এক কানাডীয় নারীর ক্রুদ্ধ বর্ণবাদী চিৎকার

বর্ণবাদী আচরণের দায়ে কেলি পোচাকে কর্মস্থল থেকে বরখাস্ত করা হয়

জুন ৩, ২০১৮

বর্ণবাদী আচরণের দায়ে কেলি পোচাকে কর্মস্থল থেকে বরখাস্ত করা হয়

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক, ৯ জুন : আলবার্টার একটি রেস্তোরাঁয় এক নারী কয়েকজন পুরুষের প্রতি চিৎকার করে বলছিলেন, তারা কানাডীয় নয় এবং তাদের উচিৎ তাদের f**king country-তে ফিরে যাওয়া। ঘটনাটি ভিডিওতে ধরা পড়ে। এরপর সেই নারীকে তার কর্মস্থল থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
গতমাসে আলবার্টার লেথব্রিজ শহরে ডেনি’স রেস্তোরাঁয় এই ঘটনা ঘটে এবং এর ভিডিওচিত্র টুইটার, ফেসবুক ও ইউটিউবের মত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। খবর হাফিংটন পোস্ট এর।
পাঁচ মিনিটের এই অরুচিকর ভিডিওতে দেখা যায়, কয়েকজন পুরুষের টেবিলের সামনে আরেকটি টেবিলে বসা একজন মহিলা একজন পুরুষকে উদ্দেশ করে বলছেন, shut his f**king mouth”. তুমি জান? তুমি একজন “কানাডীয় নারী”র সঙ্গে কথা বলছো?
পরক্ষণেই ওই নারী নিজের টেবিল থেকে উঠে এসে লোকটির “f**king mouth.” এ ঘুষি মারার হুমকি দেন। তিনি লোকটিকে “মূর্খ” হিসাবে উল্ল্লেখ করে বলেন, “Go back to your f**king country”।
হেনস্তার শিকার লোকটি হলেন মনির ওমরজাই। আফগানিস্তানে জন্মগ্রহণকারী ওমরজাই কিশোর বয়স থেকে লেথব্রিজে বসবাস করে আসছেন। সিটিভি নিউজকে তিনি বলেন, তিনি ও তার তিন বন্ধু গত মাসে খাবার খেতে ডেনি’স-এ গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, মহিলাটি তার দিকে তাকানোর জন্য আমাদেরকে অভিযুক্ত করার পরই কথা-কাটাকাটি শুরু হয়।
মহিলাটির চিৎকার চেঁচামেচির পর ওমরজাইয়ের টেবিলে খাবার পরিবেশন করা হয়, কিন্তু ওমরজাই বলেন,ওই সময় তাদেরকে রেস্তোরাঁ ছেড়ে চলে যেতে বলা হয়।
এরপর লেথব্রিজ নিউজ ঘটনার জন্য দায়ী মহিলা কেলি পোচাকে খুঁজে পায়। তিনি ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার ক্র্যানব্রুক-এ থাকেন। তিনি নিশ্চিত করেছেন যে, ডেনি’স-এর ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত মহিলাটি তিনি নিজেই।
তিন সন্তানের মা পোচা লেথব্রিজ নিউজকে বলেন, ওই তিন ব্যক্তি নিজেদের ভাষায় কথা বলছিলো এবং তিনি ধারণা করেছিলেন যে তারা তাকে নিয়েই মশকরা করছে। তিনি বলেন, সে দিনের কথা-কাটাকাটির পুরোটা মানুষ দেখতে পায়নি এবং তাকে হেয় করা হয়েছে।
পরে পোচা একটি বিবৃতি দেন। তাতে তিনি বলেন, তার কর্মকান্ড অযথার্থ হলেও এটি একজন ব্যক্তি হিসাবে তাকে প্রতিফলিত করে না। তিনি বলেন, “আমি আনুষ্ঠানিকভাবে ওই লোকদের কাছে ক্ষমা চাই। আমি দু সপ্তাহ আগে আমার কাজের জন্য ডেনি’স-এর কর্মচারী ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের কাছেও ক্ষমা চেয়েছি। আমি একজন মানুষ, আমার ভুল হতে পারে।”
