দক্ষ অভিবাসীদের দ্রুত অনুমোদন দেয়া দরকার : অন্টারিও চেম্বার অব কমার্স
এপ্রিল ৫, ২০১৪
নিকোলাম কেউং : অন্টারিওর শিল্প ও বণিক সমিতির এক রিপোর্টে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে যে, কানাডা যদি বিশ্বের সেরা ও সবচেয়ে উজ্জ্বল লোকদের আকর্ষণের ক্ষেত্রে অন্যান্য দেশকে পেছনে ফেলার আশা করে তাহলে অটোয়ার দক্ষ অভিবাসী নির্বাচনের নতুন পদ্ধতিতে আবেদনকারীদের ব্যাপারে সর্বোচ্চ দুই মাসের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেয়ার ব্যবস্থা থাকতে হবে।
অভিবাসন বিষয়ক মন্ত্রী ক্রিস আলেকজান্ডার ২০১৫ সালের শুরুর দিকে সম্পূর্ণ নতুন ‘‘এক্সপ্রেশন অব ইন্টারেস্ট’’ভিত্তিক প্রক্রিয়াকরণ পদ্ধতি (ইওআই) চালুর সময় নির্ধারণ করেছেন। এটি কেন্দ্রীয় সরকারের দক্ষ শ্রমিক নিয়োগ কর্মসূচির কয়েক দশকের পুরনো “আগে এলে আগে পাবেন’’ পদ্ধতির স্থলাভিষিক্ত হবে। যদিও আকেজান্ডার বলেছেন যে, নতুন পদ্ধতিতে দক্ষ শ্রমিক বেছে নেয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে প্রয়োজনীয় সময় ৬ মাসে নেমে আসবে, কিন্তু রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, তুলনামূলক বিচারে যেমন অস্ট্রেলিয়ার ক্ষেত্রে দক্ষ অভিবাসী বাছাইয়ের জন্য সময় লাগে সর্বোচ্চ মাত্র ৫৮দিন।
সম্প্রতি প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়, চাকরিদাতারা ইওআই কর্মসূচিতে অংশ নেবে কিনা তা নির্ধারণের একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো কত দ্রুত এই পদ্ধতিতে বাছাই সম্পন্ন হবে সেটা।
কানাডা সরকার ইঙ্গিত দিয়েছে যে, ইওআই পদ্ধতিতে আবেদনপত্র আনুমানিক ৬ মাসের মধ্যে প্রক্রিয়াকরণ করা হবে। অর্থাৎ আমন্ত্রণ জানানো থেকে শুরু করে আবেদন করা এবং কানাডায় এসে পৌঁছানো পর্যন্ত সবকিছু ওই ৬ মাসের মধ্যে সম্পন্ন হবে। এটি খুবই দীর্ঘ সময়। তারপরও প্রস্তাবিত পদ্ধতিকে অন্টারিওতে দক্ষ কর্মীর সংখ্যা কমে যাওয়ার বিষয়টি ঘুরিয়ে দেয়ার বিরাট সুযোগ হিসাবে দেখা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকারের নীতির পরিবর্তনের কারণে অন্টারিওতে অর্থনৈতিক অভিবাসীর সংখ্যা ৪৯ শতাংশ কমে গেছে। ২০০১ সালে যে সংখ্যা ছিলো ৯৫,০৯১জন সেটি ২০১২ সালে নেমে আসে ৪৮,৯৩০জনে। অন্টারিও প্রদেশের চাকরিদাতাদের বাছাই করা এবং মনোনীত দক্ষ শ্রমিকের সংখ্যা বছরে সর্বোচ্চ ১৩০০ জন হবে বলে কেন্দ্রীয় সরকার নির্দিষ্ট করে দিয়েছে। পুরো কানাডায় যত সংখ্যক দক্ষ শ্রমিক নিয়োগ দেয়া যাবে তার তুলনায় অন্টারিওর ভাগ হচ্ছে মাত্র ৪.৮ শতাংশ। ইওআই পদ্ধতিতে অন্টারিওর চাকরিদাতারা শ্রমিক ঘাটতি পূরণের জন্য ট্যালেন্ট পুলের বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জ জানানোর সুযোগ পাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অন্টারিও চেম্বার অব কমার্সের ভাইস-প্রেসিডেন্ট এবং রিপোর্ট-প্রণেতা জস জারটারসন বলেন, বর্তমান ব্যবস্থা আমাদের মেধাবি জনশক্তি সংগ্রহের সক্ষমতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। উল্লেখ্য, অন্টারিও চেম্বার অব কমার্স ৬০,০০০ ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিত্ব করে যার মধ্যে অনেকগুলোই ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠান ইওআই ব্যবস্থার সুবিধা নিতে আগ্রহী।
