অন্টারিওতে অধুনিক যৌন শিক্ষা কারিকুলামের প্রতি ব্যাপক সমর্থন রয়েছে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের

জানুয়ারি ৭, ২০১৯

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : অন্টরিওর প্রিমিয়ার ড্যাগ ফোর্ড ২০১৮ শুরুর দিকে প্রগ্রেসিভ কনজার্ভেটিভ পার্টির নেতৃত্বের জন্য লড়াই করার সময় এবং গত বসন্তে অনুষ্ঠিত নির্বাচনকালে বারবার বর্তমান যৌনশিক্ষা বিষয়ক পাঠ্যক্রম বাতিল করে নতুন পাঠ্যক্রম প্রতিস্থাপনের প্রতিশ্র“তি দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, যৌনশিক্ষা বিষয়ক পাঠ্যক্রম প্রণয়নে অভিভাবকদের পরামর্শ যথেষ্ট পরিমাণে গ্রহণ করা হয়নি।

কিন্তু এবার দেখা গেল নতুন করে পরামর্শ গ্রহণের প্রথম দিনেই অন্টারিওর ব্যাপক সংখ্যক অভিভাবক ও শিক্ষার্থী ড্যাগ ফোর্ডের বিরোধীতা করে সাবেক সরকার কর্তৃক প্রবর্তিত আধুনিক যৌন শিক্ষা কারিকুলাম এর প্রতিই সমর্থন জানিয়েছেন। খবর কানাডিয়ান প্রেস এর।

যৌন শিক্ষা বিষয়ে নতুন করে পরামর্শ গ্রহণের জন্য গত আগস্ট মাসে ঋড়ৎঞযবচধৎবহঃং.পধ নামে একটি ওয়েবসাইট খোলা হয়েছিল সরকারের উদ্যোগেই। কানাডিয়ান প্রেস কর্তৃক ফ্রিডম অব ইনফরমেশন রিকোয়েস্ট এর মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায় প্রায় ষোল শত শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবক এবং সমাজসেবী সরকারের ওয়েবসাইটে তাদের পরামর্শ প্রদান করেছেন। এবং তাদের ব্যাপক অংশই ড্যাগ ফোর্ডের বিপক্ষে মত প্রকাশ করেছেন। মাত্র ডজন দুয়েক পরামর্শ প্রদানকারী ড্যাগ ফোর্ডের সিদ্ধান্তের পক্ষে মত দিয়েছেন।

অন্টারিওর ব্যাপক সংখ্যক অভিভাবক ও শিক্ষার্থী ড্যাগ ফোর্ডের বিরোধীতা করে সাবেক সরকার কর্তৃক প্রবর্তিত আধুনিক যৌন শিক্ষা কারিকুলাম এর প্রতিই সমর্থন জানিয়েছেন। ছবি : সিবিসি

সরকারী ওয়েবসাইটে যারা পরামর্শ প্রদান করেছেন তাদের অনেকেই প্রশ্ন তুলেছে এই বলে যে, বিগত সরকার বেশ কয়েক মাস সময় ব্যয় করেছে অভিভাবকদের সঙ্গে পরামর্শ করার জন্য। তাহলে এখন আবার নতুন করে কেন এই একই বিষয়ে সরকারী অর্থ ব্যয় করে একই কাজ দ্বিতীয়বার করা হচ্ছে?

অন্টারিও লিবারেল পার্টির অন্তর্বর্তীকালীন দলীয় প্রধান জন ফ্রেসার বলেন, ঋড়ৎঞযবচধৎবহঃং.পধ ওয়েবসাইটে প্রদত্ত মতামত থেকে এটাই প্রমাণিত হয় যে আমাদের প্রবর্তিত আধুনিক যৌন শিক্ষা কারিকুলাম যথার্থ ছিল। আর আমরা এই কারিকুলাম শুরু করার আগে ব্যাপকভাবে লোকজনের পরামর্শ নিয়েছি। পরামর্শের নামে বর্তমান সরকার এখন যা করছে তা অবিশ্বস্য রকমের সময়ের অপচয় ছাড়া আর কিছুই নয়। সম্ভত সরকারী অর্থেরও অপচয় করা হচ্ছে। এখন সরকারের আর কোন যুক্তি থাকার কথা নয় অধুনিক যৌন শিক্ষা কারিকুলাম বাতিল করার পক্ষে।

