ব্রাম্পটনে ফের অভিবাসীবিরোধী প্রচারপত্র

সেপ্টেম্বর ৫, ২০১৪

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : শিখদের লক্ষ্য করে বিলি করা অভিবাসনবিরোধী প্রচারপত্র আবারও পাওয়া গেছে ব্রাম্পটনের ডাকবাক্সে। তবে গত এপ্রিলে একইধরণের প্রচারপত্র বিলিকারী সংগঠনটি এবার প্রচারপত্র বিলির দায়িত্ব অস্বীকার করেছে।

চলতি সপ্তাহে ব্রাম্পটনের কেন্দ্রস্থলের কাছে তার নিরব, গাছপালায় ছাওয়া আবাসিক এলাকার বাড়ির ডাকবাক্সে ওই প্রচারপত্র পেয়ে ‘হতাশ’ হয়েছেন নিরঞ্জন সিংহ।

এক পৃষ্ঠার প্রচারপত্রে নীল পাগড়ি পরা একজন শিখের ছবি রয়েছে। ছবির ওপর দিয়ে লাল ক্রস চিহ্ন দিয়ে লেখা রয়েছে, ‘‘কানাডায় তৃতীয় বিশ্বের লোকেদের ব্যাপক অনুপ্রবেশকে ‘না’ বলুন!’’

মেয়ে জেসলিনের সঙ্গে টরস্টার নিউজ সার্ভিসের আমানদীপ সিংহ। তিনি অভিবাসনবিরোধী একটি প্রচারপত্র ধরে আছেন যেটি ব্রাম্পটনে তার বাবা-মার বাড়িতে পাঠানো হয়েছিলো

নিরঞ্জন সিংহ ১৯৯৭ সাল থেকে সপরিবারে ওই এলাকায় বসবাস করে আসছেন। তিনি একজন শিখ এবং ফিজি দীপপুঞ্জ থেকে অভিবাসী হিসাবে কানাডায় আসেন। প্রচারপত্র সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘এটি বর্ণবাদী বৈষম্য এবং এটি জনগণকে বিভক্ত করার চেষ্টা করছে।’’ তিনি বলেন, ‘‘কানাডা হলো অভিবাসীদের জায়গা।’’

উল্লেখিত প্রচারপত্রে একটি ব্যস্ত সড়কে হেঁটে যাওয়া বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষদের একটি ছবিও রয়েছে। এই ছবি সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘‘সরকারী নীতি’’ আমাদের ‘‘দেশকে ধ্বংস’’ করেছে।

পীল আঞ্চলিক পুলিশ নিশ্চিত করেছে যে, অতি সাম্প্রতিক প্রচারপত্র সম্পর্কে তারা সচেতন। পুলিশ ওই প্রচারপত্রকে ‘‘ক্ষতিকর ও আঘাতস্বরূপ’’ বলে মন্তব্য করেছে। কনস্টেবল জর্জ টিউডস বলেন, ‘‘জনগণ এগিয়ে আসার পাশাপাশি পুলিশও বিষয়টি খতিয়ে দেখছে।’’ তবে এই প্রচারপত্রকে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য হিসাবে ধরে নেয়া যাবে না।

নিরঞ্জন সিংহর ছেলে আমানদীপ সিংহ (৩৭) বাবার বাড়িতে থাকেন না। তবে তিনি প্রায় প্রতি দিনই স্ত্রী ও বাচ্চাকে নিয়ে ওই বাড়িতে আসেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রথম প্রচারপত্রটি দেখার পর আমানদীপ বলেন, ‘‘আমার মনে হয় এটি খুবই বিরক্তিকর। আমি ১০ বছর বয়স থেকে এখানে রয়েছি, কাজ করছি, এখানেই লেখাপড়া করেছি। আমি আমার ট্যাক্সও পরিশোধ করি।’’ তিনি বলেন, ‘‘এর আগে এই এলাকায় এমন কোনও কিছু কখনও দেখিনি।’’

প্রতিবেশী ডাও ম্যাকলিয়ড বলেন, নিজের বাড়ির ডাকবাক্সে এই প্রচারপত্র পেয়ে তিনি ‘‘আহত’’ বোধ করছেন এবং এ বিষয়ে তার মত আরও কয়েকজন প্রতিবেশির সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি মনে করেন এই প্রচারপত্রটি এই এলাকার বা বহুসংস্কৃতির ধারক ব্রাম্পটনের প্রতিনিধিত্ব করে না। এখানে নিজের পরিবারকে নিয়ে বসবাস করায় তিনি গর্বিত।

স্টার নিউজ সার্ভিসকে তিনি বলেন, ‘‘আমি খুবই সুখি যে এমন একটি জায়গায় আমার মেয়েদের বড় করে তুলতে পারছি যেখানে লোকেরা বর্ণ নিয়ে ভাবে না বরং তারা বন্ধুত্বকে গুরুত্ব দেয়।’’ ‘‘সুতরাং এই প্রচারপত্র ব্রাম্পটনের জন্য নয়।’’

প্রচারপত্রের একেবারে নিচের দিকে একটি সংগঠনের নাম লেখা রয়েছে। সেটি হলো, ইমিগ্রেশন ওয়াচ কানাডা। এটি সেই একই সংগঠন যেটি গত এপ্রিলে ব্রাম্পটনের ওয়েলিংটন স্ট্রিটে এধরণের অভিবাসনবিরোধী প্রচারপত্র ছড়ানোর দায়িত্ব স্বীকার করেছিলো। আগের প্রচারপত্রে একদল শ্বেতাঙ্গের একটি ছবি এবং তার পাশে প্রতিবাদরত একদল শিখের ছবি দিয়ে বলা হয়েছিলো ‘‘ওখান থেকে… এখানে।’’

ব্রিটিশ কলম্বিয়া থেকে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে সংগঠনের মুখপাত্র ড্যান মারে বলেন, তারা নতুন প্রচারপত্র বিলির সঙ্গে জড়িত নন। তিনি বলেন, ‘‘এটি আমাদের নয়। আমরা কখনও এসব করার অনুমতি দিইনি।’’

মারের সংগঠন এমন সব প্রচারপত্র তৈরি করে যাতে লেখা থাকে, ‘‘অপ্রয়োজনীয় অভিবাসন কানাডাকে ধ্বংস করছে।’’

তিনি বলেন, ভবিষ্যতে ব্রাম্পটনে প্রচারপত্র বিলি করা অব্যাহত রাখার পরিকল্পনা তাদের রয়েছে যাতে করে ‘‘আমাদের নিজের শহরে বা নিজের দেশে সংখ্যালঘুতে পরিণত হওয়ার বিষয়টিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে পরিণত করা যায়।’’

এর আগের প্রচারপত্রটির ব্যাপারে তদন্ত ও পীল ক্রাউন অ্যাটর্নির অফিসের সঙ্গে পরামর্শের পর গত মে মাসে পীল আঞ্চলিক পুলিশ জানিয়েছিলো যে, সেটি কোন বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য ছিলো না। পীল পুলিশ বলেছে, ‘‘ওই প্রচারপত্র অবশ্যই বর্ণবাদী ও আক্রমণাত্মক বলে বিবেচিত হতে পারে কিন্তু আইনগত দিক থেকে সেটিকে বিদ্বেষপূর্ণ অপরাধের পর্যায়ে ফেলা যায় না। আর এবিষয়টি কানাডার সুপ্রিম কোর্টই নির্ধারণ করে দিয়েছে।