কে হচ্ছেন নগরপাল?

অক্টোবর ১১, ২০১৮

খুরশিদ আলম : আসছে ২২ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে টরন্টো সিটি নির্বাচন। এই নির্বাচনের মাধ্যমে টরন্টোবাসী বেছে নিবেন তাদের নগরপাল বা নগরপিতা অথবা নগরমাতা কে হবেন। একই সাথে বেছে নিবেন নিজ নিজ এলাকার কাউন্সিলরও।

এবারের টরন্টো সিটি নির্বাচনে নগরপাল তথা মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বর্তমান মেয়র জন টরি সহ সর্বমোট ৩৫ জন। এর মধ্যে আছেন কয়েকজন মহিলা প্রার্থীও। এই মহিলা প্রার্থীদের মধ্যে টরন্টোর সাবেক সিটি প্লানার জেনিফার কিশমাত একজন প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বি হিসাবে আভির্ভূত হয়েছেন। সাম্প্রতিক কয়েকটি জরীপে দেখা গেছে জন টরির পরেই তার অবস্থান জনপ্রিয়তার দিক থেকে। বাকি প্রার্থীদের কেউই টরি বা জেনিফারের ধারে কাছেও নেই। ‘মেইনস্ট্রিট রিসার্স পুল’ এর জরীপে দেখা যায়, বর্তমান মেয়র জন টরি জনপ্রিয়তার দিক থেকে এগিয়ে আছেন শতকরা ৬৪ ভাগ ভোটারের সমর্থন পেয়ে। আর ভোটারদের মধ্যে জেনিফার কিশমাত এর জনপ্রিয়তা শতকরা ৩১ ভাগ।

অন্যদিকে ফোরাম রিসার্স এর সাম্প্রতিক এক জরীপে দেখা যাচ্ছে জন টরির জনপ্রিয়তা ৬৫% এবং জেনিফার কিশমাত এর জনপ্রিয়তা ৩৫%।

সিটি নির্বাচন সাধারণত ভোটারদের মধ্যে তেমনটা উদ্দীপনা সৃষ্টি করে না যেমনটা করে প্রভিন্সিয়াল বা ফেডারেল নির্বাচন। তবে এবারের চিত্র ভিন্ন। আর এই ভিন্ন চিত্র তৈরী করেছেন অন্টারিও প্রভিন্সের নতুন প্রিমিয়ার ড্যাগ ফোর্ড। সম্প্রতি তিনি ক্ষমতায় এসেই কিছু বিষয় নিয়ে তুমুল বিতর্কিত সৃষ্টি করেছেন।

তিনি বিতর্কের জন্ম দেন সিটি কাউন্সিলর এর সংখ্যা ৪৭ থেকে নামিয়ে ২৫ এ আনার ঘোষণা দিয়ে। ঘোষণা দেয়ার সাথে সাথেই এ নিয়ে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়। বিরোধী দল এনডিপি থেকে শুরু করে অনেক কাউন্সিলর এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন। বিরোধিতা করেন বর্তমান মেয়র জন টরি-ও। আর ফোর্ডের এই ঘোষণা এমন এক সময় আসে যখন অনেকেই কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য মাঠে নেমে গেছেন। বিষয়টি এক পর্যায়ে আদলত পর্যন্ত গড়ায়। আদালত ফোর্ডের বিপক্ষে রায় দেন। ফোর্ড তখন হুমকী দেন তিনি বিকল্প ব্যবস্থা নিবেন। প্রয়োজনে তিনি কানাডার চার্টার অব রাইটস এ্যান্ড ফ্রিডম এর notwithstanding clause ব্যবহার করে কাউন্সিলর পদের সংখ্যা কমিয়ে আনবেনই। কেউ তাকে ঠেকাতে পারবেন না।

টরন্টোতে এবারের মেয়র নির্বাচনে প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বি জন টরি এবং জেনিফার কিশমাত। ছবি অনলাইন

ভয়াবহ হুমকী। ইতিপূর্বে আদালতের কাছে পরাজিত হয়ে অন্টারিওতে কোন প্রিমিয়ারই এই ধরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি নিজেদের ইচ্ছা বাস্তবায়িত করার জন্য।

