ইঞ্জিনিয়ার্স কানাডা : আন্তর্জাতিক প্রকৌশল গ্রাজুয়েটদের জন্য দরোজা খুলে দিচ্ছে

জুলাই ২৭, ২০১৪

কিছু কিছু দেশে আন্ডারগ্রাজুয়েট ডিগ্রি অর্জন করলেই যে কেউ প্রকৌশলী হিসাবে কর্মজীবন শুরু করতে পারে। কিন্তু কানাডায় প্রকৌশলীদের কাজ শুরুর জন্য কোন প্রাদেশিক বা আঞ্চলিক কর্তৃপক্ষের লাইসেন্স পাওয়া জরুরী। প্রতিটি প্রদেশ বা টেরিটোরির নিজস্ব লাইসেন্স সম্পর্কিত নিয়ম-কানুন রয়েছে। কিন্তু সঠিক নির্দেশনা দিতে পারে এমন কোন সূত্র ছাড়াই আন্তর্জাতিক বিশ্ব থেকে প্রকৌশল বিষয়ে øাতক ডিগ্রিধারী অসংখ্য মানুষ কানাডায় আসছে যারা খুব কমই জানে যে এখানে কাজ করতে হলে কী কী বিষয় জরুরী।

অভিবাসীরা এখন জেনেশুনে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য প্রকৌশল বিষয়ে লাইসেন্স পাওয়ার সুবিধা সম্পর্কিত ওয়ান-স্টপ ওয়েবসাইটের সাহায্য নিতে পারছেন। ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে উদ্বোধনের পর থেকেই কানাডায় প্রকৌশল বিষয়ে ইঞ্জিনিয়ার্স কানাডার পথনির্দশনামূলক ওয়েবসাইটের (িি.িহবপিড়সবৎং.বহমরহববৎংপধহধফধ.পধ) জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে এবং ২৬হাজার ১৭২ জন ব্যক্তি এই ওয়েবসাইট ভিজিট করেছেন। এদের মধ্যে প্রায় একচতুর্থাংশ আবারও সাইটের সাহায্য নিয়েছেন। মোটামুটি হিসাবে প্রতি মাসে ২২৫০ জনের কিছু কম সংখ্যক নতুন ভিজিটর এই ওয়েবসাইট ভিজিট করেন এবং তাদের মধ্যে ৪০ শতাংশের বেশি হলেন কানাডার ভেতর থেকে। আর ভিজিটরদের বেশিরভাগই হলেন বাইরের দেশের। তবে এক্ষেত্রে এগিয়ে থাকা পাঁচটি দেশ হলো স্পেন, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং সংযুক্ত আরব আমীরাত।

কানাডায় প্রকৌশল পেশার ক্ষেত্রে একটি ওয়ানস্টপ অবতরণিকা:

ইঞ্জিনিয়ার্স কানাডা নামে একটি সংস্থা এই ওয়েবসাইটটি তৈরি করেছে। এটি হলো ১২টি প্রদেশ ও টেরিটোরির সমিতিগুলোর সমন্বয়ে গঠিত একটি জাতীয় সংগঠন যা কানাডায় প্রকৌশল বিষয়ক পেশাদারিত্ব নিয়ন্ত্রণ করে। এই সংগঠন অর্থ বরাদ্দ পায় কানাডার নাগরিকত্ব ও অভিবাসন দপ্তর থেকে। তাদের ওয়েবসাইটটি আন্তর্জাতিক ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রাজুয়েটদেরকে এ বিষয়ে লাইসেন্স গ্রহণের প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনার মাধ্যমে এদেশে পেশা শুরুর প্রস্তুতি গ্রহণে সহায়তা করছে। এটি লাইসেন্স পাওয়ার এবং পেশাজীবী হিসাবে কাজ খুঁজে নেয়ার ব্যাপারে বাস্তবসম্মত পরামর্শ ও তথ্যে ভরপুর। নবাগতদেরকে কানাডায় আসার আগে কী কী পদক্ষেপ নিতে হবে, কীভাবে তাদের শিক্ষা ও অভিজ্ঞতার মূল্যায়ন করা হবে, এদেশে প্রকৌশল পেশা কীভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় ইত্যাদিসহ আরও অনেক তথ্য, মোটকথা লাইসেন্স পাওয়ার এবং যত দ্রুত সম্ভব কানাডায় তাদের ক্যারিয়ার গঠনের স্বপ্ন পূরণের জন্য যা কিছু প্রয়োজন তার সব তথ্যই এই ওয়েবসাইটে দেয়া হয়েছে। সাকাচেওয়ানের প্রফেশনাল ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড জিওসায়েন্টিস্টস অ্যাসোসিয়েশনের একাডেমিক রিভিউর ডাইরেক্টর কেট ম্যাকলাচলান বলেন, ‘‘এই নতুন ওয়েবসাইটটি আন্তর্জাতিক ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রাজুয়েটদেরকে এমন একটি জায়গার ঠিকানা দেয় যেখানে তারা কানাডায় ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পর্কিত বিষয়ে জানার জন্য নির্ভরযোগ্য বার্তা পেতে পারে। তারা কানাডায় আসার আগে এবিষয়ে পূর্ণাঙ্গ চিত্র পেতে পারে যা তাদেরকে ভালভাবে প্রস্তুতি নেয়ার ক্ষেত্রে সাহায্য করবে এবং এখানে আসার পর তার পথচলা সহজতর হবে।’’

উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, ওয়েবসাইটের একাডেমিক ইনফরমেশন টুলস দিয়ে লাইসেন্সের জন্য সম্ভাব্য আবেদনকারীরা দেখতে পাবেন যে তাদের আন্ডারগ্রাজুয়েট শিক্ষাকে কীভাবে কানাডার প্রকৌশল শিক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে তুলনা করা হবে এবং তাদের শিক্ষা কানাডায় লাইসেন্স পাওয়ার আবেদনের জন্য যথেষ্ট কি না। এর মাধ্যমে তারা ভালভাবে বুঝতে পারবেন যে, তাদের সুনির্দিষ্ট ব্যাকগ্রাউন্ডকে কানাডায় কীভাবে মূল্যায়ন করা হবে।

এসব তথ্য দেয়ার মধ্য দিয়ে ওয়েবসাইটটি আন্তর্জাতিক ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রাজুয়েটদেরকে সাম্প্রতিক সময়ে ফেডারেল সরকারের স্কিল্ড ওয়ার্কার প্রোগ্রামে (এফএসডব্লিউপি) কী কী পরিবর্তন আনা হয়েছে সেগুলো জানতে সহায়তা করছে। এর ফলে অভিবাসীদের জন্য নতুন শর্ত ভাষার ওপর দক্ষতা এবং শিক্ষা সম্পর্কিত বিষয়গুলি তারা নিজেরাই মূল্যায়ন করতে পারবেন।

কানাডায় কাজ করার প্রাসঙ্গিকতা:

এই সাইটটি কেবল লাইসেন্স সম্পর্কিত বিষয়ে নয় বরং তার চেয়েও বেশি কিছু। এতে কানাডায় অভিবাসী হয়ে আসা এবং কানাডাকে কর্মস্থল হিসাবে খাপ খাইয়ে নেয়ার বিষয়েও তথ্য দেয়া হয়েছে যা অনেক আন্তর্জাতিক ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রাজুয়েটের জন্য একটি বড় ধরণের চ্যালেঞ্জ।

ম্যানিটোবা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শিক্ষা গ্রহণকারী ইঞ্জিনিয়ারদের যোগ্যতা সম্পর্কিত কর্মসূচির পরিচালক মার্সিয়া ফ্রিয়েনসেনের মতে সাংস্কৃতিক অভিযোজন একজন ব্যক্তির যোগাযোগের দক্ষতা কমিয়ে দেয়। তিনি বলেন, ‘‘আমরা চমৎকার যোগ্যতাসম্পন্ন অনেক লোক দেখেছি যাদের যোগাযোগের দক্ষতা কানাডার প্রেক্ষাপটে তাদের কারিগরি দক্ষতার সঙ্গে সমান তালে চলে না। এক্ষেত্রে যোগাযোগের দক্ষতার অভাব অনেক সময় কর্মসংস্থানের সুযোগ পাওয়ার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।’’ ইঞ্জিনিয়ারিং ইন কানাডা রোডম্যাপ ওয়েবসাইটটি এক্ষেত্রেও আন্তর্জাতিক ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রাজুয়েটদের জন্য সহায়ক হতে পারে।

ব্যবসার জন্য ভালো, কানাডার জন্যও ভালো :

আন্তর্জাতিক ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রাজুয়েটদের জন্য সবচেয়ে ভাল তথ্য সরবরাহ করা হলো ওয়েবসাইটটির বিভিন্ন লক্ষ্যের একটি দিক মাত্র। ফ্রিয়েনসেন, ম্যাকলাচলান এবং ওয়েবসাইট তৈরিতে সহায়তাকারী জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির অবশিষ্ট সদস্যদের মতে Ñ আরও বেশি সংখ্যক দক্ষ কর্মীকে নিয়ে আসা এবং তাদেরকে আমাদের সমাজে একীভূত করে নেয়া কানাডার জন্য একটি ভাল ব্যবসায়বুদ্ধি।

ইজাবেলা উইটকোওস্কা এ বিষয়ে একমত। ১৯৯০ সালে পোল্যান্ড থেকে কানাডায় আসা ইজাবেলা একজন বিমানচালনা সম্পর্কিত বিষয়ের প্রকৌশলী। তিনি বলেন, এই ওয়েবসাইটটি ‘‘এমন একটি দরোজা যেটি আরও অনেক দরোজা খুলে দেয়।’’ ‘‘এটি এমন এক হাতিয়ার যা আন্তর্জাতিক ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রাজুয়েটদের জন্যও যেমন উপকারী তেমনই সার্বিকভাবে কানাডার জন্যও।’’

ইজাবেলা বলেন, ‘‘এরই মধ্যে কানাডায় এসে যেসব প্রকৌশলী অন্য কোন ধরণের চাকরি করছেন তারাও হয়তো শিগগিরই তাদের নিজ পেশায় ফিরে আসার মতো যথেষ্ট তথ্য এই ওয়েবসাইটে পাবেন। অনেক চৌকশ ব্যক্তি কানাডায় আসছেন এবং এখানে বসবাস করছেন। তাদেরকে নিজ পেশায় ফিরিয়ে আনা এবং তাদের দক্ষতা কাজে লাগানোর সময় এখনও শেষ হয়ে যায়নি।’’ আরও তথ্যের জন্য দেখুন িি.িহবপিড়সবৎং.বহমরহববৎংপধহধফধ.পধ.