মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু কির ছবি সরিয়ে ফেলা হচ্ছে কানাডার জাদুঘর থেকে

“তিনি মানবাধিকারের প্রতিকৃতি নন। তার ছবি কেন সেখানে থাকবে? তিনি একজন নিপীড়ক।”

সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৮

জুলাই ১, ২০১৮, উইনিপেগ : মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু কির ছবি সরিয়ে ফেলা হচ্ছে কানাডার মানবাধিকার বিষয়ক একটি জাদুঘরের প্রদর্শনী থেকে। মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লংঘনের প্রেক্ষাপটে জাদুঘর কর্তৃপক্ষ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

উইনিপেগে অবস্থিত ওই জাদুঘর কর্তৃপক্ষ ঘোষণা দিয়েছেন যে তারা মানবাধিকারের রক্ষক ও এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা ব্যক্তিবর্গের ছবির সারি থেকে শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার বিজয়ী সু কির ছবি সরিয়ে ফেলবেন। খবর কানাডিয়ান প্রেস এর।

তবে কানাডার অনারারী সিটিজেনদের ছবির গ্যালারিতে মিয়ানমার নেত্রীর একটি বড় প্রতিকৃতি থাকবে। মানবাধিকারের প্রতীক হিসাবে বিবেচিতদের ছবির সারিতে সু কি’র যে ছবি রয়েছে সেটির ওপর প্রতিফলিত আলোর বাল্বগুলো এরই মধ্যে স্তিমিত করা হয়েছে এবং মিয়ানমারের সাম্প্রতিক মানবাধিকার সঙ্কটের ব্যাখ্যা সংবলিত একটি ফলক ছবির সামনে টাঙ্গিয়ে দেওয়া হয়েছে।

মানবাধিকারের প্রতীক হিসাবে বিবেচিতদের ছবির সারিতে সু কি’র যে ছবি রয়েছে সেটির ওপর প্রতিফলিত আলোর বাল্বগুলো এরই মধ্যে স্তিমিত করা হয়েছে এবং মিয়ানমারের সাম্প্রতিক মানবাধিকার সঙ্কটের ব্যাখ্যা সংবলিত একটি ফলক ছবির সামনে টাঙ্গিয়ে দেওয়া হয়েছে।

কানাডার রোহিঙ্গা সমিতির সভাপতি আনোয়ার আরকানি গত বুধবার বলেন, “তিনি (সু কি) মানবাধিকারের প্রতীক নন। তার ছবি কেন সেখানে থাকবে? তিনি আপাদমস্তক একজন নিপীড়ক, এ ব্যাপারে কোনওরকম সন্দেহ নেই।”

তিনি বলেন, “আপনি কেন তাকে এই জাদুঘরে রাখবেন যেখানে অসংখ্য সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ এই মহিলার উপস্থিতির কারণে অসম্মানিত হচ্ছেন?”

এর আগে কানাডার রোহিঙ্গা সমিতির সদস্যরা জাদুঘরে যান এবং সেখান থেকে সু কি সম্পর্কিত সবধরণের উদ্ধৃতি (রেফারেন্স) অপসারণের দাবি জানান। আরকানি বলেন, সু কি’র ছবি অপসারণের সিদ্ধান্ত হলো যথার্থতার দিকে এক ধাপ এগুনো।

মিয়ানমারে ১৯৬২ সাল থেকে ক্ষমতাসীন সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন সু কি। তার লক্ষ্য ছিলো একটি গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠা। তিনি নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর সামরিক সরকার

নির্বাচনের ফলাফল মানতে অস্বীকার করে এবং সু কিকে গ্রেফতার করে ১৫ বছর ধরে গৃহবন্দী করে রাখে।

১৯৯১ সালে সু কি নোবেল শান্তি পুরষ্কার লাভ করেন। এরপর ২০০৭ সালে তাকে কানাডার অনারারী সিটিজেনশীপ দেওয়া হয়।

প্রধানত বৌদ্ধ অধ্যুষিত মিয়ানমারে বেশিরভাগ রোহিঙ্গাকে নাগরিকত্ব ও মৌলিক মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়। ২০১২ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে প্রায় দুই লাখ রোহিঙ্গা দেশ ছেড়ে যেতে বাধ্য হন।

গত বছরের আগস্ট মাসের দিকে পুলিশের ওপর রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার জবাবে দমন অভিযান চালানোর সময় সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যাপকভাবে মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগ ওঠার প্রেক্ষিতে পরিস্থিতি গুরুতর আকার ধারণ করে। ওই দমন অভিযানে সেনাবাহিনীর হাতে হাজার হাজার নিরীহ রোহিঙ্গা নিহত হন বলে ধারণা করা হয়। জীবন বাঁচাতে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে প্রতিবেশি বাংলাদেশে আশ্রয় নেন।

সামরিক দমন অভিযান বন্ধ করতে এবং নির্যাতন-নিপীড়নের নিন্দা জানাতে ব্যর্থতার জন্য সু কি ও তার দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে।

কানাডীয় জাদুঘরের জনসংযোগ বিভাগের ভাইস-প্রেসিডেন্ট অ্যাঞ্জেলা কেসি বলেন, মিয়ানমারের মানবাধিকারের সঙ্কট সম্পর্কে জনসচেতনতা গড়ে তোলার লক্ষ্যে দর্শকদের জন্য বিভিন্ন অনুষ্ঠান এবং ২০১৯ সালে একটি প্রদর্শনীর আয়োজনের জন্য কানাডার রোহিঙ্গা সমিতি জাদুঘর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কাজ করে চলেছেন।

জাদুঘরটি রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে মৌখিকভাবে বলা ইতিহাসও রেকর্ড করছে যা পরে জাতীয় সংগ্রহের অন্তর্ভুক্ত হবে।

কেসি বলেন, “(রোহিঙ্গাদের প্রতি) সু কি-র বিশ্বাসঘাতকতা গুরুতর বিষয় এবং তার ছবি দেখাটা জাদুঘরের দর্শকদের জন্য খুবই বেদনাদায়ক।”

তিনি বলেন, “আমরা যেটা করতে যাচ্ছি সেটা ইতিহাসকে পাল্টে দেওয়া নয় বরং (ছবির ওপর) আলো স্তিমিত করে দিচ্ছি এবং প্রদর্শনী যেভাবে আছে সেভাবেই থাকবে। আর এর সঙ্গে এমন কিছু সংযোজন করছি যাতে লোকেরা সমসাময়িক প্রেক্ষিতটাও উপলব্ধি করতে পারে।

“এটা (নিপীড়ন-নির্যাতন) এখনও ঘটে চলেছে; আর সচেতনতা সৃষ্টি এবং সহিংসতা ও নিপীড়নের হাত থেকে বাঁচার জন্য যারা এখনও পালিয়ে যাচ্ছে তাদের পক্ষে সোচ্চার হতে অন্যদেরকে উৎসাহ যোগানোর সুযোগ আমাদেরকে ব্যবহার করতে হবে।”