কমবেই। তবে ৬২ শতাংশ মানুষ একমত যে, “ঘটনা যাই ঘটুক না কেন”, সরকারের নীতি টরন্টোর আবাসন সুবিধা মানুষের সাধ্যের মধ্যে নিয়ে আসতে পারবে না।
নির্মাণ শিল্পে ধীরগতি:
কানাডা মর্টগেজ ও হাউজিং করপোরেশন সম্প্রতি প্রকাশিত এক রিপোর্টে আগস্ট মাসে নতুন বাড়ির নির্মাণকাজ শুরু বিলম্বিত হওয়ার বিস্ময়কর তথ্য দিয়েছে। সারা বছরের হিসাব দিয়ে রিপোর্টে বলা হয়েছে, বাড়ি নির্মাণের সংখ্যা দুই লাখ এক হাজারে নেমে এসেছে যা জুলাইতেই ছিলো দুই লাখ ছয় হাজার। অর্থনীতিবিদরা পূর্বাভাস দিয়েছেন যে, বাড়ি নির্মাণের সংখ্যা দুই লাখ ১০ হাজারে দাঁড়াতে পারে।
বাড়ি নির্মাণে সবচেয়ে বড় ধস নেমেছে অন্টারিও প্রদেশে। আর ব্রিটিশ কলাম্বিয়ায় কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে যদিও ২০১৬ বা ২০১৭ সালের তেজী অবস্থা থেকে এখনও নিচেই রয়েছে।
নির্মাণকাজে এই ধরিগতির বিষয়ে অর্থনীতিবিদরা কিছুটা মিশ্র পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন। কেউ কেউ বলছেন, নির্মাণের ধারা উত্তুঙ্গ অবস্থা থেকে অপেক্ষাকৃত টেকসই অবস্থার দিকে ফিরে আসছে।
ব্যাংক অব মন্ট্রিয়লের সিনিয়র ইকোনোমিস্ট রবার্ট কেভসিক গ্রাহকদের জন্য লেখা এক নথিতে লিখেছেন, “দুই মাস ধরে অবনতি ঘটলেও কানাডায় বলিষ্ঠ আবাসন নির্মাণ খাত অব্যাহত আছে। এটা গত ২৭ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে কারণ জনসংখ্যা বৃদ্ধি জোরালো নির্মাণ খাতের জন্য সহায়ক হয়েছে।
তিনি লিখেছেন, “দেশের সব অঞ্চলে টরন্টো বা ভ্যাঙ্কুভারের মত বাড়ির দরে একইরকম চাপ না পড়লেও অনেক জায়গাতেই জোরেসোরে নির্মাণকাজ চলছে।”
কিন্তু সিআইবিসির অর্থনীতিবিদ রয়েস মেন্ডেস মনে করেন, সামনে আমরা বাড়ির বাজারে ধীরগতি লক্ষ্য করতে পারি। গত মঙ্গলবার এক ক্লায়েন্ট নোটে তিনি লিখেন, “আমরা যেমনটা আশা করছি তেমনই বাড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রে অধিকতর মন্থরতার সময় আসছে। উচ্চ সুদহার এবং ঋণদানের ক্ষেত্রে কঠোরতর মান নিয়ন্ত্রণ প্রবৃদ্ধির এই বিশাল খাতকে অর্থনীতিতে চাপে রেখেছে।
– কানাডিয়ান প্রেসের একটি ফাইলের ভিত্তিতে।