টরন্টোতে পারমানবিক দুর্ঘটনা মোকাবেলায় নগরের পূর্বাঞ্চলীয় অধিবাসীদের জন্য আয়োডিন ট্যাবলেট

চাইলে টরন্টোর অন্যান্য অঞ্চলের অধিবাসীরাও আয়োডিন ট্যাবলেট সংগ্রহ করতে পারেন

ডিসেম্বর ১৯, ২০১৫

প্রবাসী কন্ঠ ডেস্ক : আতঙ্কিত হবার মত খবর! টরন্টোতে কি পারমানবিক দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে? তা না হলে এই আয়োডিন ট্যাবলেট কেন? গত ১০ নভেম্বর টরস্টার নিউজের এক খবরে বলা হয় এ পর্যন্ত টরন্টো ও ডারহাম এলাকার দুই লক্ষ পরিবার ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এই আয়োডিন ট্যাবলেট পেয়েছে ডাক মারফত। অন্টারিও পাওয়ার জেনারেশন ইতিমধ্যে এ বাবদ ১.৫ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে।

আয়োডিন ট্যাবলেট মানুষের শরীরের থাইরয়েড গ্ল্যান্ডকে পারমানবিক দুর্ঘটনার পর তেজস্ক্রিয় (রেডিওএকটিভ) আয়োডিন শোষন করা থেকে বিরত রাখে। এতে করে দুর্ঘটনার পর থাইরয়েড ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়। পারমানবিক দুর্ঘটনার পর তেজস্ক্রিয় আয়োডিন গ্যাস আকারে দ্রুত ছড়িয়ে যায় বিস্তির্ন এলাকাজুড়ে এবং খুব সহজেই তা মানুষের শরীরে প্রবেশ করতে পারে নিঃশ্বাস গ্রহনের মাধ্যমে।

টরন্টোর খুব কাছাকাছি শহর পিকারিং এ রয়েছে একটি নিউক্লিয়ার প্লান্ট। সামারে বাঙ্গালীদের মধ্যে অনেকেই সেই নিউক্লিয়ার প্লান্টের একেবারে দোড়গোড়ায় যান পিকনিক করতে বা বৈকালিক অবসর কাটাতে। লরেন্স এভিনিউ ধরে সোজা পূর্ব দিকে গেলে একেবারে শেষ মাথায় অন্টারিও লেক এর পারে যে পার্কটি তারই পাশে নিউক্লিয়ার প্লান্টটির অবস্থান।

ডারহাম রিজিয়ন এর এনভায়রনমেন্ট হেলথ এর পরিচালক কেন গরমেন বলেন এই আয়োডিন ট্যাবলেট শুধুমাত্র থাইরয়েড ক্যান্সার এর ঝুঁকি কমাবার জন্য। এটি এন্টি রেডিয়েশনের কোন সর্বজনীন ওষুধ নয়। আর এই আয়োডিন ট্যাবলেট ব্যবহার করতে হয় কোন এমার্জেন্সী টাইপের পারমানবিক দুর্ঘটনা ঘটার পরপরই।

২০১৪ সালে কানাডিয়ান নিউক্লিয়ার সেফটি কমিশন অন্টারিও পাওয়ার জেনারেশন কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয় পিকারিং পাওয়ার প্লান্টের চারপাশে ১০ কিলোমিটারের মধ্যে (প্রাইমারী জোন) যারা বাস করেন তাদের ঠিকানায় আয়োডিন ট্যাবলেট পাঠিয়ে দিতে। স্কারবরোর মর্নিংসাইড রোডের পূর্ব দিকে যারা আছেন তারা ঐ প্রাইমারী জোনে আছেন। ২০১৫ সাল শেষ হবার আগেই এই ট্যাবলেট পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়। আগে স্থানীয় ফার্মেসীগুলোতে এই আয়োডিন ট্যাবলেট পাওয়া যেত। কিন্তু স্থানীয় অধিবাসীরা তা সংগ্রহে তেমন আগ্রহী ছিলেন না।