চার্টার অব রাইটস এ্যান্ড ফ্রিডম এর কোন সেকশন পছন্দ না হলে The notwithstanding clause (সরকারীভাবে একে ‘সেকশন ৩৩’ নামে অভিহিত করা হয়) এর মাধ্যমে প্রভিন্সিয়াল বা ফেডারেল কর্তৃপক্ষ সেটি ৫ বছরের জন্য অগ্রাহ্য করতে পারেন এবং নিজেদের পছন্দমত আইন কার্যকর করতে পারেন কোন উদ্দেশ্য সাধনের জন্য।

তবে ড্যাগ ফোর্ডকে শেষ পর্যন্ত সেই পথে পা বাড়াতে হয়নি। কারণ, আপিলে গিয়ে তার সরকার জয়ী হয়। আপিল বিভাগ ড্যাগ ফোর্ডের পক্ষে রায় দেন। ফলে এবার ২৫ আসনেই সিটি কাউন্সিলর পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

সিটি নিউজের এক খবরে বলা হয়, টরন্টোর মেয়র নির্বাচনে ভোটারদের কাছে এবার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে দাড়িয়েছে যে বিষয়গুলো তা হলো ট্রানজিট বা পরিবহন ব্যবস্থা এবং হাউজিং এফোর্ডেবিলিটি। দুটি জরিপ সংস্থার জরিপ থেকে এই তথ্যই পাওয়া যায়।

ফোরাম রিসার্স পুল এর জরিপ থেকে যে তথ্য পাওয়া গেছে তাতে দেখা যায়, ভোটারদের শতকরা ৭০ ভাগ বলেছেন টরন্টোর সরকারী পরিবহন ব্যবস্থা নিয়ে তারা সবচেয়ে বেশী চিন্তিত। শতকরা ৩১ ভাগ ভোটার বলেছেন শহরে পর্যাপ্ত সাবওয়ে লাইন না থাকায় তারা উদ্বিগ্ন। আর শতকরা ২৯ ভাগ ভোটার বলেছেন সরকারী পরিবহনগুলোতে অতিরিক্ত যাত্রীর ঠাসাঠাসি নিয়ে তারা খুব বেশী উদ্বিগ্ন।

ভোটারগণ আরো উদ্বিগ্ন সরকারী পরিবহনের নির্ভরযোগ্যতা নিয়েও। টিকিটের মূল্যও আরেকটি ইস্যু তাদের কাছে।

অন্যদিকে মেইনস্ট্রিট রিসার্স পুল যে তথ্য দিচ্ছে তাতে দেখা যায় পরিবহন খাত থেকে ভোটারদের কাছে হাউজিং এফোর্ডেবিলিটির ইস্যুটি বেশী গুরুত্বপূর্ণ।

টরন্টোর মেয়র পদে প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বি ভোটারদের যে সব বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন তার মধ্যেও আছে এই পরিবহন এবং হাউজিং এফোর্ডেবিলিটির বিষয়গুলোই। এর সাথে আরো আছে গান ভায়োলেন্স নিয়ন্ত্রণ এবং সিটি টেক্স এর বিষয়টিও।

এই দুই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বি ভোটারদের কাছে কি কি প্রতিশ্রুতি তুলে ধরছেন তার একটি তালিকা তুলে ধরেছে গ্লোবাল নিউজ।-

হাউজিং এফোর্ডেবিলিটি

জন টরি বলেছেন তিনি পূননির্বাচিত হলে ৪০ হাজার এফোর্ডএ্যাবল রেন্টাল ইউনিট নির্মাণ এর কাজ শুরু করাবেন যা বাস্তবায়িত হবে পরবর্তী ১২ বছরের মধ্যে। তিনি আরো প্রতিশ্রুতি দেন সিটির অধিনে থাকা জমিসমূহের যথোপযুক্ত ব্যবহার করা হবে। টিটিসির আশপাশে পড়ে থাকা খালি জমিসমূহেরও সঠিক ব্যবহার করা হবে ভবিষ্যত হাউজিং প্রকল্পের জন্য ।

অন্যদিকে জেনিফার কিশমাত বলেছেন, ৪০ হাজার নয়, তিনি এক লক্ষ এফোর্ডএ্যাবল হাউজিং ইউনিট নির্মাণ করাবেন এবং তা আগামী দশ বছরে মধ্যে। আর তিনিও সিটির অধিনে থাকা জমিসমূহের যথোপযুক্ত ব্যবহার করবেন এফোর্ডএ্যাবল হাউজিং নির্মাণের জন্য।

