বেশিরভাগ কানাডীয়ই অভিবাসীদের সংখ্যা কম রাখার পক্ষে: জরীপে প্রাপ্ত তথ্য
ডিসেম্বর ২৬, ২০১৩
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : নতুন একটি ভোটে প্রাপ্ত ফলাফলে দেখা গেছে বেশিরভাগ কানাডীয় প্রতিবছর দেশটিতে অভিবাসী আগমনের সংখ্যা কমানোর পক্ষে।
দ্য ন্যাশনাল পোস্টের পক্ষে ফোরাম রিসার্চের করা জরিপে দেখা গেছে ১৭৫৫ জন প্রাপ্তবয়স্ক কানাডীয়র শতকরা ৭০ ভাগই অভিবাসীর সংখ্যা নির্দিষ্ট রাখার পক্ষে। এতে সমর্থন রয়েছে কানাডার বাইরে জন্মগ্রহণ করা কানাডীয়দের (৫৮%)। যাদের বাবা অন্য দেশের (৬৬%) তারাও এর পক্ষে মত দেন। জনসংখ্যা ও অভিবাসন নিয়ে ওয়ের্স্টান ইউনিভার্সিটির সামাজিক বিজ্ঞানের প্রফেসর অ্যামিরিটাস রডেরিক বেয়জতের গবেষণায় জানান, অভিবাসীর সংখ্যা নির্ধারণে বিভিন্ন গোষ্ঠীর ঐক্যমতে তিনি বিস্মিত হয়েছেন।
“ মজার ব্যাপার হচ্ছে আচরনগুলোতে খুব বেশি তফাৎ নেই… আমার কাছে এটি খুবই বাস্তবিক। সব যোগ্য অভিবাসীকে গ্রহণ করে নেয়া কানাডার জন্য কঠিন”।
ফোরামের জরিপে পাওয়া গেছে অঞ্চল ও রাজনৈতিক পরিমন্ডলসহ সব পরিসরে ৬৪-৭৭% পর্যন্ত মানুষ অভিবাসন সংখ্যা নির্ধারণের পক্ষে।
জরিপে আরও দেখা গেছে শতকরা ৬০ ভাগ কানাডীয় মনে করেন অভিবাসীদের দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকতে পারে। ৮১ শতাংশ মনে করেন, অভিবাসীরা তাদের স্বামী/স্ত্রী এবং নির্ভরশীল সন্তানদের কানাডায় আনার অধিকার রাখে।
আমরা যতটা দেখাই তার চেয়ে বেশি আন্তরিক।
ফোরাম রিসার্চের প্রেসিডেন্ট ও প্রতিষ্ঠাতা বলেন, “আমাদের মূল্যবোধের সঙ্গে মেলে এমন দেশগুলো থেকে নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় অভিবাসী আনার ব্যাপারে আমাদের আগ্রহ রয়েছে, অভিবাসীরা তাদের আগের জাতীয়তা রক্ষা করতে চাইলে কানাডীয়দের কোন সমস্যা নেই”।
কানাডা সরকার ২০১২ সালের অভিবাসীর প্রাথমিক তালিকা প্রকাশের দুই সপ্তাহ পর জরিপটি করা হয়।
সর্বশেষ তথ্যমতে, দেশটি গেল বছর ২ লাখ ৫৭ হাজার ৫শ’ ১৫ জন অভিবাসীকে বাসের অনুমতি দেয় যা আগের বছর ছিল ২ লাখ ৪৮ হাজার ৭শ’ ৫১ জন।
পরিসংখ্যানের উন্নতি হলেও হার্পার সরকার অভিবাসনের অপব্যবহার রুখতে সম্প্রতি এই নীতি কঠোর করেছে। অভিবাসন মন্ত্রী জেসন কেনির হাত ধরে অভিবাসী প্রার্থীদের ভাষাগত দক্ষতার চাহিদা আরো বাড়িয়েছে, ফরমে অসত্য তথ্য দানকারীদের কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নিয়েছেন এবং কানাডার শ্রমবাজারের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতার প্রতি নজর দিয়েছে। অ্যাসোসিয়েশন ফর কানাডিয়ান স্টাডিজের থিংক ট্যাঙ্ক হিসেবে পরিচিত নির্বাহী পরিচালক জ্যাক জেদওয়াবের মতে কানাডার অভিবাসীর সংখ্যার ব্যাপারে বেশির ভাগ কানাডীয় সন্তুষ্ট।
“জনসংখ্যার একটা অংশ অভিবাসীর সংখ্যা, অর্থনৈতিক প্রভাব ও নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত”, বলছিলেন জেদওয়াব। “কানাডীয়দের বেশিরভাগ যাই ভাবুক না কেন একটি বিষয় বিশ্বাস করেন যে, অভিবাসনের ইতিবাচক একটি অবদান রয়েছে দেশে”।