জারটারসন বলেন, ‘‘নতুন ব্যবস্থা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি আন্তরিক সুযোগ নিয়ে এসেছে, তবে যদি ক্ষুদ্র ও মাঝারি নিয়োগকর্তাদের জন্য কাজ করবে এমনভাবে ব্যবস্থাটি প্রণয়ন করা হলেই কেবল তা সম্ভব।’’
প্রস্তাবিত ব্যবস্থাটি একটি দ্বি-স্তর বিশিষ্ট প্রক্রিয়া।
প্রথমতঃ সম্ভাবনাময় অভিবাসীকে কানাডার ইমিগ্রেশনের জন্য ‘এক্সপ্রেস ইন্টারেস্টে’ আবেদন জানাতে হবে এবং ট্যালেন্ট পুলে স্থান পাবার যোগ্য কিনা তা নিশ্চিত করার জন্য প্রাক-বাছাই পর্বে নিজেকে পেশ করতে হবে।
দ্বিতীয়তঃ স্থানীয় বাজারের চাহিদা অনুযায়ী অথবা চাকরির প্রস্তাবসহ চাকরিদাতা কর্তৃক চিহ্নিতকরণের ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকার উত্তীর্ণ হওয়া প্রার্থীদের মনোনয়ন দেবে। যারা মনোনীত হবে কেবল তাদেরকেই স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার জন্য আবেদনপত্র জমা দেয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হবে।
জারটারসন বলেন, নতুন ব্যবস্থাটি অস্ট্রেলিয়ার মতো হবে না এবং অটোয়া এমন আভাস দিয়েছে যে, কেন্দ্রীয় সরকার শুধুই মধ্যস্থতাকারী হিসাবে কাজ করবে এবং চাকরিদাতাদেরকে সম্ভাবনাময় প্রার্থীদের জীবনবৃত্তান্ত দেখার সুযোগ দেয়া হবে না। তার পরিবর্তে এমন হতে পারে যে, কানাডার পুনর্গঠিত চাকরি ব্যাংক ও বেশ কিছু গাণিতিক হিসাব-নিকাশ ব্যবহারের মাধ্যমে প্রার্থীরা আপনাআপনি চাকরিদাতাদের সঙ্গে মিলিত হতে পারবেন।
জারটারসন বলেন, এই পদ্ধতিতে চাকরিদাতাদেরকে আর সর্বোত্তম ব্যক্তিটিকে বাছাই করে নেয়ার জন্য বহুস্তরের সাক্ষাৎকার, সুনিপুণভাবে প্রণীত প্রশ্নপত্র, ধী-শক্তির পরীক্ষার মতো বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে না।
রিপোর্টে বলা হয়, ২০১২ সালে নিউজিল্যান্ডের ইওআই ব্যবস্থায় মনোনীত ৮৭ শতাংশ প্রার্থী এরই মধ্যে অস্থায়ী শ্রমিক বা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী হিসাবে সেদেশে পৌঁছেছে এবং তাদের মধ্যে ৯২ শতাংশ কোনধরণের চাকরি বা চাকরির অফার পেয়েছে। এতে বলা হয়, বিদেশী শাখায় স্থানান্তর বা আন্তঃপ্রতিষ্ঠান বদলীর একটি ভাল সুযোগ হলো ইওআই।
ইওআই ব্যবস্থায় অগ্রাধিকারমূলক বিধির আওতায় স্বল্প ও আধাদক্ষ শ্রমিক নিয়োগকারীদেরও সুযোগ দেয়ার ব্যবস্থা রাখার সুপারিশ করা হয়।
জারটারসন বলেন, চাকরিদাতারা সবার আগে কানাডীয়দের চাকরি দেয়ার ইচ্ছা করলে সেটা করেতই পারেন কিন্তু সেক্ষেত্রে শ্রমিকদের স্থানান্তরে যাওয়ার বিষয়টি থেকেই যায়। তিনি বলেন, কেউ একজন কেয়ারটেকার নিয়োগ দিতে চায়, আর সম্ভাব্য কানাডীয় শ্রমিকও রয়েছে যথেষ্ট, কিন্তু তারা অন্য জায়গায় যেতে চায় না আর এটাই হলো বাস্তবতা।
অন্টারিওর নাগরিকত্ব ও অভিবাসন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে মিলে এখানকার চেম্বার অব কমার্স গত বছর সারা প্রদেশের চাকরিদাতাদের ওপর একটি সমীক্ষা চালায়। সমীক্ষায় দেখা যায়, অন্টারিওর ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলোর ৩০ শতাংশই একটি শূণ্যপদ পূরণের জন্য গত ১৮ মাস ধরে সমস্যায় ভুগছে, কারণ সঠিক যোগ্যতাসম্পন্ন কোনও লোক তারা খুঁজে পাচ্ছিলো না।
সৌজন্যে : টরন্টো স্টার।