ট্রানজিট

জন টরি বলেছেন তিনি তার স্মার্টট্র্যাক পরিকল্পনা নিয়ে এগুবেন যার সূচনা করা হয়েছিল ২০১৪ সালে। প্রথমে বলা হয়েছিল ঐ প্রকল্পে ২২টি স্টেশন থাকবে। কিন্তু বর্তমান পরিকল্পনায় আছে ৬টি স্টেশন। তিনি আরো বলেন, টিটিসি-তে সিনিয়র ডিসকাউন্ট যেমন আছে তেমনই থাকবে এবং ১২ বছরের নিচে যাদের বয়স তাদের কোন টিকিট লাগবে না। টিটিসির সার্ভিস উন্নয়নের প্রতিশ্র“তিও দেন তিন। এর মধ্যে আছে কমিউনিটি বাস যোগ করা এবং ট্রানজিট সিস্টেমকে আরো যাত্রীবান্ধব করা।

এই ইস্যুতে জেনিফার কিশমাত বলেছেন, টরি’র স্মার্টট্র্যাক কোনদিনই নির্মিত হবে না। তিনি তার নিজের ৫০ বিলিয়ন ডলারের ট্রানজিট প্রকল্পের ($50-billion transit plan) কথা বলেন যার মাধ্যমে ডাউনটাউন রিলিফ লাইন নির্মান করা হবে পরিকল্পিত সময়ের অন্তত তিন বছর আগে। কিং স্ট্রিট পাইলট প্রোগ্রামটিকে স্থায়ী করা হবে বলেও তিনি প্রতিশ্র“তি দেন।

অপরাধ নিয়ন্ত্রণ এবং কমিউনিটি নিরাপত্তা

জন টরি অপরাধ নিয়ন্ত্রণে ২৫ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, এর এক তৃতীয়াংশ ব্যয় হবে পুলিশ বাহিনীর জন্য এবং অপর দুই তৃতীয়াংশ ব্যয় হবে কমিউনিটি প্রোগ্রামের জন্য, যেমন ইয়থ প্রোগ্রাম, জব ফেয়ার ইত্যাদি খাতে। টরি’র কমিউনিটি সেফটি কর্মসূচির মধ্যে আছে হ্যান্ডগান নিষিদ্ধকরণ এবং প্রয়োজনে এ কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য ফেডারেল সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি।

অপরাধ নিয়ন্ত্রণ এবং কমিউনিটি নিরাপত্তার জন্য জেনিফার কিশমাত জোর দিবেন নেইবারহুড কেন্দ্রিক পুলিসিং এর উপর। তিনি ঝুঁকিতে আছে এমন কমিউনিটির লোকদের চাকরীর সুযোগ বৃদ্ধিতে কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন। এছাড়াও ৯১১ এর রেসপন্স টাইম উন্নতি করার প্রতিশ্র“তিও দেন তিনি এবং টরন্টোতে হ্যান্ডগান নিষিদ্ধ করার পক্ষেও মত প্রকাশ করেন।

টেক্স

জন টরি প্রতিশ্রুতি দেন তিনি রেট অব ইনফ্লেশন এর সাথে তাল রেখে প্রপার্টি টেক্স সমান অথবা আরো কম রাখবেন আগামী চার বছর।

জেনিফার কিশমাত অবশ্য এখনো কোন পরিকল্পনা ঘোষণা করেননি এ বিষয়ে।

উল্ল্লেখ্য যে, জন টরি ২০০৩ সালের মেয়র নির্বাচনে ডেভিড মিলারের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। তবে ২০০৫ সালে তিনি টরন্টোর ডাফরীন -পিল এলাকা থেকে এমপিপি পদে জয়ী হন। ২০০৭ সালে অন্টারিও পিসি পার্টির প্রধান হিসেবে অন্টারিও প্রভিন্সিয়াল নির্বাচনে তিনি দলের নেতৃত্ব দেন। কিন্তু তার দল পরাজিত হয়। সেবার তার faith-based education idea তাকে ডুবিয়েছিল। এমনকি তিনি তার নিজের আসনটিও হারিয়েছিলেন। টরি ইতিপূর্বে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ব্রায়ান মালরুনীর উপদেষ্টাও ছিলেন, ছিলেন সাবেক প্রিমিয়ার বিল ডেভিসের সিনিয়র উপদেষ্টা। রজার্স কমিউনিকেশনের টপ এক্সিকিউটিভও ছিলেন। আরো ছিলেন কানাডিয়ান ফুটবল লীগের কমিশনার। ব্যবসা, আইন পেশা এসবকিছুতেই তিনি ছিলেন সফল ব্যক্তি।