জেদওয়াব ভোটের ব্যাপারে প্রশ্ন তুলে বলেছেন এতে মতামত দু’ভাগে বিভক্ত হয়েছে- একদল যোগ্য অভিবাসীদের মেনে নিতে আগ্রহী আরেকদল সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে বিশ্বাসী। তবে, নিজের অ্যাসোসিয়েশনের ভোটের মাধ্যমে তিনি দেখিয়েছেন কানাডীয়রা অভিবাসীর সংখ্যা নিয়ে চিন্তিত নয়। মার্চের প্রথম সপ্তাহে ১৮শ’ জনের বেশি মানুষের সাক্ষাৎকার নেয়া হয় এ জরিপে। এতে দেখা গেছে শতকরা ৫৯ ভাগ মানুষের অভিবাসীর সংখ্যা নিয়ে মাথাব্যথা নেই। কানাডায় জন্ম নেয়াদের মধ্যে ৫৫% এ ব্যাপারে চিন্তিত নয়। কানাডার বাইরে জন্ম নেয়াদের হার ৭১।
“সংখ্যাগরিষ্ঠ কানাডীয়র সাধারণ একটি চিন্তা হলো কানাডায় খুব বেশি অভিবাসী নেই। কানাডীয়রা কি এমন অভিবাসী চায় যাদের দক্ষতা অর্থনৈতিক চাহিদার সঙ্গে মিলে যায়? আমি বলবো তারা তাই চায়…কানাডা সরকার সে দিকেই সাঁড়া দিচ্ছে”।
ফোরামের জরিপে আরও দেখা গেছে প্রায় অর্ধেক (৪৯%) কানাডীয় বলেছে কানাডার উচিত এমন অভিবাসী আনা যাদের মূল্যবোধ এ দেশের সঙ্গে সামাঞ্জস্যপূর্ণ। ৪৩% মনে করে সব জাতিই কানাডার অভিবাসী হতে পারে।এমনকি একটি দেশের ভেতর বিভিন্ন মূল্যবোধের মানুষ থাকতে পারে। কানাডায় জন্ম নেয়া শতকরা ৫০ ভাগ মানুষ মনে করে কিছু নির্দিষ্ট দেশ থেকে অভিবাসী কানাডায় আসতে পারে। কানাডার বাইরে জন্মগ্রহণ করা ৪৪% কানাডীয় এর সঙ্গে একমত।
বেওজতের মতে এটি বিস্ময়কর কারণ কানাডা দীর্ঘদিন ধরে বৈষম্যহীন একটি দেশ হিসেবে পরিচিত যেখানে জাতিগত পরিচয়ের চেয়ে শিক্ষাগত যোগ্যতা ও পেশাগত অভিজ্ঞতাই অভিবাসনের ক্ষেত্রে প্রধান।
বেওজত বলেন, “এমনকি একই দেশে বিভিন্ন মূল্যবোধের মানুষ থাকতে পারে”। “এটি ভর্তির বৈশিষ্ট হিসেবে বিবেচিত হওয়ার যৌক্তিকতা নেই। এটি নিয়ন্ত্রণ করাও অসম্ভব। এ থেকে বোঝা যায় কানাডীয় মূল্যবোধ ধারণ করতে অভিবাসীদের উদ্বেগের বিষয়টি”।
জরিপটিতে দেখা গেছে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ (৬২%) মনে করে কানাডার সংস্কৃতির সঙ্গে দ্বন্দ্ব তৈরি হলে অভিবাসীদের উচিত নিজস্ব সংস্কৃতিকে ত্যাগ করা উচিৎ। কানাডায় জন্ম নেয়া ৬৫ শতাংশ এবং অন্য দেশের বংশোদ্ভূত ৪৮ শতাংশ মানুষ একে সমর্থন করে।
জেদওয়াব বলেন, নারীর সমতা বিষয়ে কানাডীয় মূল্যবোধ পালনে বিশ্বাসী নয় অনেক অভিবাসী।
“এমন একটা ধারণা আছে যে অভিবাসীদের মধ্যে নির্দিষ্ট একটি গোষ্ঠী কানাডীয়দের মত লিঙ্গ সমতায় বিশ্বাসী নয়ৃএটি উড়িয়ে দেয়ার মত বিষয় না হলেও অভিবাসন নীতি নিয়ে ভাববার অবকাশ তৈরি করার মত যথেষ্ট শক্তিশালী বিষয়ও নয়”। ফোরামের গবেষণা অন্তত তাই বলে।
মার্চের ৬ ও ৭ তারিখে ১৮ বা তার চেয়ে বেশি বয়সের মানুষদের সাক্ষাতকার নিয়েছে ফোরাম। র্যান্ডম সিলেকশন পদ্ধতিতে করা এ গবেষণার ফলাফল পুরোপুরিই সঠিক বলা চলে (+/-২% হেরফের হতে পারে)।- ন্যাশনাল পোস্ট