যৌন-শিক্ষার পাঠ্যক্রম নিয়ে অন্টারিওর মন্ত্রীর ডিগবাজি
আগস্ট ৪, ২০১৮
১৬ জুলাই ২০১৮ : অন্টারিওর শিক্ষামন্ত্রী গত সোমবার যৌনশিক্ষার পাঠ্যক্রম কি হবে সে বিষয় নিয়ে দোলাচলের মধ্যে পড়লেন। তার সরকার প্রদেশের আধুনিকায়ন করা যৌনশিক্ষার পাঠ্যক্রম বাতিল করার পর শিক্ষার্থীরা এখন এ বিষয়ে কী পড়বে সেই প্রশ্নে মন্ত্রী পুরোই ডিগবাজি খেলেন।
শিক্ষামন্ত্রী লিসা থম্পসন আভাস দেন যে, সম্মতি প্রদান (যৌন সম্পর্ক স্থাপনে সম্মতি), সাইবার নিরাপত্তা এবং লৈঙ্গিক পরিচিতির মত ধারণার পরিবর্তে এবারের শরতে শিক্ষার্থীরা কী পড়বে সে সম্পর্কে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। অন্টারিওর নতুন প্রগ্রেসিভ কনজারভেটিভ সরকার গত সপ্তাহে ঘোষণা করে যে, যৌন শিক্ষা সম্পর্কিত ১৯৯৮ সালের পাঠ্যক্রম (কারিকুলাম) পাল্টানো হচ্ছে। খবর কানাডিয়ান প্রেস এর।
গত সোমবার আইনসভায় মিজ. থম্পসন প্রথমে জানান যে, ২০১৫ সালে লিবারেল সরকারের সময় সংস্কার করা আধুনিক যৌনশিক্ষার পাঠ্যক্রমের পুরো অংশই বাতিল করা হবে না। তিনি বলেন, “আমরা জানি, তাদের (শিক্ষার্থীদের) সম্মতি দান সম্পর্কিত বিষয়ে জানার প্রয়োজন রয়েছে। আমরা জানি, তাদের সাইবার নিরাপত্তা, লৈঙ্গিক পরিচিতির মত বিষয়ে উপলব্ধির প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু আমরা এটাও জানি যে, সাবেক লিবারেল সরকারের পরামর্শের প্রক্রিয়া (বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে) ছিলো সম্পূর্ণ ক্রুটিপূর্ণ।” তিনি বলেন, “নতুন পাঠ্যক্রম কেমন হবে সে বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।”
এর সামান্য কিছু সময় পর থম্পসন সাংবাদিকদের কাছে বলেন, বর্তমান পাঠ্যক্রমের কেবল অংশবিশেষ বাতিল হবে, পুরোটা নয়। “আমরা যেটা করতে চাচ্ছি সেটা হলো যৌন সম্পর্কের উন্নয়ন। পাঠ্যক্রমের এ বিষয়ের দিকেই আমরা নজর দিচ্ছি।”
এদিকে সোমবার বিকেলের দিকে শিক্ষামন্ত্রীর দফতর থেকে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয় সেটার ভাষ্য মন্ত্রীর আগের দেওয়া বক্তব্যে সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে প্রতীয়মান হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, “নতুন পাঠ্যক্রম কেমন হবে সে বিষয়ে আমরা এখনও সিদ্ধান্ত নেইনি। অন্টারিওর অভিভাবকদের (বাবা-মা) মতামত নিয়েই নতুন পাঠ্যক্রমের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এ বিষয়ে অভিভাবকদের সঙ্গে পরামর্শ চলার সময়েই আমরা স্বাস্থ্য ও শারীরিক শিক্ষা বিষয়ে ২০১৪ সালের পাঠ্যক্রম পুনর্বহাল করবো। এই পাঠ্যক্রমে বর্তমান সামাজিক বিষয়গুলি অধ্যয়নের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।”
সেপ্টেম্বর প্রায় আসন্ন