জন টরির জন্ম ১৯৫৪ সালে। ১৯৭৫ সালে টরন্টো ইউনিভারসিটি থেকে ব্যাচেলর ডিগ্রি নেন। ১৯৭৮ সালে ইয়র্ক ইউনিভারসিটি থেকে আইন বিষয়ে ডিগ্রি নেন। বিয়ে করেন ১৯৭৮ সালে। চার সন্তানের জনক তিনি।

জনিফার কিশমাত এর জন্ম ১৯৭০ সালে। হেমিলটনে তিনি বেড়ে উঠেন। ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটিতে ইংরেজী ও ফিলোসফীতে পড়াশুনা করেন। পরে ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি থেকে এনভাইরনমেন্টাল বিষয়ে (politics and planning) মাস্টার্স করেন। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার পূর্বে তিনি ছিলেন টরন্টো সিটির চিফ প্লানার । তিনি টরন্টোর বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় সিটি প্লানিং নিয়ে লেখালেখি করে থাকেন। গেস্ট লেকচারার হিসাবে বিভিন্ন ইউনিভার্সিটিতে ক্লাস নিয়ে থাকেন। তিনি বিবাহিত এবং দুই সন্তানের মা।

ডেট লাইন ২২ অক্টোবর

সময় আর বেশী বাকি নেই। ২২ অক্টোবর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সবাই উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন কি হবে ঐ দিন। কে হবেন নগরপিতা অথবা নগরমাতা। জরীপ রিপোর্টে যা বলা হচ্ছে তা কি শেষ পর্যন্ত ঠিক থাকবে না ভোটের দিন চমকপ্রদ কিছু ঘটবে। নাকি অঘটন কিছু ঘটবে? ইতিপূর্বে বিভিন্ন নির্বাচনে দেখা গেছে পূর্বঘোষিত সব জরিপকেই ওলটপালট করে দিয়েছিলেন ভোটাররা। এবারও কি তাই ঘটবে? এর উত্তর পেতে হলে অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোন বিকল্প নেই এই মূহুর্তে।

কাউন্সিলর নির্বাচন

লক্ষ্য করা গেছে, টরন্টোতে সিটি নির্বাচন ঘনিয়ে আসলে বাঙ্গালীদের মধ্যে থেকে প্রতিবারই ৪-৫ জন প্রার্থী হিসাবে আভির্ভূত হন। গত কয়েক দফা নির্বাচনের সময় এই চিত্র দেখা গেছে। আর কৌতুহলের বিষয় হলো, একই রাইডিং বা ওয়ার্ড থেকে একাধিক বাঙ্গালী একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বি হিসাবে মাঠে নামেন। ফলাফল যা হবার তাই হয়। অর্থাৎ বাঙ্গালীদের ভোটও ভাগ হয়। কিংবা একাধিক প্রার্থী দেখে হয়তো বাঙ্গালীরা এদের কাউকেই ভোট দেন না।

গতবারের সিটি নির্বাচনের সময় এরকম একাধিক প্রার্থী হওয়াতে কমিউনিটির নেতৃবৃন্দ একটা চেষ্টা চালিয়েছিলেন আলোচনার মাধ্যমে একজন প্রার্থীকে সামনে নিয়ে আসার জন্য। কিন্তু কাজ হয়নি এবং কেউ পাশও করতে পারেননি।

এবারের নির্বাচনেও একই চিত্র দেখা গিয়েছে শুরুতে। গত বারের চেয়ে এবার প্রার্থীর সংখ্যাও ছিল বেশী। আর শুরুতে এবারও চেষ্টা করা হয়েছিল আলাপ আলোচনার মাধ্যমে একজন প্রার্থীকে সামনে নিয়ে আসার জন্য। কিন্তু তখন কেউই রাজী হননি।