টরন্টোর অন্য যে সকল অধিবাসী পিকারিং এর নিউক্লিয়ার প্লান্ট থেকে ৫০ কিলোমিটার দুরত্বে (সেকেন্ডারী জোন) বাস করেন তারাও ইচ্ছে করলে ফ্রি আয়োডিন ট্যাবলেট পেতে পারেন ঢ়ৎবঢ়ধৎবঃড়নবংধভব.পধ এই ওয়েবসাইটে যোগাযোগ করে।

টরন্টো ও তার আশপাশ এলাকায় প্রায় ৪.৫ মিলিয়ন অধিবাসীর বাস। অন্টারিও পাওয়ার জেনারেশন কর্তৃপক্ষের হাতে বর্তমানে আছে প্রায় ৬ মিলিয়ন ট্যাবলেট। কিন্তু একজন প্রাপ্তবয়স্ক লোকের জন্য যে ডোজ নির্ধারণ করা আছে (৪টি ট্যাবলেট) সে হিসেবে মাত্র ১.৫ মিলিয়ন অধিবাসীর জন্য তা পর্যাপ্ত।

কিছুদিন আগে ডারহাম রিজিওনাল কাউন্সিল এ বিষয়ে একটি প্রস্তাব পাশ করে। প্রস্তাবে অন্টারিও প্রভিন্সকে অনুরোধ করা হয় ১০ কিলোমিটারের প্রাইমারী জোন এর সীমানা আরো বৃদ্ধি করার জন্য।

এদিকে গ্রীনপিস কানাডার সিনিয়র নিউক্লিয়ার এনালিস্ট সোয়ান প্যাট্রিক বলেন, আয়োডিন ট্যাবলেট গ্রেটার টরন্টোর প্রতিটি অধিবাসীর কাছেই পৌঁছে দেয়া উচিৎ কোন রকম দুর্ঘটনা ঘটার আগেই। ১০ কিলোমিটারের প্রাইমারী জোন এর কোন বাস্তব ভিত্তিক প্রামানিক যৌক্তিকতা নেই। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, জাপানের ফুকুসীমা পারমানবিক প্লান্টে যে দুর্ঘটনা ঘটেছিল তার আশপাশের ৫০ কিলোমিটার সীমানার মধ্যে বসবাস করতো এরকম অনেক শিশুর মধ্যে থাইরয়েড ক্যান্সার ধরা পড়েছে। প্যাট্রিক আরো বলেন, দুর্ঘটনা ঘটার পর কয়েক ঘন্টার মধ্যেই আয়োডিন ট্যাবলেট গ্রহণ করতে হয়। যদি কেউ ভাবেন, দুর্ঘটনা ঘটার পর ফার্মেসী বা অনলাইন থেকে ঐ ট্যাবলেট সংগ্রহ করবেন তবে তা হবে চরম বোকামী।

সোয়ান প্যাট্রিক আরো বলেন, অন্টারিও প্রভিন্সের নিউক্লিয়ার এমার্জেন্সী প্লান আরো আধুনীকিকরন করা জরুরী। আমাদের এখানে যে সেফটি প্লান রয়েছে তা রাশিয়ার চেরনোবিল দুর্ঘটনারও আগে করা প্লান। জাপানে যে সর্বশেষ দুর্ঘটনা ঘটে সেটিও প্রায় ৫ বছর হতে চললো। কিন্তু অন্টারিও এখনো এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।

এখন কথা হলো, টরন্টোতে পারমানবিক দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা ঠিক কতটুকু? অন্টারিও পাওয়ার জেনারেশন এর মুখপাত্র নেইল ক্যালী বলেন, এখানে সিরিয়াস মাত্রার কোন পারমানবিক দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা অতিমাত্রায় কম।