কানাডার কর্মস্থলে নারীদের যৌন হয়রানি ‘মহামারী’ আকারে ছড়িয়েছে : সমীক্ষা
মে ৫, ২০১৮
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : কানাডার কর্মস্থলে নারীদের যৌন হয়রানির ঘটনা ব্যাপকতর। কোম্পানিগুলোর নির্বাহীরা যতটা বিশ^াস করতে প্রস্তুত এটা তার চেয়েও অনেক বেশি। একটি নতুন সমীক্ষার রিপোর্টে এ তথ্য জানা গেছে।
মানব সম্পদ বিষয়ক পেশাজীবী সমিতির ওই সমীক্ষা রিপোর্টে বলা হয়েছে, রাজনীতি, গণমাধ্যম, বিনোদন ও ব্যবসায়িক খাতে এ ধরণের হয়রানির সাম্প্রতিক যেসব তথ্য উদ্ঘাটিত হয়েছে তাতে এই “অন্ধকার বাস্তবতাই” উঠে এসেছে যে, কর্মস্থলে যৌন হয়রানি “মহামারী আকারে বিরাজ করছে এবং বিষয়টিকে জিইয়ে রাখার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।” খবর কানাডিয়ান প্রেস।
সমিতির সদস্যদের নিয়ে পরিচালিত এক সমীক্ষা অনুযায়ী, ১৭ শতাংশ সদস্য কাজের সময় কোনও একজন কর্মীকে যৌন হয়রানি বা আঘাতপ্রাপ্ত হতে দেখেছেন।
১৯ শতাংশ সদস্য তাদের কাছে আসা হয়রানির অভিযোগের সংখ্যা এমন পরিমাণে বেড়েছে বলে জানিয়েছেন যা শতকরা হিসাবে ‘নাটকীয়’ না হলেও ‘যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ’।
রিপোর্টে উল্ল্লেখ করা হয় যে, গত ফেব্রুয়ারিতে ২০০০ কানাডীয়র মধ্যে পরিচালিত নেভিগেটরের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, নারীদের এক-তৃতীয়াংশের সামান্য কিছু বেশি এবং পুরুষদের ১২ শতাংশ বলেছেন যে তারা কর্মস্থলে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন।
যদিও, বিভিন্ন কোম্পানির নির্বাহীদের নিয়ে গ্যানডাল্ফ গ্রুপের এক সমীক্ষায় ৯৪ ভাগ অংশগ্রহণকারী বলেছেন, তাদের কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি কোনও সমস্যা নয়। আর ৯৩ শতাংশ বলেছেন, তাদের প্রতিষ্ঠানে করপোরেট কালচার রয়েছে যা যৌন হয়রানি রোধ করে।
রিপোর্টে বলা হয়, কোম্পানির নির্বাহীদের দেওয়া তথ্য যৌন হয়রানির যেসব ঘটনা রিপোর্টেড হয়েছে তার হারের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। রিপোর্টেড হয়রানির সংখ্যাও কিন্তু প্রকৃত ঘটনার সংখ্যা থেকে কম। রিপোর্টে বলা হয়, যৌন হয়রানির শিকার ব্যক্তিদের ৮০ ভাগই কারো কাছে এ ধরণের ঘটনা প্রকাশ করেন না।
এতে আরও বলা হয়, সমীক্ষায় অংশ নেওয়া সমিতির ৭০ শতাংশ সদস্যই জানিয়েছেন যে, যৌন হয়রানির বিষয়ে করণীয় সম্পর্কিত নীতিমালায় যেসব সুপারিশ রয়েছে সে বিষয়ে তাদের ঊর্ধ্বতন ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ইতিবাচকভাবে সাড়া দেন।
অন্যদিকে, ২৪ শতাংশ সদস্য বলেছেন, কর্তৃপক্ষ ইতিবাচকভাবে সাড়া দেন ঠিকই, তবে সুপারিশগুলো “সব সময় প্রয়োগ করা হয় না।”
সমিতি বলেছে, যৌন হয়রানির বিষয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং রাজনৈতিক দলসহ প্রতিটি কর্মস্থলকে অবশ্যই জিরো-টলারেন্স সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
জিরো-টলারেন্স সংস্কৃতির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে এককভাবে ব্যবস্থা গ্রহণের নীতি প্রণয়ন যা বিশেষ করে যৌনতা সম্পর্কিত আঘাত ও হয়রানির ক্ষেত্রে অন্য সব কর্মস্থলের আচরিত নীতি থেকে আলাদা হবে। রিপোর্টে এটিকে বলা হয়েছে, “নিগ্রহের ঘৃণ্যতম রূপ” যার মোকাবিলায় বিশেষ ধরণের ও অতি সংবেদনশীল ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজন রয়েছে।
নীতিতে যৌন হয়রানি ও আঘাতের সুস্পষ্ট সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে হবে এবং এ সম্পর্কিত অভিযোগ দায়ের করার ও সে বিষয়ে তদন্ত করার সুষ্ঠু প্রক্রিয়া অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এতে যৌন হয়রানির শিকার হলে কী করতে হবে সে সম্পর্কে কর্মচারীদের এবং এ ধরণের হয়রানি বন্ধের জন্য কী করতে হবে সে বিষয়ে সুপারভাইজারদের প্রশিক্ষণ দানের বিষয়টিও রাখতে হবে।
সমিতি কেন্দ্রীয় সরকার পরিচালিত কর্মস্থলগুলোতে যৌন হয়রানি ও আঘাতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রস্তাবিত কেন্দ্রীয় সরকারের একটি প্রস্তাবিত আইনের আওতা বাড়িয়ে তাতে সশস্ত্র বাহিনীকেও অন্তর্ভুক্ত করার আহবান জানিয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের প্রস্তাবিত আইনে সশস্ত্র বাহিনীকে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়াকে সমিতি “উদ্বেগজনক” বলে অভিহিত করেছে। সশস্ত্র বাহিনীর নারী সদস্যদেরকে যৌন আঘাত ও লৈঙ্গিক বৈষম্য থেকে রক্ষা করতে ব্যর্থতার দায়ে কানাডীয় সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে এবং মামলা দায়ের হয়েছে সেগুলোর দৃষ্টান্ত পেশ করে সমিতি ওই আহবান জানায়।