তবে এই প্রতিবেদন যখন তৈরী করা হয় তখনকার সর্বশেষ খবর হলো স্কারবরো সাউথওয়েস্ট এর ওয়ার্ড ২০ তে যে কজন বাংলাদেশী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিলেন তাদের মধ্যে মহসীন ভুইয়া নামের একজন ছাড়া বাকী সবাই তাদের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নাকি তারা সবাই এই সিদ্ধান্তে আসেন। অর্থাৎ একজন বাংলাদেশী প্রার্থীই এখন ওয়ার্ড ২০ তে অন্য সম্প্রদায়ের প্রার্থীদের সঙ্গে লড়বেন। খুব ভাল একটি সিদ্ধান্ত। অবশ্য সুমন রায় নামে আরেকজন এর নাম দেখা যাচ্ছে প্রার্থী তালিকায়। এই ভদ্রলোক নাকি পশ্চিম বঙ্গের বাঙ্গালী। তবে এই প্রতিবেদনটি যখন তৈরী করা হয় তখন পর্যন্ত বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

অন্যদিকে ওয়ার্ড ১৯ এ (বিচেস-ইস্ট ইয়র্ক) এবার কোন বাংলাদেশীই কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন না। এই ওয়ার্ডে প্রচুর সংখ্যক বাংলাদেশী ভোটার আছেন। তাছাড়া বর্তমান কাউন্সিলর জেনেট ডেভিসও দীর্ঘ প্রায় ১৫ বছর পর কাউন্সিলর পদ থেকে অবসর নিচ্ছেন। অর্থাৎ তিনি এবারের নির্বাচনে প্রার্থী হননি।

সিটি নির্বাচনে সাধারণত দেখা যায় যারা ক্ষমতাসীন কাউন্সিলর তারাই পুননির্বাচিত হন। সেদিক থেকে বিবেচনা করলে ওয়ার্ড ১৯ এ যদি বাংলাদেশী কোন যোগ্য প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতেন তবে জয়ী হবার একটা সম্ভাবনা ছিল।

উল্ল্লেখ্য যে, ড্যাগ ফোর্ডের বিতর্কিত সিদ্ধান্তের আগেই এবারের সিটি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য প্রস্তুত হয়েছিলেন টরন্টোর বাঙ্গালী কমিউনিটির একজন প্রবীন সদস্য সবার পরিচিত ঘরোয়া রেস্টুরেন্ট এর স্বত্বাধিকারী সৈয়দ সামছুল আলম। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে তিনি কয়েক দফা কমিউনিটির নেতৃবৃন্দ, ব্যবসায়ী ও মিডিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেন। সবাই তাকে সমর্থন দেন। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি নিজেই তার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন। কারণ তিনি যে ওয়ার্ড থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে ঠিক করেছিলেন সেই ওয়ার্ডে ততদিনে

পাঁচজন বাংলাদেশী প্রার্থী হয়ে গিয়েছিলেন। মোট প্রার্থী হয়েছিলেন নয় জন। এর মধ্যে পাঁচজনই বাঙ্গালী! ঐ সময় পর্যন্ত আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একজন প্রার্থীকে সামনে নিয়ে আসার ব্যাপারে কেউই রাজী হননি ।

এখানে একটি বিষয় উল্ল্লেখ্য যে, সিটি নির্বাচনে প্রভিন্সিয়াল বা ফেডারেল নির্বাচনের মতো দলীয় সমর্থন থাকে না। অর্থাৎ যারা বিভিন্ন দল থেকে এমপিপি বা এমপি পদে দাড়ান তারা নিজ নিজ দলের সমর্থকদের ভোট পান। কিন্তু সিটি নির্বাচনে সরাসরি এই সমর্থন পাওয়ার কোন সুযোগ নেই। সম্পূর্ণ নিজ পরিচিতি, কমিউনিটি ওয়ার্ক এর ইতিহাস ও যোগ্যতাবলে ভোটারদের ভোট পেতে হয়। সেই অর্থে এই নির্বাচন খুবই চ্যালেঞ্জিং। আর বাঙ্গালী অধ্যুষিত ওয়ার্ড ১৯ এবং ওয়ার্ড ২০ এ যে সংখ্যাক বাংলাদেশী ভোটার আছেন কেবল তাদের ভোটের উপর নির্ভর করে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার কোন সুযোগও নেই। কোন প্রার্থী যদি মনে করেন প্রতিটি বাংলাদেশী ভোটার তাকে ভোট দিবেন এবং তাতে তিনি জয়ী হবেন তবে বলতে হবে তিনি দিবা স্বপ্ন দেখছেন। সিটি নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে জয়ী হতে হলে অন্যান্য কমিউনিটির ভোটও বিপুল সংখ্যায় পেতে হবে। আর টরন্টোর মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা? সেটার জন্য কি পরিমাণ যোগ্যতা ও জনপ্রিয়তার প্রয়োজন সেটার ব্যাখ্যা বোধ করি আর দেওয়ার প্রয়োজন নেই।