ভিডিওর একটি অংশে দেখা যায় ওমরজাইদের দলকে পোচা বলছেন, আমি কানাডায় জন্মেছি এবং এখানেই বড় হয়েছি।
তখন পোচার দিকে মুখ করে থাকা একজন পুরুষ বলেন, “এটা কোনও ব্যাপার না, আমরা সবাই কানাডীয়।”
পোচা জবাব দেন, “না, তোমরা কানাডীয় নও।” এরপর তিনি লোকটিকে প্রশ্ন করেন তিনি ট্যাক্স দেন কিনা।
লোকটিও কড়া ভাষায় জবাব দেন, “ফালতু কথা বলছেন, অবশ্যই আমি ট্যাক্স পরিশোধ করি।”
কেলি পোচা বলেন, আমার পক্ষে যদি ওই বক্তব্য ফিরিয়ে নেওয়া সম্ভব হতো তাহলে আমি তা ফিরিয়ে নিতাম। কিন্তু তা সম্ভব নয়।
ক্র্যানব্রুক ডজ ডিলারশিপ গত বুধবার ঘোষণা করে যে, কেলি পোচাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানেই পোচা কাজ করতেন।
প্রতিষ্ঠানের মালিক ডেভ গার্লিং তার ফেসবুক পেজে এক পোস্টে লিখেছেন, “সম্প্রতি আমরা একটি বিব্রতকর ভিডিওচিত্রের বিষয়ে জানতে পেরেছি যার সঙ্গে আমাদের একজন কর্মচারী জড়িত। ওই ভিডিওর বিষয়বস্তু সম্পর্কে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন এবং আমাদের সব বন্ধু, পরিবার, সহকর্মী এবং খদ্দেরদেরকে জানাতে চাই যে, ওই আচরণ কোনওভাবেই ক্র্যানব্রুক ডজ-এর মূল্যবোধের প্রতিফলন নয়। আমাদের কোম্পানি সব সময়ই সবাইকে স্বাগত জানানো এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক একটি কোম্পানি হওয়ার ব্যাপারে সচেষ্ট, এখানে ঘৃণা বা অসহিষ্ণুতার কোনও স্থান নেই।
আমাদের যে কর্মচারী ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে এবং আমরা তার আচরণের জন্য গভীরভাবে দুঃখিত।”
লেথব্রিজের মেয়র ক্রিস স্পিয়ারম্যান হাফিংটন পোস্ট কানাডাকে বলেন, অমন একটি ঘটনা এখানে ঘটায় তিনি “লজ্জিত”। তিনি বলেন, “আমি কানাডীয়দের নিয়ে এবং আমার শহরে ওই ঘটনা ঘটায় বিব্রত।” তিনি আরও বলেন যে, তার শহর একটি আধুনিক, প্রগতিশীল শহর যা তার সাংস্কৃতিক বৈচিত্র নিয়ে গর্ব করে এবং এটি শরণার্থী ও অভিবাসীদের জন্য উন্মুক্ত।
স্পিয়ারম্যান বলেন, “ওই ঘটনার ব্যাপারে লেথব্রিজের লোকজনের প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করলে আপনি দেখবেন, প্রায় সবাই বলছেন, ওটা গ্রহণযোগ্য নয়, ওটা আমাদের (আচরণ) নয়।”
ঘটনার পর লেথব্রিজ পুলিশকে ডেনি’স-এ ডাকা হয়েছিলো, কিন্তু তারা বলেছে যে, তাদের এখানে করার কিছু নেই। জানান ওমরজাই।
ওই রাতে ওমরজাইয়ের সঙ্গে ডেনি’স-এ উপস্থিত ছিলেন মুজতাব আবদুল গফুর। Global News কে তিনি বলেন, তিনি ঘটনাটিকে কানাডার সত্যিকারের উপস্থাপনা হিসাবে মনে করেন না।
তিনি বলেন, “মহিলাটি তার নিজের কাছে যেমন, তিনি তাই। আমি আশা করি জীবনের কোনও এক সময়ে তিনি বুঝতে পারবেন যে, তার মনের মধ্যে যা আছে তা হলো কেবলই ঘৃণা এবং সেটা তার কাটিয়ে ওটা দরকার।”