মিসিসাগায় নামাজের সময় গাড়ি পার্কিংয়ে নিষেধাজ্ঞা
মুসলিমদের প্রতি বৈষম্যমূলক, মানবাধিকারবাদীদের বক্তব্য
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক :
স্যামি হুডস : গুগল স্ট্রিট ভিউ আইএসএনএ কানাডা সেন্টার। দু’জন মুসলিম দাবি করছেন যে মিসিসাগায় এই সেন্টারের আশেপাশে নামাজের সময় গাড়ি পাকিংয়ের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করাটা বৈষম্যমূলক। তারা বিষয়টিকে অন্টারিওর মানবাধিকার ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করেছেন।
টরন্টো Ñ দু’জন লোক বলছেন যে মিসিসাগা শহরে শুক্রবারের জুম্মার নামাজের সময় গাড়ি পার্কিংয়ের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করায় মুসলমানদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়েছে এবং তারা অন্টারিওর মানবাধিকার ট্রাইব্যুনালকে তাদের দাবি সমর্থন করতে বলছেন।
টরন্টোর পশ্চিমে মিসিসাগায় অবস্থিত আইএসএনএ কানাডা সেন্টারের মসজিদ থেকে গাড়িতে আধা ঘণ্টার দূরত্বে অবস্থিত একটি হাসপাতালের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক ৩২ বছর বয়সী সালমান খালিদ ও তার পরিবার সবসময় ওই সেন্টারে হাজির হন। ২০১২ সালের মে মাসে ওই সমজিদে জুম্মার নামাজ আদায়ের সময় মসজিদ চত্বরে গাড়ি পার্ক না করে নিকটবর্তী ফিনফার কোর্টে গাড়ি পার্ক করার কারণে তাকে টিকিট ধরিয়ে দেয়া হয়।
আইনের উপধারায় বলা আছে যে, শুক্রবারে দুপুর ১২ টা থেকে তিনটার মধ্যে মসজিদেও আশেপাশের একটি ব্লক পর্যন্ত দূরত্বে কোন পার্শ্ব সড়কে গাড়ি পার্ক করা যাবে না।
কিন্তু সালমানের বাবা মুহাম্মদ জানান, এটি মুসলিমদের জন্য সপ্তাহের সবচেয়ে পবিত্র দিনে জুম্মার নামাজ আদায়ের সময়ের সঙ্গে মিলে যায়।
তিনি বলেন, ‘‘এটি আমাদের জন্য সাবাথ দিবস। খ্রিষ্টানদের যেমন রয়েছে রোববার, ইহুদিদেও শনিবার, আমাদেও মুসলিমদেররও তেমনই শুক্রবার সবচেয়ে পবিত্র দিন। আর জুম্মার নামাজ পড়া হয় দুপুরে। সন্ধ্যায়ও নয়, সকালেও নয়। পবিত্র কোরআনে সময়টা নির্দিষ্ট করা আছে যে দুপুরই জুম্মা আদায়ের সময়।’’
মুহাম্মদ খালিদ ও তার ছেলে অভিযোগ করেন যে, পার্কিং আইনের উপধারা বৈষম্যমূলক এবং তা অন্টারিওর মানবাধিকার নীতির লংঘন।
‘‘এটি আসলে মুসলমানদেরকে সেখানে পার্ক করার অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে। অন্য সময়ে যে কেউ গাড়ি রাখতে পারে।’’
আশেপাশে ধর্মীয় অনুষ্ঠান থাকলে পার্কিং আইন লংঘনের ব্যাপারে অনানুষ্ঠানিকভাবে ছাড় দেয়ার দৃষ্টান্ত অন্যদের ক্ষেত্রে রয়েছে।
টরন্টো পুলিশ সার্ভিসের পার্কিং এনফোর্সমেন্ট ইউনিটের ম্যনেজার কিম্বারলি রসি বলেন, ‘‘ওইরকম ক্ষেত্রে পুলিশ অফিসার কিছুটা ছাড় দিচ্ছেন এমনটা হয়তো আপনি দেখতে পাবেন কারণ সাধারণত লোকেদের ওইসব এলাকায় পার্ক করতেই বলা হয়, আর এতে কোন ঝামেলা বা ইস্যু তৈরি হয় না।’’
মন্ট্রিয়েলে ইহুদিদের নববর্ষে গত ত্রিশ বছর ধরেই ‘পার্কিং সহিষ্ণুতা’র নীতি অনুসরণ করা হয়ে আসছে যেখানে গোঁড়া ইহুদিদেরকে, যারা ছুটির দিনে গাড়ি চালান না, টিকিট ধরিয়ে দেয়া হয় না।
মি. খালিদ বলেন, তিনি দেখতে চান যে, মিসিসাগাতে মুসলমানদের ক্ষেত্রেও ঠিক একই ধরণের সমন্বয়ের নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘এটা খুবই হতাশাজনক। এটা আমাদের উপাসনার জায়গা।’’
মি. খালিদ বলেন, শুক্রবার মসজিদ খুবই ব্যস্ত জায়গা। আর পার্কিংয়ের জায়গাটা অন্তত ৪০০ গাড়ি দিয়ে সম্পূর্ণ ভর্তি হয়ে যায়। তিনি জোর দিয়ে বলেন, তার ছেলের জন্য ভিড়াভিড়ি এড়িয়ে যথাসময়ে কাজে যাওয়ার জন্য সাইড স্ট্রিটে গাড়ি রাখা খুবই জরুরী।
তবে নগর কর্তৃপক্ষ বলছেন যে, মসজিদে আসা লোকদের কারণে সৃষ্ট যানজটের জন্যই সাইড স্ট্রিটে পার্কিংয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
মিসিসাগা নগরীর প্রতিনিধিত্বকারী আইনজীবী ব্রায়ান ওয়াসিলিউ বলেন, ‘‘ওখানে যেভাবে গাড়ি পার্ক করা হয় তাতে নিরাপত্তার বিষয়টি জড়িত। এটি নিরাপদ নয়। নগর কর্তৃপক্ষ মনে করেন যে, এই বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করে তারা যথাযথ কাজ করেছেন এবং তারা মনে করেন যে তাদের গৃহীত ব্যবস্থার পক্ষে যথেষ্ট যুক্তি রয়েছে।’’
মি. খালিদ জানান, তিনি বিষয়টি নিয়ে ট্রাইব্যুনালে যাওয়ার আগে নগর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করার চেষ্টা করেছেন।
তিনি বলেন, ‘‘তারা পানির উৎসগুলির (যুফৎধহঃং) সামনে গাড়ি রাখেন, অন্যদের গাড়ি চলার পথ আটকে দেন। আমি বলতে চাই যে, সেখানে সঠিক আইনই বলবৎ করা হয়েছে। হয় আপনি এধরণের ব্যক্তিকে টিকিট ধরিয়ে দেবেন অথবা গাড়িটাকে ঝুলিয়ে সরিয়ে নিয়ে যাবেন। সিটির এমন কাজ করার অধিকার আছে।’’
মি. ওয়াসিলিউ এটিকে একটি স্পর্শকাতর বিষয় হিসাবে বর্ণনা করে বলেন, চলতি শরৎকালে ট্রাইব্যুনালে শুনানীর আগেই বিষয়টি নিয়ে কোনও সমাধানে পৌঁছা যায় কিনা সে বিষয়ে উভয় পক্ষ আলোচনায় সম্মত হয়েছে। ন্যাশনাল পোস্ট