নির্বাচন একটি গণতান্ত্রিক অধিকার। সাধারণভাবে একটি গণতান্ত্রিক দেশে প্রতিটি নাগরিকের অধিকার আছে নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার। কিন্তু সেই নির্বাচনে ঝাপিয়ে পড়ার আগে কিছু পূর্ব প্রস্তুতিরও প্রয়োজন আছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশী কমিউনিটির এক ব্যক্তি এই প্রতিবেদকে বলেন, “বাংলাদেশীদের মধ্যে যারা সিটি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে যান তাদের বেশীরভাগই কোনরকম গ্রাউন্ড ওয়ার্ক না করেই নির্বাচনী দৌড়ে ঝাপ দেন। অন্য কমিউনিটির কথা বাদই দিলাম, খোদ বাংলাদেশী কমিউনিটিতেই এদের কোন অবদান নেই, নেই পরিচিতি। হুট করে নির্বাচনে দাড়িয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচারণা চালাতে থাকেন। আর এই প্রচারণাও সীমাবদ্ধ থাকে শুধুমাত্র বাংলাদেশী ফেসবুক ফ্রেন্ডদের মধ্যেই! যেন শুধু বাংলাদেশী ভোটারদের ভোটেই তারা পাশ করে যাবেন। আসলে তারা যদি সত্যিকার অর্থেই নির্বাচন করতে চান তবে তাদের উচিৎ হবে আগে গ্রাউন্ড ওয়ার্ক করা। যে এলাকায় থাকেন সেখানকার বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে জড়িত হয়ে বিভিন্ন কমিউনিটিতে নিজেদের পরিচিতির গন্ডি বৃদ্ধি করা এবং ইমেজ তৈরী করা। তবেই না ভোটাররা তার উপর আস্থা অর্পণ করবেন এবং ভোট দিবেন।”

কানাডায় ব্যাপকহারে বাঙ্গালীদের আসা শুরু হয় প্রায় দুই যুগ আগে থেকে। আর এদের বেশীরভাগই বর্তমানে বাস করেন টরন্টোতে। কোন নির্ভরযোগ্য পরিসংখ্যান না থাকলেও ধারণা করা হয় প্রায় হাজার চল্ল্লিশেক বাংলাদেশী বাস করেন গ্রেটার টরন্টোতে। কিন্তু এখানকার মূলধারার রাজনীতিতে এই প্রবাসী বাংলাদেশীদের উপস্থিতি প্রায় নেই বললেই চলে। সিটি কাউন্সিলর, এমপিপি বা এমপি পদে কোন বাংলাদেশীই ছিলেন না গত জুন পর্যন্ত। তবে গত ৭ জুন তারিখে অনুষ্ঠিত অন্টারিওর প্রভিন্সিয়াল নির্বাচনে এমপিপি নির্বাচিত হয়ে কানাডায় বাংলাদেশীদের জন্য ইতিহাস সৃষ্টি করেন ডলি বেগম নামের এক বাংলাদেশী মেয়ে।

ডলি বেগম কানাডায় দ্বিতীয় প্রজন্মের বাংলাদেশী। কিন্তু প্রথম প্রজন্মের বাংলাদেশীরা এখানে এখনো আওয়ামী লীগ আর বিএনপি’র বলয় থেকে নিজেদেরকে মুক্ত করতে পারছেন না। তবে আশার কথা এই যে, দেরীতে হলেও হাটি হাটি পা পা করে বাংলাদেশীরা ক্রমশ মূলধারার রাজনীতির দিকে এগুচ্ছেন।