উল্ল্লেখ্য যে, অন্টারিওর প্রগ্রেসিভ কনজার্ভেটিভ সরকার কর্তৃক আধুনিক যৌন শিক্ষা কারিকুলাম পরিবর্তনের প্রতিবাদে অন্টারিওর প্রায় শতাধিক স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী গত ২১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার ক্লাশ বর্জন করে রাস্তায় নেমে এসেছিল। “ডব ঃযব ংঃঁফবহঃং ফড় হড়ঃ পড়হংবহঃ”, “ঊফঁপধঃরড়হ ঝধাবং ষরাব” প্রভৃতি বাণী সম্বলিত ব্যানার ও পোষ্টার হাতে তারা প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠেছিল।

অন্যদিকে এলিমেন্টারী টিচার্স ফেডারেশন অব অন্টারিও এর সদস্যগণও মাঠে নেমেছিলেন বর্তমান কনজার্ভেটিভ সরকার কর্তৃক আগের লিবারেল সরকারের আধুনিকায়ন করা যৌনশিক্ষা পাঠ্যক্রম বাতিল করার প্রতিবাদে। গত ১৪ আগস্ট টরন্টোর ডাউনটাউনে অবস্থিত শেরাটন সেন্টারে এলিমেন্টারী টিচার্স ফেডারেশন অব অন্টারিও এর বার্ষিক সম্মেলন শেষে শিক্ষকগণ মিছিল করে অন্টারিও পার্লামেন্ট ভবনের দিকে এগিয়ে যান তাদের শক্তিশালী প্রতিবাদ প্রদর্শন করার জন্য।

এর ঠিক একদিন আগে এলিমেন্টারী টিচার্স ফেডারেশন অব অন্টারিও ড্যাগ ফোর্ড সরকার কর্তৃক গৃহীত যৌনশিক্ষা বিষয়ক পদক্ষেপের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলে, এটি একটি দায়িত্বজ্ঞানহীন ও বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্ত এবং ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য অনিরাপদ।

ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট স্যাম হ্যামোন্ড অন্টারিও’র প্রগ্রেসিভ কনজারভেটিভ পার্টি কর্তৃক গৃহীত যৌনশিক্ষা বিষয়ক সিদ্ধান্তের একজন কড়া সমালোচক। তিনি ইতিপূর্বে শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ক্লাশে আপনারা আপনাদের প্রফেশনাল জাজমেন্ট প্রয়োগ করবেন যখন বহু বছরের পুরাতন কারিকুলাম পড়াতে যাবেন।

অন্টারিওর বিরোধী দল নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টি’র নেতা এন্ড্রিয়া হরওয়াথ এলিমেন্টারী টিচার্স ফেডারেশন অব অন্টারিও’র সঙ্গে একমত প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, এটা ১৯৯৮ সাল নয়। এটা ২০১৮ সাল। এবং ড্যাগ ফোর্ড ও তার সরকারের মূল উদ্বেগের বিষয় হওয়া উচিৎ শিশুরা। পর্দার অন্তরালে সামাজিকভাবে রক্ষণশীল ও অন্ধবিশ্বাসীরা ফোর্ডকে বোঝালো এই নতুন কারিকুলাম বদলাতে হবে, আর অমনি ফোর্ড তা করে বসবেন তা হতে পারে না। এটি সম্পূর্ণভাবে একটি ভুল সিদ্ধান্ত। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে অন্টারিওকে পিছনের দিকে টেনে নিয়ে যাওয়া হবে এবং এটি হবে চরম দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ।

ঋড়ৎঞযবচধৎবহঃং.পধ ওয়েবসাইটে প্রদত্ত মতামত ও পরামর্শ সম্পর্কে অন্টারিওর শিক্ষা মন্ত্রী লিসা থম্পসন এর প্রতিক্রিয়া জানাতে চাওয়া হলে তিনি কানাডিয়ান প্রেসকে জানান, সরকার জানুয়ারীতে সব ডাটা পর্যালোচনা করে দেখবে এবং প্রয়োজনে বসন্ত ঋৃতুতে নতুন কারিকুলাম রচনা করবে। আগামী শরৎকালে স্কুল খোলার আগেই এই নতুন কারিকুলাম পাওয়া যাবে।