প্রিমিয়ার ড্যাগ ফোর্ড চলতি বছরের শুরুর দিকে টোরি দলের নেতৃত্বের জন্য লড়াই করার সময় এবং গত বসন্তে অনুষ্ঠিত নির্বাচনকালে বারবার বর্তমান যৌনশিক্ষা বিষয়ক পাঠ্যক্রম বাতিল করে নতুন পাঠ্যক্রম প্রতিস্থাপনের প্রতিশ্র“তি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, যৌনশিক্ষা বিষয়ক পাঠ্যক্রম প্রণয়নে অভিভাবকদের পরামর্শ যথেষ্ট পরিমাণে গ্রহণ করা হয়নি।
সমালোচকরা বলেছেন, ১৯৯৮ সালের পাঠ্যক্রমে অনলাইনে নিজেকে নিরাপদ রাখার বিষয়ে শিশুদের জানার প্রয়োজনীয়তা এবং সমলিঙ্গে বিয়ের মত অনেক আধুনিক বিষয়বস্তু অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
আধুনিক পাঠ্যক্রমে অবশ্য অনলাইনে গালমন্দ করা এবং যৌন উস্কানিমূলক বার্তা পাঠানোর (সেল ফোনের মাধ্যমে কাউকে নগ্ন ছবি বা যৌন বার্তা পাঠানো) বিষয়ে সতর্কবাণী অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে যা আগের পাঠ্যক্রম ছিলো না। সেইসঙ্গে আধুনিক পাঠ্যক্রমে সমলিঙ্গে বিয়ে ও হস্তমৈথুনের বিষয় নিয়েও আলোচনা করা হয়েছে।
এনডিপি নেতা আন্দ্রে হরওয়ার্থ বলেন, সোমবারের ঘটনাবলী এটা স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, যৌনশিক্ষা বিষয়ে টোরি সরকার কী করতে চায় সেটা তারা নিজেরাই জানে না।
হরওয়ার্থ বলেন, সেপ্টেম্বর মাস খুব দ্রুতই এসে যাচ্ছে, কিন্তু এই সরকার সবকিছুই এমন বিশৃক্সক্ষল অবস্থায় ফেলে রেখেছে যে আমাদের শিক্ষাবিদরাও জানেন না আগামী সেপ্টেম্বরে কী ঘটতে যাচ্ছে। এটা চরম দায়িত্বহীনতা এবং খুবই নিন্দনীয়।”
লিবারেল দলের অন্তর্বর্তীকালীন নেতা জন ফ্রেসার প্রশ্ন তোলেন, গত তিন বছর ধরে রাজ্যের স্কুলগুলোতে যে পাঠ্যক্রম অনুযায়ী শিক্ষাদান করা হচ্ছে সরকার কেন সেটা বাতিল করতে চায়।
তিনি বলেন, “ওই পাঠ্যক্রম বাতিল করা হবে দায়িত্বহীনতা। আমাদের শিশুদের সুরক্ষা দেওয়ার জন্যই এই পাঠ্যক্রম চালু রয়েছে।”
টরন্টোর একজন ইংরেজির শিক্ষক জেসন কুনিন বলেন, টোরি সরকার যৌনশিক্ষা নিয়ে যাই করুক না কেন, শিক্ষকরা ক্লাশে আধুনিক বিষয়বস্তু সম্পর্কে পাঠদান অব্যাহত রাখবেন।
কুনিন বলেন, আপনি পাঠ্যক্রমে বিষয়গুলি নিয়ে আলোকপাত করুন বা নাই করুন, আপনি বলতে পারবেন না যে, আমরা এমন ভান ধরে থাকবো যেন এই বিষয়গুলোর কোনও অস্তিত্ব নেই, আর এমনটাও আশা করতে পারেন না যে, অন্টারিওর ৬০ হাজার শিক্ষক রাতারাতি এমন ভান ধরবেন যেন এটা ১৯৯৮ সাল।”
কুনিন অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে বর্তমান সরকারের আধুনিক স্বাস্থ্য বিষয়ক পাঠ্যক্রম বাতিলের নিন্দা জানিয়ে এক অনলাইন আবেদনে স্বাক্ষর দিয়েছেন। তিনি বলেন, “আপনি এই পাঠ্যক্রম বাতিল করতে পারেন কিন্তু এসব বিষয়ে আলোচনা চলতেই থাকবে।”