নিকাব নিষিদ্ধের আপীল করার পরিকল্পনা প্রত্যাহার করে নিল লিবারেল সরকার
ডিসেম্বর ১৯, ২০১৫
প্রবাসী কন্ঠ ডেস্ক : ভোট রাজনীতির অংশ হিসেবে সাবেক কনজারভেটিভ সরকার মুসলিম নারীদের নিকাব পরার বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছিল। তাদের দাবী ছিল মুখ ঢেকে রাখা কানাডার সংস্কৃতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তাই আইন করেছিল নাগরিকত্ব লাভ করতে হলে শপথ গ্রহনের সময় মুখ ঢেকে রাখা চলবে না।
কনজারভেটিভ পার্টির পরিকল্পনা সব ঠিকঠাকমতই চলছিল। কিন্তু বাধ সাধে জুনেরা ইসহাক নামের এক পাকিস্তানী মহিলা। তিনি প্রতিবাদী হয়ে উঠেন সাবেক সরকারের ঐ সিদ্ধান্তে। মামলাও করে বসেন। জুনেরার দাবী ছিল, সরকারের ঐ সিদ্ধান্ত তার ধর্মীয় স্বাধীনতাকে খর্ব করেছে।
আদালতে সরকার পরাজিত হয়। কিন্তু সরকার থেমে থাকেনি। আদালতের ঐ রায়ের বিরুদ্ধে ফেডারেল কোর্টে আপীল করে। কিন্তু দুর্ভাগ্য সরকারের। ঐ আপীলেও হেরে যায় তারা। এদিকে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণাও দেওয়া হয়ে গেছে। হাতে সময়ও নেই। পরিকল্পনা ভেস্তে যাচ্ছে দেখে কানাডার সর্বোচ্চ অদালত সুপ্রীম কোর্টে আপীল করার সিদ্ধান্ত নেয় সাবেক কনজারভেটিভ পার্টি।
কিন্তু ইতিমধ্যে জুনেরা ইসহাক ফেডারেল কোর্ট অব আপীলের রায় তার পক্ষে যাওয়ায় নিকাব পরেই তিনি শপথ গ্রহণ করেন এবং গত নির্বাচনে ভোটও দেন।
নির্বাচনে কনজারভেটিভ পার্টির পরাজয় ঘটে। নিরস্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করে লিবারেল পার্টি। আর সরকার গঠনের একমাস পার হওয়ার আগেই তারা সিদ্ধান্ত নেয় সাবেক সরকারের আপীল করার পরিকল্পনা থেকে সরে আসার।
উল্লেখ্য যে, গত নির্বাচনের আগে লিবারেল পার্টি নিকাবের বিরোধীতা করেনি। এনডিপিও না।
গত ১৬ নভেম্বর কানাডিয়ান প্রেস এর এক রিপোর্ট থেকে জানা যায়, বর্তমান সরকাররের জাস্টিস মিনিস্টার জডি ওইলসন ব্যক্তিগত ভাবে জুনেরা ইসহাককে ফোন করেন এবং তাদের সরকার যে নিকাবের বিষয়টি নিয়ে সুপ্রীম কোর্টে যাচ্ছেন না তা তাকে নিশ্চিত করেন।
জাস্টিস মিনিস্টার বলেন, কানাডার ইমিগ্রেশন আইনে এমন কোন ধারা নেই যাতে লেখা আছে যে শপথ গ্রহনের সময় মুখ দেখাতে হবে। উল্লেখ্য যে, নিকাব নিষিদ্ধের আইন বাতিল হলেও শপথ গ্রহন শুরু হওয়ার আগে ইমিগ্রেশন কর্মকর্তার কাছে নিজের পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য মুখের পর্দা সরাতে হবে। পরে যখন সবাই মিলে জাজ এর সামনে হাত তুলে শপথ গ্রহণ করবেন তখন মুখের পর্দা না সরালেও চলবে।
এদিকে প্যারিসে জঙ্গী হামলার পর কানাডায় একাধিক মুসলিম মহিলার উপর হামলা হয়েছে যারা হিজাব পরে বাইরে গিয়েছিলেন। এই রিপোর্ট যখন লেখা হয় তখন পর্যন্ত টরন্টোতে দুটি হামলার ঘটনা ঘটেছে। একটি থর্নক্লিফ এলাকায় একটি স্কুলের কাছে। অপরটি টরন্টোর সাবওয়ে ট্রেনের ভিতর। থর্নক্লিফ এলাকায় হিজাব পরিহিতা এক মহিলা স্কুলে যাচ্ছিলেন বাচ্চাদেরকে নিয়ে আসার জন্য। ঐ সময় দুই যুবক তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করে। সাবওয়ে ট্রেনের ভিতর হিজাব পরিহিতা দুই মহিলাকে শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করা হয়নি। তবে মৌখিভাবে তারা লাঞ্চিত হয়েছেন। অবশ্য যে নিকাব নিয়ে এত হৈ-চৈ হয়েছিল নির্বাচনের আগে সেই নিকাব পরা কোন মহিলা এখন পর্যন্ত হামলার শিকার হয়েছেন এমন খবর পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য যে, জুনেরা ইসহাকসহ কোন কোন প্রবাসী মুসলিম মহিলা নিকাব পরিধান করে থাকলেও এটি ইসলামের ড্রেস নয়। অনেক ইসলামী রাষ্ট্রেও নিকাব বৈধ নয়। মুসলিম নন প্রফিট অর্গানাইজেশন ‘কানাডিয়ান থিংকার্স ফোরাম’ এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তাহির গোরা বলেন, “নিকাব ইসলামের আবশ্যিক কোন পরিধেয় বস্ত্র নয় এবং সিংহভাগ কানাডিয়ান মুসলিম নারীরা এটি পরেন না। কানাডার প্রায় অর্ধলক্ষ মুসলিম নারীর মধ্যে মাত্র কয়েকশত মহিলা হয়তো এটি পরিধান করে থাকেন।”
জুনেরা ইসহাস যে পাকিস্থান থেকে কানাডায় এসে নিকাব নিয়ে হুলস্থুল কান্ড বাধিয়েছেন সেই পাকিস্তানেও আদালতে নিকাব পরা যায় না। ২০০৪ সালে পেশোয়ার হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি তারিক পারভেজ খান একজন মহিলা আইনজীবীকে আদালতে অবস্থানকালে নিকাব পরা থেকে বিরত থাকার আদেশ দেন।